somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা করব জয়

০২ রা মার্চ, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেসবুক এ লেখাটা দেখে চোখে পানি এসে গেল আর সাথে সাথে গর্বে সিনা কিছুটা ফুলে গেল। আপনাদের সাথে শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না।
মিডিয়া এক্সপ্লোরেশন’ নামে আমাদের একটা বিষয় পড়ানো হয়। পড়তে খুবই বিরক্তিকর। এবং ঘুমবান্ধব। বড় একটা গ্যালারীতে তিন সেকশনের একসাথে ক্লাস হয়। শীতের দিন সকাল বেলা এই ক্লাসে গিয়ে ঘুমানোর আনন্দ সীমাহীন। গত ব্লক ঘুম দিয়ে বেশ ভালভাবেই পার করেছি। ধরা খেয়েছি এই ব্লকে এসে।

‘ডরিক গ্রিট’ নামের এক ভদ্রলোক এই বিষয় পড়ান। চমৎকার একজন মানুষ। একদিন কী মনে করে এই লোক আমাকে ক্লাসে দাঁড় করিয়ে বলেন,’তোমার দেশের খবরের ধরনের সাথে এই দেশের(হল্যান্ড) খবরের ধরনের পার্থক্য বল’।

ঘুমের ভিতরে ছিলাম। হঠাৎ করে মাথা শুন্য মনে হলো। কিন্তু শুন্য মাথায় মনে হয় মাঝে মাঝে দামি উত্তর বের হয়ে আসে। আমি উত্তর দিলাম,

“আমার দেশের অধিকাংশ খবরই চাঞ্চল্যকর। আর এই দেশের অধিকাংশ খবরই খুবই বিরক্তিকর…’

ক্লাস জুড়ে হো হো, হা হা রব উঠলো। পরে সবাই ঠাণ্ডা হলে ব্যাপারটা আমাকে ব্যাখ্যা করতে হয়েছে। ডাচদের আবার ইগো একটু বেশি। আমার দেশের তুলনায় তাদের দেশের খবর কেন বিরক্তিকর, সেই ব্যাপারটা তাদের বুঝানোর জন্য ওই দিনে( ১৭ অক্টোবর ২০১১) বাংলাদেশের প্রধান তিনটা খবর তাদের পড়ে শোনালাম।

খবর ১

“শেয়ার বাজারে অব্যাহত দরপতনের প্রতিবাদে বিনিয়োগকারীরা আমরণ অনশন শুরু করেছেন। এবং দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো এতে তাদের সংগতি প্রকাশ করেছে। “

খবর ২

“বেসরকারি খাতে পরিচালিত দেশের সবচেয়ে বড় টেলিযোগাযোগ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, তারা সরকারী টেলিযোগাযোগ কমিশনের দাবি করা অর্থ পরিশোধ করবে না। “

খবর ৩

“দেশের ক্ষমতাসীন দলের এক সাংসদ তার এলাকার একটি স্কুলে তালা দিয়ে রেখেছেন। বাচ্চারা ৩৮দিন ধরে স্কুলে যেতে পারছে না।(ছবি সহ প্রতিবেদন)”

নানাবিধ আলোচনার পরে তারা সবাই মাথা নাড়িয়ে একমত হয় যে,প্রথম খবরটা বেশি চাঞ্চল্যকর। অনেকগুলো মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা মরে যাবে। চোখ বড় বড় করে অনেকেই বিভিন্ন ইমো দিতে লাগলো। আহারে!!

এর পরে সপ্তাহ খানেক গিয়েছে। লাইব্রেরী করিডোরে ডরিকের সাথে দেখা। কফি হাতে কোথায় যেন যাচ্ছে। দৌড়ের উপর আছে, বোঝা যায়। আমি পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছি। ডরিক পিছন থেকে ডাক দিল।

- হাই…!! রেজা কেমন আছো?
- ভাল আছি। তুমি কেমন আছো?
-এইতো ভাল আছি। আচ্ছা তোমার দেশের ওই মানুষগুলোর কি খবর? যারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা মরে যাবে। আমি কয়দিন ধরে খুব ব্যস্ত। খবরটা ঠিক মত ফলো করতে পারি নি।

আমি একটু অবাক হলাম। তৃতীয় বিশ্বের গরীব একটা দেশের কিছু মানুষ মরে যাওয়ার খবর,এমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। ডাচরা বরাবরই ‘বিজনেস পিপল’ ধরনের। নিজের দরকার না থাকলে, সচরাচর যেচে পড়ে কারো খবর এরা নেয় না। ডরিক আমাকে কফি অফার করলো। কফি খেতে খেতে সেদিন ডরিকের সাথে আমার কিছু চাঞ্চল্যকর বিষয়ে আলোচনা হলো।

ডরিকের নয় বছর বয়সী ছেলে স্তিভান একজন বাংলাদেশী হতে চায়। আমি ডরিকের কথা শুনে চোখ কপালে তুললাম। এবং অনেকক্ষণ সে চোখ কপালেই থাকলো। ডরিক পুরো ব্যাপার ব্যাখ্যা করলো। স্তিভানের পছন্দের টিভি প্রোগ্রাম হলো “Bangla Bangers “।

