১
স্টুটগার্ট মেইন রেলস্টেশনে প্যাঁচ লেগে গেছে। চারিদিক কনস্ট্রাকশনের ইট-সুড়কিতে সয়লাব। বিশাল মেরামতি যজ্ঞ চলছে। সেই কোপে পড়ে একটার পর একটা ট্রেনের শিডিউল ভন্ডুল হয়ে যাচ্ছে টপাটপ। লোকজন বিভ্রান্ত ভঙ্গিতে এদিক-ওদিক ছুটছে। দূড়পাল্লার যাত্রীদের অবস্থা আপাতত কেরোসিন। আমার ট্রেনও যে আজকে ফেল মারবে, এ তো জানা কথা। কিন্তু আজ রাতের ভেতর মুন্সটার শহরে পৌঁছাতে না পারলে আগামীকাল কনফারেন্সটাই যে ভেস্তে যাবে।
যাচ্ছি জার্মান প্যাথলজি সোসাইটির বার্ষিক সম্মেলনে। একেক বার একেক শহরে বসে এই আয়োজন। স্টুটগার্টে এসেছিলাম বন্ধুর বাড়িতে। তাই এখান থেকেই ব্যাকপ্যাক কাঁধে রওনা দেয়া। মিউনিখের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্টডক হিসেবে যোগ দেবো। কনফারেন্স-টনফারেন্স ওসব অজুহাতমাত্র। যাচ্ছি আসলে তো নতুন এক শহর দেখবো বলে। বিজ্ঞানী জীবনের এই এক মজা।
মুন্সটার নাকি ফর্মালিনে চোবানো এক শহর। মানে, তেরশো শতকের সাবেকী চেহারা নিয়ে এখনও অবিকল ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। কোন অদল-বদল নেই। মধ্যযুগের মেডিভাল আদলে গড়া গথিক ইমারতগুলো নাকি পর্যটককে হ্যাঁচকা টানে টাইম ট্রাভেলে নিয়ে যায় কয়েকশ বছর পেছনে। কিন্তু আজকে এই বেরসিক শিডিউল বিপর্যয়ের চিপা থেকে কে বাঁচাবে হ্যাঁচকা টানে।
হতাশ হয়ে চোয়াল ঝুলিয়ে বসে আছি আরো আরো যাত্রী বেচারাদের সাথে। এরই মাঝে স্টেশনের স্বচ্ছ অ্যানাউন্সমেন্ট বক্সের ভেতর হালকা নড়া-চড়া দেখা গেল। পেটমোটা রেল অফিসার মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে সিধে হয়ে বসল। ট্রেন লেট হওয়া বিষয়ক ঘোষনা আছে নির্ঘাত। তবে তার আগে টেবিল হাতড়ে চিপসের প্যাকেট খুলে বিশাল এক মুঠ মুখে পুরে দিল অফিসার সাহেব। কোনো জরুরী ঘোষনার আগে বিস্কুট কিংবা চিপস মুখে চালান দেয়াটা জার্মান রেল অফিসারদের এক ধরনের রিচুয়াল। তাতে নাকি ঘোষনায় একটা জোশ আসে।
শুরু হল ঘোষনা, ‘অ্যা, ইয়ে, আহেম্, স্টুটগার্ট-টু-মুন্সটারগামী অমুক নম্বর ট্রেন আজকে তমুক সময়ের বদলে এত মিনিট দেরি করে আসবে’। কিন্তু চিপস চিবানোর প্রবল কচর মচরের চোটে বেকুব বনে যাওয়া যাত্রীরা আমরা অমুক নম্বর, তমুক সময় আর কত মিনিটের অপেক্ষা-এতগুলো দরকারী তথ্যের একটারও নাগাল পেলাম না। রেলমাস্টারের তাতে বয়েই গেল। সে ততক্ষনে কোকের বোতলে ঘাউৎ ঢেকুর তুলে একটা চাইনিজ পাওয়ার ন্যাপের আয়োজন করছে। বেখেয়ালে মাইক্রোফোন ‘অন’ থাকায় সুউচ্চ হুংকারে পুরো প্ল্যাটফর্ম কেঁপে উঠলো, ‘ঘাআআউৎ’...!।
