somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘটকপুরাণ- ২

২৫ শে এপ্রিল, ২০২২ সকাল ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটকপুরাণ- ২
++++++++
দিনোর মা'র পাঠশালার একটা নিয়ম খুব ভালো। ছুটির সময় সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে পড়া। চিৎকার করে পড়া। সবাই একসাথে কণ্ঠ মিলিয়ে পড়া। এই পদ্ধতিতে পড়লে মনে থাকে ভালো। বাড়িতে এসে আর পড়া লাগে না। আর এই দলবেধে পড়ায় সবার মনে আদতে একটা আনন্দ থাকে। কারণ এই পড়া শেষ হলেই ইশকুল ছুটি।

ছুটির আগে দিনোদের উঠোনে আমরা কয়েক সারিতে লাইন করে দাঁড়াই। সাধারণত একজন একেবারে লাইনের সামনে দাঁড়ায়। সে সামনে থেকে এই কোরাস পড়ায় নেতৃত্ব দেয়। একেক জন মাত্র একটি বিষয়ে নেতৃত্বে দেয়। কে কোন বিষয়ে নেতৃত্ব দেবে, এটি আমাদের দিদিমণি ঠিক করেন। যদি কেউ একের ঘরের নামতায় নেতৃত্ব দেয়, দেখা গেল দুইয়ের ঘরের নামতায় অন্য একজন নেতৃত্ব দিচ্ছে। এভাবে ঘুরে ঘুরে নেতৃত্ব আসে।

এই কোরাস পড়ার সময় সবাইকে একসাথে গলা মেলানোর নিয়ম। কে কোন ক্লাশে পড়ে, তা এখানে বিবেচিত হয় না। সবাইকে সব বিষয়ে গলা মেলাতে হয়। নামতা পড়ায় যখন যে নেতৃত্ব দেয়, তার পাশেই দিদিমণি হাতে বেত নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। যদি কেউ ভুল করে, তাহলে সাথে সাথে তার পাছায় বেতের বাড়ি পরে।

পাঠশালায় ভর্তি হবার পর নতুন একটা বিষয় শিখেছি। এখানে কেউ কাউকে ডাক দিলে 'আজ্ঞে' বলার নিয়ম। আগে কেউ আমাদের ডাকলে আমরা কী, কেডা, কেন, জি, অ্যা, এসব বলতাম। এখন ইশকুলের সময় আমরা 'আজ্ঞে' বলি। ইশকুলের বাইরে অবশ্য আমরা 'আজ্ঞে' বলে একে অপরকে ভেংচি কাটি। 'আজ্ঞে' এখন ইশকুলের বাইরে আমাদের একটা খেলার অংশ হয়ে গেছে। নানান বাহারি সুরে আমরা 'আজ্ঞে' বলতে পারি।

ইশকুল ছুটি হলে আমরা যারা তালপাতার ক্লাশের, তারা সবাই বাড়ির দিকে একটা ভো দৌঁড় লাগাই। তারপর হাঁপাতে হাঁপাতে এ-ওর দিকে তাকিয়ে কয়েকবার নানান সুরে 'আজ্ঞে' বলি। এই নিয়ে পথে কয়েক দফা মারামারি করাটাও আমাদের খেলার অংশ হয়ে গেছে। মারামারি করতে গিয়ে আবার পক্ষ প্রতিপক্ষ হচ্ছে।

মারামারিতে যারা হারু পার্টি তারা আবার পরদিন দিদিমণি'র কাছে নালিশ করার হুমকি দিচ্ছে। এসব করতে করতে যে যার বাড়ির পথে আলাদা হচ্ছি। একেবারে বাড়ির কাছাকাছি এসে দোয়াতের অবশিষ্ট কালি দুই গালে আর প্যান্টের পাছায় ঘষে নিচ্ছি। ইশকুলে যে খুব পড়াশুনা করেছি তা প্রমাণ করার জন্য এই একটা আমার কৌশল।



মুখে আর প্যান্টের পাছায় কালি মাখাতে পারলে আমার দুইটা লাভ হয়। এক হলো খুব পড়াশুনা করেছি তা প্রমাণ করা যায়। দ্বিতীয়ত এই অছিলায় পুকুরে ইচ্ছামত কিছুক্ষণ সাঁতার কাটার সুযোগ মেলে। পুকুরে আবার আমাদের একটা খেলা চলে। মাথা ছোঁয়ার খেলা। একজন মাঝ পুকুরে গিয়ে এক-দুই-তিন বলার পর, তাকে সবাই মিলে জলের মধ্যে ধাওয়া করা। জলের উপরে যে আগে মাথা ছুঁইতে পারবে, সে হবে পরবর্তী নেতা। তখন সবাই আবার তাকে তাড়া করবে।

মাথা ছোঁয়া খেলায় যে যত বেশিক্ষণ নেতৃত্ব ধরে রাখতে সক্ষম, সে আমাদের কাছে তত বড় খেলোয়াড়, তত বড় নেতা। সাধারণত যে যত ডুবিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে, এই খেলায় সে তত বেশি সময় ধরে নেতৃত্ব ধরে রাখতে পারে। দেখা গেল চারপাশ থেকে সবাই তাকে ঘিরে ফেলেছে। কিন্তু সে ডুবিয়ে কোনো ফাঁক দিয়ে দূরে গিয়ে আবার মাথা জাগালো।

এই খেলার সুবিধা হলো গোটা পুকুর জুড়ে আমরা মাতিয়ে বেড়াতে পারি। জলের নিচে অনেকক্ষণ ডুবে থাকার কৌশল আমরা ব্যবহার করতে পারি। আর বেশি সময় ধরে নেতৃত্ব ধরে রেখে ভালো খেলোয়াড় প্রমাণ করতে পারি। আর অসুবিধা হলো, বড়োরা কেউ স্নান করতে আসলেই ঘোলা জলের কারণে আমাদের লিলিপুট ডুবুরিদের তারা ব্যাপক বকাঝকা করে।

সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভয় থাকে বাবাকে নিয়ে। বাবা এসে আমাদের এভাবে দেখলেই সোজা ধাওয়া করেন। বাবা'র সেই ধাওয়ায় যে ধরা পরে তার পাছা লাল হয়ে যায়। সাধারণত গোটা পুকুরের জল ঘোলা করতে আমাদের এই খেলা মিনিমাম আধঘণ্টা চালাতে হয়। আর কোনো কারণে এক ঘণ্টার উপরে এই খেলা চললে পুকুরের জলকে আর জল মনে হয় না। পুরোটা তখন কাদামাটি গোলানো জলকাদায় পরিণত হয়।

সাধারণত যেদিন বাবা বাড়িতে না থাকেন, সেদিন আমাদের এই মাথা ছোঁয়া খেলা চলে কয়েক ঘণ্টা ধরে। এতে সবার ঠোঁঠের উপর প্রলেপ পড়ে একটা আলাদা সেফ তৈরি হয়। আর প্রত্যেকের চোখ হয় কোকিলের চক্ষুর মত লাল। একসময় যখন চোখ পোড়ানো শুরু করে তখন নিজেরাই এই খেলায় আমরা ইতি টানি। আর পরবর্তী খেলা পর্যন্ত শেষ নেতৃত্ব যার কাছে থাকে, সে থাকে নেতা। তাকে দিয়েই আবার পরেরবার এই মাথা ছোঁয়া খেলা শুরু হয়।

-------------------------চলবে-------------------------
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০২২ সকাল ১০:১৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×