"সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ ৫৫ হাজার ৩২ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।" বাজেটের ঘাটতি জিডিপির সাথে কম্পেয়ার করে ৪.৬ শতাংশ বলা হয়েছে। অথচ বলা উচিত ছিলো মুল বাজেট হতে ঘাটতি ২৪.৭৪ শতাংশ। অর্থাৎ আপনি ১০০ টাকা খরচ করার কথা ভাবছেন কিন্তু আপনার ধারনা আপনি ৭৫.২৬ টাকা আয় করবেন(সেটাও কেবল একটা অলিক ধারনা মাত্র। এই ঘাটতি মেটাতে আগামী অর্থবছরে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেবে ৩৩ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ঋণ নেবে ২৫ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। যার মধ্যে স্বল্প মেয়াদে ১১ হাজার ৬৩৮ কোটি এবং দীর্ঘ মেয়াদে ১৪ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা।
আর ব্যাংক-বহির্ভূত উৎস থেকে নেওয়া হবে সাত হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্প থেকে চার হাজার ৯৭১ কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে তিন হাজার কোটি টাকা নেওয়া হবে।এছাড়া ও সামান্য অনুদান পাবার কথা বলা হয়েছে। সাথে আছে প্রায় ৬০ কোটি মার্কিন ডলার রিজার্ভ হতে নেয়া কিংবা সরবভৌম বন্ড বিক্রি করা।
ব্যায়ের মধ্যে মূল অঙ্কটিই হলো অনুন্নয়নমূলক ব্যয়। এই অঙ্ক এক লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা বা ৬০.৪৩% । আর অনুন্নয়ন রাজস্ব ব্যয় হলো এক লাখ ১৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ২৬ হাজার তিন কোটি টাকা ও বৈদেশিক ঋণের সুদ এক হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। এ ছাড়া রয়েছে অনুন্নয়নমূলক মূলধন ব্যয় ২০ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা এবং ঋণ ও অগ্রিম ১৫ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। (এটাকে লুটপাট ছাড়া আ,ই আর কিছু-ই ভাবতে পারতেছিনা)
বাজেটে মোট উন্নয়ন ব্যয় ৭২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা (৩২.৪৮%)। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ৬৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা(২৯.৬০%)। এর বাইরেও এডিপি-বহির্ভূত প্রকল্পের জন্য উন্নয়ন ব্যয় রয়েছে তিন হাজার ১৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া রাজস্ব বাজেট থেকে উন্নয়ন খাতে যাবে এক হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা এবং এডিপির বাইরে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি ও স্থানান্তর বাবদ ব্যয় হবে এক হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা।
আমরা জেনে থাকি আমাদের আয় কর দিতে হয় কারন আমাদের আয় করের টাকায় উন্নন হবে, রাস্তা ঘাট হবে, স্কুল কলেজ হবে, ফ্লাইওভার হবে, সেতু হবে, বিদ্যুৎ হবে, পানি হবে, ইত্যাদি কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে আমাদের দেয়া ট্যাক্স এর ৭০% এরও বেশি লোপাট হচ্ছে। যেই ২৯.৬০% ও উন্নয়নের জন্যে বরাদ্দ সেটাও ২৪.