somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘটকপুরাণ- ১

২৫ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৫ এপ্রিল ২০২২ থেকে শুরু করলাম আত্মজীবনী লেখা। রেজা ঘটকের আত্মজীবনীর নাম হবে 'ঘটকপুরাণ'। যেহেতু ধারাবাহিক লিখব, তাই সংখ্যা দিয়ে সিরিয়াল করব। বন্ধুদের উৎসাহ পেলে এখানে ও ফেসবুকে ধারাবাহিক লিখব! আজ লিখলাম প্রথম পর্ব!


ঘটকপুরাণ- ১
++++++++
দিনোর মা'র পাঠশালায় ভর্তি হবার পর খুব দ্রুত একটা চালাকি শিখেছি। এমনিতে পাঠশালায় তালপাতার খাড়া পাতায় রোজ তিনবার স্বরবর্ণ আর তিনবার ব্যঞ্জনবর্ণ লিখে দিদিমণিকে দেখানোর নিয়ম। কালি বানানোর নাম করে প্রথম দফায় একবার ফাঁকিবাজি করি বটে। কিন্তু এটা দিয়ে বেশি দিন কাটানো গেল না।

দোয়াতে জল আনার নাম করে অকারণে পুকুরপারে আর কতক্ষণ কাটানো যায়! তারপর টুনির কলম দিয়ে দোয়াতে কালি মেশানোর নামে চলে আরেকটা চালাকি। ওটাও বেশি দিন ধোপে টিকলো না। আমাদের দিদিমণি ভারি কড়া!

পাঠশালার অমন কড়াকড়ি পড়াশোনায় আমার তখন মন বসে না। পাশের বাড়ি থেকে প্রায়ই হারমোনিয়ামের সুর ভেসে আসে। কে যেন দ্বরাজ গলায় গান গায়। দিদিমণিকে স্বরবর্ণ লেখা একবার দেখিয়ে পুকুরে তালের পাতা ধোয়ার নাম করে পালিয়ে সেই বাড়িতে উকি দিলাম।

এ দেখি পাঠশালার চেয়ে বেশি মজার জিনিস! কোলের কাছে হারমোনিয়াম নিয়ে হেরে গলায় গান গাইছেন বিপদভঞ্জন দাদু। উকি দিতেই দাদু কাছে টেনে নিয়ে বসালেন। বিপদভঞ্জন দাদুর ঝাকড়া চুল। গলায় তুলশির মালা। খালি গা। পড়নে সাদা ধুতি। তার উপরে মাজায় গামছা বাধা। মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে একটার পর একটা গান করেন দাদু। আর আমি অবাক হয়ে শুনি। হারমোনিয়াম থেকে কীভাবে যে এত মধুর সুর বের হয়, ওটাই আমার কাছে তখন ভারী অবাক হবার বিষয়!

কিন্তু গান বেশিক্ষণ শোনা গেল না। বিপদভঞ্জন দাদু'র ছেলে বিনয় আমাদের সাথেই পড়ে। বিনয় জল খেতে এসে আমাকে দাদু'র পাশে দেখে চোখ বড় বড় করে শুধু তাকালো! বিনয় গিয়ে যদি দিদিমণি'র কাছে নালিশ ঠুকে দেয়, তাহলে এই ফাঁকিবাজিটাও মাঠে মারা যাবে। তাই চুপচাপ বিনয়ের পেছন পেছন আবারো পাঠশালায় ফেরত গেলাম।

এবার ব্যঞ্জনবর্ণ একবার লিখে দিদিমণিকে দেখিয়ে পুকুরঘাট হয়ে আবারো দাদু'র বারান্দায় উকি দিলাম। দেখি দাদু হারমোনিয়াম পাশে রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে আছেন। কেবল পা দুটো তালে তালে দোল খাচ্ছে। অগত্যা বিনয়দের পুকুরে কী কী মাছ দেখা যায় কিছুক্ষণ সেই চেষ্টা করি। পাছে কেউ দেখে আবার দিদিমণিকে বলে দেয়, তাই পুকুরপারেও বেশিক্ষণ দাঁড়ানো গেল না।

