লাভ স্টোরি লেখার একটা অপচেষ্টা করে ছিলাম আমার অপচেষ্টা( একটি প্রেমের গল্প) -এর মাধ্যমে। এই স্টোরিই শেষ ইপিসোড হল এই লেখাটা।........
দুই দিন পর আবার ফোন দেই। এবারের মনোভাব্ খুব শক্ত-পোক্ত। মোবাইল রিসিভ করার ক্ষণিকের এই বিলম্ব টুকু আমার কাছে অনেক দীর্ঘ মনে হতে লাগল। প্রতিক্ষার পর হঠাৎ ফোনে নুপুরের কণ্ঠ শুনতে্ই আমি সম্ভিত ফিরে পাই। হড়হড় করে বলতে থাকি- দ্যাখেন আমি বহু কষ্টে আপনার নাম্বার পেয়েছি। আমি আপনাকে অনেক পছন্দ করি। এই পছন্দের পরিমাণ আপনাকে বোঝাতে পারব না। আমার গত এক মাসের পরিশ্রম আপনার সাথে এই কথা বলা। আমি এর আগেও আপনাকে বিরক্ত করেছি। কিন্তু কি করব বলুন, আমি কথা বলার সাহস পাইনি। আমি কি আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি?- কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললাম।
- নুপুর ছোট করে বলল, না। বলেই লাইন কেটে দিল।
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দড়িয়েই রইলাম। এভাবে যে আমাকে না করে দিবে আমি ভাবতেও পারিনি।
৫.
একদিন ক্যাম্পাস থেকে ফেরার সময় বসুন্ধরা সিটিতে গেলাম একটা সিডির খোঁজে। এ দোকান ও দোকান সিডি খুঁজছি। এক দোকানে পেয়ে গেলাম সিডিটা। সিডি কিনে ক্যাশকাউন্টারে টাকা দিয়ে ঘোরা মাত্রই দেখলাম নুপুর দোকানে, সিডি খুঁজছে। ওকে দেখা মাত্রই আমি শিহরিত হয়ে উঠলাম। মনে হচ্ছিল যে আমার ব্লাড ফ্লো বেড়ে গেছে। আমি কি করব, কি বলব ভেবে পাচ্ছিলাম না। আমি আচমকা তার পাশে গিয়ে হঠাৎ জিজ্ঞেস করলাম
- নুপুর, তুমি এখানে?
নুপুর কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। সামনা সামনি ফ্লাট হওয়াতে হয়তোবা নাম জানে বা মুখ চেনে। কিন্তু যার সাথে কখনো কথা হয়নি বা আনুষ্ঠানিক পরিচয় হয়নি এমন একজন এসে হঠাৎ এমন প্রশ্ন করাতে সে বেশ ভ্যাবাচ্যাকাই খেল। তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিয়ে জবাব দিল
- এইতো একটা সিডি কিনতে আসলাম। কেমন আছেন আপনি?
- ভাল, সরি, তোমার খবর কি, পড়াশোনা কেমন যাচ্ছে তোমার? জিজ্ঞেস করলাম আমি।
- মোটামুটি, আপনি কী সিডি কিনলেন?
- লিংকিন পার্কের নতুন একটা অ্যালবাম এসেছে, সেটাই কিনলাম।
- একটু দেখতে পারি?
- অবশ্যাই। “বলে আমি সিডিটা আমি নুপুরের দিকে বাড়িয়ে দিলাম।”
- ওয়াও! এই গান গুলোতো আমি বেশ কয়েক দিন ধরে খুজছি। গানগুলো কি আপনি আমাকে পেনড্রাইভে দিতে পারবেন?
মনে মনে বেশ খুশিই হলাম। এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। নিজেকে বেশ কষ্টে স্বাভাবিক রেখে বললাম
- অবশ্যই দেয়া যাবে।
নুপুর একটা রবিন্দ্রসঙ্গীতের সিডি কিনল। সিডি কিনে বেরিয়ে নুপুরকে বললাম তোমার কি খুব তাড়া আছে? ও না বলল। আমি বললাম তাহলে চল ফুটকোর্টে যাই। কিছুক্ষন বসে গল্প করি। ততক্ষনে আমি বেশ নুপুরের সাথে বেশ স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছি। নুপুর প্রথমে ইতস্ত করলেও পরে রাজি হল।
ফুডকোর্টে গিয়ে হালকা কিছু খাবারের ওয়ার্ডার দিয়ে বসলাম দু’জনে। আমি বুঝে উঠছিলামনা কি বলব। বেশ অস্বস্তিবোধ করছিলাম। কি বলব কিছুই খুজে পাচ্ছি না। নুপুরও কিছু বলছেনা। হঠাৎ কিছু না ভেবেই নুপুরকে বলে বসলাম
- আচ্ছা নুপুর, তোমাকে কি কেও মোবাইলে খুব বেশী জ্বালাতন করে?
