১৩ই জুন,১৯২৮।সেদিন আমেরিকায় সূর্য উঠেছিল আরেকটু বেশী আলো নিয়ে।ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার জন ফোর্বস ন্যাশ ও স্কুলশিক্ষিকা মা মার্গারেট ভার্জিনিয়ার ঘরে জন্ম নিয়েছিল বর্তমান সভ্য সমাজের একজন আলোর বাহক জন ফোর্বস ন্যাশ জুনিয়র।
জন ন্যাশ কতটা প্রতিভাবান ছিলেন তা বোঝা যায় তার তত্ত্বগুলোর প্রয়োগ দেখলে।অর্থনীতি,বিকাশমান জীববিজ্ঞান, গননা,রাজনীতি, মিলিটারি, দক্ষতাসম্পন্ন ক্রীড়া, কম্পিউটার সায়েন্স এবং..... আর কোথাও কি বাকি আছে?
তিনি বিশ্বাস করতেন সংখ্যায়।আর সবকিছু ছাপিয়ে তিনি একজন গণিতবিদ। সিলভিয়া নাসার লিখেন, 'A Beautiful Mind'-মহান গণিতবিদ জন ন্যাশের বায়োগ্রাফি।পরবর্তীতে একই শিরোনামে জন ন্যাশকে নিয়ে অসাধারণ এক মুভি তৈরি করেন ডিরেক্টর রাসেল ক্রোয়ে।,সমালোচিত এবং চারটি সেক্টরে অস্কারপ্রাপ্ত মুভি।
'A Beautiful Mind'-মুভিটা দেখার পর একটা অনুভূতি হবে।একজন মহৎ মানুষ ও মহান গণিতবিদ। তার চাইতেও বেশি শ্রদ্ধা জাগবে এলিশিয়ার প্রতি।এলিশিয়া লোপেজ ডি লার্ডে,যিনি ভালোবেসেছিলেন একজন অসামাজিক মানুষকে।ছিলেন শেষ দিন পর্যন্ত। একজন প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত মানসিক রোগীকে সংগ দিয়েছিলেন। সেই প্রতিদান জন ন্যাশ কিছুটা দিয়েছিলেন ১৯৯৪ তে নোবেল প্রাপ্তি অনুষ্ঠানের বক্তৃতার মাধ্যমে।
১৯৫৯ সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তার অস্বাভাবিক আচরণ প্রকটভাবে ধরা পড়ে এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।১৯৫৯ থেকে ১৯৭০, এই দীর্ঘ সময় সে গনিতের বাইরে ছিল।ইনসুলিন শক,উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ওষুধ তাকে গনিতের প্রতি মনোযোগ দিতে ব্যাহত করছিল।তারপর ১৯৭০ সালে সিদ্ধান্ত নিলেন, অনেক হয়েছে, আর নয়।মানসিক শক্তির জোরেই তিনি নিয়ন্ত্রণ করবেন লাল টাই পরা কম্যুনিস্ট দের যারা তার সাথে চক্রান্তে লিপ্ত,যাদের তিনি সৃষ্ট করেছিলেন কল্পনা শক্তির মাধ্যমে।মুভিতে অবশ্য কল্পনার চরিত্র ভিন্ন,তবে সম্ভবত বেশি প্রাসঙ্গিক।
১৯৫৯ সালে MIT তে লেকচার দিতে গিয়ে সেখানকার এক হাসপাতালের নার্সের সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়ান,নাম এলানার স্টায়ার।এ পর্যায়ে একটা দীর্ঘশ্বাসের বিরতি নিতে হবে।'A Beautiful Mind' - নামকরণ টা কিছুটা ফিকে মনে হবে।মুভির মহান ন্যাশ কে 'অমানুষ'-ও মনে হতে পারে।ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ স্টায়ারের গর্ভে যখন ন্যাশের সন্তান তখন 'সামাজিক অবস্থান'-এর দুয়ো তুলে স্টায়ার কে ফেলে রেখে ন্যাশ পালিয়ে যান।
পরবর্তীতে এলিশিয়ার সাথে সম্পর্কে জড়ান এবং বিয়ে করেন।যে 'ধৈর্যশীল','মহৎ প্রেমিকা' এলিশিয়ার সাথে আমাদের পরিচয় হয়েছিল মুভিতে,সেই এলিশিয়া ১৯৬৩ তে অসুস্থ ন্যাশকে ডিভোর্স দিয়েছিলেন চাপের কারণে।এক্ষেত্রে হয়ত আমিই ভুল,কারণ তারা আবার বিয়ে করে এবং এই ভালোবাসার ক্ষমতাবলেই হয়ত এক সাথেই পাড়ি জমিয়েছেন এমন স্থানে যেখানে ভালোবাসার শেষ নেই,জীবনের শেষ নেই।
২০০১ এ রিলিজ হওয়া 'A Beautiful Mind' মুভিটা কেন সমালোচিত তা হয়ত এতক্ষণে বুঝা হয়ে গেছে।বায়োগ্রাফিক মুভিতে কিছু সত্যকে পাশ কাটানোই একমাত্র কারণ,তা নাহলে এই অসাধারণ মুভিটির সমালোচক পাওয়া দুষ্কর হবে।
১৯৯৪ তে ন্যাশ নোবেল পান অর্থনীতিতে তার বিখ্যাত 'Game Theory ' এর কারণে।প্রিন্সটনে পিএইচডি করার সময় এই ২৮ পেজের থিওরি প্রকাশ করেন,সেখানেই তার প্রফেশনাল জীবন কেটেছে।এই থিওরিটা বুঝার জন্য হলেও অন্তত এই মুভিটা দেখা উচিত,যে থিওরি এডাম স্মিথকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
২৩ মে,২০১৫ তে নরওয়ে থেকে এডেল পুরষ্কার গ্রহণ শেষে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় ভালোবাসার সাথী এলিশিয়াকে নিয়ে পাড়ি জমান চিরস্থায়ী আবাসে।
সবকিছুর উপরে জন ন্যাশ একজন গণিতবিদ।মহান গণিতবিদ হিসেবেই তাকে স্মরণ করে লিখাটা শেষ করছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:০০