somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুধু দর্শক হিসেবে নয় বিশ্বকাপে খেলতে হবে বাংলাদেশকে!

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বকাপ ফুটবলের সময় গোটা বাংলাদেশ কার্যত দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একদল ব্রাজিল সমর্থন করে, অন্যদল আর্জেন্টিনা। বাকি দলগুলোর সমর্থকের সংখ্যা এখানে নগন্য। সংখ্যাগরিষ্ঠ দুই দলের ভিড়ে এদেরকে তেমন কেউ পাত্তা দেয় না।

বরং নানাভাবে এই সংখ্যালঘুদের ওইসব সংখ্যাগরিষ্ঠ ফুটবল সমর্থক গোষ্ঠি নানান কিসিমের নির্যাতন, ট্রল, নিপীড়ন করে অভ্যস্থ। এই আচরণকেও তারা মনে করে সঠিক।

অথচ ফুটবল হলো বিশ্বভ্রাতৃত্ব গঠনের সবচেয়ে উজ্জ্বল টুলস। কিন্তু এই টুলস বাংলাদেশে সরাসরি নানান কিসিমের শত্রুতা, কলহ, নির্যাতন, নিপীড়ন এমনকি খুনের মত ঘটনার দিকে নিয়ে যায়।

সারা বিশ্বে যা আলো ছড়ায়, বাংলাদেশে তা ছড়ায় হীনতা! এর প্রধান কারণ আমাদের পরশ্রীকাতরতা। আমাদের সবকিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি। খেলাকে আমরা শুধুমাত্র খেলা হিসেবে নিতে পারি না।

আমরা ঠাট্টাকে মনে করি শত্রুতা। ব্যঙ্গকে মনে করি উগ্রতা। তামাশাকে মনে করি শঠতা। যার প্রধান কারণ আমরা প্রতিপক্ষকে জন্মগতভাবেই সম্মান ও মর্যাদা দিতে পারি না, দিতে শিখিনি!

আমাদের এই ব্যর্থতা রাজনীতিতে, আমাদের এই ব্যর্থতা সংস্কৃতিতে, আমাদের এই ব্যর্থতা সমাজ ও মানস গঠনের প্রতিটি স্তরে বিদ্যমান।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিার কোনো দূতাবাস নাই। ওদের ফুটবল ভক্তদের ওই দুটি দেশে অবাধে ভ্রমণের সুযোগও নাই। দিল্লী থেকে ভিসা নিয়ে আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলে যাওয়া যায়। তাও সরাসরি কোনো ফ্লাইট নাই। কানাডা বা মেক্সিকো ভায়া হয়ে যেতে হয়।

ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সরকারকে বলবো, আপনারা বাংলাদেশের সাথে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক বন্ধুত্ব করুন। বাংলাদেশে আপনাদের দূতাবাস খুলুন। বাংলাদেশের ফুটবলপ্রিয় জাতিকে আপনারা ফুটবলের আলো চেনাতে সহযোগিতা করুন।

শুধু ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনার সরকারের দিকে তাকিয়ে থেকে লাভ নাই। বাংলাদেশ সরকারের উচিত বিশ্বকাপ ফুটবল চলাকালীন এই দুটি দেশ নিয়ে আমাদের উন্মাদনাকে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা সরকারকে সরকারিভাবেই অবহিত করা। তাদের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সেতু বন্ধন গড়ে তুলতে জোড়ালো উদ্যোগ গ্রহণ করা।

বিশ্বকাপ ফুটবলকে বলা হয় দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ। এই গ্রেটেস্ট শোতে বাংলাদেশকেও বিশ্ব দরবারে যুক্ত করার জন্য আমাদের অকর্মা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো উদ্যোগ বিগত ৫১ বছরেও চোখে পড়েনি।

আমরা কাগজে লিখে রেখেছি- 'সবার সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে শত্রুতা নয়'। অথচ বিশ্বরাজনীতিতে এমন সহজ সমীকরণে কূটনীতি কার্যত ব্যর্থ। আমাদের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির কারণে এবং অকর্মা মন্ত্রণালয়ের কোনো টেকসই ও দূরদৃষ্টিমূলক উদ্যোগের অভাবে স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও তাই বিশ্ব দরবারে আমরা ব্যর্থ।