এই রকম ভ্রান্তির সময়ে ট্রেনের অপেক্ষায় বসে থেকে মমি হয়ে যাবো, নাকি বিকল্প কোনো ধান্দা চিন্তা করবো, ভেবে না পেয়ে গাল চুলকাতে থাকলাম। কিন্তু রাখে আল্লাহ, মারে কে। মাত্র দশ মিনিট বসিয়ে রেখে লাল-সাদায় ছোপানো ‘ডয়েচে বান’ উদয় হল স্টুটগার্ট স্টেশনে ধূলো উড়িয়ে। লাফিয়ে চড়ে বসলাম সেকেন্ড ক্লাসের কামরায়। লোকে লোকারন্য বগি। কই যে বসি। কিনেছি তো মাত্র কামরার টিকেট। সিটের জন্যে আলাদা বুকিং দেয়া লাগে আরো চার ইউরো খসিয়ে। নইলে খালি আসনের গ্যারান্টি নেই। ক্যাপিটালিজম দেখি এই জার্মান মুলূকে অলরেডি সূচ হয়ে ঢুকে পড়েছে। পদে পদে পয়সা ছাড়ো, নইলে থাকো ঝুলে বাদুড়ঝোলা হয়ে তখন। কি আর করা। খাম্বা একটা খুঁজে নিয়ে লটকে পড়লাম।
এদিকে তাড়াহুড়ায় সকালে নাস্তা সারা হয় নি। চেহারায় অভুক্ত ভ্যাগাবন্ড ভাব জেঁকে বসার আগেই ‘বাগেট’ নামক সরু, লম্বা এক টুকরো রুটি বের করলাম ব্যাগ থেকে। এই বাগেট আসলে ফ্রেঞ্চদের আবিষ্কার। স্বাদে নরম আর মচমচে হবার কথা। কিন্তু জার্মানদের হাতে পড়ে তার শরীর হয়েছে মার্সেডিজ গাড়ির বনেটের মত শক্ত। ভেতর থেকে পনির আর টমেটোর টুকরোগুলো টিপে ফেলে দিয়ে এই বাগেট রুটি বাগিয়ে তলোয়ার বানিয়ে অনায়াসে ডুয়েট লড়া চলে, হাই হুই ঘ্যাচাং! আজীবন তুলতুলে পাউরুটি গেলা আয়েশী দেশী চোয়াল আর্তনাদ করে উঠছে রীতিমত। এদিকে ট্রেনের রেস্তোরাঁ নাকি কি কারনে বন্ধ। ধোঁয়া ওঠা কফি দিয়ে গলা ভেজাবো, সে উপায়ও নেই। অতএব, শুকনো মুখে তলোয়াল-রুটি চিবোতে লাগলাম চোয়াল চালিয়ে।
পরের স্টেশনে ট্রেন থামতেই বাম সারির একটা আসন ছেড়ে দিয়ে বয়স্ক ভদ্রমহিলা নেমে গেলেন। তড়িৎ গতিতে সেই আসন দখলে নিয়ে ভদ্রমহিলার ফেলে যাওয়া খবরের কাগজ ঝাড়া দিয়ে পড়া শুরু করলাম। চ্যাংড়া মত এক ছোকরা সিট দখলের দৌড়ে হেরে গিয়ে মুখটা প্যাঁচা বানিয়ে আমার একটু আগে ছেড়ে আসা খাম্বায় হেলান দিল নিরুপায়। সে যে খঁচে আছে, সেটা ভালই বোঝা যাচ্ছে। পেপারব্যাক একটা হাতে নিয়ে ইচ্ছে করে সশব্দে পাতা ওল্টাচ্ছে, খশখশ্। এই ছেলে পাশ দিয়ে যাবার সময়ে হালকা পা বাড়িয়ে রাখতে হবে। পাতা উল্টিয়ে জ্বালানোর বনামে বাংলা ল্যাং। ডান পা স্ট্যান্ডবাই পজিশনে রেখে জানালার বাইরে অলস তাকালাম।
সারি সারি শহর-নগর ফুড়ে ট্রেন চলছে দুলকি চালে। শহর পেড়িয়ে কখনো গ্রাম আর খামারবাড়ি চোখে পড়ছে। দিগন্তজোড়া রাইসরিষার হলুদ মাঠ দেখে গ্রাম বাংলার ক্লাসিক সরিষা ক্ষেত বলে ভুল হতে চায়। কিন্তু গম্বুজ তুলে ক্রুশ উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গির্জাটা আবার ভুল ভাঙ্গিয়ে দেয়। ট্রেনের শোঁ শোঁ শব্দ ছাপিয়ে গির্জার মাঝদুপুরের ঢং ঢং কানে আসছে। আধবোঁজা গরুর পাল জেগে উঠে আবার জাবর কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। জীবন এখানে নিস্তরঙ্গ।
বেশিক্ষন আরাম করে এই সিন-সিনারি উপভোগ করা গেল না। মুঠোফোনে পুং পাং শব্দে খুদেবার্তা উপস্থিত। মার্থা মেয়েটা আমাকে গরু-খোঁজা খুঁজছে। মার্থা মাস্টার্সের থিসিস ছাত্র। তার কালকে পোস্টার প্রেজেন্টেশন আছে। আমি তার কো-গাইড। পোস্টারের চূড়ান্ত রুপটা সে একবার দেখিয়ে হালাল করে নিতে চায়। সে নাকি এই ট্রেনেই আছে। ল্যাপটপ বগলে এদিকেই রওনা দিয়েছে।
মিনিট পাঁচেকের মাথায় মার্থা গাল্ভর্তি হাসি নিয়ে উদয় হল। মেয়েটা জাতে কাজাখস্থানী। পড়াশোনা তুরস্কে আর এখন জার্মানিতে। এখানকার পাট চুকিয়ে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমানোর ইচ্ছে। একই সাথে সে একজন ফ্যাশনিস্তা। মিউনিখ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সটির প্যাথলজি ভবনে ভুশভুশে জিন্স পড়ে আমচু মুখের পিএইচডি-পোস্টডক-প্রফেসরের মাঝে মার্থার ঝলমলে সাজ দুর্দান্ত রকমের চোখে পড়ে। বিজ্ঞানী মানেই যে চোখে কালশিটে আর পোশাকে একটা বাস্তুহারা কাঙ্গাল ভাব থাকতে হবে-এই মতবাদে সে বিশ্বাসী না। ঘন করে মাশকারা দেয়া উচ্ছ্বল মার্থাকে তাই ভাল না লেগে যায় না।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ঘটিয়ে ইঁদুরের দেহে ক্যান্সার বাঁধানো হয়েছে। ক্যান্সার নিয়ে আমাদের গবেষনা। সেই ইঁদুরের কিডনী আর লিভার স্লাইস করে কাটা হিস্টোপ্যাথলজি স্লাইডের ছবিগুলো দেখতে দেখতে জানালার বাইরে চোখ দেবার আর সময় হল না। শহর-জঙ্গল-নদী বদলে যেতে থাকলো বায়োস্কোপের গতিতে। ইশ্, কিচ্ছু দেখা হচ্ছে না। এই মেয়ের জ্বালায় রবার্ট ফ্রস্ট আউড়ে ফেলতাম মনে মনে, “Two roads diverged in a yellow wood / And sorry I could not travel both”। এক-আধবার যেই না বাইরে দৃষ্টি ছুড়েছি, মার্থাও সমানতালে প্রশ্ন ছোড়ে, ‘এই মাউস মডেলের লিমিটেশন নিয়ে কি বলা যায়, বলো তো?’। জবাবে আমতা আমতা করে গাল চুলকে দুই-তিনটা সম্ভাব্য যুক্তি বাতলে দিতে হল। আগ্রহী ছাত্র মার্থা তার জীবনে এমন অমনোযোগী শিক্ষক বোধহয় আর দেখে নি।
ট্রেনের চাকা এক সময়ে মুন্সটার ষ্টেশনে এসে থামলো। মার্থার হোটেল আরেকখানে। এক হোটেলে ঠিকানা না হওয়ায় মনে মনে খুশি হলাম। নইলে আরেক দফা জ্ঞান ঝালিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলত। যাহোক, মেয়েটা পোস্টার কাঁধে খুশিমনে বিদায় নিয়ে চলে গেল। তাকে যেকোনো কঠিন প্রশ্ন সামাল দেবার মত করে তৈরি করে দেয়া হয়েছে গত এক ঘন্টায়।
নতুন শহর দেখার রোমাঞ্চে তড়িঘড়ি করে স্টেশন ছেড়ে রাস্তায় নামলাম। মুঠোফোনে গুগুল ম্যাপে ঠিকানা টিপে রওনা দিতেই একটা বোতলের ছিপি এসে টুং করে পায়ে লাগলো। উৎস খুঁজতেই দেখি ফুটপাথে কাঁত হয়ে পড়ে আছে ছিপি বাবা। বাবার চারপাশে আরো আরো বাবা আছে। কারো হাতে গাঁজার পুরিয়া, কারো পাশে খালি বোতল গড়াচ্ছে, কারো সামনে উল্টো টুপিতে খুচরো পয়সা উঁকি দিচ্ছে। ভিন্টেজ চেহারার বনেদি নগরের যে চেহারা মাথায় নিয়ে এসেছি, তার সাথে দেখছি কিছুই মিলছে না। কি আর করা, খুব সাবধানে বাবাদের পাশ কাটিয়ে চললাম হনহন। কে যেন খেঁকিয়ে উঠলো, ‘এ্যাই দেখলে, একটা বিয়ারের পয়সাও দিয়ে গেল না, হিক্...’।
২
মিনিট পনেরোর মাথায় হোটেলটা সামনে ভেসে উঠল। হুশহাশ গাড়ি হাঁকানো ব্যস্ত চৌমাথায় নিরীহ চেহারার সাধারন বাজেট-হোটেল। মুন্সটার শহরে এসেছি এক দিনের অতিথি হয়ে। কোনোমতে একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেই হল। তাছাড়া, হোটেল নামের চারকোনা বাক্সে থেকে সময় নষ্ট করার ইচ্ছে নেই। ঝটপট চেক-ইন পর্ব সেরে যাত্রাপথের ধূলোবালি হঠিয়ে আবার তরতাজা হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।
লিউ-এর সাথে দেখা করতে হবে। লিউ পুরানো কলিগ। মিউনিখ টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সায়েন্টিস্ট হিসেবে ছিল একই ল্যাবে। এখন সে মুন্সটারের এসেছে নতুন চাকরি নিয়ে। লিউ ঠিক সাড়ে পাঁচটায় এক রেস্তোরাঁয় অপেক্ষায় থাকবে। রেস্তোরাঁর নাম ‘ক্লাইনার কিপেনকের্ল’। নাম পড়তে গিয়ে দাঁত নড়ে গেল। এখন এই ঠিকানা খুঁজে পেলে হয়। এটা নাকি তিনশ বছরের পুরানো রেস্তোরাঁ। মাঝে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে একেবারে গুড়িয়ে গিয়েছিল। পরে ১৯৫৫-তে গিয়ে আবার তার দরজা খুলেছে অতিথি আপ্যায়নে। লিউ খুব আগ্রহ নিয়ে এই রেস্তোরাঁয় টেবিল বায়না দিয়ে রেখেছে। কিন্তু চিন্তা অন্যখানে। এই খানদানি রেস্তোরাঁর খানাপিনায় আজকে কত টাকা বেড়িয়ে যাবে, সেই ভেবে চোখ সরু হয়ে আসছে।
