ছোট বেলায় আব্বা খুব মারত, একটু দেরি করে বাসায় ঢুকলেই শুরু হয়ে যেত বাপের বেধম মার, বাবা-মায়ের একগাদা রেস্টিকশানে ঘেরা সাথে বাপের মাইর আমাকে অস্থির করে তুলতো, নিজেকে খাঁচার বন্দী প্রানীর মত লাগত, প্রায় সময়ই মনে হত বাসা ছেড়ে পালাই কিন্তু সেখানেও ভয় কাজ করত। মনে হত কোন ভাবে যদি আমাকে খুঁজে পায় তাহলে তো বাপে মাইরা কিছু রাখবোনা, হাড্ডি-গুড্ডি এক কইরা ফালাইবো। একদিকে আমার বয়ঃসন্ধি অন্যদিকে বাপের মাইর আর মায়ের সবসময় বিপদজনক সংকেত আমাকে পাগল করে তুলতো, প্রচন্ড মানসিক চাপে ভুগতাম। তখন মনে হত বড় হয়ে বাপের মাইরের প্রতিশোধ নিমু।
ছোট ছিলাম তাই অনেক কিছু পর্দার আঁড়ালে পরে থাকত। মানসিক শান্তির আশায় প্রায় সময়ই বন্ধুরা মিলে ক্লাশ ফাঁকি দিয়ে স্কুলের পাশে থাকা এক খালার দোকানের পেছনে গিয়ে টিট্টট্টট্টট্ট পান করতাম, আর মাসে এক দুইটা হলে গিয়ে ছবি দেখা সেটা তো ছিল ঐ বয়সের সবচেয়ে আকাংখিত এবং আকর্ষণীয় বিষয়। প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য সকল ব্যবস্থা সাথেই থাকত- যেমনঃ ব্যাগের মধ্যে সবসময়ই একটা বাড়তি জামা রাখা, (কারন স্কুল ড্রেস পরে সিনেমা হলে ঢুকতে দিতনা), যখন-তখন টাকা ধার করার জন্য এক বড় ভাইকে হাত করে রাখা, সিনেমা হলের কাউন্টার ম্যানের মোবাইল নাম্বার রাখা (কখন কি ছবি চলছে খবরটা রাখতে হত, টাকাটা উঠবে কিনা সেটাও একটা প্রশ্ন স্বাপেক্ষ বিষয়)। সেই সাথে অদ্ভূত ভাবে ম্যাডামদের প্রেমে পড়া, তাদের নিয়ে নানান চিন্তা ভাবনা করাটা মনে হয় বয়সের দাবীই ছিল। বাবা-মার চোঁখকে ফাঁকি দেয়াই ছিল তখন প্রধান বিষয়। আসতে আসতে মিথ্যা বলা ও অনেক কিছুই গোপন করতে শিখলাম। দূরত্ব তৈরি হতে লাগল পরিবারের সাথে এবং ক্লোজনেস বাড়তে লাগল বন্ধুদের সাথে। এভাবেই একটা ছেলের জীবন গড়ে ওঠে, স্বাভাবিকভাবেই তারা আড্ডা আর বন্ধু-বান্ধবদের প্রাধান্য বেশি দেয়, অনেকটা সময় ঘরের বাইরে কাটায় বলেই দয়া-মায়া, আবেগ-সেন্সিটিভিটি এসব বিষয় আমাদের খুব কম কাজ করে, আবার কমটুকু অপ্রকাশিত থেকে যায়। আমি প্রায় সময়ই সেই সব বন্ধুদের মিস করি যারা আমার অনেক অপকর্মের নিরাপদ স্বাক্ষী।
আসলে সত্যি বলতে কি, বাবা-মায়ের প্রতি আমার কোন আক্ষেপ নেই। তবে তাদের অত্যাধিক শাসন আর রেস্টিকশান আমার মেধা বিকাশকে কিছুটা অব্যাহত করেছে, প্রতিটা পদে পদে আমাকে ভীত করে তুলেছে, এখন বুঝি তখনকার সময়ে বাবা-মায়ের রেস্টিকশানের কারন এবং কম বেশির পরিমাপটাও করতে পারি। শাসন টা একটু বেশি ই ছিল, হয়তো একটু কম হলে এখন আরেকটু সাহসী থাকতাম, জীবনবোধ টা আরেকটু আগেই বুঝতাম।
এই লেখাটার উৎস বলে নেয়াটা জরুরী মনে করছিঃ
মুভি #ফড়িং অসাধারন একটা ছবি, যতখন দেখেছি মনে হচ্ছিল আমি আমার শৈশবের চিত্র আমার চোঁখের সামনে দেখছি। শৈশবের প্রতিটা চিত্র আমার চোঁখের সামনে প্রতিফলিত হচ্ছিল। সকল পুরুষ জাতিকে মুভিটা দেখার জন্য অনুরোধ করা হল (তাই বলে মেয়েরা দেখতে পারবেনা এমন কোন কথা নেই)।
লিংকঃ https://www.youtube.com/watch?v=NfhqsQ9rLL
উৎসর্গঃ নিরাপদ ভ্রমন কে .। এই নিরাপদ ভ্রমন আমি নিজেই, এখন সেভেন্থ সেন্স নামে চালাচ্ছি, টেকনিক্যাল সমস্যার কারনে আমি আমার আগের ব্লগে ঢুকতে পারছিনা।