somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস আজ : দীর্ঘ ৩৭ বছরেও পানির ন্যায্য হিস্যা পায়নি বাংলাদেশ

১৬ ই মে, ২০১১ সকাল ৯:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অামার েদশ ১৫/০৫/১১
ইলিয়াস খান
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ প্রাঙ্গণ। ঘুরতে এসেছেন বিভিন্ন বয়সের কিছু মানুষ। তাদের চোখে বিস্ময়ের শেষ নেই। তাদের প্রশ্ন—ব্রিটিশরা তো চৌকস জাতি, কিন্তু তারা কেন এই মরুভূমির ওপর ১৯১২ সালে সেতুটি তৈরি করেছিল? এই প্রশ্ন কাল্পনিক। কিন্তু বাস্তব হতে আর বেশি সময় বাকি নেই। সেতুটি তৈরি করা হয়েছিল প্রমত্তা পদ্মার ওপর। এখন সেতুটির নিচে মাইলের পর মাইল চর। এই চরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে ক্ষীণ পদ্মা। অচিরেই বিলীন হয়ে যাবে এককালের প্রমত্তা এই নদী। পদ্মার এই অপমৃত্যুর জন্য দায়ী ফারাক্কা বাঁধ। শুধু পদ্মাই নয়, বাংলাদেশের অনেক নদী মরে যাচ্ছে ফারাক্কার প্রভাবে। বিষয়টি আজ থেকে ৩৫ বছর আগে আঁচ করতে পেরেছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।
মরণফাঁদ ফারাক্কার অশুভ প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি উপলব্ধি করে মওলানা ভাসানী ১৯৭৬ সালের ১৬ মে লংমার্চের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্বজনমত গড়ে তোলার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এটি এক সংগ্রামদৃপ্ত দিন। আজ ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস।
৩৫ বছরেও ভারতের সঙ্গে পানি সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। উল্টো অব্যাহত রয়েছে দেশটির পানি আগ্রাসন নীতি। বাংলাদেশকে পানিশূন্য এবং দেশের নদীগুলোকে মেরে ফেলার জন্য ভারত সুদূরপ্রসারী নানা তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ফারাক্কার প্রভাবে এরই মধ্যে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের এক-তৃতীয়াংশ এলাকায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়, শুরু হয়েছে মরুকরণ। ফারাক্কার পাশাপাশি পানি আগ্রাসনের অংশ হিসেবে ভারত এরই মধ্যে বাংলাদেশের সিলেট জেলার উজানে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছে। এ বাঁধ চালু হলে বাংলাদেশের আরও এক-তৃতীয়াংশ এলাকা মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে এবং মরূকরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে।
আন্তর্জাতিক নদী আইন ও রীতিনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেশটি এ কাজ করছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর পানি দরকার ১ হাজার ৩৪৬ বিলিয়ন কিউবিক মিটার। কিন্তু ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে ৮০০ কিউবিক মিটার প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এর ফলে যে ৫০০ কিউবিক মিটার পানি আসছে, তাতে বাংলাদেশের নদীগুলোর তলাও পূর্ণ হয় না। উপরন্তু এ পানির সঙ্গে কৌশলে পর্যাপ্ত পলি বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে ভারত। ফলে নদীগুলো ক্রমেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে টিপাইমুখ দিয়ে বর্তমানে প্রায় ২০০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি আসছে। বাঁধ নির্মাণ করা হলে আসবে মাত্র ১০০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার। এক্ষেত্রেও পানির সঙ্গে ভারত কৌশলে পর্যাপ্ত পরিমাণ পলি সরবরাহ করবে। ফলে এ নদীগুলোও দু-তিন বছরের মধ্যে ভরাট হয়ে যাবে। এদিকে হিমালয়ের পাদদেশে পানিপ্রবাহের মুখে আগে যে ৫০০টি বাঁধ নির্মাণ করা
হয়েছিল, এর ৩৫০টি তৈরি করেছে ভারত। উদ্দেশ্য হরিয়ানা, রাজস্থান, গুজরাট ইত্যাদি মরু এলাকাকে শস্যভাণ্ডারে পরিণত করা। ভারতের এই পানি আগ্রাসন চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বড় একটি অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের নদীনালা, খালবিল শুকিয়ে গেছে, পরিবেশ ভারসাম্য হারিয়েছে, বিপন্ন হয়েছে জীববৈচিত্র্য। আর এসবকিছুর প্রভাবে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার। আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির মহাসচিব সৈয়দ টিপু সুলতান বলেন, দেশের অস্তিত্ব রক্ষায় ভারতের পানি আগ্রাসন প্রতিহত করতে এবং এ ব্যাপারে বিশ্বজনমত গড়ে তুলতে বর্তমান সময়ে ফারাক্কা লংমার্চের তাত্পর্যে উদ্দীপ্ত হওয়াটা আমাদের জাতীয় জীবনে আরও জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, মওলানা ভাসানীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ২০০৫ সালে বিশাল লংমার্চের আয়োজন করেছিলাম। এখন আমরা নেপাল, ভুটানসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশের নদী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছি। দেশকে রক্ষা করতে হলে আন্তর্জাতিক নদীগুলোর পানির সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে।
১৯৭৬ সালের এই দিনে বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিণত করার ভারতীয় ষড়যন্ত্রে বিক্ষুব্ধ লাখো জনতার ঢল নেমেছিল রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানে। এখান থেকে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে মানুষের মিছিলটি রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে গিয়ে উপস্থিত হয়। কানসাট স্কুলমাঠে আয়োজিত জনসভায় মওলানা ভাসানী ফারাক্কা বাঁধ ভেঙে ফেলার দাবি জানান এবং এই বাঁধের কারণে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের করুণ অবস্থা ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রীকে সরেজমিন দেখে যাওয়ার আহ্বান জানান। সেদিন ‘ফারাক্কা বাঁধ ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ফারাক্কা লংমার্চ সফল কর’—জনতার এই গগনবিদারী স্লোগানে চারদিক মুখর হয়ে উঠেছিল। ১৬ মে সকাল ১০টায় মওলানা ভাসানী রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানের সভামঞ্চে উপস্থিত হওয়ার পর মশিউর রহমান যাদুমিয়া সভার প্রস্তাব পাঠ করেন। এরপর মওলানা ভাসানী বক্তৃতা দিতে ওঠেন এবং প্রথমে তিনি কয়েকটি স্লোগান উচ্চারণ করেন। বক্তৃতা শেষে সকাল সাড়ে ১০টায় মিছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখে রওনা হয়। প্রায় চার মাইল দীর্ঘ মিছিলটি রাজশাহী ত্যাগের পর শহর ফাঁকা হয়ে যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে রাত যাপনের পর ১৭ মে কানসাটের উদ্দেশে মিছিলটি রওনা হয়। তখন মিছিলটি আরও প্রায় তিনগুণ বড় হয়ে যায়। প্রবল ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে মিছিলটি বিকাল ৪টায় কানসাটে গিয়ে পৌঁছায়।
লংমার্চের আগে ১৯৭৬ সালের ১৮ এপ্রিল মওলানা ভাসানী ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে বাংলাদেশের ওপর ফারাক্কার বিরূপ প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করে তার ফারাক্কা লংমার্চ কর্মসূচি জানিয়ে একটি চিঠি দেন। উত্তরে ইন্দিরা গান্ধী লেখেন, ‘এটি ভাবতে কষ্ট হচ্ছে যে, যিনি আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগ ও বেদনাকে একইভাবে সহমর্মিতা দিয়ে দেখেছেন, তিনি বর্তমানে আমাদের এত বেশিভাবে ভুল বুঝছেন, এমনকি আমাদের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।’ উত্তরে মওলানা ভাসানী লিখেছিলেন, ‘আপনার ১৯৭৬ সালের ৪ মে’র পত্র ফারাক্কার ওপর সরকারি ভাষ্যেরই পুনরাবৃত্তি। সুবিখ্যাত পূর্বপুরুষ মতিলাল নেহেরুর দৌহিত্রী ও পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর মেয়ের কাছ থেকে আমার এই প্রত্যাশা ছিল না। আপনি সব সময়ই বঞ্চিত জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় করে সব ক্ষেত্রে সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। ফারাক্কা সম্পর্কে আমি আবারও আপনাকে অনুরোধ করছি, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো সফর করে আমাদের কৃষি ও শিল্প উত্পাদনে যে ক্ষতি হচ্ছে তা নিরূপণ করার জন্য। আমি আপনাকে আপনাদের সরকারি কর্মকর্তাদের রিপোর্টের ওপর সর্বতোভাবে আস্থা স্থাপন না করার জন্য আবারও বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি; কারণ এগুলো প্রায়ই বিদ্যমান অবস্থার প্রকৃত চিত্রের প্রতিফলন করে না।
পারস্পরিক সমঝোতা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানে আপনার পথকে আমি প্রশংসা করি। তবে সমস্যার ব্যাপক ভিত্তিক স্থায়ী সমাধান হওয়া প্রয়োজন। এটি শুধু শুষ্ক মৌসুমের দু’মাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সারা বছরব্যাপী প্রবাহের যথাযথ বণ্টনভিত্তিক হওয়া উচিত।’
এই পত্রে মওলানা ভাসানী উল্লেখ করেন, যদি তার অনুরোধ গ্রহণ না করা হয় তবে তিনি নিপীড়িত জনগণের নেতা ইন্দিরা গান্ধীর পূর্বপুরুষ এবং মহাত্মা গান্ধীর প্রদর্শিত পথেই সংগ্রাম পরিচালনা করবেন।
মওলানা ভাসানী ফারাক্কা মার্চের প্রস্তুতির সময় বিশ্ব নেতাদের এ সম্পর্কে অবহিত করে বার্তা পাঠান। তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব ড. কুর্ট ওয়াল্ডহেইম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড, চীনের নেতা মাও সে তুং, সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী কোসিগিন আলেক্সি প্রমুখের কাছে তার বার্তা পাঠিয়ে ভারতের ওপর তাদের প্রভাব প্রয়োগ করে গঙ্গার পানি বণ্টনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তির ব্যাপারে সহযোগিতা কামনা করেন।
কানসাটে সফল লংমার্চের পর মহান আল্লাহতায়ালার শোকরিয়া আদায় করে জননেতা মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে ফারাক্কার ফলে বাংলাদেশে এরই মধ্যে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে তা সরেজমিনে দেখতে আসার আহ্বান জানান।
মওলানা ভাসানীর লংমার্চের ২৯ বছর পর আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি ২০০৫ সালের ৪ মার্চ এক বিশাল লংমার্চের আয়োজন করে। লংমার্চ শেষে কুড়িগ্রাম জেলার ঐতিহাসিক চিলমারীতে লাখো জনতার এক সমাবেশ হয়। ‘নদী বাঁচাও, দেশ বাঁচাও’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে ব্রহ্মপুত্রের তীর। কিন্তু বাংলাদেশকে মরূকরণের হাত থেকে রক্ষায় ভারত আজও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
সম্প্রতি পাকিস্তান, ভারত ও নেপাল থেকে পানি বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ সফরে আসেন। তারা পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্ট, জিকে প্রজেক্ট এলাকা এবং রাজশাহী পয়েন্ট ঘুরে দেখেন। এই প্রতিবেদকও তাদের সঙ্গে ছিলেন। বিশেষজ্ঞরা গভীর হতাশা ব্যক্ত করেন পদ্মার করুণ অবস্থা দেখে। তারা বলেন, গঙ্গা চুক্তি বাংলাদেশের জন্য ‘পেইন অন দ্য নেক (ঘাড়ের ওপর ব্যথা)’। তারা বলেন, ‘এ চুক্তিটি বাংলাদেশের জন্য জাতীয় ইস্যু। চুক্তি অনুযায়ী হিস্যা আদায়ে সরকার যদি আন্তরিক না হয়, তাহলে তো ভারত স্বভাবতই পানি দেবে না। কারণ তার নিজেরও পানির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।’ এ দলে ছিলেন নেপালের পানি বিশেষজ্ঞ ও চায়না স্টাডি সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. উপেন্দ্র গৌতম, ভারতের পানি অধিকার কর্মী রামানন্দ ওয়াংখেরপ্পান, পাকিস্তানের পানিবিশেষজ্ঞ আরশাদ আব্বাসী, ড. শাহীন আক্তার, টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মনিরুল কাদের মির্জা প্রমুখ।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ প্রাঙ্গণ। ঘুরতে এসেছেন বিভিন্ন বয়সের কিছু মানুষ। তাদের চোখে বিস্ময়ের শেষ নেই। তাদের প্রশ্ন—ব্রিটিশরা তো চৌকস জাতি, কিন্তু তারা কেন এই মরুভূমির ওপর ১৯১২ সালে সেতুটি তৈরি করেছিল? এই প্রশ্ন কাল্পনিক। কিন্তু বাস্তব হতে আর বেশি সময় বাকি নেই। সেতুটি তৈরি করা হয়েছিল প্রমত্তা পদ্মার ওপর। এখন সেতুটির নিচে মাইলের পর মাইল চর। এই চরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে ক্ষীণ পদ্মা। অচিরেই বিলীন হয়ে যাবে এককালের প্রমত্তা এই নদী। পদ্মার এই অপমৃত্যুর জন্য দায়ী ফারাক্কা বাঁধ। শুধু পদ্মাই নয়, বাংলাদেশের অনেক নদী মরে যাচ্ছে ফারাক্কার প্রভাবে। বিষয়টি আজ থেকে ৩৫ বছর আগে আঁচ করতে পেরেছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।
মরণফাঁদ ফারাক্কার অশুভ প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি উপলব্ধি করে মওলানা ভাসানী ১৯৭৬ সালের ১৬ মে লংমার্চের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্বজনমত গড়ে তোলার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এটি এক সংগ্রামদৃপ্ত দিন। আজ ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস।
৩৫ বছরেও ভারতের সঙ্গে পানি সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। উল্টো অব্যাহত রয়েছে দেশটির পানি আগ্রাসন নীতি। বাংলাদেশকে পানিশূন্য এবং দেশের নদীগুলোকে মেরে ফেলার জন্য ভারত সুদূরপ্রসারী নানা তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ফারাক্কার প্রভাবে এরই মধ্যে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের এক-তৃতীয়াংশ এলাকায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়, শুরু হয়েছে মরুকরণ। ফারাক্কার পাশাপাশি পানি আগ্রাসনের অংশ হিসেবে ভারত এরই মধ্যে বাংলাদেশের সিলেট জেলার উজানে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছে। এ বাঁধ চালু হলে বাংলাদেশের আরও এক-তৃতীয়াংশ এলাকা মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে এবং মরূকরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে।
আন্তর্জাতিক নদী আইন ও রীতিনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেশটি এ কাজ করছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর পানি দরকার ১ হাজার ৩৪৬ বিলিয়ন কিউবিক মিটার। কিন্তু ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে ৮০০ কিউবিক মিটার প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এর ফলে যে ৫০০ কিউবিক মিটার পানি আসছে, তাতে বাংলাদেশের নদীগুলোর তলাও পূর্ণ হয় না। উপরন্তু এ পানির সঙ্গে কৌশলে পর্যাপ্ত পলি বাংলাদেশে ঠেলে দিচ্ছে ভারত। ফলে নদীগুলো ক্রমেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে টিপাইমুখ দিয়ে বর্তমানে প্রায় ২০০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি আসছে। বাঁধ নির্মাণ করা হলে আসবে মাত্র ১০০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার। এক্ষেত্রেও পানির সঙ্গে ভারত কৌশলে পর্যাপ্ত পরিমাণ পলি সরবরাহ করবে। ফলে এ নদীগুলোও দু-তিন বছরের মধ্যে ভরাট হয়ে যাবে। এদিকে হিমালয়ের পাদদেশে পানিপ্রবাহের মুখে আগে যে ৫০০টি বাঁধ নির্মাণ করা
হয়েছিল, এর ৩৫০টি তৈরি করেছে ভারত। উদ্দেশ্য হরিয়ানা, রাজস্থান, গুজরাট ইত্যাদি মরু এলাকাকে শস্যভাণ্ডারে পরিণত করা। ভারতের এই পানি আগ্রাসন চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বড় একটি অঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের নদীনালা, খালবিল শুকিয়ে গেছে, পরিবেশ ভারসাম্য হারিয়েছে, বিপন্ন হয়েছে জীববৈচিত্র্য। আর এসবকিছুর প্রভাবে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার। আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির মহাসচিব সৈয়দ টিপু সুলতান বলেন, দেশের অস্তিত্ব রক্ষায় ভারতের পানি আগ্রাসন প্রতিহত করতে এবং এ ব্যাপারে বিশ্বজনমত গড়ে তুলতে বর্তমান সময়ে ফারাক্কা লংমার্চের তাত্পর্যে উদ্দীপ্ত হওয়াটা আমাদের জাতীয় জীবনে আরও জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, মওলানা ভাসানীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ২০০৫ সালে বিশাল লংমার্চের আয়োজন করেছিলাম। এখন আমরা নেপাল, ভুটানসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দেশের নদী বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছি। দেশকে রক্ষা করতে হলে আন্তর্জাতিক নদীগুলোর পানির সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে।
১৯৭৬ সালের এই দিনে বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিণত করার ভারতীয় ষড়যন্ত্রে বিক্ষুব্ধ লাখো জনতার ঢল নেমেছিল রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানে। এখান থেকে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে মানুষের মিছিলটি রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে গিয়ে উপস্থিত হয়। কানসাট স্কুলমাঠে আয়োজিত জনসভায় মওলানা ভাসানী ফারাক্কা বাঁধ ভেঙে ফেলার দাবি জানান এবং এই বাঁধের কারণে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের করুণ অবস্থা ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রীকে সরেজমিন দেখে যাওয়ার আহ্বান জানান। সেদিন ‘ফারাক্কা বাঁধ ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ফারাক্কা লংমার্চ সফল কর’—জনতার এই গগনবিদারী স্লোগানে চারদিক মুখর হয়ে উঠেছিল। ১৬ মে সকাল ১০টায় মওলানা ভাসানী রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানের সভামঞ্চে উপস্থিত হওয়ার পর মশিউর রহমান যাদুমিয়া সভার প্রস্তাব পাঠ করেন। এরপর মওলানা ভাসানী বক্তৃতা দিতে ওঠেন এবং প্রথমে তিনি কয়েকটি স্লোগান উচ্চারণ করেন। বক্তৃতা শেষে সকাল সাড়ে ১০টায় মিছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখে রওনা হয়। প্রায় চার মাইল দীর্ঘ মিছিলটি রাজশাহী ত্যাগের পর শহর ফাঁকা হয়ে যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে রাত যাপনের পর ১৭ মে কানসাটের উদ্দেশে মিছিলটি রওনা হয়। তখন মিছিলটি আরও প্রায় তিনগুণ বড় হয়ে যায়। প্রবল ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে মিছিলটি বিকাল ৪টায় কানসাটে গিয়ে পৌঁছায়।
লংমার্চের আগে ১৯৭৬ সালের ১৮ এপ্রিল মওলানা ভাসানী ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে বাংলাদেশের ওপর ফারাক্কার বিরূপ প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করে তার ফারাক্কা লংমার্চ কর্মসূচি জানিয়ে একটি চিঠি দেন। উত্তরে ইন্দিরা গান্ধী লেখেন, ‘এটি ভাবতে কষ্ট হচ্ছে যে, যিনি আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগ ও বেদনাকে একইভাবে সহমর্মিতা দিয়ে দেখেছেন, তিনি বর্তমানে আমাদের এত বেশিভাবে ভুল বুঝছেন, এমনকি আমাদের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।’ উত্তরে মওলানা ভাসানী লিখেছিলেন, ‘আপনার ১৯৭৬ সালের ৪ মে’র পত্র ফারাক্কার ওপর সরকারি ভাষ্যেরই পুনরাবৃত্তি। সুবিখ্যাত পূর্বপুরুষ মতিলাল নেহেরুর দৌহিত্রী ও পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর মেয়ের কাছ থেকে আমার এই প্রত্যাশা ছিল না। আপনি সব সময়ই বঞ্চিত জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায় করে সব ক্ষেত্রে সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। ফারাক্কা সম্পর্কে আমি আবারও আপনাকে অনুরোধ করছি, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো সফর করে আমাদের কৃষি ও শিল্প উত্পাদনে যে ক্ষতি হচ্ছে তা নিরূপণ করার জন্য। আমি আপনাকে আপনাদের সরকারি কর্মকর্তাদের রিপোর্টের ওপর সর্বতোভাবে আস্থা স্থাপন না করার জন্য আবারও বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি; কারণ এগুলো প্রায়ই বিদ্যমান অবস্থার প্রকৃত চিত্রের প্রতিফলন করে না।
পারস্পরিক সমঝোতা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানে আপনার পথকে আমি প্রশংসা করি। তবে সমস্যার ব্যাপক ভিত্তিক স্থায়ী সমাধান হওয়া প্রয়োজন। এটি শুধু শুষ্ক মৌসুমের দু’মাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সারা বছরব্যাপী প্রবাহের যথাযথ বণ্টনভিত্তিক হওয়া উচিত।’
এই পত্রে মওলানা ভাসানী উল্লেখ করেন, যদি তার অনুরোধ গ্রহণ না করা হয় তবে তিনি নিপীড়িত জনগণের নেতা ইন্দিরা গান্ধীর পূর্বপুরুষ এবং মহাত্মা গান্ধীর প্রদর্শিত পথেই সংগ্রাম পরিচালনা করবেন।
মওলানা ভাসানী ফারাক্কা মার্চের প্রস্তুতির সময় বিশ্ব নেতাদের এ সম্পর্কে অবহিত করে বার্তা পাঠান। তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব ড. কুর্ট ওয়াল্ডহেইম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড, চীনের নেতা মাও সে তুং, সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী কোসিগিন আলেক্সি প্রমুখের কাছে তার বার্তা পাঠিয়ে ভারতের ওপর তাদের প্রভাব প্রয়োগ করে গঙ্গার পানি বণ্টনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তির ব্যাপারে সহযোগিতা কামনা করেন।
কানসাটে সফল লংমার্চের পর মহান আল্লাহতায়ালার শোকরিয়া আদায় করে জননেতা মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে ফারাক্কার ফলে বাংলাদেশে এরই মধ্যে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে তা সরেজমিনে দেখতে আসার আহ্বান জানান।
মওলানা ভাসানীর লংমার্চের ২৯ বছর পর আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি ২০০৫ সালের ৪ মার্চ এক বিশাল লংমার্চের আয়োজন করে। লংমার্চ শেষে কুড়িগ্রাম জেলার ঐতিহাসিক চিলমারীতে লাখো জনতার এক সমাবেশ হয়। ‘নদী বাঁচাও, দেশ বাঁচাও’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে ব্রহ্মপুত্রের তীর। কিন্তু বাংলাদেশকে মরূকরণের হাত থেকে রক্ষায় ভারত আজও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
সম্প্রতি পাকিস্তান, ভারত ও নেপাল থেকে পানি বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ সফরে আসেন। তারা পদ্মার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্ট, জিকে প্রজেক্ট এলাকা এবং রাজশাহী পয়েন্ট ঘুরে দেখেন। এই প্রতিবেদকও তাদের সঙ্গে ছিলেন। বিশেষজ্ঞরা গভীর হতাশা ব্যক্ত করেন পদ্মার করুণ অবস্থা দেখে। তারা বলেন, গঙ্গা চুক্তি বাংলাদেশের জন্য ‘পেইন অন দ্য নেক (ঘাড়ের ওপর ব্যথা)’। তারা বলেন, ‘এ চুক্তিটি বাংলাদেশের জন্য জাতীয় ইস্যু। চুক্তি অনুযায়ী হিস্যা আদায়ে সরকার যদি আন্তরিক না হয়, তাহলে তো ভারত স্বভাবতই পানি দেবে না। কারণ তার নিজেরও পানির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।’ এ দলে ছিলেন নেপালের পানি বিশেষজ্ঞ ও চায়না স্টাডি সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. উপেন্দ্র গৌতম, ভারতের পানি অধিকার কর্মী রামানন্দ ওয়াংখেরপ্পান, পাকিস্তানের পানিবিশেষজ্ঞ আরশাদ আব্বাসী, ড. শাহীন আক্তার, টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মনিরুল কাদের মির্জা প্রমুখ।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×