গাদাগাদি করে পাতনো সারি সারি বেড,রাত কিংবা দিনে সারি বদ্ধভাবে ওরা ঘুমায় । নেই মশারি টাটানোর ও কোনো ব্যবস্থা । ঝড়ের রাত কিংবা বৃষ্টিতে ছাদ ছুঁইয়ে পানি পড়ে , তখন কোনোমতে বিছানা পত্তর গুছিয়ে রুমের এক কোনায় গুটিসুঁটি মেরে দিন বা রাত কাটিয়ে দেয় তারা কোনোরকমে । অনেকে আবার রুমে কোনো জায়গা না পেয়ে রাত কাটায় কিচেন রুমে ,কিংবা লাইব্রেরীতে । এভাবেই দিন কাটে নোয়াখালী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের।শুধু আবাসন সংকটই নয় শিক্ষক সংকট ,বিনোদনের অভাব,ল্যাব আর প্র্যাকটিক্যাল যন্ত্রপাতির অভাব এরকম নানারকম সংকটের মাঝে দিন কাটছে তাদের। চিকিৎসক হওয়ার আশা ক্রমেই যেন ফিকে হয়ে আসছে ওদের ।অথচ ওদের সপ্ন ছিল ডাক্তার হয়ে বের হয়ে দেশের সেবা করার দশের সেবা করার । কিন্তু যথাযথ শিক্ষা না পেলে তা কি করে সম্ভব জানা নেই ওদের কারোর ।প্রশ্ন সবার একটাই এভাবে কি ডাক্তার হওয়া সম্ভব ?
২০০৯ সালে কার্যক্রম শুরু হয় নোয়াখালী মেডিকেল কলেজের । কেনো রকসম প্রস্তুতি ছাড়াই ৫০ জন ছাত্রকে নিয়ে শুরু হয় এ কলেজের যাত্রা । নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের কয়েকটি কক্ষকে ব্যবহার করা হয় ক্লাশ রুম হিসেবে আর শিক্ষাথীদের থাকার জন্য ভাড়া করা হয় দুইটি বাড়ি ।শুরুতেই শিক্ষক সংকট দেখা দিলেও শিক্ষার্থীদের আশা ছিল সময়ের সাথে সাথে তা কেটে যাবে কিন্তু কলেজের এক বছর পেরিয়ে গেলেও অধ্যাবধি তার কেনো সুরাহা হয়নি । প্রতিটি বিষয়ের অধ্যাপক,সহকারী অধ্যাপক,সহযোগী অধ্যাপক থাকতো দুরের কথা বিষয় ভিত্তিক কোনো শিক্ষক পর্যন্ত নেই কলেজটিতে । জেনারেল হাসপাতালের রেডিওলজির ,গাইনোকোলজী আর ই এন টির একজন করে শিক্ষক ক্লাশ নেন এনাটমির ,গাইনোকলজীর আরো দুাজন শিক্ষক ক্লাশ নেন ফিজিওলজীর । একই অবসাথা বায়োকেমিষ্ট্রির ।
মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার একটি বড়ধরনের শিক্ষা হলো লাশ কাটা ।মূলত এর মাধ্যমেই মানব দেহের এন্টমী রপ্ত করা হয় তাদের।্ কলেজের শিক্ষার্থীদের আভিযোগ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের এই লাশ কাটার ক্লাশ হয় না অনেক দিন । নেই লাশ কাটার মতো উপযুক্ত কেনো ক্যাডাভার আর তা রক্ষানাবেক্ষন করার মতো কোনো লোকবল ও । ল্যাবরেটরীতে নেই পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি , কেমিক্যাল যা আছে সেগুলোরও অধিকাংশ ভুল ফলাফল দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা । নেই পর্যাপ্ত টেকনিশিয়ান ।এক জন মাত্র টেকনিশিয়ান দিয়ে চলছে ল্যাবের কাজ ।যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষনের জন্য নেই কোন জনবল । লাইব্রেরী থাকলেও তাতে নেই পর্যাপ্ত বইপত্র ।নেই শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো কমন রুম ।ছাত্রাবাসে নেই বিনোধনের কোনো ব্যবস্থা ,এমনকি একটি পত্রিকা পর্যন্তও ব্যবস্থা করেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ ।ছাত্ররা নিজেদের ব্যবস্থাপনায় নিয়োগ দিয়েছেন বাবুর্চি ,নিজেরাই ছুটছেন বাজারে বাজার করতে ।
কলেজের আবাসন সংকট এখন চরম আকার ধারন করা করেছে ।সরেজমিনে দেখা যায় ছাত্রাবাসের এক রুমে গাদাগাধি করে অরস্থান করেছেন আট থেকে দশ জন । মেঝেতে সারি সারি করে পাতানো হয়েছে তোষক । টেবিল থাকতো দূরের কথা রুমের মধ্যে নেই বই রাখার মতো কোনো জায়গা পর্যন্ত ।তোষকের উপর বসেই চলে পড়াশোনা ।অনেকে আবার রুমে জায়গা না পেয়ে আবস্থান নিয়েছেন কিচেন রুমে । তাতেও শান্তি নেই বৃষ্টি হলে ছাঁদের ফাটল দিয়ে পানি পড়ে ভিজে যায় পুরো কক্ষ ।রয়েছে পানির তীব্র সংকট একদিন পরপর পালা করে গোছল করে তারা । ৫০জন ছাত্রের জন্য রয়েছে মাত্র দুটি বাথরুম । রয়েছে বিদ্যুতের ও সমস্যা । এ সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার অনেকে লাইব্রেরীতে গিয়ে পড়াশোনা করছেন আর সেখানেই চেয়ারের উপর কাটিয়ে দিচ্ছেন পুরো রাত । গাদাগাদি করে অবস্থান করায় অনেকে আবার আক্রান্ত হচ্ছে নানা ধরনের চর্ম রোগে ।
ছাত্রী নিবাসে রয়েছে চরম নিরাপিত্তাহীনতা ।বাইরের বখাটেরা প্রায়ই ছাত্রীনিবাসের সামনে গিয়ে তাদের উত্যক্ত করছে । প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অি ভযোগ এখন পর্যন্ত তাদের কোনো রেজিষ্ট্রেশন হয়নি।সকল সরকারি মেডিকেলকলেজের পেশাগত পরীক্ষা নিজ মেডিকেবল কলেজে হলেও তাদের পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে কুমিলা মেডিকের কলেজে। এতসব সমস্যার সমাধানের দাবিতে গত বছর থেকেই শিক্ষার্থীরা নেমেছে আন্দোলনে । মানব বনন্ধন ,বিক্ষোভ মিছিল ,স্মারক লিপি প্রদান করেছে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট । ধর্না দেয়া হচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিনের নিকট ।কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছে না দেখে বেশ কয়েকদিন আগে শিক্ষার্থীরা কলেজে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে ক্লাশ বর্জন করা শুরু করে । পরে কলেজ অধ্যক্ষ ,স্থানীয় বি এম এ (বাংলাদেশ মেডিকেল ্ এসোসিয়েশন ) নেতৃবৃন্দের আশ্বাসে তারা তা প্রত্যাহার করে নেয় ।কলেজের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে বি,এম,এ র নোয়খালী জেলা শাখার সভাপতি ডা . এম এ নোমান বলেন “বিষয়টি আমরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি ,এ ব্যপারে শিগগীরই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।” এ ব্যপাওে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা.আবদুস ইসলামের মোবাইলে বারবার কল করেও তাকে পাৗয়া যায়নি