হাফ প্যান্ট পরা অবস্থায় মাত্র বুঝতে শিখেছি যে, একটা মেয়ের সাথে একটা ছেলেকে জড়িয়ে কোন আলাপ-আলোচনা করলে ঐ ছেলে বা মেয়েটার চরিত্র সমাজে পুরোপুরি মাইনাস দৃষ্টিকোণে চলে যায়। তখন ঐ ছেলে বা মেয়েটা কিন্তু ঐ সময় ঠিকই একটা লোকলজ্জায় পড়ে যেতও। তাই প্রত্যেকটা ছেলেমেয়েই অন্তত:পক্ষে আশা করতো যে, তাঁদের জড়িয়ে যেনও এমন কোন আলাপ-আলোচনা করা না হয়।
যখন ফুলপ্যান্ট এ আমি তখন জানলাম, দেওয়াল বা গাছে অথবা বইয়ের পাতায় বা এই প্রকৃতির জায়গায় যদি “উমুক+তুমুক/উমুকের নামের অদ্যাক্ষর+ তুমুকের নামের অদ্যাক্ষর” লেখা প্রচার করা হয়, তাহলে ঐ উমুক নামের ছেলে এবং ঐ তুমুক নামের মেয়েটার চরিত্র সমাজে পুরোপুরি মাইনাস দৃষ্টিকোণে চলে যায়। তখন ঐ ছেলে বা মেয়েটা কিন্তু ঐ সময় ঠিকই একটা লোকলজ্জায় পড়ে যেতও। তাই প্রত্যেকটা ছেলেমেয়েই অন্তত:পক্ষে আশা করতো যে, তাঁদের জড়িয়ে যেনও এমন প্রকৃতির প্রিন্টিং মিস্টেক না করা হয়।
যখন হাইস্কুলে পড়াশুনা করতাম তখন আচমকা জানতে পারলাম এতদিন যেগুলি সিরিয়াস ভাবে ভেবে এসেছি সেগুলি আসলে কোন ঘটনা ই না। আসল ঘটনা হলও পারা /গ্রাম/থানা/জেলা /বিভাগ/দেশ এর একই অথবা ভিন্ন স্থানবিশিষ্ট দুই ছেলে বা মেয়ের মাঝে যদি চিঠি আদান প্রদান হয় তাহলেই কেবল ঐ ছেলে বা মেয়েটার চরিত্র সমাজে পুরোপুরি মাইনাস দৃষ্টিকোণে চলে যায়। তাই প্রত্যেকটা ছেলেমেয়েই তখন অন্তত:পক্ষে আশা করতো যে, তাঁদের কাছে যেনও ভুলেও এমন প্রকৃতির পত্র প্রদান করা না হয়। আর আসলেও যেনও কেউ টের না পায়।
যখন কলেজে পড়তাম তখন জানলাম, না আসলে যখন দুজন ছেলে মেয়ে পরস্পর একসাথে রিক্সায়/পার্কে/নদীর পারে/সমুদ্রসৈকতে ইত্যাদি জায়গায় ঘুরতে যাবে তখন এ ঘটনা যদি কেউ দেখে ফেলে তখন ঐ ছেলে বা মেয়েটার চরিত্র সমাজে পুরোপুরি মাইনাস দৃষ্টিকোণে চলে যায়। তাই প্রত্যেকটা ছেলেমেয়েই তখন অন্তত:পক্ষে আশা করতো যে, তারা ঘুরবে ঠিকই কিন্তু যেনও কেউ না দেখে ফেলে।
ভার্সিটি তে যেয়ে দেখি আরও এগিয়ে গেলো দেশ, না দেশের ছেলে মেয়েরা। এখন দেখলাম ঘুরছে ঘুরুক এক সাথে সমস্যা নেই। কিন্তু হাতে হাত বা বক্ষে বক্ষ মানে জড়িয়ে ধরলে আর কি, কাহিনী ঘুরপাক। যদি কেউ এমন পরিস্থিতি দেখে ফেলে, তখন ঐ ছেলে বা মেয়েটার চরিত্র সমাজে পুরোপুরি মাইনাস দৃষ্টিকোণে চলে যায়। তাই প্রত্যেকটা ছেলেমেয়েই তখন অন্তত:পক্ষে আশা করে যে, তাঁদের এমন ‘কাছে আয় দূরে যা” খেলা যেনও কেউ না দেখে। চলছে চলুক লোকচক্ষুর আড়ালে।
আর চাকরী জীবনের শুরুতে দেখেছি, জনসম্মুখে যদি একটি ছেলে ও একটি মেয়ে পরস্পরকে চুমু খায় তাহলে তখন ঐ ছেলে বা মেয়েটার চরিত্র সমাজে পুরোপুরি মাইনাস দৃষ্টিকোণে চলে যায়। তাই প্রত্যেকটা ছেলেমেয়েই তখন অন্তত:পক্ষে চেষ্টা করতো যে, তাঁদের এমন ‘খাই খাই” খেলা যেনও কেউ না দেখে। গোপনে যতটুকু করা যায় আর কি।
আর এখন প্রত্যেকটি উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েরা আমরা কি করছি, “সুযোগ পেলেই ঐ”। এই সব করছে কিছুই না, কিন্তু জানতে পারলে অনেক কিছুই। ঐ নেগেটিভ/মাইনাস দৃষ্টিকোণ আর কি। তাই এইটা ছাড়া বাকি উপরোক্ত সবগুলিই অবাধে প্রকাশ্যে চলছে । চলুক আরকি !
গত কয়েকদিন আগে ট্রেনের সিগন্যালে ঝুলুন্ত বাসে আটকে থাকা অবস্থায় এক রিক্সায় অজ্ঞাতনামা দুই ছেলে মেয়ের ঠোঁটে ঠোঁটে “খাই খাই” দৃশ্য দেখেই এই সম্পূর্ণ কাহিনীটি মাথায় কামড়ানো শুরু করলো। তাই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করলাম আরকি!
এই আধুনিক যুগে “সুযোগ পেলেই ঐ” টাই শুধু গোপনীয়তা রক্ষা করছে। তাহলে ভবিষ্যতে “সুযোগ পেলেই ঐ” ও কি কোন এক ট্রেন এর সিগন্যালে আটকে থেকে দেখতে হবে ??