আপনি শুরু করুন অন্যরাও শুরু করবে!
মশার কামড় খেয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়া মানুষেরাই, তাদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশীসহ একদিন মশা নিধনে দলগত অভিযানে নামবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, রাষ্ট্র, সিটি কর্পোরেশান, পৌরসভা, ইউনিয়ন কাউন্সিল থেকে মশা মারার অপেক্ষায় না থেকে এই জনগণই নিজেরা বাঁচার জন্য মশা নিধনে একদিন সক্রিয় হবে। কারণ মানুষের শক্তি মশার চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বেশি।
মানুষ নিজের শক্তি ব্যবহার না করে যখন রাষ্ট্রের মত একটা অন্ধ পাওয়ার হাউজের উপর খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে যায়, তখন মানুষের জীবনে নানারকম উৎপাত শুরু হয়। আমরা নিজেরা পরিবেশের যত্ন না করে রাষ্ট্রের উপর দায়িত্ব চাপিয়ে দিতে অভ্যস্থ। রাষ্ট্র সেই যত্ন করতে গিয়ে কিছু চুরিচামারি করবে নাকি আসল কাজটা করবে? ফলে পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা রাষ্ট্রের চেয়ে ব্যক্তি মানুষের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
তবে পাবলিক প্লেসের পরিচ্ছন্নতা রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে যেমন পড়ে, তেমনি পাবলিক প্লেস নোংরা না করাটাও ব্যক্তির উপর গড়ায়। পৃথিবীর সবচেয়ে নোংরা শহরের উপর যদি ''ধিক্কার পুরস্কার'' দেওয়া হয়, আমি নিশ্চিত সেই পুরস্কার পাবে ঢাকা শহর! ঢাকা শহর নোংরা করে কে? পাবলিক। পাবলিকের আচরণে যদি এই পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারটি কাজ করে, তখন আর শহর নোংরা হবার ভয় নাই।
ঢাকা শহরে পাবলিক টয়লেট বলতে গেলে নাই। রাষ্ট্র এটা জেনেও না জানার ভান করে। পুরুষ লোকজন রাস্তার পাশেই মেরে দেয়। কিন্তু মেয়েদের যে কত দুর্যোগ পোহাতে হয়, এটা রাষ্ট্র তা জেনেও কোনো উদ্যোগ নেয় না। এখানেই রাষ্ট্র ব্যর্থ। এখানেই আমাদের নীতি নির্ধারকগণ সবকিছু জেনেশুনেও বসে বসে আঙুল চোষেন! এই হালার পুতগো রাস্তায় হিসি পায় না! তাই না?
রাষ্ট্র যেমন পরিবেশ তৈরি করবে, সেই রাষ্ট্রের জনগণ সেই পরিবেশ রক্ষা করতে ধীরে ধীরে অভ্যস্থ হয়ে উঠবে। এটাই আসল কথা। শিল্পকলা একাডেমি'র মত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে, যেখানে আর্ট-কালচার মারানো লোকজন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যাতায়াত করেন, সেখানে অনুষ্ঠান শেষে খাবারের প্যাকেট খেয়ে যে যার মত ফেলে রেখে চলে যায়। কোনো শৃঙ্খলা নাই। এই শৃঙ্খলার কাজটিতে রাষ্ট্রের ভূমিকা পালন জরুরি।
যে পাবলিক রাস্তায় হাগে-মোতে, সেই পাবলিক ঠিকঠাক লড়ানি খেলে কিন্তু লাইনে আসতে বাধ্য। আগে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন মানুষকে এসব নিয়ম কানুন শেখাতো। বিশেষ করে পরিবেশের যত্ন বিষয়ে সচেতনতা করানো, আপনার পরিবেশ কীভাবে সুন্দর রাখবেন, এসব। এখন এসব সংগঠনের নেতারা রাষ্ট্রীয় চুরিচামারিতে ভাগ বসাতে এতই ব্যস্ত যে, বছরে তাদের এ ধরনের একটাও কর্মসূচি চোখে পড়ে না।
আপনার বাসার ভেতরে খুব সুন্দর পরিবেশ, কিন্তু আপনি বাসার জমানো ময়লা জানালা দিয়ে বাইরে ছুড়ে মারেন। তাহলে আপনার এই বাহাদুরির কোনোই মূল্য নাই। আপনি আসলে একটা নষ্টমাল। পরিবেশ বিষয়ে আপনার কোনোই আগ্রহ নাই। টাকার গরমে আপনি এরকম আস্ফালন করছেন।
যে রাষ্ট্র সুন্দরবন ধ্বংস করে উন্নয়নের জোয়ার দেখাতে চায়, সেই জাতির পরিবেশ বিষয়ে জ্ঞানের পরিধি তো সবাই বুঝতে পারে। সুতরাং এই রাষ্ট্রের শাসকদের তোয়াক্কা না করে আসুন নিজেরা বাঁচার জন্য নিজেদের পরিবেশ নিজেরা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখি। অন্তত মশার কামড়ে বীরের মত যাতে কারো মরতে না হয়, তা নিশ্চিত করি।
সবাই কথা বলুন। আপনার সামনে কেউ ময়লা ফেললে তাকে ভালো কথায় বুঝিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ফেলানোর দায়িত্ব আপনিও পালন করুন। দেখবেন মানুষ একসময় নির্দিষ্ট জায়গায় ময়লা ব্যবহার করায় অভ্যস্থ হয়ে যাবে। রাষ্ট্র যেটা পারে না, সেটা জনগণই পারে। আমাদের অভ্যাস ঠিক করলেই ৮০ শতাংশ কাজ এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। বাকি ২০ শতাংশ কাজ রাষ্ট্রকে আমরা করাতে বাধ্য করব।
আমাদের গণমাধ্যমকে এবিষয়ে আরো এগিয়ে আসতে হবে। মানুষকে সচেতন করার কাজটি সবাই মিলে করতে হবে। তাহলে দেখবেন মানুষের কাছে মশা কোনো পাত্তাই পাবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২০