somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হোয়াট আ বিউটিফুল ডেড বডি

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হোয়াট আ বিউটিফুল ডেড বডি

এই যে অসহায় বন্দুক? তাকান আমাদের দিকে।
আমরা আপনাকে চুমু খেতে এসেছি। বাবার বুক চুইয়ে
রক্ত না ঝরলে কিসের মধুমাস। আমরা টাটকা লাশের
উত্তরাধিকার। আপনি না থাকলে কোনদিনই বুঝতাম
না; জীবন থেকে মরণ উত্তম। মানুষ বেঁচে থাকে গণনায়
মরে থাকে নিরন্তর...

আমাদের বাড়িতে প্রতিদিন দুইটা ভোর। চার চারটা
দুপুর। অন্ধকারকে আমরা কাজল বলে ডাকি। বাবার
বুক আমাদের প্রিয় জলাশয়। আমরা সারাদিন
সেখানেই সাঁতার কাটি। আমাদের চিনতে পারছেন?
একবার তাকান অসহায় বন্দুক। আমরা আপনার
ট্রিগারে চুমু খেতে এসেছি।

কান্না সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। কিভাবে জানব
বলুন, মায়ার মলাটে বাঁধাই করা বাবার বুক। আমাদের
রোজকার পাঠ্যসূচি। সে বইয়ের পৃষ্টায় পৃষ্টায়
জোনাকির মতো অক্ষরগুলো উড়ে আর আমরা
লুঠোপুটি খাই। শোক সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না,
কিভাবে জানব বলুন, আমরা দুই বোন একরামুল
ফুলের গন্ধ...

অসহায় বন্দুক, আপনি একবার আমাদের বন্ধু হবেন?
আমরা বরফের দেশে চাঁদ দেখতে যাব। বাবার
বুলেটছিদ্র বুকে ছেড়ে আসব আফিমের মাছ...

২৯ মে ২০১৮ (পৃষ্ঠা ১৪)


কবি জুয়েল মোস্তাফিজের সর্বশেষ কবিতার বই 'হোয়াট আ বিউটিফুল ডেড বডি'র নাম কবিতা এটি। পেন্ডুলাম পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত বইটির প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী আবিদ এ আজাদ। শিল্পী আশরাফুল হাসানের 'অ্যাগনি-২' পেইন্টিংস অবলম্বনে বইটির প্রচ্ছদ করা হয়েছে। ৮ ফর্মার (১২৮ পৃষ্ঠা) কাব্যগ্রন্থটির মূল্য রাখা হয়েছে ২২৫ টাকা।

বইটিতে মোট তিন পর্যায়ের কবিতা সংকলিত হয়েছে। প্রথম পর্বে ছোট কবর বড় কবর (পৃষ্ঠা ৯-৪৪), দ্বিতীয় পর্বে অস্ত্র একটা টুথব্রাশ (পৃষ্ঠা ৪৫-৮৬) ও তৃতীয় পর্বে রাষ্ট্র মরে ক্ষমতায় (পৃষ্ঠা ৮৭-১২৭) কবিতাগুলো বিন্যাস করা হয়েছে। মূলত ২০১৮ সালের ১৭ মে থেকে ২০২০ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে জুয়েলের লেখা কবিতাগুলো 'হোয়াট আ বিউটিফুল ডেড বডি' বইটিতে স্থান পেয়েছে।

সমকালীন আধুনিক কবিতায় কবি জুয়েল মোস্তাফিজ একটি স্বতন্ত্র স্বর। জুয়েলের কবিতা পড়ে আমি অ্যানার্জি হান্ট করি। রাষ্ট্রের প্রচলিত অচলের বিরুদ্ধে জুয়েলের কবিতা আমাকে এই স্বদেশ সম্পর্কে নতুনভাবে চিন্তা করতে উসকানি দেয়। '''আমি' আর 'আমি' দুই হতে না পারা জোড়া খুন...'তুমি' আর 'তুমি' চার হতে না পারা বাউন্ডারি... 'তুই' আর 'তুই' গুইসাপের দাঁতের ফাঁকে চুইংগাম...''

জুয়েলের কবিতায় একটি মৌলিক শক্তি আছে। সেই মৌলকে আমি এড়াতে পারি না। অলস বিকেলে সেই উল্কাপিন্ডগুলো কুড়িয়ে কুড়িয়ে আমি কেবল নিজের কোচর ভরি। আর কোচর ভরতি হয়ে গেলে দু'হাতের তালুতে তাকিয়ে দেখি সেখানে কেবল তাজা রক্তের জমাট বাধা কালসিটে দাগ! ''দেশে লাগলে পোকা, মানুষ খায় ধোকা... তার শিশুর নাম হয় কবর...''

একদিন এই বাংলার আনাচে কানাচে শিউলি ফুলের আভায় ভরে উঠবে। তখন যদি তুমি হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকো, তোমার চোখে চোখ রেখে বলব- ভালোবাসি। ''দুনিয়াটা মুনিয়া পাখির কাছে হেরে যাওয়া ফুটবল... তোমার ভূখণ্ডে আমরা জীবন; ব্লেডের ধারে রক্তের বসতি...''

হয়তো এসব আমাদের নিয়তি নতুবা চলমান বাস্তবতার ঘোর সংকট! পাখি উড়ে গেলে আমরা সবাই এক একটা বেওয়ারিশ লাশ! ''কার নদী কার বুকে বয়ে যায় রোজ? তোমার বুক আমার হাসপাতালের জরুরি বিভাগ... তোমার মুখ আমার সবুজ পেয়ারা... আমরা বুকের সমিতি, চুরি করি চোর, শান্তি রাখি বুকে...''
------------
রেজা ঘটক
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:০৪
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×