somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হোটেল মধুমতিঃ পর্যটন কর্পোরেশনের পতিতালয়

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হোটেল মধুমতিঃ পর্যটন কর্পোরেশনের পতিতালয়

আমার অফিসের কাজে ১৭ জনের একটি টিম নিয়ে গোপালগঞ্জ যাব। কোথায় থাকবো সেই বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখলাম গোপালগঞ্জ জেলা সদরে ১৭ জনের জন্য কোন হোটেল কিংবা কোন গেস্ট হাউজ নেই। খুজতে খুজতে পেয়ে গেলাম হোটেল মধুমতি নামের পর্যটন কর্পোরেশনের একটি হোটেল গোপালগঞ্জ থেকে ১৮ কিলোমিটার দুরে টুঙ্গিপাড়ায়। একটু আশ্বস্ত হয়েছি থাকার ব্যবস্থা করতে পেরে। যতটুকু মোবাইলে কথা বলে জানতে পেরেছি হোটেলটিতে এসি রুম আছে, নন এসি রুম আছে, আর আছে ডরমেটরী, প্রতি রুমে ৪ জনের থাকার ব্যবস্থা।

এর আগে কখনও টুঙ্গিপাড়ায় যাইনি। ভবলাম এই সুযোগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বাড়িও দেখা হবে। প্রথমে বেশ খুশি খুশি লাগছিল। অবশেষে চলে এলাম সেই মধুমতি হোটেল। হোটেলটি পর্যটন কর্পোরেশনের। ২০০১ কালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছিলেন। এসে উঠেছি সন্ধ্যার পরে। থানার পাশেই হোটেল। সেরাত্রে হোটেলের বিভিন্ন রুম নিয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম। পড়দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে রুমের বাইরে বের হয়ে খুব ভালো লাগলো। রুমের সামনে একটি ফাঁকা ছাদ, দাড়ালেই ফুরফুরে বাতাস। আগামীকাল পহেলা ফাল্গুন। নীচে তাকালেই দেখতে পাচ্ছি কিছু গাছপালা লাগিয়ে সৈন্দর্য্য বর্ধনের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে অযত্ন আর অবহেলার কারনে সেই সৈন্দর্য্য কিছুটা ব্যহত হয়েছে। গাদা ফুল ফুটেছে। ঢাকায় থাকলে এরকম একটি সকালও আমার দেখা হয় না। এরকম সকাল সর্বশেষ দেখেছিলাম আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকাকলীন সময়ে। কেন জানি মনে হচ্ছিল অবকাশ যাপনে এখানে এসেছি, এক প্রকার ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে দিনটি শুরু করলাম। সকালে নাস্তা করলাম। সরাদিন হোটেলেই ছিলাম। যতই সময় থাকছি ততই ফুরফুরে মেজাজটা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। রুমের সামনের ছাদ থেকে রুমে এসে নাস্তা করে রুমের পিছনের দিকে এসে প্রথমে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। এমন এক দৃশ, যে কারো মেজাজ হয়ে যাবে। বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালাম, চারদিকে গাঢ় সবুজ গাছ। গাছে একটা হলুদ পাখি। একটু নিতে তাকাতেই দেখি একটি ছোট গাছ গাছের নীচে ময়লার স্তুপ। গাছের ডালেও ময়লার স্তুপ। গাছের নীচে ও গাছে শতশত কন্ডমের প্যাকেট ও কন্ডম। বুঝতে একটুও সময় লাগলো না যে রুমে ডাস্টবিন নেই। রুমে ঢুকে দেখি সত্যি সত্যি কোন ডাস্টবিন নেই।

দুপুরের খাবারে অর্ডার দিয়েছিলাম আগেই। এখানেই রান্না করে খাওয়াবে। বাইরে ভালো মানের খাবার হোটেল আছে বলে মনে হচ্ছে না। দুপুরে সবাই খেলাম। খেয়ে যখন বিল দিতে গেলাম তখন আরও মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেল। পর্যটন হোটেলে ১ লিটার ফ্রেশ পানির দাম ৩০ টাকা। আমরা ২ লিটার ফ্রেশ পানির বোতল নিয়েছিলাম। ওরা দাম ধরেছে ৬০ টাকা। আর একটি মুরগী আমাদের আট পিস্ করে খাইয়েছে সেই মুরগীর মাংসের দাম ধরেছে প্রতি পিস ১৭৫ টাকা, অর্থাৎ একটি পুরো মুরগীর দাম ১৪০০ টাকা। আমিতো আকাশ থেকে পরলাম। ওদেরকে এমন ভুতুরে বিলের কারন জানতে চাইলে জানালো এখানে সরকারী রেইট এটাই। আমি এতদিন জানতাম সরকারী বিভিন্ন স্থানে বেসরকারীর চেয়ে দাম কম হয়। যেমন শহরে যে কোন এসি হোটেলে থাকলে কমপক্ষে ৭০০ টাকা আর সরকারী কোন গেস্ট হাউজে থাকলে ৭০ টাকা মাত্র। আর এই পর্যটনের মধুমতি হেটেলে পুরো উল্টো। আমি যে রুমে উঠেছিলাম সেই রুমের ভাড়া ভ্যাট সহ ৮০৫ টাকা। এই কোয়ালিটিরে রুম বেসরকারী উদ্যোগে টুঙ্গিপাড়ায় হলেও এই ভাড়া হইতো সর্বোচ্চ ৪শ টাকা। অথচ আমাদের দিতে হচ্ছে দ্বিগুন। তার পরেও পুরো টিম একসাথে থাকবো সে আশায় থেকে গেলাম।

সন্ধ্যার পরে দেখলাম আরেক চিত্র। গত কালকেও একই চিত্র ছিল, তখন বেভেছিলাম কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠান ছিল সেজন্য বোধ হয় একটু লোকজন বেশি। কিন্তু আজকে দুপুরে যে চিত্র দেখেছি, আর এখন যে চিত্র দেখছি তাতে আর বিন্দুমাত্র বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না যে, আমরা একটি হোটেলে নয় সরকার পতিতালয়ে উঠেছি। মোটরসাইকেলে করে কেউ আসছে কেউবা প্রাইভেট কার কিংবা মাইক্রোতে করে আসছে। এই হোটেলে শুধুমাত্র পতিতা আসে তা নয়, জুয়া থেকে শুরু করে সব কিছুই হয়। অর্থাৎ আমাদের মত যারা থাকতে আসবে তাদের কে দেখার মত সময় এই হোটেলে কারও নেই। কর্মচারী থেকে শুরু করে সবাই যেন একটু জমিদার ধরনের। কোন কিছু বললে সেটি করতে কমপক্ষে একঘন্টা সময় লাগে। রুমে পানি না থকলে পানির মেশিন দিতে, ডাস্টবিন চেয়েছিলাম সেটাও দিতে একঘন্টা সময় লেগেছিল। রুম পরিস্কার করার কোন নামগন্ধই নেই। যতদিন একজন গেস্ট থাকুক না কেন, না বলা পর্যন্ত তারা রুমেই আসে না, পরিস্কার করা তো পরে। পরে হোটেল ম্যানেজারকে ডাকলাম। সে আবার সরকারী লোক ডাক দিলেও আসলেন একঘন্টা পরে। ওনাকে বললাম আপনার হোটেল এত অপরিস্কার অপরিছন্ন আর এমন অব্যবস্থাপনা কেন? উনি জবাবে বললেন এখানে তাদের স্টাফ অনেক কম আর হোটেলে লোক অনেক বেশি। প্রতিরাত্রেই হোটেলে লোকজন পূর্ণ থাকে। আমি বললাম, দিনে তো দেখি কেউ নেই, রাতে এত লোক আসে কোথা থেকে? সে বললো বিভিন্ন স্থান থেকে সরকারী বেসরকারী লোকজন আসে। এত লোক আসলে তো আমাদের থাকতে দিতেই হয়। ওনার সাথে আরও কিছুক্ষণ কথা বললাম, তাতে যা বুঝলাম আমাদের মত লোক তাদের হোটেলে আসলে তাদের জন্য একটু অসুবিধা। সেজন্য হোটেলে খাবারের বিল কমানো তার পক্ষে সম্ভব নয়। পরোক্ষ ভাবে আমাদেরকে তাড়াতাড়ি হোটেল ছাড়াতে ইঙ্গিত দিলেন।

দু’দিন দিনের মধ্যে এই পতিতালয়ের বিষয়টি আমার টিমের সবাই জানার পরে আমার কাছে অভিযোগ করতে লাগলো। শেষে কোন উপায় না দেখে ৭ দিনের কাজ ৫ দিনে সম্পন্ন করে কোন রকমে সেখান থেকে চলে এসেছি।

ভাবতে অবাক আগে! হোটেলের প্রাচীরের সাথেই থানা তার পরেও এখানে চলে অবাধে এসব অবৈধ কর্মকান্ড। দেখার কেউ নেই। জাতির জনকের টুঙ্গিপাড়াকে এভাবে অপবিত্র করে ফেলেছে এখানকার স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু লোক ও পর্যটন কর্পোরেশনের কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×