পাঠশালা ফাঁকি দিয়ে পাখি দেখার নাম করে বাগানে ঘুরে ঘুরে বেশ ভালোই সময় কাটতে লাগলো। হঠাৎ দেখি একটা আম গাছের ডালে শুয়ে আছে আমাদের কিরু। কিরুকে আমরা ছোটরা সবাই কিছুটা ভয় পাই। কারণ কিরু'র গায়ে অনেক শক্তি। তবে কিরু কাউকে মারপিট করে না। নানান কিসিমের ভেলকি দেখাতে কিরু ভারী ওস্তাদ! কিরু আমাকে দেখা মাত্রই একটা ভ্যাংচি কাটলো। যার অর্থ কিছুক্ষণ কিরুর সাথে আড্ডা দেওয়া যাবে।

কিরুর হাতে কয়েকটা নারকেল পাতা। পাতা দিয়ে সে আপনমনে চরকি বানাচ্ছে। কিরু ইশারায় আমাকে গাছে উঠতে বললো। পায়ের নিচে চেপে ধরা পাতাগুলো আমাকে ধরতে বললো। তারপর প্যান্টের পকেট থেকে ছুরি বের করে চরকির পাতা কেটে সাইজ করলো। চরকি বানানো হয়ে গেলে আমার হাত থেকে পাতাগুলো নিয়ে চরকিটা আমার হাতে দিল।



ছুড়িটা আবার প্যান্টের পকেটে চালান করে কিরু চরকি বানাতে লাগলো। আমাকে বললো- যা বড় বড় দুইটা খেজুরের কাঁটা নিয়া আয়। খেজুরের কাঁটা আনতে গিয়ে ঘটলো আরেক বিপত্তি। আমাদের পাঠশালায় আমাদের থেকে যারা একটু বড়, সেই বড়দের মধ্যে অন্তত তিনজন মেয়ে কড়াই গাছের তলায় তখন হিসি দিচ্ছিলো। ওদের কেউ একজন কী আমাকে দেখে ফেললো!

আমি না দেখার ভান করে খেজুরের কাঁটা এনে কিরুর পাশে বসি। কিরু একটা হাসি দিয়ে বললো- কী দেখলি? ইশরায় বললাম- ওরা। কিরুও ফিসফিস করে বললো- চুপ! ততক্ষণে কিরু আবার ছুরি বের করে চরকির পাতা কেঁটে সাইজ করলো, তারপর বললো- দে! ছুরি পকেটে ঢুকিয়ে কাঁটা চরকির পেটে ভরে বাতাসের দিকে ধরতেই ওটা ঘুরতে শুরু করলো।

কিরুর হাতে ঘুরতে থাকা চরকিটা কিরু আমাকে দিল। আমার হাতে থাকা চরকি আর কাঁটা নিয়ে কিরুও তখন চরকি ঘুরাতে লাগলো। কিরু আর আমি তখন চরকি ঘুরিয়ে পাল্লা দিচ্ছি। কখন যে বেলা গড়িয়ে ইশকুল ছুটির সময় হয়ে গেল, কিচ্ছু টের পাইনি। শুনতে পেলাম সবাই দলবেধে নামতা পড়ছে। তখন কী আর কিরুর সাথে বাগানে থাকা সম্ভব! এক দৌড়ে সবার পেছনে গিয়ে নামতা পড়ায় যোগ দিলাম। এক অক্কে এক, দুই অক্কে দুই, তিন অক্কে তিন...
----------------চলবে--------------------
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১২:১০
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

বামিঙ্গিয়ান উপাখ্যান

লিখেছেন যুবায়ের আলিফ, ১০ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০




মাঝ রাতে কড়া একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ঘুম ভাঙলো জ্যাকের৷ ঘুমের ঘোরে দেখতে পেল কেউ চোখ ধাঁধানো পোষাক পরে ডাইনিংয়ে একটা চামচ রেখে দরজা গলিয়ে চলে যাচ্ছে৷ গা ও পোষাকের উজ্জ্বলতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×