একচোখা সংস্কৃতিকর্মী দিয়ে জাতি কতদূর আগাবে!
অনেক বিপত্তির পর শেষপর্যন্ত নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ছবি ‘শনিবার বিকেল’ মুক্তি পেতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য এটি একটি সুখবর। এই ছবিটির মুক্তির পেছনে নির্মাতার সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা ও দেশের সংস্কৃতিকর্মীদের সোচ্চার হওয়ার ঘটনা বড় ভূমিকা রেখেছে।
কিন্তু আমার নির্মিত 'হরিবোল' চলচ্চিত্রটি সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বাংলাদেশ চলচ্চি্ত্র সেন্সর বোর্ড তিন বছরের বেশি সময় ধরে আটকে রেখেছে। এটা নিয়ে সংস্কৃতিকর্মীদের অনেকের সাথেই আমি ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছি। এবং সবসময় তাদের থেকে নানান কিসিমের পরামর্শও পেয়েছি। কিন্তু 'হরিবোল' ছবি নিয়ে সম্মিলিত কোনো উদ্যোগ কখনোই আমার চোখে পড়েনি।
বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ফিল্ম অ্যালায়েন্স বাংলাদেশের (ফ্যাব) আয়োজিত ফ্যাব ফেস্ট-এ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (চলচ্চিত্র) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেছিলেন, ''আমি ফিল্ম বানাব, আমি প্রযোজক ও পরিচালক সমিতির সদস্য হব কি হব না, এটা আমার ইচ্ছা। কোনো সমিতির সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে বাধ্য করা যায় না, কোনো সমিতির আইনেও এটা পড়ে না। একজন নির্মাতা সিনেমা তাঁর যোগ্যতা অনুযায়ী সিনেমা বানাবেন। এতে সমিতির সদস্য হতে হবে কেন?'' (দৈনিক প্রথম আলো, ৩০ ডিসেম্বর ২০২২)।
অথচ অতিরিক্ত সচিবের এই কথাগুলোই বিগত তিন বছর ধরে আমি 'হরিবোল' সিনেমা নিয়ে বারবার সেন্সর বোর্ডকে লিখিতভাবে বলে আসছি। ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের যথাযথ নিয়ম মেনেই আমি 'হরিবোল' চলচ্চিত্র জমা দিয়েছি। তারপর কথিত বিএফডিসি'র এনওসি-এর দোহাই দিয়ে আমার সিনেমা আটকে রাখা হয়েছে। সেন্সর আইনের কোথাও কথিত বিএফডিসি'র এনওসি লাগবে এমন কোনো কথা নাই।
বিগত তিন বছরে যতবার তথ্য সচিব বদল হয়েছে ততবার আমি নতুন তথ্য সচিবকে চিঠি লিখে এই সমস্যাটির কথা জানিয়েছি। সেন্সর বোর্ডের অন্যায় আবদার কেন 'হরিবোল' চলচ্চিত্রের জন্য প্রযোজ্য নয়, তা বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি। আমার কথারই পুনরাবৃত্তি করেছেন ফ্যাব ফেস্ট-এ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (চলচ্চিত্র) মো. জাহাঙ্গীর আলম। তাহলে সেন্সর বোর্ডে 'হরিবোল' আটকে আছে কেন?
প্রশ্ন হচ্ছে- আমরা চলচ্চিত্র অঙ্গনের লোকজন কী সংগঠিত? মোটেও না। এমনকি ফ্যাব ফেস্ট-এ 'হরিবোল' চলচ্চিত্রের সেন্সর বোর্ডে আটকে রাখা নিয়ে একটা শব্দও উচ্চারিত হয়নি। আমাদের সংস্কৃতিকর্মীরাও এটি নিয়ে প্রকাশ্যে একটা কথাও বলেনি। এমন একচোখা সংস্কৃতিকর্মী দিয়ে জাতি কতদূর আগাবে!
আমি 'হরিবোল' চলচ্চিত্রের মুক্তি চাই।
রেজা ঘটক
ডিরেক্টর, হরিবোল
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:২১