বুদ্ধিমান মেয়ে নুপুর। প্রশ্নের ধরন শুনেই বুঝে গেল যে তার মোবাইলে কলগুলো আমিই করি। জাবাবও দিল বেশ টেকনিক্যাললি।
- কৈ, নাতো। আমাকেতো কেউ ফোন করে ডিসটার্ব করে না। তবে ফোন করে কথা না বললে আমার কাছে খুব বিরক্ত লাগে।
ইতোমধ্যে খাবার চলে এল। আমার খাওয়া শেষ করে দু’জনেই উঠলাম। নুপুর বলল যে ওর এক বন্ধুর বাসায় যাবে তাই সে তখনই উঠল। আর যাওয়ার সময় বলে গেল যে গানগুলো যেন অবশ্যই পেনড্রাইভে করে তাকে দেই।
৬.
বাসায় ফিরে বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম নুপুরকে কিভাবে আমার মনের কথাটা জানাই। এই কয়েক দিনে আমার লেখাপড়া শিকেয় উঠল। সারাক্ষন শুধু নুপুরের চিন্তা। হঠাৎ বুদ্ধি পেয়ে গেলাম। কম্পিউটারে তাড়াতাড়ি বসে গেলাম। বেশ আবেগ মিশিয়ে সুন্দর একটা কার্ড বানিয়ে ফেললাম ফটোশপে। কার্ডে প্রস্ফুটন ঘটল আমার না বলা মনের কথা। বিকেলে বাসায় এসে ও আমাকে ডাকল। আমি আসতেই বলল
- গানগুলো কি এখন দিতে পারবেন?
- পারব, পেনড্রাইভ আগেই রেডি করে রেখেছি। বলে টেবিল থেকে পেনড্রাইভটা দিলাম। পেনড্রাইভে গানের সাথে ভরে দিলাম বানানো ই-কার্ডটি। আর অপেক্ষায় থাকলাম জবাবের।
পরদিন নুপুর আমার পেনড্রাইভ ফিরিয়ে দিল। সে তেমন কোন কথা হলনা। তাড়াহুড়ো করে পেনড্রাইভটা নিয়ে কম্পিউটারে ইনসার্ট করলাম। ভাবলাম কার্ডে জবাবে কিছ একটা পাঠিয়েছে। কিন্তু আমাকে হতাশ হতে হল। যেভাবে পাঠিয়ে ছিলাম ঠিক সেভাবেই আছে। সেদিন রাতে ওর মোবাইলে কল করলাম। কল করেই প্রথমে আমার পরিচয় দিলাম। নুপুর বলল আমি জানি।
আমি বেশ অবাক হলাম।
- তুমি জান! কিন্তু আমিতো কখনো তোমাকে আমার নাম্বার দেইনি।
নুপুরের সাথে ফোনে কথা বলতে এবার আমার তেমন কোন সমস্য হচ্ছিল না। কারণ এই কয়েক দিনে ওর সাথে বেশ সহজ হয়ে গিয়ে ছিলাম।
- আমিই্ওতো আপনাকে আমার নাম্বার দেইনি। তাহলে আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?
- (বেশ বিব্রতকরভাবে) পেয়েছি কোন এক ভাবে।
- তাহলে আমিও কোনভাবে বুঝে নিয়েছি যে এটা আপনার নাম্বার।
- আচ্ছা নুপুর তুমি কি পেনড্রাইভে গানের সাথে আরকিছু দেখোনি?
- দেখেছিলাম একটা ফাইল ছিল। আপনার কোন গুরুত্বপূর্ণ ফাইল মনে করে আর ওপেন করে দিখিনি। কী, কোন সমস্যা?
- নাহ, তেমন কিছুনা।
- আচ্ছা নুপুর তোমাকে একটা প্রশ্ন করি, রাগ করবেনা তো?
- প্রশ্নই শুনলাম না। তাহলে রাগ খুশির কথা কেন আসে। আগে প্রশ্নটা শুনি। তারপর বলব রাগ করব কি না।
- তোমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের নাম বলতো।
- কেন, আমার বন্ধুদের নাম দিয়ে আপনি কি করবেন?
- কিছুই করবনা। আচ্ছা নুপুর, আমি কি তোমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন হতে পারি না?
- না হতে পারেন না। কারণ আপনি অনেক কম বোঝেন। আপনাকে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জানাতে হবে নাকি যে আপনি আজ থেকে আমার বন্ধু হলেন?
কথাটা শুনে আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম। খুশিতে আমি এরপর ওর সাথে আমি কি আবল-তাবল বলেছি আমি ঠিক বলতে পারবনা।
বন্ধুত্ব দিয়েই শুরু হয়েছিল আমাদের সম্পর্কের সূচনা। এভাবে বেশ কিছু সময় যাওয়ার পর হঠাৎ আবিষ্কার করলাম যে আমরা একে অপরের অনেক কাছাকাছি চলে এসেছি। আমাদের বন্ধন হয়েছে আরো অনেক দৃঢ়। আমরা একজনের ভেতর আরেক জনকে অনুভব করি। এটাই বোধহয় প্রেম, এটাই বোধহয় ভালবাসা। এভাবেই চলছে আমাদের অভিসার। কখনও মান-অভিমান, কখনও বা প্রেমের উত্তাল ঢেউয়ে গা ভাসিয়ে দেই দুজনে। এক একবার দীর্ঘ্ অভিমানের পর অনুভব করি আরো গভীর ভালবাসা। চলতে থাকে আমাদের প্রেম আরেকটি অভিমানের পথে………………….
আইনস্টাইনের প্রেমময় জীবন সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




