somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিম আগে না মুরগী আগে'র অর্থনীতি

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গ্রিসের আজ অর্থনৈতিক দৈন্য-দশার মূল কারণ, তাদের জনগন আয়কর দেয়ার ব্যাপারে অতি মাত্রায় উদাসীন। আমাদের জনগণও আয়কর দিতে অনিচ্ছুক। আর তাই বিশ্বের অন্য যেকোন দেশের তুলনায় আমাদের বাজেট আয়ে আয়কর এর অবদান তুলনামূলক অনেক কম।
জনগন মনে করে, আয়কর দিয়ে লাভ কী, এই টাকার তো সদ্ব্যবহার হবে না। আর সরকার মনে করে, জনগণ তো আয়কর দেয় না, দেশ চালাব কিভাবে? এটা হল ডিম আগে না মুরগী আগে-র গল্প।
জনগণের টাকা- শব্দদ্বয় আসলে একটা ফাঁকিবাজি-জনগণের জন্য, সরকারেরও জন্য। জনগণের জন্য, কারণ- এই জনগণকে আয়কর দিতে হয় না। সরকারের জন্য, কারণ- এই জনগণ আয়কর দেয় না। অথচ বিদেশে ট্যাক্স পেয়ার'র মানি কথাটা বহুল প্রচলিত। ট্যাক্স পেয়ার- কথাটার মধ্যেই জবাবদিহি অন্তর্নিহিত। আমার টাকা নিচ্ছ, আমাকে কী সেবা দিচ্ছ। ফলে সরকার সেবা দিতে বাধ্য থাকে, জনগণও ট্যাক্স দিতে অনীহা করে না। কানাডা তে জনগণ আয়ের সিংহভাগই আয়কর হিসেবে দেয়। আমরা দেই না। কিন্তু দিন শেষে ওই কর বাঁচানো আয় আমাদের বাড়তি কোন সুবিধা দেয় না। আমাদের ওই টাকায় নিরাপত্তা কিনতে হয়, স্বাস্থ্য-সেবা- শিক্ষা কিনতে হয়, ভোগান্তি কিনতে হয়। শেষ বিচারে পুঁজিবাদী কানাডা সমাজতান্ত্রিক, মিশ্র অর্থনীতির (কেউ কেউ বলে লেফট অব দ্য সেন্টার বা সমাজতন্ত্রী ঘরানা) আমরা পুঁজিবাদী।
আসল কথা হল জনগণ ও সরকার একে অন্যের আয়না। জনগণ যেমন হয় সরকারও তেমন হয়। সরকার তেমনই হয়, জনগণ যেমন হয়।
রাজস্ব সংকুলান হচ্ছে না। উপায় দুইটা, হয় ব্যয় কমাতে হবে; নইলে আয়ের ক্ষেত্র বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের মত দেশে ঘাটতি বাজেটের কোন বিকল্প নেই। এখানে জামা বুঝে কাপড় সেলাই এর উপায় নেই। আর সেটা সব সময় আদর্শ পন্থাও না। আপনার তিন গজী কাপড় লাগবে জামা সেলাই করতে। কিন্তু যেহেতু আপনার সামর্থ্য দুই গজের, এখন যদি দুই গজী কাপড় বানান- পুরোটাই অপচয়। এখানেই ঘাটতি বাজেটের গল্প নিহিত। ফলে আয়ের ক্ষেত্র বাড়াতেই হবে।
আয় বাড়ানো'টা অনেকের কাছেই একটা অ্যা ডার্টি মাইন্ড প্রসূত প্রক্রিয়া। কিন্তু অ্যা বিউটিফুল মাইন্ড ন্যাশ এর গেম থিওরিতেই আশ্রয়। এখানে তো উইন -উইন হবে না। যার পকেট কাটবে সে ভাববে আমি লুজার, আর প্রতিপক্ষ উইনার। শেষতক প্লেয়ারদের কাছে এটা জিরো সাম গেইম। একজন যতটা হারবে, আরেকজন ততটাই জিতবে।
যা'ই হোক শিক্ষায় করারোপ শেষতক ভার্সিটি বইবে না, শিক্ষার্থীই বইবে। এদের মধ্যে বিরাট অংশ স্রেফ মধ্যবিত্ত।
