#পর্ব-১
বরাবরের মতই রাস্তার এপাশ থেকে চার তলা বিল্ডিং এর দিকে তাকিয়ে আছি আমি, আমার চোঁখ কখনও ছাঁদের দিকে আবার কখনও দোতলার বেলকুনিতে। চোঁখের অহর্নিশ পাহারা ও প্রখর দৃষ্টি বিল্ডিং-এর ছাঁদ কিংবা দোতলার বেলকুনি একটা তেলাপোকাও পালিয়ে যেতে পারবেনা। আমি অবশ্য তেলাপোকা দেখতে কিংবা বাড়ি পাহারা দিতে আসিনি, এসেছি তেজস্বিনীর খোঁজে। সপ্তাহে অন্তত একদিন নিয়ম করে এ কাজটা আমায় করতে হয়। গত একবছর ধরেই চলছে, কখনও সকালে, কখনও বিকেলে, আবার কখনও তেজস্বিনীর প্রতিদিনকার চলার পথে। আগে নিয়মিত দেখা হলেও গত চার মাস যাবত তার কোন দেখা পাওয়া যাচ্ছেনা। জীবনের টানে তার চলার পথের চলাটাও বন্ধ হয়ে গেছে আমার।তেজস্বিনীর মুখ খানি দেখার আশায় গত চার মাস ধরেই আমি অন্তরালে হাসিমুখে এখানে আসি ঠিকই কিন্তু গোমড়া মুখে ফিরে যাই।
বিকেল বেলার স্নিগ্ধ রোদের ঝলকানি আরমৃদু বাতাস, সেই সাথে তেজস্বিনীকে একটুখানি দেখার আকুল ইচ্ছা ও উচ্ছলতার ছাপ আমার চেহারায় আমি দেখতে না পেলেও চেহারার উপর যে প্রতিফলিত হয়েছে সে ক্ষেত্রে কোন সন্দেহ নেই। আজকে তো তেজস্বিনীর দেখা পাবোই, প্রতিদিনই আমার সেই একই আত্তবিশ্বাস...।একটু পর পর এদিক-ওদিক ব্যাস্ত ভঙ্গিতে হাটাহাটি সেই সাথে ছাঁদ আর বেলকুনির দিকে কড়া নজর আমার চোখকে একটুখানি শান্তি দিলনা, নজর এড়ালোনা বেলকুনির পাশের জানালাটার দিক থেকেও। দু’ঘন্টা পার হয়ে গেল মুখ গোমরা হতে শুরু করেছে আমার, আস্তে আস্তে চারপাশ অন্ধকার হতে থাকলো, পাশের দোকান থেকে একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে টানতে বাসার দিকে রওনা হলাম।
#পর্ব-২
সপ্তাহের শেষ দিন আজকে, ছয় দিনের ক্লান্তির বিশ্রাম হিসেবে আরেকটা ছুটির দিন মনকে খুশিতে ভরিয়ে দিল। খুশি বিস্রামের কারনে নয়, খুশি এই কারনে যে কালকে আবার তেজস্বিনীকে দেখতে সেই চারতলা বিল্ডিং এর নিচে যেতে পারবো। পরদিন বিকেল বেলা বরাবরের মত চেহারার উপর প্রতিফলিত উচ্ছলতা নিয়ে বিল্ডিং এর নিচে রাস্তার পাশের দোকানটায় দাঁড়ালাম, যেখান থেকে আমাকে আমি আঁড়াল করে রাখতে পারবো, আসলে আমি চাই না তেজস্বিনী আমাকে দেখুক,লুকিয়ে তাকে একটুখানি দেখার উদ্দেশ্যেই আমার এখানে আসা। দোকানের পাশে দাঁড়াতেই দোকানদার রূটিন মাফিক চিনি ছাড়া চা আর একটা বেনসন সাদা এগিয়ে দিল। অতঃপর চায়ে চুমুক, সিগারেটের তীব্র টান আর অপেক্ষাকে সুখময় করার অপেক্ষা............