বার দুই বাস বদলে নেমে পড়লাম। এলোমেলো এদিক-ওদিক খুঁজতেই পাওয়া গেল ক্লাইনার কিপেনকের্ল। লাল ইটের বনেদি বুনিয়াদ। তার সামনেই ধাতব ভাস্কর্য। মূর্তির পড়নে সেকেলে ঢিলেঢালা পোশাক, গলায় স্কার্ফ, মাথায় টুপি আর মুখে একটা অদ্ভূত-দর্শন পাইপ ঝুলছে। সেটা দিয়ে বিড়ি টানা হয় নাকি হুইসেল বাজাতে কাজে লাগে- ঠিক বোঝা গেল না। আর কাঁধে ব্যাকপ্যাকের কায়দায় ঝোলানো দশাসই এক ঝুড়ি। ভেতরে ধাতব আলুটা-মূলোটা দেখা যাচ্ছে। এ লোক তাহলে বোধহয় তরি-তরকারি ফেরি করে বেড়ায়। হঠাৎ মনে পড়লো এরকম ঝুড়ির জার্মান নাম ‘Kiepe’ বা ‘কিপে‘। হোটেলের ‘কিপেনকের্ল’ নামটা কি এই ভাস্কর্যের সাথে মিল রেখে রাখা হয়েছে? রেল স্টেশনের স্যুভেনির শপে এ লোকের মিনিয়েচার পুতুল চাবির রিংয়ে ঝুলতে দেখেছি। ইনি তো দেখছি এ শহরের ট্যুরিস্ট-আকর্ষন গোছের কিছু হবেন।
জার্মান পাংচুয়ালিটি মেনে ঘড়ি ধরে সময় মেনে কিপেনকের্ল রেস্তোরাঁয় উদয় হলাম। লিউ চেয়ার ছেড়ে তড়াক করে উঠে এল এদিকে। প্রবল বেগে জাপটে ধরে উচ্ছ্বল হাসিতে বলে উঠল, ‘উফফ্, কতদিন পর!’।
লিউ এর বয়স চল্লিশের ওদিকেই হবে। অথচ মসৃন ত্বক আর সিল্কি কালো চুলে তাকে ত্রিশের বেশি ভাবাই যায় না। লিউ তাইয়ানের মেয়ে। তবে জার্মানিতে আছে প্রায় বছর বিশেক। তাই জার্মানটা বলে চোস্ত। মিউনিখে থাকতে কলিগের বাইরে তার বন্ধুবান্ধব তেমন ছিল বলে জানা নেই। মুন্সটারে এসে তার একা দশা কেটে গিয়ে দোকা হবার কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা ইত্যাদি ব্যক্তিগত প্রশ্নে আর যাই না। বরং ব্যক্তি লিউ-এর খোঁজ নিতেই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
লিউ জার্মানে কথা চালাতেই স্বচ্ছন্দ। আমিও আমার ভাঙ্গাচোরা জার্মানের সাথে ক’টা ইংরেজি শব্দ জুড়ে জোড়াতালি দিয়ে আলাপ সারছি। জার্মান আর ইংরেজির এই কিম্ভূত হাইব্রিডের নাম ‘জাংরেজি’। নিজস্ব আবিষ্কার। চিরকাল বাংলা-ইংরেজির মিলিয়ে বাংরেজি দিয়ে উৎরে যাওয়া লোক যে জার্মানমুলুকে এসে অনায়াসে জাংরেজি আবিষ্কার করে ফেলবে-এতো জানা কথা। সমস্যা একটাই, জাংরেজির সাথে এক বিশেষ বস্ত্রের দেশীয় নামের মিল আছে।
যাহোক, কোনার টেবিল থেকে বছর ষাটেকের রাগী চেহারার এক ভদ্রমহিলা চোখ রাঙ্গানি দিল যেন বার কয়েক। ভুল ব্যকরন আর বিদ্ঘুটে উচ্চারনে যেভাবে তার মাতৃভাষার জাত মারছি, তাতে রাগ লাগাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ‘অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী’ এই বাঙ্গালই বা কি করবে। ভদ্রমহিলার অগ্নিচক্ষু উপেক্ষা করে হটরবটর জাংরেজি চালাতে লাগলাম থোরাই কেয়ার। উপরন্তু, হটরবটরের সাথে বোনাস হিসেবে জুসের গ্লাসে বিচ্ছিরি সুড়ুৎ টান।
