somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিনশেষে সরকার বাহাদুর মুচকি মুচকি হাসেন!

১২ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়েকদিন ধরে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো। সরকার বাহাদুর একটি ঘটনারও আগুন লাগার সঠিক তথ্য দিতে পারলো না। এরমধ্যে পুরান ঢাকার আগুন ও বনানীর আগুনে হতাহতের ঘটনা ঘটলো। পাবলিক যখন আগুনের মৃত্যু নিয়ে সরকারকে কোনঠাসা করার চেষ্টা করলো, ঠিক তখনই মঞ্চে নতুন নাটক!

এবার মাদ্রাসা শিক্ষক বনাম শিশু বলাৎকার ও ধর্ষণশেষে হত্যা! পাবলিক ইতোমধ্যে আগুনের মৃত্যু ভুলতে বসেছে। এখন শিশু বলাৎকার ও ধর্ষণ নিয়ে পাবলিক উক্তেজিত। সরকার মোটেও চাপ ফিল করছে না। কারণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পহেলা বৈশাখ নিয়ে একটা নতুন ঘোষণা দিলেই এই বলাৎকার ও ধর্ষণের ঘটনা চাপা পড়ে যাবে। নুসরাতের ঘটনা চাপা পড়া সময়ের ব্যাপার মাত্র!

ফেনীর সোনাগাছির ঘটনায় স্থানীয় সরকার দলীয় সংশ্লিষ্টতাই সরকারের এই গেম খেলার কৌশল বোঝার জন্য যথেষ্ট। পাবলিকের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরানোর এই খেলায় সরকার বাহাদুর এখন পর্যন্ত সাকসেস। যে কারণে সরকার বাহাদুর দিন শেষে মুচকি মুচকি হাসেন। কিন্তু এই সিস্টেমকে যে আমুল পরিবর্তন করতে হবে, তার জন্য যে উদ্যোগ প্রয়োজন, সেখানে সরকারের কোনো আগ্রহ নজরে পড়ে না।

সরকারের ভাব অনেকটা এরকম- দেশের সতেরো কোটি মানুষ দৈনিক সতেরো কোটি ঘটনা ঘটাবে আর সরকারের ঠেকা পড়ছে এত সব ঠিকঠাক করে দেবে। এসবের আড়ালে সরকার বড় বড় বাজেটের অদৃশ্যমান চুরিচামারির কৌশল বা ফন্দিগুলো পাশ করে নেয়। যা পাবলিকের তেমন দৃষ্টিতে আসে না।

দেশে একটি কার্যকর সরকার থাকলে এসব ঘটনার দায় সেই সরকার স্বীকার করে নিতো। পাশাপাশি এসব ঘটনার সুষ্টু তদন্ত ও যথাযথ বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক সাজা হতো। দেশে যেহেতু গণতন্ত্র অনুপস্থিত। একদলীয় শাসনের আওতায় স্বৈরতন্ত্র পুরোপুরি বর্তমান। আমাদের মিডিয়া পর্যন্ত যেখানে সরকারের দাস। সেখানে তাই কার্যকর ব্যবস্থাপত্র নিয়ে কোনো আলোচনা নাই।

বিরোধীদলের নামে যারা দেশে এখনো টিকে আছে, তারাও জনগণের এসব দুর্ভোগ ও ভোগান্তি নিয়ে কোনোভাবেই তৎপর নয়। তারা কোনো সুযোগে ক্ষমতায় গেলে এসব ঘটনা চিরকালীন প্রথার মত মোকাবেলা করবে। গণভবন থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত প্রতিবাদী মানব বন্ধন করার ব্যাপারটি তাই বরং দেশে সরকার বিরোধী কার্যক্রম এখনো জীবিত টাইপ! যা সরকারের পক্ষে এমন কথা বলার সুযোগ যতটা তৈরি করবে, তারচেয়ে জনসচেতনতা বরং কমই হবে। সমাজ পরিবর্তনে এসব কোনো কাজে লাগবে না।

ফাঁক গলে সরকার বাহাদুর কোনো কিছু না করেই সম্মানের সাথে বাহাদুরি নিয়ে টিকে থাকবে। দিনশেষে যে লাউ সেই কদু। সরকার বাহাদুর খুব ভালো করেই জানেন যে, পাবলিক এখন আন্দোলন করার জন্য বড়জোড় মানববন্ধন পর্যন্ত আগ্রহী। সরকারের টনক নড়বে এমন আন্দোলন করার শক্তি এখন আর পাবলিকের করার আগ্রহ নাই। বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনের যে মশলা তৈরি হয়, সেই মশলায় সরকারের সুযোগমত একটু আড়ালে হানা দিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার রীতিতে ইতোমধ্যে সাকসেস।