যেখানে লিপু নামের এক বাংলাদেশী, বার্নি নামের এক ব্রিটিশ মেকানিককে নিয়ে বিস্ময়কর সব সুপার কার বানায়। মজার ব্যাপার হলো, লিপু কোন ইনিঞ্জিনিয়ার নয়। লিপুর কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। এবং সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয় হচ্ছে, লিপু গাড়ির পুরো ডিজাইনটা রাখে তার মাথায়। তার কোন ড্রয়িং লাগে না। মোটামুটি আবর্জনা ধরনের গাড়িকে সুপার কার বানাতে লিপুর লাগে চার সপ্তাহ। লিপুর কথা আমিও জানতাম। বাংলাদেশের কোন জানি টিভি চ্যানেল লিপুকে নিয়ে একবার কী জানি একটা প্রতিবেদন করেছিল। এর পর লিপুকে দেখেছি ডিসকভারি চ্যানেলে। লিপুর সম্পর্কে আমার জ্ঞান ওই পর্যন্তই।

ডরিক আমাকে জানালো, অধিকাংশ ইউরোপিয়ান টিনেজার লিপুর নাম জানে। লিপুর নাম শুনলে ক্লাসে আড্ডা জমে যায়। এরা চোখ বড় বড় করে লিপু নামের এক বাংলাদেশী কিভাবে একের পর এক সুপার কার বানিয়ে ফেলে,সেই সব গল্প করে। লিপু গাড়ি বানানো শেষ হলে, দুই হাত তুলে ঢেউ তোলার মত একটা ভঙ্গি করেন। লিপু হয়তো জানেন না, বঙ্গোপসাগর থেকে তার তোলা ঢেউ বাংলাদেশ ছাড়িয়ে আছড়ে পড়েছে ইউরোপে। এখানকার বাচ্চারা লিপুকে তারা ডাকে, “ক্রেইজি ডুউড” বলে।

দূরে থাকার একটা অসুবিধা আছে। সাত হাজার মাইল দূরে ফেলে আসা গরিব এই দেশটার কথা শুনলেই অনেক সময় চোখে পানি চলে আসে। এর জন্য খুব একটা দেশপ্রেমিক হতে হয় না। এটা একান্তই মানবীয় একটা অনুভূতি। হঠাৎ করে আবেগতাড়িত হলাম বোধ হয়। খেয়াল করলাম, চোখ ভিজে আসছে। ডরিক বোধহয় ব্যাপারটা খেয়াল করলো। ডরিক আরও কিছু তথ্য আমাকে দিল।

অধিকাংশ ডাচ লোকজনদের ধারণা, বাংলাদেশের লোক জন বাড়াবাড়ি রকমের সাহসী। বন্যা-খরা তাদের কাছে কোন ব্যাপার না। এবং আমাদের এই সাহসী মানসিকতা দেখে তারা প্রতি মুহূর্তে অবাক হয়। একটা ব্যাপার বলে রাখা ভাল,নেদারল্যান্ডস এবং বাংলাদেশ ভৌগলিকভাবে একই ঘরনার দেশ। ১৯৫৩ সালের এক বন্যায় এই দেশের সব বাঁধ ভেঙে যায়। উত্তর সাগরের আকস্মিক ঢেউ ১৮০০ জন মানুষকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এই দুঃসহ স্মৃতি ডাচরা এখনো ভুলতে পারে নি। তারা সমুদ্রের বুকে পৃথিবীর সেরা সব বাঁধ বানিয়েছে, তারপরও তাদের ধারণা তাদের সাহস কম। সাহস বেশি বাংলাদেশীদের। ১৯৭০ সালের পর থেকে বাংলাদেশে বন্যায় যত মানুষ মারা গিয়েছে, সারা পৃথিবীতে বন্যায় এতো মানুষ আর কোথাও মারা যায়নি। তারপরও এই দেশের মানুষরা বন্যা নিয়ে খুব একটা দুঃখিত না। প্রতিবছর নিয়ম করে বন্যা আসে, সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। বাংলাদেশ কিন্তু থেমে থাকে না।

ডরিক আমাকে জানালো, বর্ষায় বাংলাদেশের একটা ছবি দেখেছিল সে। আকাশের অনেক উপর থেকে তোলা একটা ছবি। উপর থেকে দেখে মনে হচ্ছে, পুরো দেশটা সমুদ্র হয়ে গেছে। শুধু বিন্দুর মত ছোট ছোট কিছু সবুজ জেগে আছে।

আমি বললাম, ওই সবুজটুকু থাকলেই হবে। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ওইটুকু সবুজই যথেষ্ট।

দেখুন “Bangla Bangers “ এ লিপুর সুপার কার বানানো :-

পার্ট ১ : http://youtu.be/dGpo7KRzTyI
পার্ট ২ : http://youtu.be/CjFAaKYXszs
পার্ট ৩: http://youtu.be/W4Mgurbp0S0

কৃতজ্ঞতা ~ রেজা শাওন।
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিচার চাই? না ভাই, আমরা "উল্লাস" চাই

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৭





দীপু চন্দ্র দাস একটি পোশাক শিল্প কারখানায় চাকরি করতো। সম্প্রতি দীপু দাস তার যোগ্যতা বলে সুপার ভাইজার পদে প্রমোশন পেয়েছিলো।

জানা যায়, সুপারভাইজার পজিশনটির জন্য আরও তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×