
২০২৩ সালে সুদানের সরকার দুটো ভাগে দুর্বল হওয়ার পরই Sudanese Armed Forces (SAF) এবং Rapid Support Forces (RSF) দুই ভাগে বিভক্ত হয়। এই দুই বাহিনী যদিও দাবি করেছে তারা রাষ্ট্রকে রক্ষা করছে, বাস্তবে তাদের এই যুদ্ধ জাতিগত নিধন ও আধুনিক যুগের ন্যাক্কারজনক গণহত্যায় রূপ নিয়েছে।
২০০৩–২০০৫ সালের পুরো সময় দারফুরের অনারবদের ওপর চালানো বর্বরতা শুধুমাত্র অনারবদের ক্ষতিগ্রস্ত করেনি; আরবদেরও একটি বড় অংশ ক্ষতির শিকার হয়েছে। কুখ্যাত মিলিশিয়া থেকে আধা-সামরিক রাষ্ট্রীয় শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে RSF। আজ সেই ইতিহাস যেন পুনরায় ফিরে এসেছে El Fasher, Nyala ও Geneina শহরগুলোতে। গণহত্যার মতো অপরাধ এবং মানবতার ধ্বংস ঝুলে আছে RSF-এর বন্দুকের নলের ডগায়।
RSF-এর প্রধান উৎস হলো স্বর্ণ খনি, পাচার এবং বিদেশি সংস্থার সরাসরি ফান্ডিং। ২০২৪ সালের ECFR (European Council on Foreign Relations) এর তথ্য অনুযায়ী, Darfur এবং Kordofan অঞ্চলের ৯৭% স্বর্ণ আরব আমিরাত (UAE)-এ গেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে Reuters-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরব আমিরাত RSF কে অর্থ, অস্ত্র ও লজিস্টিক সহায়তা করছে। ২০২৫ সালের মার্চে সুদানের সরকার অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহের অভিযোগে মামলা দায়ের করলেও, কোর্ট সেই মামলা খারিজ করে দেয় ‘অধিকারক্ষেত্রের অভাবে’।
এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, আরব আমিরাত এখানে গোল্ড ডিপ্লোম্যাসি-র ভূমিকায় রয়েছে; অর্থনৈতিক লাভ এবং আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের জন্য যুদ্ধকে কাজে লাগানো হচ্ছে।
এর পরিণতি হিসেবে El Fasher শহরে RSF-এর হাতে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংস সংঘটিত হচ্ছে। হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগও এই বর্বরতার আওতায় এসেছে। WHO ইতিমধ্যে এটিকে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যা হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে।
এটি কোনো সাধারণ অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ নয়। আরব লীগ, জাতিসংঘ, আফ্রিকান ইউনিয়ন নিন্দা জানিয়েছে, কিন্তু কোনো শান্তিবাহিনী নেই, নেই জোরালো পদক্ষেপ। জাতিসংঘ RSF ও হেমেতির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, কিন্তু SAF কে আবার সমর্থন করছে চীন ও রাশিয়া। আন্তর্জাতিক দ্বিধাদ্বন্দ্বের এই পরিবেশ রোয়ান্ডার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির দিকে ইঙ্গিত দেয়।
এটি একটি আফ্রিকান প্রক্সি যুদ্ধের ইঙ্গিত দেয়। একদিকে SAF সমর্থিত — চীন, রাশিয়া, মিশর; অন্যদিকে RSF সমর্থিত — আরব আমিরাত, কিছু ইউরোপীয় দেশ এবং গালফের রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ী নেটওয়ার্ক।
সহজভাবে বলতে গেলে, এই যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু হলো লাল সাগর। আরব আমিরাত চায় লাল সাগরে নিজেদের অবস্থান, সামরিক ঘাঁটি ও উপস্থিতি নিশ্চিত করতে, যাতে তারা এই রুট ব্যবহার করে আফ্রিকার খনিজ সম্পদে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে। Port Sudan-এর উপর যাদের আধিপত্য থাকবে, তারা স্বর্ণ, বাণিজ্য ও অস্ত্রের প্রাকৃতিক রুট নিয়ন্ত্রণ করবে। আরব আমিরাত ঠিক এই কাজটাই করছে। সৌদি আরবও তাদের Red Sea Economic Zone নিরাপদ রাখতে চাইছে।
এই যে গণহত্যা, বর্বরতা ও ধ্বংস—সব কিছুর মূলেই মূলত আঞ্চলিক এবং ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ। যারা লাল সাগরের অঞ্চল দখল করবে, তারা আফ্রিকায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়াবে। এই কারণেই El Fasher, Nyala, Geneina সহ সুদানের অনেক শহরে মৃত্যু, ধ্বংস ও মানবিক বিপর্যয় চলছেই।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৯:০৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



