somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মর্মঘাতী ভাললাগার গতানুগতিক পরিণতি ...

২৪ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ৯:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছু কেনাকাটার উদ্দেশ্যে গত শনিবার সকালবেলা এলিফ্যান্ট রোড যাচ্ছিলাম । বাসের টিকেট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি । সামনে সাত-আট জন হবেন । তাকিয়ে দেখি, আমার দু’জন সামনে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে । পেছনে আছি বলেই তার পেছন দিকটা দেখা যাচ্ছে । জীবনে আর কোন মেয়েকে পেছন থেকে দেখে এতটা মুগ্ধ হইনি । আমার এই অতি মুগ্ধতার কারণ তার ‘সুদীঘল কেশরাশি’। একদম হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ছুঁয়েছে । লম্বা চুল আগেও দেখেছি । ছোটবেলায় গ্রামে বেড়াতে গেলে দু-একজন গ্রাম্যবধূ চোখে পড়তো, যাদের চুল থাকতো হাঁটু পর্যন্ত দীর্ঘ, ঘন নারিকেল তেলে চুপসানো । এই ঢাকা শহরেও স্কুল জীবনে কত মেয়েকে দেখেছি লম্বা চুলের বেণী দুলিয়ে স্কুল-কলেজে যেতে । তবে এই মেয়েটার চুলগুলো অদ্ভুত অন্য রকম । গত অর্ধ যুগে আধুনিক ঢাকায় নিশ্চিতভাবে এতটা সুন্দর চুলের অধিকারিণী আর কোন মেয়েকে দেখিনি । তার চুল ছিল সযত্নে সুবিন্যস্ত । খোলা, পরিপাটি, রেশমী । এতদিন শুধু মেয়েদের চুল কেটে ছোট করতেই দেখেছি । তবে চুল লম্বা রেখেও কাটিকুটি করে সৌন্দর্য যে এতটা ফুটিয়ে তোলা যায়, তার চাক্ষুষ প্রমাণ পেলাম এই প্রথম ।

অপেক্ষায় আছি একই বাসে উঠবো বলে । প্রচন্ড গরমে খোলা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকাই দায় । মিনিট বিশেক পর বাস এলো । রীতি মোতাবেক ঢাকা শহরের নিয়মিত পাবলিক বাসগুলোর মতোই তা পরিপূর্ণ । আমি আশাবাদী ছিলাম, এই গরমে পরিপাটি চুল নিয়ে এত্তো ভীড়-বাট্টাওয়ালা বাসে সম্ভবত মেয়েটি উঠবে না । আরো কিছুক্ষণ তার কেশ-দর্শনের সুযোগ পাবো । মেয়েটির হয়তো তাড়া ছিল অথবা আমি অতি আশাবাদী ছিলাম । আমার অনুমান ভুল প্রমাণ করে মেয়েটি বাসে উঠে পড়লো । আর সম্মোহিতের মতো আমিও তাকে অনুসরণ করলাম ।

বাসের ভেতর আমাদের অবস্থানটা ছিল বেশ রোমান্টিক ! আমি দাঁড়ালাম সিঁড়ির ঠিক উপরে – বাম পাশের প্রথম সারির আসনগুলোর সামনে । আর মেয়েটি আসন না পেয়ে দাঁড়িয়েছে একটু নিরাপদ অবস্থানে, ডান পাশের প্রথম সারির আসনগুলোর সামনে, ইন্জিনের ঠিক পেছনে । আমাদের মাঝখানে ছাদ আর মেঝের বিভেদটা সুনিশ্চিত করার জন্য দাঁড়িয়ে আছে মোটা লোহার রড । আমরা দুজনেই সেই রড ধরে দাঁড়ালাম । প্রথমবারের মতো সুযোগ হলো মেয়েটিকে সরাসরি দেখার, মুখোমুখি ।

অপার মুগ্ধতায় আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম । নিজেকে অনেকটা নাটক বা সিনেমার নায়কের মতো মনে হচ্ছিল, প্রথম দর্শনেই নায়িকার প্রেমে পড়ে যাওয়া । বেশ কয়েকবার চোখাচোখি হলো । চোখে চোখ পড়লেই কখনো আমি সরিয়ে নিচ্ছি । কখনো বা সে । কই, আর কারো সাথে তো তার চোখাচোখি হচ্ছে না । আমিও বা কেন বার বার ফিরে তাকাচ্ছি ? এর আগে কারো সাথে একবার চোখাচোখি হলেই চোখ অন্যদিকে সরিয়ে ফেলতাম । তবে আজ কেন এমন হচ্ছে ?

কাকরাইল পর্যন্ত আমাদের অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয়নি । একটি নিরেট লৌহদন্ড, যার কোন অনুভূতি নেই, তাকে অবলম্বন করে চারটে হাত । ইস্‌, লোহার এই রডটার যদি স্পন্দন থাকতো ! কোন এক স্পন্দনে তা নিশ্চয়ই পৌছে দিত আমার ভাল লাগার কথা । প্রথাবিরুদ্ধ চালক অতি সতর্কতায় কদাচিত হার্ডব্রেক কষছেন, আর তার দরুণ মাঝেমধ্যে ঘটছে অনিচ্ছাকৃত স্পর্শ । তারপর স্বাভাবিকভাবেই বিব্রতকর চোখাচোখি । রডটাকে আঁকড়ে ধরে রাখা তার দুহাতের দিকে তাকালাম । ডানহাতের চতুর্থ আঙ্গুলে চমৎকার একটি আংটি শোভা পাচ্ছে । মনটা দমে গেল । ইতিমধ্যে আধা-ঘন্টা সময় পার হয়েছে । কিন্তু মনে হচ্ছে মাত্র কয়েক সেকেন্ড । আর কপাল এতোটাই ভাল যে আজ রাস্তায় একটুও জ্যাম নেই !! কাকরাইলে এসে তার বসার জায়গা হলো । ডানদিকের তিন নম্বর সারির দুই নম্বর আসন । আমি তখনো সে রড ধরে দাঁড়িয়ে । তার স্পর্শের উষ্ণতার শেষটুকু প্রাপ্য বুঝে নিচ্ছি আর তার চাহুনিগুলোর মর্মার্থ উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছি । তাকিয়ে দেখি, কার সাথে যেন হাসিমুখে মোবাইলে কথা বলছে । কেন যেন আবারো মনটা খারাপ হয়ে গেল ।

