রক্ত কি?
রক্ত লাল বর্নের তরল যোজক কলা। রক্ত সামান্য ক্ষারীয় ।এর PH গড়ে ৭.৩৬-৭.৪৫ । রক্তের তাপমাত্রা (৩৬-৩৮)'C । রক্তের আপেক্ষিক গুরুত্ব ১.০৬৫ রক্তদান কিঃকেউ যখন স্বেচ্ছায় বিনাশর্তে নিজ রক্ত অন্য কারো স্বার্থে দান করেন তাকে রক্তদান বলা হয়| তাই ১৮ বছরের নিচে এমন কারো রক্ত নেয়া নিরুত্সাহিত করা হয়েছে| বর্তমানে 17 বছর হলেই রক্তদেয়ার উপযুক্ত বলে ধরা হয়|
কতদিন পর পর রক্ত দেওয়া যায়ঃ
একজন পূর্নবয়স্ক সুস্থ মানুষ কতদিন পরপর রক্ত দিতে পারবেন এটা তার শারীরিক অবস্থার পাশাপাশি দেশের আইনের ওপরও নির্ভর করে| যেমন- আমেরিকায় ৮ সপ্তাহ (56দিন) পরপর রক্তদান করা যায়| আবার বাংলাদেশে প্রতি 3 মাস পরপর রক্তদান করাকে নিরাপদ ধরা হয়ে থাকে| কারন ৩ মাস/১২০ দিনের মধ্যেই আমাদের শরীরে রক্তকনিকা গুলো আবার জন্মে যায় ! তাই স্বাভাবিকভাবেই আপনি ৩ মাস পর আবার রক্ত দিতে পারবেন
রক্তদাতার যোগ্যতা:- বয়স ১৮+ হতে হবে- ওজন অবশ্যই ৪৮কেজি হতে হবে- শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে- রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকতে হবে (এটা ওরাই চেক করবে)
প্রতিবার কতটুকু রক্ত দেওয়া যায়ঃ
একজন মানুষের শরীরে সাধারনত 5-6 লিটার রক্ত থাকে (আপনার শরীরের মোট ওজনের ৮% )| রক্তদানের সময় সাধারনত 400-450 মিলিলিটার রক্ত দান করা হয়| অর্থ্যাত্ শরীরে থাকা রক্তের 10 ভাগের 1 ভাগ| এ কারনে অধিকাংশ রক্তদাতা রক্তদানের পর তেমন কিছুই অনুভব করেন না| যে পরিমান রক্তের তরল অংশ নেওয়া হয় সেই তরল অংশ মাত্র 24 ঘন্টার মধ্যেই আগের মত হয়ে যায়|
রক্তদানে কোন ক্ষতি আছে ?
না । কিন্তু তারপরেও আমাদের দেশের একটা বড় জনগোষ্ঠী বিভিন্ন ধরনের ভ্রান্ত ধারনা থেকে রক্তদানে আগ্রহী নয়| অথচ একটু সচেতন হলে রক্তের অভাবে কোন লোক মারা যাবেনা| আমাদের এক ব্যাগ রক্ত হাসি ফোটাতে পারে একজন মায়ের, একজন বাবার, একজন স্ত্রীর, একজন সন্তানের| হয়তো আমাদের রক্তে বেঁচে যেতে পারে একটি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি| তাই আসুন একটু সচেতন হই, স্বেচ্ছায় রক্ত দান করি, ধরে রাখি হাসি আনন্দ|
রক্তদান একটি মহত্ কাজ| কারন রক্ত কোন ফ্যাক্টরিতে উত্পাদন হয়না| একজন মানুষই কেবল আরেকজনকে রক্ত দিতে পারে|
বাংলাদেশে বর্তমানে রক্তের চাহিদা রয়েছে প্রায় পাঁচ লক্ষ ব্যাগ| রক্তের চাহিদা পূরনের জন্য নিজে স্বেচ্ছায় রক্ত দান করা এবং রক্তদান কর্মসূচি গ্রহন একটি কার্যকর উদ্যেগ হতে পারে|
স্বেচ্ছায় রক্তদানের উপকারিতা/আপনার লাভ:
► রক্তদানের পর নিজেকে সুস্থরাখার স্পৃহা জন্মে।
► ৩/৪ মাস অন্তর-অন্তর রক্তদানের কারনে রক্তদাতার-রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা কমে যায়, তাই হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক কম থাকে।
► রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কারণ রক্তদান করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার শরীরের মধ্যে অবস্থিত ”বোন-ম্যারো” নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। নিয়মিত রক্তদানের কারনে শরীরে লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা বেড়ে যায়।
► নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে বিনা খরচে জানা যায় শরীরে রক্তের প্রবাহে কোন রোগ (হেপাটাইটিস- বি, হেপাটাইটিস-সি, এইচআইভি বা এইডস, ম্যালেরিয়া ও সিফিলিস) আছে কিনা (যা আলাদাভাবে করতে গেলে ৩০০০ টাকা খরচ হয়) অর্থাৎ প্রতিবার রক্তদানের মাধ্যমে আপনি নিজের সুস্থ্যতা যাচাই করতে পারবেন।
► রক্তদান ধর্মীয় দিক থেকে অত্যন্ত পুণ্যের বা সওয়াবের কাজ। পবিত্র কুরআনের সূরা মায়েদার ৩২নং আয়াতে আছে- ”একজন মানুষের জীবন বাঁচানো সমগ্র মানব জাতির জীবন বাঁচানোর মতো মহান কাজ”
► মুমূর্ষু মানুষকে রক্তদান করে আপনি পাচ্ছেন মানসিক তৃপ্তি। কারণ, এত বড় দান যা আর অন্য কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
► হয়তো একদিন আপনার নিজের আত্মীয়-স্বজনের কারো রক্তের প্রয়োজন হতে পারে, তখন ঐ দিন আজকে আপনি যাদের রক্তদান করেছেন তারাও আপনার বিপদের দিনে এগিয়ে আসবে।
► রক্তদানের পর মানসিক যে প্রশান্তি আসে তার স্বরূপ প্রকাশ করা সম্ভব নয়।কেউ কেউ আনন্দে কেঁদে ফেলে...। কারন সেই আনন্দ কোটি টাকা দিয়ে কেনা যায় না
বিডোনেটর.কম হচ্ছে রক্তদান এবং গ্রহনের জন্য একটি উন্মুক্ত মাধ্যম।