somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানসম্মত বই প্রকাশ কমে যাচ্ছে!

০২ রা মার্চ, ২০১৯ সকাল ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এবছর অমর একুশে বইমেলায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে মোটিভেশনাল বই। আর সেই বই কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে তরুণ প্রজন্ম। এটা কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য বড়ই লজ্বার বিষয়। তাহলে কী তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কনফিডেন্সের অভাব! হতাশা ও নিজেদের আত্মবিশ্বাসের অভাবের কারণেই কী তারা মোটিভেশনাল বইয়ের দিকে ঝুকছে!

অমর একুশে বইমেলায় এবারও প্রচুর নোটবই, গাইডবই বিক্রি হয়েছে। একাডেমির চোখের ডগায় এগুলো ঘটেছে। যা আসলে হবার কথা ছিল না। প্রতিবছর আমরা এসব বইয়ের ব্যাপারে কথা বললেও কোনো প্রতিকার নাই। বাংলা একাডেমি বছর ঘুরে আবারো নোট বইয়ের প্রকাশকদের বইমেলায় স্টল বরাদ্দ দেয়। যা খুবই হতাশাজনক।

যে সকল তরুণ প্রকাশক নতুন বই প্রকাশ করছেন, সেখানে পুরাতনদের মতোই প্রফেশনালজিমের দারুণ অভাব। তাদের নিজস্ব কোনো প্রুভ রিডার নেই। নেই কোনো এডিটর প‌্যানেল। যার কারণে মানসম্মত বই প্রকাশ করতে তারাও অনেকটাই ব্যর্থ। এর বিপরীতে মৌসুমী লেখকদের ভিড় আগের তুলনায় বেড়েছে। আবার এসব মৌসুমী লেখকদের প্রমোট করছে আমাদের মুর্খ গণমাধ্যম।

আমাদের সিনিয়র লেখকরা পয়সা খেয়ে বছর জুরেই আবার এসব মৌসুমী লেখকদের নানান পদক ও পুরষ্কার দিয়ে বেড়াবে। যা শেষপর্যন্ত সাহিত্যের জন্য বড় ধরনের জঞ্জাল সৃষ্টি করছে। সবচেয়ে আতংকের বিষয় হলো, লেখকরা সংঘ করে নিজেরা নিজেদের পুরষ্কৃত করে। আর সেখানে কতিপয় সিনিয়র লেখক থাকেন পয়সার লোভে অতিথি।

ঢাকার সাহিত্য সমাজে এখন যাদের নানান কিসিমের পুরষ্কার দেওয়া হয়, সেখানে ঘুরে ফিরে কয়েকজনই জুরি বোর্ডের তালিকায়। এরা কারো বই পড়েন না। যারা পুরষ্কার দেন তাদের ইচ্ছার প্রতিফলনের সাথে এসব সিনিয়র লেখকরা কণ্ঠ মিলিয়ে অনুষ্ঠান শেষ করেন।

জরিপে দেখা গেছে- যারা নিজেরাও জানে তাদের লেখা খুব দুর্বল, তারাই এসব সংঘ টংঘ করে বেড়াচ্ছে। আর পুরষ্কারের পেছনে ছুটছে। লেখালেখি জিনিসটা অনেক সাধনার। লাইফ টাইম নিজেকে সেই সাধনায় নিয়োগ করার ব্যাপার। এসেই চার-ছক্কা মেরে বিখ্যাত হয়ে গেলাম, ব্যাপারটি মোটেও তা নয়।

এর বাইরে এখন টাকাওয়ালারা বড় বড় প্রকাশকদের নানান কিসিমের ফন্দি ফিকিরে রাজি করিয়ে বই প্রকাশ করছেন। তাদের আবার সিনিয়র লেখকদের সার্টিফিকেটও লাগছে। বড় বড় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে এরা পাঠকদের বিভ্রান্ত করছেন। ব্যবসার খাতিরে বড় বড় প্রকাশকরা এসব খপ্পরে যোগ দিচ্ছেন। যা আসলে বাংলা সাহিত্যের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে।

ঢাকার সাহিত্য বাজারে এখন নানান কিসিমের জোট দেখা যায়। এক জোট আবার অন্য জোটের বিরুদ্ধে বছর জুড়েই লেগে থাকে। এর সাথে জড়িয়ে আছে কিছু সাহিত্যিক দালাল। নিজেরা কবি বা লেখক পরিচয়ে অন্যদের ক্ষতি করার কাজটি এসব দালাল দ্বারাই সবচেয়ে বেশি হচ্ছে। এরা বিভিন্ন টেলিভিশনে নিজেদের বিশাল সাহিত্য জ্ঞান জাহির করার চেষ্টা করেন। আসলে খালি কলসি বাজে বেশি টাইপের ব্যাপার।

মোদ্দাকথা, ঢাকাই সাহিত্য এখন অনেকটা দালাল নির্ভর। যার পক্ষে দালাল বেশি, তাদেরই সর্বত্র জয়জয়কার। সবচেয়ে ভয়ংকর দালালদের পাতা সেই ফাঁদে কণ্ঠ মিলাচ্ছেন সিনিয়র লেখকরা। না বুঝে না পড়েই সিনিয়র লেখকদের এই বদাভ্যাস যতদিন দূর না হবে, ততদিন এখানে ভালো সাহিত্যচর্চা হবে না।

সবচেয়ে আতংকের বিষয় হলো, তরুণদের যারা সাহিত্য চর্চা করছেন, তাদের পড়াশুনায় দারুণ অনিহা। সাহিত্যে অলরেডি কি কি লেখা হয়ে গেছে, সেই পুরান সাবজেক্ট আবার নতুন করে লেখার মধ্যে কোনো গড়িমা নেই। পড়াশুনা না করার কারণেই এটা তারা বুঝতে পারছেন না। ফলে বছর শেষে পঙ্গপালের মতো কবি-লেখকদের সংখ্যা কেবল বাড়ছে।

বাংলা একাডেমি'র এ বিষয়ে যতটুকু খবরদারি করার কথা, তারা সেটি ভুলেও করছে না। কোনো প্রকাশককে ডেকে তারা এসব বিষয়ে জবাবদিহি চাইছে না। ফলে মান সাহিত্যের যে একটা ব্যাপার আছে, সেটি দিনদিন লোপ পাচ্ছে। সবচেয়ে সমস্যা হচ্ছে নতুন পাঠকদের। তারা বুঝতে পারছে না কোন বইটি ভালো। বই চেনার জন্য যেটুকু পড়াশুনা করা দরকার, যেটুকু খোঁজখবর রাখা দরকার, সেটি তারা করছেন না। ফলে ভুল বই কিনে তারা সেলফ ভর্তি করছেন। ফলাফল একগাদা হতাশা নিয়ে বছর শেষে মোটিভেশনাল বইয়ের দিকে ঝুকছেন তারা।

ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রিক বই প্রকাশের কারণে এই সমস্যা দিনদিন আরো জটিল হচ্ছে। সারা বছর বাছাই করা পাণ্ডুলিপি থেকে বই প্রকাশ হলে এই সমস্যা কিছুটা প্রতিরোধ করা যেত। আপনি কী লিখছেন, সেটা কতটুকু লেখা হচ্ছে, তা যদি নিজে বুঝতে না পারেন, তাহলে আপনার শত শত বই লিখেও আসলে কিচ্ছু হবে না। প্রকাশনা জগতে যে কোনো প্রফেশনালজিম গড়ে উঠছে না, তা এই জগাখিচুরি রীতির জন্য দায়ী।

--------------
২ মার্চ ২০১৯


সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০১৯ সকাল ১১:৫১
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×