সরকার মুখে উন্নয়নের যত বুলি দিক, এই জনদুর্ভোগের উন্নয়নের আড়ালে চুরি-চামারিতে একটি গোষ্ঠীকে যেভাবে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে আর জনগণের চোখে ধুলা দিয়ে উন্নয়ন উন্নয়ন জিকির করা হচ্ছে, আর এর বিপরীতে দেশ থেকে সব ধরনের মানবিকতা, মনুষত্ব, দায়িত্ববোধ, মানুষের প্রতি মানুষের কর্তব্যের ইতিহাসে দিনদিন অধপতন হচ্ছে, এটা সরকার বাহাদুরের একদম নজরে পড়ছে না।

একটি দেশের সামাজিক ন্যায়বোধ যতক্ষণ তৈরি না হবে ততক্ষণ সেই দেশের দৃশ্যমান কোনো উন্নয়নই আসলে উন্নয়নের তকমা পায় না। আকণ্ঠ দুর্নীতি আর ব্যাভিচারে লিপ্ত একটি সামাজিক ব্যবস্থায় উন্নয়ন মানে জনদুর্ভোগের মত আরেকটি দৃশ্যমান গণধর্ষণ। পাবলিক ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাফিক জ্যামে বসে বসে এসব ধৈর্য নিয়ে হজম করার অটোমেটিক রেসিপি রপ্ত করেছে। যে কারণে পাবলিকের আর অত গায়ে লাগে না। গণ্ডারের চামড়ার পাবলিক নিজের গায়ে না লাগা পর্যন্ত সয়ে যাচ্ছে, সয়ে যাওয়ায় অভ্যস্থ হয়ে গেছে।

টুক টাক যা নিয়ে পাবলিক একটু আওয়াজ তোলে, ওটুকু না থাকলে দেশে যে একটা সরকার আছে, তা আমরা বুঝবো কী করে? তাই সরকার বাহাদুর নানান খেলায় এসব জিনিস ও আলামত বাঁচিয়ে রাখেন। শিক্ষা বলেন, স্বাস্থ্য বলেন, যোগাযোগ বলেন, নদী বাঁচাও বলেন, ট্রাফিক জ্যাম কমানো বলেন, কোথাও সরকার বাহাদুরের উন্নয়নের কোনো আগ্রহ নাই। স্রেফ নাই। সরকারের দরকার ক্ষমতা। ক্ষমতায় থাকার জন্য যেখানে যেভাবে টাকা খরচ করলে কাজ হয়, সেটি করাই সরকার একমাত্র দায়িত্ব মনে করছেন।

সমাজ গোল্লায় গেলে সরকারের কিছুই যায় আসে না। ক্ষমতা যাতে না যায় সেইটুকু কেরামতি থাকলেই হলো। তাতেই সরকার সাকসেস। বাংলাদেশ নাকি বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। এই কথা বলে দিলেই হয়ে গেল। যে দেশে বাসের ভাড়ার ঠিক নাই, ট্রেনের সময়সূচির ঠিক নেই, ট্রাফিক জ্যামের কোনো মাবাপ নেই, সেই দেশে যে একটা সরকার আছে, তাইতো অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার।

কোনো কিছুতে কাজ না হলেও ধর্মের মত বড় একটা অস্ত্র যেখানে সরকার বাহাদুরের হাতে আছে, আর কী চাই! নুসরাতদের পা যে বাংলাদেশের মুখে লাথি দিয়ে প্রতীকি জবাব দিচ্ছে, তা বোঝার মত বুদ্ধি সরকার বাহাদুরের নেই। ওইটুকু কাণ্ডজ্ঞান থাকলে সোনাগাছির ওসি থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতা-চ্যালা-চামুন্ডা, মাদ্রাসার শিক্ষক সবাই একক্ষণে জেলে থাকতো।

সরকার যেহেতু বরাবরই কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলে আনন্দ পাচ্ছে, আর জনগণ কতটুকু রিয়্যাক্ট করতে পারে, তা যেহেতু সরকার বাহাদুর জানেন, তাই দিনশেষে সরকার বাহাদুর মুচকি মুচকি হাসেন। কারণ হাজার কোটি টাকার অন্য দিকের ব্যবস্থা ততক্ষণে রেডি হয়ে যায়। কেবল আমাদের মত আমপাবলিক দিনশেষে এসব যন্ত্রণা নিয়ে আরো নতুন যন্ত্রণার আশায় বেঁচে থাকে। এটাই এখন বাংলাদেশে চলছে।
------------------
১২ এপ্রিল ২০১৯

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৯
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×