হঠাত করে জানালার পর্দা নড়ে উঠলো, আমার ভেতরটা চমকানোর অপেক্ষায় ধুক ধুক করতে লাগলো, আমার দৃষ্টি কঠিন থেকে কঠিনতর হতে শুরু করলো...কিন্তু না, আশেপাশে তাকিয়ে দেখি প্রচন্ড বাতাস শুরু হয়ে গেছে আকাশে ঘন কালো মেঘ জমেছে, ঝলমলে বিকেল তার উজ্জ্বলতা হারাতে বসেছে। পরিবেশ সম্পূর্ণ প্রতিকূলে যাওয়া সত্ত্বেও আমার মধ্যে ক্ষুদ্র একটা ভালোলাগা কাজ করতে লাগলো, তেজশ্বিনীকে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে লাগলো। তার কারন হল বৃষ্টি আমার এবং তেজস্বিনী দু’জনেরই খুব পছন্দের। ভাবতে ভাবতে একেবারে ঝুম বৃষ্টি নেমে গেল, আর আমার সম্ভাবনার পারসেন্টেজও বাড়তে লাগলো। মুহূর্তের মধ্যে কাঁক ভেজা হয়ে গেলাম কিন্তু আমার সেদিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল নাই, আমার দৃষ্টি এখনও পড়ে আছে বেলকুনি আর ছাঁদের দিকে। দেখতে দেখতে সাড়ে তিন ঘন্টা পার হয়ে গেল তেজস্বিনীর দেখা মিললো না। চারপাশের পরিবেশ তার রং হারাতে লাগলো, আমি অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছি। মনের মধ্যে প্রচন্ড রাগ আর বিষন্নতা বোধ এবং সেই সাথে আর আসবোনা বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে বাসায় ফিরে গেলাম.........।
#পর্ব-৩
রাত ১১টা রূমে বসে আছি, প্রায় একমাস হয়ে গেল আমি তেজশ্বিনীকে দেখতে যাইনা... আবছা আলো আর অন্ধকারে জ্বলন্ত সিগারেট হাতে পেছনের স্মৃতি হাতরাতে লাগলাম কত সুন্দর সময়ই না পার করেছি, কতবার আমার জোড়াজুড়ি আর তার নীরব সম্মতিতে কয়েকবার আমরা একসাথে রিকশায় ঘুড়েছি। হাতে ফোন, ফোনে তেজস্বিনীর নাম্বার সেভ করা, কিন্তু প্রচন্ড ভালোবাসা কাজ করা সত্ত্বেও তার কোন একনা বলা কারনে ফোন দিতে পারছিনা। শেষবার শুধু এইটুকু বলেছিল আপনি আর আমাকে কখনও ফোন কিংবা এস এম এস করবেন না। তার কারন আমি এখনও খুঁজে পাইনি, নিজের কিছু পিছুটান আর বাধ্য বাধকতার কারনে হয়তো আমিও খোঁজার চেষ্টা করিনি, ভাবতে ভাবতে বিছানায় শুতে গেলাম। হঠাত ফোন বেঁজে উঠলো। ফোন হাতে নিতেই দেখি তেজস্বিনীর ফোন, আমি কি করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কারন এটা অসম্ভব একটা ব্যাপার যে তেজস্বিনী আমাকে ফোন দিবে, একই সাথে অবাক এবং খুশি দুটোই আমার শরীর কে শিহরিত করলো। নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে ফোন রিসিভ করতেই-
আমিঃ হ্যালো।
তেজস্বিনীঃ ......(চুপ)।
আমিঃ (আবার বললাম)...... হ্যালো।
তেজস্বিনীঃ ......(কিছুক্ষন চুপ থেকে) প্রচন্ড রকমের অভিমান নিয়ে বলল- আপনি গত একমাস আসেননি কেন???
আমিঃ আমি আকাশ থেকে পড়লাম, আমার বাকরূদ্ধ হয়ে গেল।
তেজস্বিনীঃ প্রতিদিন আমি জাঁনালা দিয়ে তাকিয়ে থাকি কিন্তু আপনি আসেন না। সেই প্রথম থেকে আপনাকে আমি খেয়াল করে আসছি, এমনও হয়েছে আপনি আসার আগেই আমি জানালার কাছে চলে গেছি, আপনার একটু দেরীতে অস্থিরতা বোধ করেছি, গত এক মাস আমার অনেক কষ্টে কেটেছে আপনাকে দেখতে না পেয়ে (কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বলতে থাকে তেজস্বিনী) ...
আমিঃ কথাগুলো আমার কানে বাঁজতে থাকে, আমি নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, আমি ঘোরের মধ্যে পড়ে যেতে লাগলাম। আশেপাশের কোনকিছুই আমার মাথায় ঢুকছিলনা। সব কিছুই অস্পষ্ট মনে হচ্ছিল......
এমতাবস্থায়, হঠাত করে জোরে একটা শব্দ হল, আমি আচমকা লাফ দিয়ে উঠে জাঁনালার দিকে তাকিয়ে দেখি বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে, বাতাসের ধাক্কায় জাঁনালা বারি খাচ্ছে। মিনিট দুয়েক ব্রেইন কাজ করছিলনা, আমি জানালার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছি। তার মানে আমি এতক্ষন ধরে স্বপ্ন দেখছিলাম!!!! একরাশ নিরাশা আমায় চেপে বসল, নিজেকে খুব অসহায় মনে হতে লাগলো
উৎসর্গঃ তেজস্বিনীকে (ইহা একটা ছদ্দনাম)