সাইক্রাটিস্টের চেম্বারে বসে আছি। মানিসিক কোন সমস্যা এই মূহূর্তে আমার নাই, তারপরও বসে আছি কারন সাইক্রাটিস্টে সাহেব আমাকে ডেকে পাঠিয়েেছেন। ডেকে পাঠানোর কারন এখনও অজানা। বাসার কেউ অবশ্য জানে না আমি এখানে এসেছি। জ্বর সর্দি কাশি হইলে মানুষ দেখতে আসে, মাথায় সমস্যা শুনলে মানুষ দুরে দুরে থাকে। আমাদের সমাজে নরমাল ডাক্তারের কছে গেলে সমস্যা নাই, পাগলের ডাক্তারের কাছে গেলে সমস্যা ভয়াবহ। সাইক্রাটিস্টের চেম্বারে আমি চুপচাপ বসে আছি। সাধারনত চুপচাপ বসে থাকতে আমার খারাপ লাগে না, চুপচাপ বসে বসে মানুষ দেখা যায়, তাদের ব্যাপারে অনুমান করা যায়। বেশ মজার খেলা। এখানে দেখার মত মানুষ বলতে একমাত্র রিসিপশনিস্ট মেয়েটা। সমস্যা হল আমি তাকে কি দেখব সে উল্টা তাকিয়ে তাকিয়ে আমাকে দেখছে। সাইক্রাটিস্টেের কাছে পাগল ছাড়া ভালো মানুষ আসে না, আমি কি টাইপের পাগল সে এটা বোঝার চেস্টা করছে।
কেউ তাকিয়ে থাকলে আমার খুব অস্বস্তি লাগে। অস্বস্তি থেকে হঠাৎ করে আমার মনে সুরুজ ভাইয়ের কথা মনে পড়ল। সুরুজ ভাই দিনমজুর, হতিরঝিলে লেবারের কাজ করে। প্রতিদিন বিকালে জগিং শেষে ব্রিজের উপরে বসে আমি সুরুজ ভাইকে দেখতাম, শুধু আমি না, অনেকেই দেখত। দেখার কারন সুরুজ ভাইয়ের উচ্চতা। সুরুজ ভাইয়ের উচ্চতা ৩.৫-৪ ফুটের মত। বেঁটে একটা মানুষ মাথায় ইট সুরকির বোঝা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে এটা দেখার মত কোন দৃশ্য না, তারপরও সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে এই দৃশ্য দেখছে। বেঁটে মানুষ যে স্বাভাবিক একটা জিনিস এটা আমি বুঝলাম বেশ পরে, সুরুজ ভাইয়ের মাধ্যমে। অনান্য দিনের মত হাতিরঝিলে বিকালে আমি জগিং শেষে বসে ছিলাম। বসে বসে আমি যথারীতি সুরুজ ভাইকে দেখছিলাম। হঠাৎ সুরুজ ভাই আমার দিকে এগিয়ে এলেন। আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম। সুরুজ ভাই আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন, বললেন ভাইজান একখানা বিড়ি ধরাইতাম, আগুন হবে আপনের কাছে? আমি লাইটার বাড়িয়ে দিলাম। সুরজ ভাই বিড়ি ধরিয়ে আমার পাশে বসলেন। আমি আরেক দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলাম। সুরুজ ভাই হঠাৎ বললেন ভাইজান চাইলে আপনি আমাকে দেখতে পারেন, আগে লুকিয়ে লুকিয়ে দূর থেকে দেখতেন এখন কাছে থেকে দেখেন, ভালো মত দেখেন। আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে ছিলাম। মানুষ হিসাবে অস্বাভাবিক কোন কিছু আমরা সহ্য করতে পারি না, বেঁটে, শ্বেতী রোগী, ঠোঁট কাঁটা, পাগল এই সব কিছুই আমাদের সমাজে অস্বাভাবিক বস্তু, অস্বাভাবিক কোন বস্তুর স্হান আমাদের সোসাইটিতে নেই। Eddie Vedder সোসাইটি গানটা হঠাৎ আমার মনে পড়ে গেল-
Society, you're a crazy breed
I hope you're not lonely without me
টুং টুং বেলের শব্দে আমি বাস্তবে ফিরে আসলাম। রিসিপশনিস্ট মেয়েটা চ্যাট করছিল ভাইবারে, বিরক্ত মুখে মেয়েটা উঠে দাঁড়াল। মেয়েটা ভাইবারে কি নিয়ে চ্যাট করছিল সেটাও আমি জানি। জানার কারন মানুষের ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশের অস্বাভাবিক এক ক্ষমতা ঈশ্বর আমাকে দিয়েছেন। কারো সাথে ভার্চুয়ালি কানেক্ট হলেই আমি তার ভার্চুয়াল জগতে ঢুকে যেতে পারি। সকালে মেয়েটা তার যে নম্বরে ভাইবার ইনস্টল করা সেই নম্বর থেকে ফোন দিয়েছিল আপায়ন্টমেন্টের জন্য। নম্বরটা সেভ করে রেখেছিলাম। আমি এখন তার ভাইবারের কথাপকথন বুঝতে পারছি। মেয়েটা তার বান্ধবী শ্রাবনীর সাথে কথা বলছে, মেয়েটার মতে আমি নাকি ঠিক নরমাল পাগলদের মত না..
মেয়েটা ফিরে এসেছে, ফিরে এসে আমাকে বলল ডাক্তার সাহেব আপনাকে ভিতরে যেতে বলেছেন। আমি উঠে দাঁড়ালাম তারপর মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললাম- ডাক্তার সাহেব বেশি গালাগালি করলে চাকুরিটা ছেড়ে দেন আর আপনার বান্ধবী ভাইবারে যে তিনটা জামার ছবি পাঠিয়েছেন তার ভিতর নীল জামটা সবথেকে বেশি সুন্দর লেগেছে আমার কাছে। মেয়েটা একই সাথে কনফিউসড আর শকড হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি হেসে বললাম আপনি মনে হয় কনফিউসড, আচ্ছা বলেন তো কনফিউসডের বাংলা কি??
আমি আর কথা না বাড়িয়ে এগিয়ে গেলাম, মানুষের ভার্চুয়াল জীবনের খবরাখবর বের করে দেওয়াই আমার পেশা, দেখা যাক সাইক্রাটিস্ট সাহেব কি জব অফার করেন আমার জন্য??
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:১৩