সাহস করে মলাট ওল্টাতেই সশব্দে খুলে যায় ক্যাফে বোহেমিয়ানের ভারি পাল্লা। তারপর এক কোনে আসন টেনে বসেধোঁয়া ওঠা কফি কাপের আলতো চুমুকে বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট। চার দেয়াল উবে গিয়ে ভেসে ওঠে ছোট্ট সবুজ দ্বীপ। নারিকেলের সারি এলোমেলো মাথা নুইয়ে কুর্নিশ জানিয়ে আবার উদাস দাঁড়িয়ে পড়ে। আশ্চর্য এক ভ্রমন কাহিনীর পাতায় স্বাগতম। যার নাম ‘কোরাল দ্বীপের হীরা-পান্না‘। গল্পটা চিরচেনা বাংলাদেশের আধ চেনা কোরাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন্সের। এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে ছুটে গেলে ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের পুরোটাই যেন পাড়ি দেয়া হয়ে যায়।
ক্যাফে বোহেমিয়ানের পাতাগুলো আসলে আলাদিনের উড়ন্ত গালিচা। যন্তর মন্তর ফুশ্ মন্তর বলে পাঠককে এবার সে উড়িয়ে নেবে সুদূর অস্ট্রিয়ার তুষার ঘেরা ‘আল্পবাখের বাঁকে’। সেখানকার ভয়ংকর সরু খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে পিলে চমকে উঠবে আচমকাই। আবার খাদ ডিঙ্গোলেই রোদ ঝলমলে স্প্যানিশ দ্বীপ টেনেরিফে। ফ্লামিঙ্গো নাচের আসরে আয়েশী ভঙ্গিতে খানিকটা জিরিয়ে নিয়েই আবার ছুট। গন্তব্য জার্মান শহরতলী টেগের্নসী। এবার ভিড়ে যেতে হবে এক দল বঙ্গললনার সাথে। আজকে তাদের ‘লেডিস ডে আউট’। এক বাক্স সিংগারা-সমুচা নিয়ে তারা ট্রেনের কামরা জাঁকিয়ে বসেছে। চাইলে এক-আধ খানা সমুচা মিলতেও পারে। তাদের পিছু নিয়ে পাহাড়ে আঁচলে আর লেকের পাড়ে আলসেমি করে কাটানো দুপুর গড়ানো বিকালটা মন্দ লাগবে না। তারপর, আবার যদি ঝোলা কাঁধে বেরিয়ে পড়তে মন চায়, তাহলে বিনা টিকেটেই ঘুরে আসা যাবে ভাস্কো ডা গামার পর্তুগালে। বিলবোর্ডে রোনালদোর মুচকি হাসিটাই বলে দেবে এ বড় মজার দেশ। আর প্রফেসর মরিশিওর সাথে দেখা হলে তো কথাই নেই। তার সাথে ‘পর্তুগালের অলিগলি’ ঘুরে সময় উড়ে যাবে কর্পূরের মত। তবে মানিব্যাগ সাবধান। এদেশে আকাশ থেকে পরী এসে হাত সাফাইয়ের ভেল্কি দেখিয়ে যায় কিনা।
ট্রেনে আর প্লেনে চেপে কতই তো ঘোরা হল। এবার লেখকের সাথে তার নড়বড়ে দু’চাকার সাইকেলের পেছনে বসে ঝিরিঝিরি বাতাস কেটে মিউনিখ শহরটা দেখে নিলে ক্ষতি কি। ‘সাইকেল আউর আওরাত’ সে অর্থে ভ্রমনের গল্প নয়। বরং কলমের কালিতে আঁকা লোকালয়ের সকৌতুক স্কেচ। তবে ‘হাড়ি-নারী, হারি-নারি’ আরো কড়া ধাঁচের পোট্রের্ট। কালির বদলে হেঁশেলের খুন্তিটাকে ত্রিশূলের মত বাগিয়ে লেখা হয়েছে একে। করোনাকালের রাগ-ক্ষোভ এখানে প্রকট। তাই পড়তে হবে একেবারে নিজ দায়িত্বে, ঢাল-তলোয়ারের আড়ালে। ঘটনার ঘনঘটা এড়িয়ে দু’দন্ড নিরিবিলিতে পালাতে চাইলে ‘আঠারো নম্বর ট্রোগার স্ট্রিট‘ একটা ভাল জায়গা। ‘মেহেগনি কফিন’ও বেশ শুনশান। এ দু’টো গল্প না হয় চমক হয়েই থাকলো।
প্রথম আলো’র ‘দূর পরবাস’ আর ‘ভ্রমন‘ পাতায় পর্ব আকারে ছাপা হয়েছিল লেখাগুলো। ভবঘুরে গল্পদের এক সাথে জুড়ে দিয়ে একটা স্থায়ী ঠিকানা দেয়া হল। এক কাপ কফি সমেত পাঠকের অপেক্ষায় থাকবে ‘ক্যাফে বোহেমিয়ান’।
মিউনিখ, জার্মানি
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০২২ রাত ১২:৩১