মোটরাইজড রিক্সা গুলো কেন বন্ধ করে দেওয়া হলো? সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ওয়ালাদের পকেট আরো ভারী করার জন্য? প্রশাসন আজ পর্যন্ত ওদেরকে মিটারে চালাতে রাজি করাতে পারলনা অথচ সিএনজিওয়ালারা যাত্রীদের আরো জিম্মি করার জন্য মোটর চালিত রিক্সা গুলো হটানোর জন্য আদালত কে ব্যবহার করে প্রশাসনকে একরকম রাজি করে ফেলেছে। সাধারণ মানুষ জানতে চায় সিএনজি চালিত অটোরিক্সাগুলোকে মিটারে চালাতে আদালত কখন রুল জারি করবে আর প্রশাসন কবে তার বাস্তবায়ন নিয়ে তৎপর হবে।
মোটরাইজড রিক্সা গুলোর বিরুদ্ধে শোরগোল তোলার জন্য সিএনজি সিন্ডিকেটে ও প্রশাসন যন্ত্রের মুল অজুহাত হলো ২টাঃ
১। মোটর চালিত রিক্সার ব্যাটারি রিচার্জ করতে নাকি অনেক বিদ্যুৎ খরচ হয়ে যায় এবং তাতে দেশে লোডশেডিং সৃষ্টি হচ্ছে।
২। মোটরাইজড রিক্সা গুলোর চালনায় দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অনেক দুর্ঘটনার জন্ম দেয়।
প্রথম অভিযোগটি সর্বসই ভুয়া। এই অভিযোগটা যে কত বড় অসাড় একটা যুক্তির উপর তা একটু ভাবলেই যে কেউ বুঝতে পারবে। আমরা ঘর বাড়ীতে যে ধরণের ব্যাটারি আইপিএসে ব্যবহার করি সেই একই রকম ও সমান সংখ্যক (২টা বা ৩টা) ব্যাটারি ব্যবহার হয় মোটরাইজড রিক্সাতে। যে সব দরিদ্র মানুষেরা এই রিক্সা গুলো চালায় তারা নিশ্চয় তাদের ঘরে আইপিএস ব্যবহার করেনা, যদি তাদের সবাই একটা রিক্সার বদলে ঘরে একটা করে আইপিএস ব্যবহার শুরু করত তাহলে কি প্রশাসন তা বন্ধ করার কোন এক্তিয়ার রাখত? যারা ইলেক্ট্রিকস সম্পর্কে সামান্য খবরও রাখেন তারা জানেন যে অভিজাত পরিবারের একটা এয়ার কন্ডিশনারের দৈনিক খরচ হওয়া বিদ্যুৎ দিয়ে ডজন খানেক মোটর রিক্সা দিনে দুবার চার্জ দেওয়া যায়। আর বড় বড় কল কারখানায় এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানে সিস্টেম লসের নামে চুরি হওয়া রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিদ্যুৎ এর টাকায় মাসে কত শত কোটি টাকা পিডিবি কর্মচারী, কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মিনিস্ট্রি পর্যন্ত সবার পকেট গরম করছে তার বিষয়ে দেশের মানুষ মোটেই বেখবর নয়। অথচ আপনারা সেসব বিশাল বিশাল পরিমাণের বিদ্যুৎ চুরি নিয়ন্ত্রণ না করে নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একটা জনপ্রিয় ও তুলনামুলক দ্রুত যাতায়াতের বাহন বন্ধের বুর্জোয়া টাইপ সিদ্ধান্ত গ্রহন করছেন!
২য় অভিযোগটিতে কিছুটা সত্যের স্পর্শ আছে তবে তা বর্তমানে আর সত্য নয়। প্রশাসনের কেউ কি গত ৬ মাসের সড়ক দুর্ঘটনার এমন একটা সার্ভে রিপোর্ট দেখাতে পারবেন যাতে মোটরাইজড রিক্সাজনিত দুর্ঘটনা অন্য যানবাহন থেকে বেশী? জানি, পারবেন না। আগের গতানুগতিক কাঠ বাশেঁর রিক্সা বডিতে মোটর বসানোর বদলে এখন মেটাল মেইড মোটরাইজড রিক্সা বের হয়েছে এবং তাদের সংখ্যাই বর্তমানে বেশী। আশ্চর্জজনক হলেএ সত্য যে, ইদানিং মোটরাইজড রিক্সার অনেক উন্নত সংস্করণও বের হয়েছে যেগুলোতে মোটর সাইকের চাকা ও উন্নত শক্ এবজর্বার সহ চেচিস ব্যবহার হয়েছে আর সাথে আছে ড্রাম এবং হাইড্রলিক ব্রেক সিস্টেম।
প্রশাসনযন্ত্র মোটরাইজড রিক্সার তৈরি ও চালনার কোন আইন বা নীতিমালা না করে বরং এগুলো বন্ধের যে হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সিএনজি অটো রিক্সা চালকদের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্ব্যবহার কে উৎসাহ দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করবেনা। আর এসব কেবল দেশের বিশাল নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষসহ সহ সকল যাত্রীদের প্রাত্যহিক জীবনকে দিনে দিনে আরো দুর্বিষহ করে তোলবে।