somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি উন্নয়নের গল্প

৩০ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইস্কাটনের আমাদের বর্তমান বাসাতে আমার প্রথম আসা ২০০৬ সালে। ঢাকা কখনই আমার ভাল লাগত না, ইস্কাটনকেও ভাল লাগে নাই, রাস্তার দুইপাশের ফুটপাত দখল করে গাড়ির দোকানগুলি গাড়ি মেরামত করত, বাসার সামনে ফুটপাতের উপর সবসময় প্লাস্টকপোড়া গন্ধ থাকত। বাস খুব একটা চলত না আমাদের ইস্কাটনে, দিনে কয়েকটা দিবানিশি আর ৬ নম্বর যাতায়ত করত। প্রচুর রিক্সা চলত এই রোডে। ফুটপাত গাড়ি ব্যাবসায়ীরা দখল করে রাখলেও রাস্তাটা বিশাল ছিল ইস্কাটনের। ফার্মগেটে কোচিং শেষে ফুটওভার ব্রিজের উপর দাড়িয়ে বে টাওয়ারের বিল্ডিংটাকে বড্ড আপন মনে হত। রিক্সার টুং টুং শব্দে আকাশ দেখতে দেখতে যখন বাড়ি ফিরতাম তখন ইস্কাটনটাকে একটুকরা খুলনা মনে হত আমার কাছে। মাঝে মাঝে রাতে গ্রিল খেতে যেতাম মগবাজার থ্রিস্টারে। খাওয়া দাওয়া শেষে মগবাজারের ফুটওভার ব্রিজের উপর দাড়িয়ে থাকতাম, দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখতাম ব্যাস্ত শহরে আটকে থাকে একটুকরা ছোট্ট জীবন।

মগবাজার আর বাংলামোটরের জ্যাম ২০০৬ থেকেই আমাদের সাথে নিত্যসংগী। কখনও জ্যাম বাড়ে, কখনও জ্যাম কমে, আমি এর ভিতরই অভ্যস্ত হই ঢাকার জীবনের সাথে।২০১২ সালের শেষের দিকে আমি এমবিএতে ভর্তি হওয়ার আগে আগে তমা কনস্ট্রাকশন এসে ইস্কাটনের রাস্তা খোড়াখোড়ি করা শুরু করে। তখনই প্রথম জানতে পারি এখানে সরকার বিশাল এক ফ্লাইওভার বানাবে, আর কোন জ্যাম থাকবে না মগবাজার, বাংলামোটরে। শুনে বেশ খুশি হই আমি, খুশি রেশ কাটতে সময় লাগে না, তমা কনস্ট্রাকশনের কর্মীরা অর্ধেক রাস্তা দখল করে খোড়াখোড়ি করে, আর রাস্তার পাশে ফেলিয়ে রাখে তাদের যন্ত্রপাতি। ফুটপাত আগে থেকেই দখলে ছিল গাড়ি ব্যাবসায়ীদের, রাস্তায় গাড়ি রেখে কাজ করার মত জায়গা না থাকায় তারা ফুটপাত ভেঙ্গে সমান করে ফেলে গাড়ি রাখার জন্য। ২০১২-১৩ সালের দিকে ইস্কাটনকে মনে হত ওয়েস্টার্ন মুভির শুটিং লোকেশন, রাস্তার চারপাশে ধূলা উড়তেছে আর তার ভিতর তমা কনস্ট্রাকশনের কর্মীরা কাজ করে চলছে। সেইসময় সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পরে অফিসে গেলে দিনশেষে যখন বাসায় আসতাম তখন দেখা যেত ধূলায় সাদা শার্ট কালো আর কালো প্যান্ট সাদা হয়ে গেছে। গরমের সময় তারপরও অনেক আরামে থাকতাম, বর্ষার মৌসুমে ধূলা আর পানি মিশে থিকথিকে কাদা তৈরী হত আর বাইরে বের হলেই সেই কাদা অবশ্যই পায়ের সাথে লেপ্টে যেত। প্যান্টে আর জুতায় এত কাদা লেপ্টে থাকত যে বাধ্য হয়ে অফিসে একজোড়া জুতা আর প্যান্ট রেখে দিতাম সবসময়।

