দুষ্টুমির হাসি খেলে যায় নীলার ঠটে । হেটে গিয়ে ছোট বাবুর পীঠে হেলান্দিয়ে বসে বলে ওঠে ;
- বলি বাবু মশায়ের কি তার বউ কে পছন্দ না, যে এই ভোর রাতে উঠে এসে নদির জলে পা ডুবিয়ে বসে আছেন।
শান্ত স্থির বয়েচলা স্রতে ধীরে পশ্ছিমের দিকে এগিয়ে চোলেছে নৌকাটা । এখনও সূর্য ওঠেনি । আকাশটা অদ্ভুত নিল আলো ছড়ােচছ । সেই আলই বিষণ্ণ নীলচে রং ধারন করেছে চারপাশের প্রকিতি । এই মাত্র নীলা গলুই এর বাইরে এসে দারিয়ে চাদর টা ঠিকমত জোরিয়া নিল গাইয়ে । রাত ভর ঘুম হইনি ওর, ছাড়া-ছাড়া ভাবে চোখ লেগে এলেও ঠিক মতো ঘুম ওর হইনি। আর এতটুকু নৌকাই পা সোজা করে ঘুমানোও অসম্ভব । পিছনে ফিরে একবার মা কে দেখেনিল নীলা। পা ভাজ করে ওভাবে শিশুর মতো নিশ্চিন্তে ঘুমাতে দেখে কেন যেন হিংসা হোল নীলার । তার পাশে বসে আসেন বাবা চিন্তিত , ক্লান্ত , ভেঙ্গে পড়া একটা চেহারা । মা ও নীলার মায়া যাকে বিচলিত করে রেখেছে সারাক্ষণ । এ দুটি প্রানিকে আগলে ধরে পাড়ি দিয়েছেন তিনি অযানার পথে । বাবা কে দেখেও নীলার হিংসা হতে লাগলো , কারণ তখনি মনে পড়ল রায়হান এর কথা।
কেন রায়হান বাবার মতো হতে পারলনা ? কেন নীলার আবেগ মেশানো একটি কোথাও ওকে ফেরাতে পারলনা? সব চেষ্টা বার্থ দেখে নীলা যখন কাঁদতে শুরু করল তখন একবার তো জড়িয়ে ধরতে পারত? কিন্তু না তা নাকরে শুধু দু হাতে নীলার মুখটা নিজের দিকে তুলে এক মুহূর্তে বলল আসি নীলা আবার দেখা হবে। পেছন থেকে ছুটেগিয়ে জড়িয়ে ধরেসিল নীলা, বলেছিল “যাবে যাও কিন্তু জাবার আগে আমার চিঠিটা তো দিয়ে যাও। ঘুরে দাড়িয়ে বলেছিল ফিরে এসে দিব ।
সামনে নৌকার উঁচু সরু স্থানে দুপাশে পা ঝুলিয়ে বসে আছে দশ এগারো বছরের একটা ছেলে। মাঝি তাঁকে ছোট বাবু বলে সম্মান ও শ্রদ্ধা নিয়ে ডাকে। এই নৌকাটা ওরই , ছোট বাবু দয়াকরে নীলাদের পরিবারকে নৌকাই তুলেছে। কোন গ্রামের কোন সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে ও। নীলার সাথে কথা বলার বা নীলার কথা বলার ঐ একজনই আছে এই নৌকাই। দুষ্টুমির হাসি খেলে যায় নীলার ঠটে । হেটে গিয়ে ছোট বাবুর পীঠে হেলান্দিয়ে বসে বলে ওঠে ;
- বলি বাবু মশায়ের কি তার বউ কে পছন্দ না, যে এই ভোর রাতে উঠে এসে নদির জলে পা ডুবিয়ে বসে আছেন।
- ফাজলামি করবেনা আমার মন ভাল নেই।
- হায় আমার পড়া কপালরে বলে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো নীলা, তার আগেই ছট বাবু বলতে শুরুকরল
- জানো নীলা আপু এইরকম ভোর রাতে মা আমাকে আর খুকিকে ডেকে দিতেন পড়তে বসার জন্য। তারপর রান্না ঘরে চলে জেতেন, আমি উঠতে চাইতাম না। মা ফিরে এসে আমাকে কাতুকুতু দিতেন। বলতে বলতে হঠাত থেমে যায় ছেলেটা নদির একপাশে শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে হালকা ভিজে ওঠা চোখে । সেই মায়াবী চোখের দিকে তাকিয়ে নীলা দেখতে পায় অমানুষিক দুঃখ , বেদনা তারও গভিরে অসম্ভব ক্রোধে জেগে ওঠা হিংস্রতা । এই পৃথিবীর বিশালতায় দশ বসরের এই ছেলেটার আপন বলতে কেউ নেই, যারা কদিন আগেও ছিল আজ তারা নেই, কখনও থাকবে না, মা বলে সে কাউকে কোনদিনও ডাকবে না, ভাবতে গিয়ে নীলার চোখ দুটো অজান্তেই ভিজে ওঠে।
খুব কাছেই কোথাও গুলির আওয়াজ শুনাগেল মাঝি বলল শব্দ সামনে থেকে এসেছে সুতরাং আর সামনে এগোন যাবে না নৌকা পাড়ে ভিড়িয়ে অপেক্ষা করতে হবে। পাড়ের দিকে মাঝি নৌকা বাইতে লাগলো। ছোট বাবু অদুরে ভেসে আসতে থাকা কিছু এক্তার দিকে সবার দৃশটি আকর্ষণ করে। সেদিকে তাকিয়ে স্থির হয়ে গেল নীলার সমস্ত অস্তিত্ব । সে কনভাবে বলল “বাবা ওটা রায়হান ভাই।“
রায়হান কে নৌকাই তুলে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে । ওর মাথা বুকে নিয়ে স্থির হয়ে নিশপলক বসে আছে নীলা। একটু নড়লে যেন ও বেথা পাবে। সে রাতেও রায়হান এই শার্ট টি পরেছিল, চিন্তে একটুও ভুল হইনি নীলার। শার্টের বুক পকেট থেকে এককনা কাগজ বের হয়ে আছে। ছোট বাবু ওটা তেনে বের করে মেলে ধরল। রক্ত আর পানিতে ধুয়ে গেছে তার সমস্ত লেখা।
ততক্ষণে সূর্যটা পূর্ব আকাশে অনেকটা উপরে উঠেগেছে, কোমল রোদে সমস্ত প্রকিতি তখন প্রাণবন্ত । এরই মাঝে নীলাদের নৌকাটি পাড়ের দিকে এগিয়ে যাছে নীলার শমশ্ত প্রানবন্ততা পিছে রেখে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫৫