উচ্চ মাধ্যমিকে পড়া শুনার সময় যখন হোস্টেলে থাকাতাম তখন মাঝে মাঝে ডাইনিং বন্ধ থাকত । আমরা পাশের একটি বাড়িতে খেতে যেতাম । একজন মাঝ বয়সী খালার মেস ছিল সেটি ।মাত্র ২০ টাকা দিয়ে খুব ভাল খাবার পাওয়া যেত ।আমদেরা অনেকে সেখানে নিয়মিত খেতে যেত । একটু দূরে বলে আমার খুব বেশি যাওয়া হত না । নিতান্ত বাধ্য হলে যেতাম ।একদিন সেখান থেকে খেয়ে ফেরার সময় আমার রুম মেট আরিফ বলল এই খালার কাহিনি জানস ?
বললাম নাতো ।
এই খালারা আগে ছিল বাইজী ।এ কথা বলে আমদের দিকে তাকিয়ে বলল বাইজী মানে বুজছ ?
বললাম তুইই বুঝিয়ে বল ।
বাইজী মানে হল নর্তকী ,নর্তকি চিনস ,নর্তকী হল নৃত্য শিল্পী বলে আমার মত ব্যাক ডেটেটের উদ্দ্যেশে লেকচার শুরু করলো । এই এলাকায় দেখস না কত রাজার বাড়ি আছে ।এই সব রাজারা ছিল হিন্দু ।এই সব রাজাদের মনোরঞ্জনের জন্য বাঈজীরা নাচত । তাদের উপর চালানো হত শারিরিক নির্যাতন । শারিরিক নির্যতন বুঝছ ?
তোকে বুঝাতে হবে না তার পর বল ।
বাইরে থেকে কেউ এলে তাদেরকে দিয়ে মনরঞ্জন করা হত ।রাজার বাড়ীতে প্রতদিন রাত্রে নাচের আসর বসতো সাথে চলত সুরা পান আহ ।আহ সুরা পান বলে যেভাবে টাক টাক করলো মনে হলো এখনি বুঝি ও সুরা পান করছে ।সুরা পরে খাইছ আগে শেষ কর ।
ও বলতে শুরু করল এভাবে নাচ দেখা আর সুরা পানের আসরকে বলা হয় জলসা । অনেক নর্তকি এই জীবন থেকে পালাতে চাইতো । এ জন্য তাদের অনেককে বন্দি করে রাখা হত , করা হত নির্যাতন । অনেকে মারা যেত সেই নির্যাতনে । এসব বাড়িতে এখনো রাতে নাকি শুনা যায় সেই নির্যাতিত নারীর ক্রন্দন ,নুপুরের রিমঝিম শব্দ ।এজন্য আসব বাড়িতে কেউ ভয়ে সন্ধ্যা্র পর সেখানে যায় না । এসব জায়গা তাই কেউ কেনেও না ।পড়ে আছে বছরের পর বছর ।তোকে একদিন নিয়ে যাবো সেই বাড়ি দেখাতে । পরে আমরা হোস্টেলের সবাই মিলে গিয়েছিলাম সেই রাজার বাড়ি দেখতে অবশ্য ফিরে এলাম সন্ধ্যার আগেই । খালারাও ছিল সেই বাঈজী ।
কিন্তু খালাকেতো দেখলাম যোহরের সময় নামজ পরতে । আরে বেকুব খালারা আগে হিন্দু ছিল কিন্তু পরে মুসলমান হয়ে গেছে । মুসলমান হলেও এখনো কিন্তু সেই নাচার খাছিলত টা যাইনি । দেখবি এখনো খালা পায়ে নুপুর পড়ে ।
তাতে সমস্যা কি নুপুরতো এখন অনেক মুসলিম মেয়েরাও পরে । পরে বই্কি তবে এই নাচ মুলত হিন্দুদের তারা নুপুর পরে দেবতার তুষ্টির জন্য নাচত ।
তা না হই মানলাম কিন্তু অনেক মুসলিম শাসককেও তো দেখা যায় জলসার আসর বসাতে ?
দেখিস সেখানে দেখবি বদের বদ গুলা এই আসর বসাতো কিন্তু কোন আসল মুসলিম শাসককে এমনটি করতে দেখা যায় না বরং তাদের দুর্নাম করার জন্য ,জনগণকে ক্ষেপিয়ে তোলার জন্য তাদের নামে জলসা ঘরের অভিযোগ উঠানো হত যেমনটি করা হয়েছে নবাব সিরাজুদ্দোলার বিরুদ্দে । কারণ এখানকার বেশির ভাগ মানুষ ছিল মুসলিম আর ইসলামে নাচ হারাম অন্যদিকে জনগনের ধর্মীয় অনুভুতিও ছিল প্রখর কিন্তু তাই বলে তারা কখনো হিন্দুরের পুজা পার্বনে বাধা দিয়েছে এমনটি কখনো ঘটেনি । দু একটি ঘটনা ঘটলেও তা ছিল বিচ্ছিন্ন বরং দেখা যেত তার পিছনে ছিল ব্যক্তিগত কিংবা অর্থনৈতিক বিরোধ ধর্মটা ছিল হাতিয়ার মাত্র ।
কিন্তু একখনতো ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই নাচে ? অন্য ধর্মের কথা না হই বাদ দিলাম মুসলিম ধর্মের লোকেরা এটা গ্রহন করল কেমনে ?
মুসলিম ধর্ম এটা কখনো গ্রহণ করেনি । তবে ভিন্ন নামে এর প্রসার ঘটানোর চেষ্টা করছে এর জন্য একটা টার্মও হয়েছে ।
তাই নাকি ?
হুম সেই টার্ম তা হল শিল্প কলা । সেই বাইজী নর্তকীরা হয়ে গেল নৃত্য শিল্পী ।
শালা তুই ত জটিল জিনিস আবিষ্কার করলি ।
হুম তোমার মত সারাদিন বইয়ে মুখ ঘুজে থাকলে হবে । দেশ দুনিয়া কই যাচ্ছে একটু খবর নাও । সবাই গান গায় কিন্তু সবাই নাচে না , কারন কি জানস ?
আমি মাথা নাড়ালাম ।
নাচ হবে জানলে দেখবি ছেলে বুড়ো সবাই ছুটে কেনো জানিস ?
আমি মাথা নাড়ালাম ।
যা শালা তোর মত বাচ্চা ছেলেকে কিছু আর কিছু বলব না তোর এখনো বুঝার বয়স হয়নি ,যা পড়গে ।দেখলাম হোস্টেলে এসে গেছি ।
আরিফের সেই কারণের মানে হাতে কলমে বুঝেছিলাম মেডিকেলে এসে একটা প্রোগ্রামের পর সেই ঘটনাটি তুলে রাখলাম আরেকদিন বলব বলে ।
তবে তার আগে একটা সংবাদ দেই পত্রিকায় দেখলাম বাংলাদেশে একটি নাচের রিয়েলিটি শো হতে যাচ্ছে ।অনুষ্ঠানটি আয়োজন করছে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল ।সারা দেশ থেকে বাছাই করে শেষ ২০ জন প্রতিযোগির মধ্যে হবে চুড়ান্ত লড়াই । অনুষ্ঠানে যারা অংশ নেবে তাদের বয়স হতে হবে ১৬ থেকে ২৫ এর মধ্যে ।অর্থাৎ অনুষ্ঠানটির টার্গেট ঊঠতি বয়সের তরুণ তরুণীরা ।যারা এই অনুষ্ঠানের দর্শক তাদের দিকে তাকালে বুঝা যাবে ডুয়েট,সুন্দরী ,অষ্টাদশী না হলে কি অনুষ্ঠান জমবে ?