সেই সময় মগবাজার থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত বিশাল জ্যাম লেগে থাকত সবসময়, মগবাজার থেকে সাতরাস্তা পার হতেই ঘন্টাখানেক সময় লেগে যেত। হাতিরঝিলে তখনও বাস অথবা বোট সার্ভিস চালু হয় নাই। আমার অফিস গুলশানে হওয়ায় প্রতিদিন আমাকে এই রুটেই অফিসে যেতে হত। ২০১৩ সালের দিকে আমি চাকরির পাশাপাশি এমবিএ শুরু করি, শিফটিং চাকরি হওয়ায় ২;৩০-৩ টার দিকে অফিস শেষ হয়ে যেত। ব্রাকে এমবিএর ক্লাস থাকত সাড়ে ছয়টায়, বিশাল জ্যামের ভয়ে অফিস শেষে বাসায় আসতাম না, ব্রাকের লাইব্রেরিতে যেয়ে ঘুমাতাম। ক্লাস শেষে ১০ টার দিকে যখন বাসায় ফিরতাম তখন আবার সেই সাতরাস্তার জ্যাম, কতদিন যে সাতরাস্তা থেকে হেঁটে হেঁটে বাসয় এসেছি তার ঠিক নাই।

৬ বছর কস্ট করার পরে ২০১৭ সালে দুইতালা এই ফ্লাইওভার খুলে দেওয়া হ্য়, একতলা ফ্লাইওভার দিয়ে ওয়ারলেস মোড়ে যাওয়া যায় মগবাজার সিগনালে না পড়ে, যদিও খুব কম গাড়ি এই ফ্লাইওভারে উঠে। দ্বিতীয়তলা দিয়ে রাজারবাগ মৌচাক থেকে গাড়ি এসে নামে ইস্কাটনে। এর ফলে উপরের এবং নীচের গাড়ির চাপে ইস্কাটনে একটা bottleneck এর সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে সারাদিনই বাংলামোটর থেকে দিলু রোড পর্যন্ত একটা বিশাল জ্যাম লেগে থাকে। ফ্লাইওভার এর নীচে প্রতিদিন এলাকার বড় ভাইদের সিস্টেম করে কাঁচা বাজার বসে, মাছ মুরগির গন্ধে ওখান থেকে চলাচল করা দায়, কয়েকদিন আগে দেখলাম কে জানি ফ্লাইওভার এর নীচে দেয়াল দিয়ে দিয়ে ছোট ছোট ঘর বানিয়েছে, ছোট খাট একটা বস্তি গড়ে উঠেছেে সেখানে, ফ্লাইওভারের নীচে গাড়ি পার্কিংয়ের বিশেষ ব্যবস্থা আসে, যদিও জানি না এই পার্কিংয়ের টাকা কার কাছে যায়, গাড়ি ব্যাবসায়ীরা এখন ফুটপাতের পাশাপাশি ফ্লাইওভারের নীচের জায়গাও দখল করেছে গাড়ি মেরামতের জন্য ।

সুন্দর একটা রাস্তা ছিল ইস্কাটনে, জ্যাম ছিল কিন্তু এখনকার থেকে কম ছিল, কাঁচা বাজার ছিল না, বস্তি ছিল না কিন্তু হাঁটার জায়গা ছিল, আকাশ দেখার সুযোগ ছিল। আমার বাসার সামনে ছোট একটা রাস্তা আছে, সেখানে রাতের বেলা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাঝে মাঝে আমি ১২১৮ কোটি টাকার ফ্লাইওভার দেখি, ফ্লাইওভাররে উপরে আটকে থাকা গাড়িগুলি দেখি, ঠিক যেন বার বছর আগের ব্যাস্ত শহরে আটকে থাকে একটুকরা ছোট্ট জীবন।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:২৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×