আমার যদি ক্ষমতা থাকতো, তাহলে চিংড়ী মাছকে জাতীয় মাছ বানিয়ে ফেলতাম। এই লেখাটার উদ্দেশ্য হল চিংড়ীর প্রতি আমার সুগভীর ভালবাসাকে লিপিবদ্ধ করে ফেলা। আমার পছন্দের তিনটা খাবারের একটা হল অনেকগুলি চিংড়ী ছেড়ে দেয়া ঝাল ঝাল এক বাটি থাই স্যুপ। এখন যেখানে বসে আছি, সেখানে আমার সামনে রাখা কমলা রঙের স্যুপ। গোটাকয়েক মাঝারি সাইজের চিংড়ী দেখা যাচ্ছে। কিছু মাশরুম আর টমেটোকুচিও উঁকিঝুকি দিচ্ছে। ঝাঁঝালো ঘ্রাণের সাথে লেবু পাতার সতেজ সুবাস। সব মিলিয়ে বেহেশতী পরিবেশ।
মিউনিখের সেন্ট্রাল স্টেশনের একটা ছোট টেইক অ্যাওয়ে টাইপের দোকান। নাম Asia Hung আর জার্মান উচ্চারনে “আজিয়া হুং”। ভেতরে বসে খাওয়ারও ব্যবস্থা আছে। প্রায়ই ল্যাব থেকে ফেরার পথে থাই স্যুপের লোভে চলে আসি। মাঝে মাঝে সাথে নেই এক প্লেট স্প্রিং রোল। একা একা কোথায় গিয়ে খেতে অনেকের কেমন যেনো একটু আড়ষ্ট লাগে। লাগারই কথা। কিন্তু আমার বেলায় এই কথা খাটে না। ছোট বড় যেকোন খাবারের দোকান কি রেস্টুরেন্টে ঢুকে অবলীলায় চার জনের টেবিল একা দখল করে জাঁকিয়ে বসি। পা দোলাতে দোলাতে মেন্যু দেখে অর্ডার দেই। ব্যাপারটার ভেতর স্বাধীন স্বাধীন ভাব আছে। আমি তাড়িয়ে তাড়িয়ে এই স্বাধীনতাটুকু উপভোগ করি।
এরকম এক একটা ভোজনসুখের সময়ে মনে ব্যাপক কবি-দার্শনিক ভাবের উদয় হয়। আজকেও হচ্ছে। অর্ধেক স্যুপ শেষ করে চার নাম্বার স্প্রিং রোলটা মুখে দিতেই কাব্য জগতের ঝাঁপি খুলে গেলো। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে আমার এই জাতীয় কাব্য-সাহিত্য কিছুটা খাদ্যকেন্দ্রিক। যেমন- “হেরিয়া নধর চিংগইড় মাছ, ভক্ষণে কভু করি নাকো বাছ”। কাব্য-সাহিত্য বললে সাহিত্যের কিঞ্চিত অপমান হয়, তাই এটাকে খাদ্য-সাহিত্য বলা শ্রেয়। আপাতত কথা কম বলে সাহিত্যগুলোকে পেটে চালান দেয়া যাক। ধূমায়িত বাটি থেকে এক চামচ স্যুপ গিলে স্প্রিং রোলে একটা উদাস কামড় দিয়ে আমি দেখতে থাকি স্টেশনের হাজারো মানুষের আনাগোনা।
ডাইরী, ২০১২
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৪