৭৪% ঘাটতির কোপে পরবে। এছাড়াও প্রায় ৫০% দুর্নীতি তো স্থানীয় সরকার ও মন্ত্রী আমলাদের সাথে ঠিকাদারের ভাগ। অর্থাৎ বাজেটে যা আয়ের প্রত্যাশা করা হয়েছে সেটা যদিও আয় হয় তাহলে পুরোটা-ই যাবে সরকারে সংশ্লিষ্ট(সরকারী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পুলিশ আর্মি রাজনীতিবিদ আমলা সহ সরকারী কর্মচারী) দের পকেটে বা স্বার্থে। কিছু অংশ নামকা ওয়াস্তে উন্নয়নের জন্যে। সেটা ব্যাংক থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা লোন করে কিংবা রিজারভে হাত দিয়ে অথবা সর্বভ্বৌম বন্ড বিক্রি করে। আসলে নামকা অয়াস্তে উন্নয়ন ও একটা লুটপাটের নতুন কৌশল। মূলত প্রতিটা অর্থ বছরের প্রথম দিকেই সাধারনত ঋণ গুলো করা হয়। এমনটাই দেখা গেছে বিগত দিন গুলোতে। এখন বর্তমান সরকার লোন নিয়ে নিলে এর দায় বর্তাবে পরবর্তী সরকারের উপর।
আকাশ কুসুম আয়ের কল্পনা এবং অযৌক্তিক লক্ষ্যমাত্রা এই বাজেটের সব চেয়ে দুর্বল দিক।
আগামী অর্থবছরে মোট প্রাপ্তির মধ্যে করের অংশ এক লাখ ৪১ হাজার ২১৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর-নিয়ন্ত্রিত কর এক লাখ ৩৬ হাজার ৯০ কোটি টাকা এবং এনবিআর-বহির্ভূত কর পাঁচ হাজার ১২৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া কর ব্যতীত প্রাপ্তি ২৬ হাজার ২৪০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক অনুদান ছয় হাজার ৬৭০ কোটি টাকা।
এনবিআর-নিয়ন্ত্রিত করের মধ্যে আগামী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাবে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) থেকে। পরিমাণ ৪৯ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা থেকে এর পরিমাণ নয় হাজার ৫৩০ কোটি টাকা বেশি অথচ চলিত বছরেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় নি। এর পরই রয়েছে আয় ও মুনাফার ওপর কর, ৪৮ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের জন্য তা ছিল ৩৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা এটাও চলিত বছর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় নি।
এখন আমি প্রশ্ন করি যে কিভাবে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে? কেননা আপনি আয়কর মুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়েছেন ১০% এর ও বেশী। অনেক যায়গায় রেয়াৎ এর সুযোগ দিয়েছেন এবং অনেক অনেক জিনিসের কর কমিয়াছেন। তাছাড়া সেই সব পন্যে কর বাড়ানো হয়েছে স্বাভাবিক ভাবেই সেই সকল পন্যের মুদ্রা প্রবাহ কমে যাবে ফলে বেশী কর ধরেও সরকারের আয় তেমন বাড়বে না।
আবাসন খাত কে কবর দেয়া হচ্ছে।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে লোক দেখানো আবাসন খাত কে প্রনোদোনা দিলেও অবৈজ্ঞানিক উতসেকর সংযোজোন করে মৃতপ্রায় আবাসন খাত কে মূলত কবর দেয়া হচ্ছে। যেমন প্রতি বর্গ মিটারে কমপক্ষে ২ হাজার টাকা উতসেকর দিতে গেলে ১২.৫% রেজিস্টারি খরচের পরেও আরো প্রায় দুই-তিন গুন বেশী টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে। ধরুন মিরপুরে আপনি একটা ১১০০ বর্গ ফুটের ফ্ল্যাট নিয়েছেন ৪০০০ টাকা করে। মোট ৪৪ লক্ষ টাকা মূল্য পরিশোধ করার পরে আপনাকে রেজিস্ট্রি নিতে ১২.৫% অর্থাৎ সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা + উতসেকর ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা + আপ্যায়ন (ঘুষ আর চা নাস্তা, রেভিনিয়ু কমিশন ইত্যাদি) ২ লক্ষ টাকা = অর্থাৎ প্রায় ১০ লক্ষ টাকা যার অর্থ ৪৪ লক্ষ্য টাকার ফ্ল্যাট প্রায় ৫৪ লক্ষ টাকা লাগবে। এতে করে ক্রেতা ফ্ল্যাট কিনতে অনাগ্রহী হবে এটা বুঝতে কোনো আইনস্টাইন হবার দরকার পরে কি?