সেদিন পত্রিকায় দেখলাম জর্দা ব্যবসায়ী দেশে ব্যক্তিশ্রেণির নাম্বার ওয়ান করদাতা। এটা দেশের ধনীদের কর-চরিত্র প্রকাশ করে। মানে হল, দেশের প্রধান ধনীরা কর-ফাকিতে চ্যাম্পিয়ন। তারা যদি ঠিকঠাক কর দিত, আজ সরকারকে করের জন্য প্রাণাতিপাত করতে হয় না। ঢাকার ত্রিশ ভাগ ধনীকে, আর জেলা শহরের দশ ভাগ ধনীকে করজালে ফেলে দিলে 'হায় বাজেট হায় রাজস্ব' মাতম অনেকটা ক্ষীণ হয়ে আসবে। আর এই টাকা তো জণকল্যানেই ব্যয় হবে। পজেটিভ এক্সটার্নালিটি হবে বৈষম্য হ্রাস। অবশ্য বৈষম্য হ্রাস নিয়ে বুদ্ধিজীবী শ্রেণির বড় বড় কথায় বিপ্লবী হবার কোন মানে নেই। গিনি কোফিসিয়েন্ট আর পালমা অনুপাত যা'ই বলুন, সারা বিশ্বেই বৈষম্য আছে। এটাই প্যারেটো প্রিন্সিপাল। ৮০ ভাগ লোকের কাছে ২০ ভাগ সম্পদ, আর ২০ ভাগ লোকের কাছে ৮০ ভাগ সম্পদ। এখানে ঢাকা আর নিউইইয়র্কে বিশেষ দূরত্ব নেই। এখানে আবার দুইটা পর্যবেক্ষণ আছে।
প্রথমত, জনগণের সব শ্রেণি যখন তার আয় অনুযায়ী কর দিবে, তখন এমনিতেই একটা ট্যাক্স পেয়ার সোসাইটি তৈরি হবে। এরা তখন সরকারের জন্য প্রেশার গ্রুপ হয়ে যাবে। জনগণ ট্যাক্স দিবে, আর সরকার সেবা না দিয়ে কই যাবে। জনগণ ট্যাক্স দিবে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী, কিন্তু সেবা বন্টন হবে সুষমভাবে। ফলে বৈষম্য কিছুটা হলেও কমবে বই কি। তাতেই কি গিনি কোফিসিয়েন্ট আর পালমা অনুপাত কি পুরো উলটে যাবে বা প্যারেটো প্রিন্সিপাল ভুল হয়ে যাবে? আমার দ্বিতীয় পর্যবেক্ষণ বলে, না। তবে আমার আশাবাদ বলে একটা সিগনিফিকেন্ট পরিবর্তন আসতে বাধ্য। প্যারেটো প্রিন্সিপাল যদি ৭০/৩০ আর ৩০/৭০ হয়, আমার বিবেচনায় সেটাও একটা সাফল্য। দেখুন, আয় করার সামর্থ্য কিন্তু সবার সমান না। আমাকে যদি ৫ কোটি টাকা দেন, আর স্কয়ারের তপন চৌধুরীকেও যদি একই পরিমান টাকা দেন, দুই বছর পরে এসে দেখবেন আমি পথে বসে আছি, আর স্কয়ার সেই ৫ কোটি কে ৫০ কোটি বানিয়ে ফেলেছে। আমি বলতে চাইছি, ধনী পাঁচ শতাংশের আয় করার সামর্থ্য বটম লাইনের পঞ্চাশ শতাংশের সম্মিলিত আয় করার সামর্থ্যের চেয়ে বেশি। ফলে প্যারেটো প্রিন্সিপাল কোনদিনও উলটে যাবার নয়। না উল্টাক, তাতে আমি দোষের কিছু দেখি না, এই কারণেই বৈষম্য নিয়ে আমি বিপ্লবী না। স্কয়ার যদি ৫০ কোটি বানায়, কতজনের কর্মসংস্থান হবে দেখুন, কর্ম মানেই বেশি বেশি আয়, আর বেশি বেশি আয় মানে বেশি বেশি আয়কর হওয়া উচিত।
জনগণ থেকে যতদিন না আমাদের ট্যাক্স পেয়ার্স এ উত্তরণ ঘটবে আমি আশু সমাধান দেখি না। ফলে যেটা ঘটবে, তা হল মূসক বা VAT হয়ে উঠবে একটা কৃষ্ণ-গহবর, যে সব গিলে খেতে চাইবে।
গেইম থিওরিতে জনগণ প্লেয়ার ১, সরকার প্লেয়ার ২ হয়ে বসে আছে। জনগণের কাছে মুরগী, সরকারের কাছে ডিম। জনগণ বলছে ডিম আগে, সরকার বলছে মুরগী আগে। উভয়ই নিজের পে-অফ নিয়ে হিসেব কষছে। জনগণের ভ্যারিয়েবল হল মুরগী দিব, মুরগী দিব না। সরকারের ভ্যারিয়েবল হল ডিম দিব, ডিম দিব না। শেষ পর্যন্ত একজন মুরগী দেয় না, আরেকজন ডিম দেয় না। ফল মুরগী মরে, ডিম পঁচে। ন্যাশের প্রিজনারস ডিলেমার দুই স্বার্থপর ডাকাতই জেলে যায়।
চক্র ভাঙুক।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:২৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্টে যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×