শাহবাগ এসে আমিও বসার জায়গা পেলাম । তার এক সারি আগে । দেখতে পাচ্ছি না, তবে বসে বসে ভাবছি নামার পর কথা বলবো কিনা? সিদ্ধান্ত নিলাম একই স্ট্যান্ডে নামবো । আমার মূল গন্তব্য এলিফ্যান্ট রোড পার হয়ে যাচ্ছি । আমার ধারণা ছিল, মেয়েটি হয়তো নিউমার্কেট বা ইডেন কলেজ এলাকায় এসে নামবে । কিন্তু তার গন্তব্য শেষ হলো এলিফ্যান্ট রোডের শেষ মাথায় এসে । অতি দ্রূততায় বাস থেকে নামলো । সম্বিত ফিরে পেয়ে আমিও নেমে পড়লাম । অধিক দ্রুততায় সে উঠে পড়লো ওভারব্রিজে, গন্তব্য হয়তো সিটি কলেজ বা ধানমন্ডি । আমিও উঠলাম ওভারব্রিজে । কি করা উচিৎ ? ছুটে গিয়ে থামাবো ? কথা বলবো ? “আপনার ঘন কালো রেশমী চুলে আমি তো আমার মনটাকে হারিয়ে ফেলেছি !!” পাবলিক প্লেসে আবেগঘন দৃশ্যের অবতারণা !!!

আমার দুর্বল হৃদয় অতটা সাহসী হয়ে উঠতে পারেনি । কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মতো আবারো্ পরিস্থিতি ছেড়ে দিলাম নিয়তির উপর । কতবারই তো চোখে চোখ পড়েছে, এর সবই কি ছিল স্বাভাবিক দর্শন ? একবারো কি দৃষ্টির পেছনে তার ভালোলাগার অনুভুতি ছিল না ? যদি একবারো তার দৃষ্টিতে ভালোলাগার অনুরণন থেকে থাকে, তবে অবশ্যই সে ফিরে তাকাবে । আমি সেটা স্রষ্টার সম্মতি হিসেবেই ভেবে নেব । ছুটে যেয়ে বলবো আমার মুগ্ধতার কথা, আমার ভাললাগার কথা ।

স্রষ্টা রীতিবিরুদ্ধ হয়ে সম্মতি দিলেন না । নাহ্‌, মেয়েটি আর তাকায়নি । হনহন করে নেমে রিকসায় চড়ে রাইফেলস্‌ স্কয়ারের দিকে চলে গেল । আর আমি ? ফিরে চললাম আমার গন্তব্যের দিকে । আপন মনে নিজেকেই নিজে উপহাস করলাম । সবকিছু হয়তো নিয়তির উপর ছেড়ে দেয়া উচিত নয় । জানি । তবু কেন যেন পারি না কারো পথ আটকাতে । এটা কি কাপুরুষতা, নাকি নিরর্থক অহংবোধ, নাকি বাস্তবতার পিছুটানে গতানুগতিক ধারায় আটকে যাওয়া ?

অথচ ঘটনাটির যবানিকাপাত এমনটাও হতে পারতো – বাস থেকে নেমেই মেয়েটি ইতস্তত সামনে পা বাড়ালো । মনটা যেন পেছনে কোথায়ও ফেলে এসেছে । হঠাৎ পথচলা থামিয়ে ফিরে তাকালো পেছনে । যে আমি তার ফিরে তাকানোর প্রত্যাশায় দাঁড়িয়ে ছিলাম, হাসি মুখে এগিয়ে গেলাম তার পানে ।

মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রথম কথা, “নারীর এমন অনিন্দ্য সুন্দর চুল আমি জীবনেও দেখিনি, সেজন্যেই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বারবার তাকাচ্ছিলাম ।“
- “হুম, সেটা তো আপনার তাকানো দেখেই বোঝা যাচ্ছিল । আপনি অবাক বিশ্ময়ে চেয়েছিলেন”।"
- “কিন্তু আমি মনে হয় বিষন্ন দৃষ্টিতেও তাকিয়ে ছিলাম । বিশেষত আপনার অনামিকায় ওই আংটিটা দেখার পর ।“
- “ওহ, এটা !!! এটা হাতে দেয়ার মূল কারণ আশপাশের সবাইকে বিভ্রান্ত করা । ইদানিং যেখানেই যাই, আশপাশের ছেলেগুলো যেরকম বিরক্ত করে !!”
- “আমি কি আপনাকে বিরক্ত করছি ?”
- “মোটেও না । আপনি কিন্ত এখনো আপনার নামটাই বলেননি ?”
- “আমি অপার্থিব । আপনি ?”
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০০৯ বিকাল ৫:০৯
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×