প্রশ্ন হচ্ছে ফুটবল নিয়ে উন্মাদ এই আমরা কেন বিশ্বকাপ ফুটবল খেলবো না? আমাদের কীসের অভাব? আমাদের মাঠ নাই। আমাদের ইনফ্রাসট্রাকচার নাই। আমাদের মাঠপর্যায়ে ফুটবল নিয়ে এখন আর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না।

ফুটবল নিয়ে বিশ্ব দরবারে যাবার জন্য যে স্বপ্ন ও পরিকল্পনা দরকার, তা নিয়ে আমাদের মানসিক দৈনতা রয়েছে। আমরা জুয়া যতোটা ভালোবাসি, আদতে ফুটবল ততোটা ভালোবাসি না।

আমাদের কচি ভাই (কচি খন্দকার) ফুটবল নিয়ে দারুণ দারুণ সব স্বপ্ন দেখেন। তার স্বপ্নের কথা শুনলে মন ভালো হয়ে যায়। কচি ভাই নাটক-সিনেমার মানুষ। কিন্তু তার ধমনীতে শিরায় শিরায় ফুটবল টগবগ করে। কচি ভাই'র বাবা ছিলেন একসময় জাতীয় দলের গোলরক্ষক। আমি চাই- বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য কচি ভাইয়ের মত মানুষগুলোকে দূরবীণ দিয়ে খুঁজে বের করুন।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের দায়িত্ব এমন স্বপ্নবাজদের হাতে দেওয়া হোক। আমি বাজি লাগতে পারি- এটা যদি করা যায়, আমাদের গ্রাম থেকে রাজধানী পর্যন্ত যদি ফুটবলের একটা জোড়ালো সেতুবন্ধন গড়ে তোলা যায়, তাহলে মাত্র ১২ বছর পর আগামী ২০৩৪ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকেও দেখা যাবে। কেবল দর্শক হিসেবে অন্যদেশের ফুটবল দেখে আমার পোষায় না।

বাংলাদেশ কীভাবে বিশ্বকাপ ফুটবলে কোয়ালিফাই করতে পারে, তা যদি আমরা নিজেরাই উদ্যোগ না নেই, ভীনদেশী কেউ এসে আমাদের এই স্বপ্ন পূরণ করে দেবে না। আমি বাংলাদেশকে বিশ্বের এই সর্বোচ্চ আসরে অংশ নেওয়া দেখতে চাই।

বাংলাদেশের ফুটবলের সমস্যা ও তার উত্তরণ নিয়ে বাফুফের উচিত দেশের প্রতিটি নাগরিকের কাছে জবাবদিহি দেওয়া। বসে বসে বেতন নেওয়ার দিন শেষ হোক।

বাংলাদেশের ফুটবলকে জনমুখী ফুটবলে রূপান্তর করার জন্য এখনই উদ্যোগ নেবার শ্রেষ্ঠ সময়। স্বাধীনতার ৫১ বছর হয়ে গেছে। অথচ আমরা এখনো সাফ-ফুটবলের মধ্যেই আটকে আছি। এই লজ্বা বাফুফের হয় না কেন? বাফুফের চলমান ব্যবস্থা ভেঙ্গে ফেলতে হবে। এটাকে নতুন করে নতুন উপায়ে কার্যকরভাবে সাজাতে হবে।

আমি চাই বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালের দিন বাফুফের এই ব্যর্থতার দায়ে বর্তমান পরিষদ যেন পদত্যাগ করে চলে যায়। এরকম ব্যর্থ একটা সংস্থা দিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলের কোনো উন্নতি হবে না। এটাকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে।

বর্তমান বাফুফে বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য আস্ত একটা বোঝা। এই বোঝা জনগণের করের টাকায় পোষা স্রেফ একটা বিলাসিতা! এই বিলাসিতার অবসান হোক। বাংলাদেশ ফুটবল নিয়ে বিশ্বদরবারে এগিয়ে যাক। জয় হোক ফুটবলের। জয় হোক ২০ কোটি বাংলাদেশীর।
--------------------------
১৬ ডিসেম্বর ২০২২
ঢাকা
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১২:০০
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×