somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভার্চুয়াল দেবতা

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাইক্রাটিস্টের চেম্বারে বসে আছি। মানিসিক কোন সমস্যা এই মূহূর্তে আমার নাই, তারপরও বসে আছি কারন সাইক্রাটিস্টে সাহেব আমাকে ডেকে পাঠিয়েেছেন। ডেকে পাঠানোর কারন এখনও অজানা। বাসার কেউ অবশ্য জানে না আমি এখানে এসেছি। জ্বর সর্দি কাশি হইলে মানুষ দেখতে আসে, মাথায় সমস্যা শুনলে মানুষ দুরে দুরে থাকে। আমাদের সমাজে নরমাল ডাক্তারের কছে গেলে সমস্যা নাই, পাগলের ডাক্তারের কাছে গেলে সমস্যা ভয়াবহ। সাইক্রাটিস্টের চেম্বারে আমি চুপচাপ বসে আছি। সাধারনত চুপচাপ বসে থাকতে আমার খারাপ লাগে না, চুপচাপ বসে বসে মানুষ দেখা যায়, তাদের ব্যাপারে অনুমান করা যায়। বেশ মজার খেলা। এখানে দেখার মত মানুষ বলতে একমাত্র রিসিপশনিস্ট মেয়েটা। সমস্যা হল আমি তাকে কি দেখব সে উল্টা তাকিয়ে তাকিয়ে আমাকে দেখছে। সাইক্রাটিস্টেের কাছে পাগল ছাড়া ভালো মানুষ আসে না, আমি কি টাইপের পাগল সে এটা বোঝার চেস্টা করছে।

কেউ তাকিয়ে থাকলে আমার খুব অস্বস্তি লাগে। অস্বস্তি থেকে হঠাৎ করে আমার মনে সুরুজ ভাইয়ের কথা মনে পড়ল। সুরুজ ভাই দিনমজুর, হতিরঝিলে লেবারের কাজ করে। প্রতিদিন বিকালে জগিং শেষে ব্রিজের উপরে বসে আমি সুরুজ ভাইকে দেখতাম, শুধু আমি না, অনেকেই দেখত। দেখার কারন সুরুজ ভাইয়ের উচ্চতা। সুরুজ ভাইয়ের উচ্চতা ৩.৫-৪ ফুটের মত। বেঁটে একটা মানুষ মাথায় ইট সুরকির বোঝা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে এটা দেখার মত কোন দৃশ্য না, তারপরও সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে এই দৃশ্য দেখছে। বেঁটে মানুষ যে স্বাভাবিক একটা জিনিস এটা আমি বুঝলাম বেশ পরে, সুরুজ ভাইয়ের মাধ্যমে। অনান্য দিনের মত হাতিরঝিলে বিকালে আমি জগিং শেষে বসে ছিলাম। বসে বসে আমি যথারীতি সুরুজ ভাইকে দেখছিলাম। হঠাৎ সুরুজ ভাই আমার দিকে এগিয়ে এলেন। আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম। সুরুজ ভাই আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন, বললেন ভাইজান একখানা বিড়ি ধরাইতাম, আগুন হবে আপনের কাছে? আমি লাইটার বাড়িয়ে দিলাম। সুরজ ভাই বিড়ি ধরিয়ে আমার পাশে বসলেন। আমি আরেক দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলাম। সুরুজ ভাই হঠাৎ বললেন ভাইজান চাইলে আপনি আমাকে দেখতে পারেন, আগে লুকিয়ে লুকিয়ে দূর থেকে দেখতেন এখন কাছে থেকে দেখেন, ভালো মত দেখেন। আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে ছিলাম। মানুষ হিসাবে অস্বাভাবিক কোন কিছু আমরা সহ্য করতে পারি না, বেঁটে, শ্বেতী রোগী, ঠোঁট কাঁটা, পাগল এই সব কিছুই আমাদের সমাজে অস্বাভাবিক বস্তু, অস্বাভাবিক কোন বস্তুর স্হান আমাদের সোসাইটিতে নেই। Eddie Vedder সোসাইটি গানটা হঠাৎ আমার মনে পড়ে গেল-

Society, you're a crazy breed
I hope you're not lonely without me

টুং টুং বেলের শব্দে আমি বাস্তবে ফিরে আসলাম। রিসিপশনিস্ট মেয়েটা চ্যাট করছিল ভাইবারে, বিরক্ত মুখে মেয়েটা উঠে দাঁড়াল। মেয়েটা ভাইবারে কি নিয়ে চ্যাট করছিল সেটাও আমি জানি। জানার কারন মানুষের ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশের অস্বাভাবিক এক ক্ষমতা ঈশ্বর আমাকে দিয়েছেন। কারো সাথে ভার্চুয়ালি কানেক্ট হলেই আমি তার ভার্চুয়াল জগতে ঢুকে যেতে পারি। সকালে মেয়েটা তার যে নম্বরে ভাইবার ইনস্টল করা সেই নম্বর থেকে ফোন দিয়েছিল আপায়ন্টমেন্টের জন্য। নম্বরটা সেভ করে রেখেছিলাম। আমি এখন তার ভাইবারের কথাপকথন বুঝতে পারছি। মেয়েটা তার বান্ধবী শ্রাবনীর সাথে কথা বলছে, মেয়েটার মতে আমি নাকি ঠিক নরমাল পাগলদের মত না..

মেয়েটা ফিরে এসেছে, ফিরে এসে আমাকে বলল ডাক্তার সাহেব আপনাকে ভিতরে যেতে বলেছেন। আমি উঠে দাঁড়ালাম তারপর মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললাম- ডাক্তার সাহেব বেশি গালাগালি করলে চাকুরিটা ছেড়ে দেন আর আপনার বান্ধবী ভাইবারে যে তিনটা জামার ছবি পাঠিয়েছেন তার ভিতর নীল জামটা সবথেকে বেশি সুন্দর লেগেছে আমার কাছে। মেয়েটা একই সাথে কনফিউসড আর শকড হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি হেসে বললাম আপনি মনে হয় কনফিউসড, আচ্ছা বলেন তো কনফিউসডের বাংলা কি??

আমি আর কথা না বাড়িয়ে এগিয়ে গেলাম, মানুষের ভার্চুয়াল জীবনের খবরাখবর বের করে দেওয়াই আমার পেশা, দেখা যাক সাইক্রাটিস্ট সাহেব কি জব অফার করেন আমার জন্য??

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:১৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পশ্চিমা ইসলামবিদ্বেষ থেকে বাংলাদেশের ইসলামপন্থি রাজনীতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৬


আমি যখন কানাডায় বসে পাশ্চাত্যের সংবাদগুলো দেখি, আর তার পরপরই বাংলাদেশের খবর পড়ি, তখন মনে হয় - পশ্চিমা রাজনীতির চলমান দৃশ্যগুলো বহু পথ পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে আলো-ছায়ায় প্রতীয়মান... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×