মেন্যু ধরে কয়েক রকমের মাছের গ্রীল আর ক’প্লেট পাস্তা উড়িয়ে গল্পে-আড্ডায় সময় কাটিয়ে কিপেনকের্ল রেস্তোরাঁ থেকে বেড়িয়ে এলাম ভরপেটে হাত বুলাতে বুলাতে। যে রকম একটা চক্ষু-চড়কগাছ বিল গছিয়ে দিয়েছিল ওয়েটার, তাতে মাথাটা বোঁ বোঁ করছে। বোঁ কাটানোর জন্যে মুন্সটারের পথে পথে কয়েকটা ভোঁ-চক্কর মারতে হবে। যদি বিষে বিষ ক্ষয় হয় আর কি। লিউ পাশ থেকে চিঁ চিঁ করছে তাকে বিলে ভাগ বসাতে দেই নি বলে। কথা ঘোরানোর জন্যে তাকে শুধালাম, ‘এই, তোমার গাইডগিরি শুরু করো তো। শহরটা ঘুরিয়ে দেখাও চটপট’।
সরু গলি ফেলে বড় রাস্তায় পা ফেলতেই মুন্সটার শহর স্বরূপে দেখা দিল যেন। চওড়া রাজপথের সবটা জুড়ে সাইকেলের রাজত্ব। গাড়িঘোড়ার প্রতাপ বড্ড কম। নর্থ-রাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের এই শহরকে বলা হয় জার্মানির বাইসাইকেল রাজধানী। ওদিকে, বায়ার্ন রাজ্যের রাজধানী মিউনিখ থেকে আসা লোক আমি গাড়ির ধূলি-ধোঁয়া আর ট্রাফিক জ্যামেই বেশি অভ্যস্ত। একধরনের মুগ্ধতা নিয়ে ধোঁয়াবিহীন শুদ্ধ বাতাস টেনে নিতে নিতে ডাউন টাউনের দিকে এগোলাম আমরা।
একটু পর পরই গির্জার ঘন্টা কানে আসলো। জিজ্ঞাসু চোখে লিউকে শুধাতেই সে খুব উৎসাহে জবাব দিল, “জানো, মুন্সটার নিয়ে একটা কথা চালু আছে। ‘হয় এ শহরে বৃষ্টি হচ্ছে, নয় তো চার্চে ঘন্টা পড়ছে, আর যদি দুইটায় চলে, তাহলে ধরে নিতে হবে দিনটা রবিবার’। বুঝলে ব্যাপারটা, হাহা...”। উচ্চমার্গীয় জার্মান রসিকতার মাথা-মুন্ডু না বুঝেই বোকাটে হাসলাম, ‘ হেঁ হেঁ, তাই নাকি?’। তবে এটুকু বোঝা গেল যে এ শহরে বৃষ্টির আনাগোনা বড্ড বেশি।
পায়ে পায়ে ঘন্টার উৎসে পৌঁছে গেলাম। অতিকায় সেন্ট পল গির্জা দাঁড়িয়ে আছে। সেই তেরো শতকে গড়া। রোমান আর গথিক নকশার মিশেলে একাকার। সিমেট্রিক আদলে গড়া গম্বুজে সরল সোজা গড়নে রোমানেস্ক ছাপ স্পষ্ট। আবার কোনো দেয়ালের মাথায় চোখা গথিক আর্ক যেন মুকুট হয়ে চেপে বসেছে। এই গির্জার ঘড়ির ঘন্টাই এলাকা সরগরম রাখে। এই ঘড়ির বয়স প্রায় পাঁচশ বছর। পনেরশ চল্লিশ সালের দিকে প্রকান্ড এই ঘড়ি আস্তানা গেঁড়েছে চার্চের ঠিকানায়। সময়ের কাটা ঘুরে মাঝে বয়ে গেছে অযুত লক্ষ দিন। না জানি কত কালের সাক্ষী হয়ে আজতক বেজে চলছে বিরতিহীন।
ফুটপাথে অলস পা ফেলে আরেক প্রকান্ড চার্চের সামনে এসে দাঁড়ালাম। সেন্ট ল্যামবার্ট-এর গির্জা। আরেক দুর্দান্ত মধ্যযুগীয় সিগনেচার। কোমল আদলের গম্বুজ টম্বুজ নেই এখানে। ইট-সুড়কির পরতে পরতে গথিক ছাপ প্রকট। তীক্ষ্ণ মিনার উঠে গেছে আকাশ ফুঁড়ে। কিন্তু খাঁচার মত ওগুলো কি ঝুলছে খুব উঁচু থেকে? নিশ্চয়ই কোনো অঘটন জড়িয়ে আছে খাঁচার শেকলে। মধ্যযুগ বলে কথা। লিউকে খোঁচা দিতেই কাজ হল। সে ভারিক্কী সুরে ইতিহাস বলা শুরু করলো।
সাল পনেরোশ চৌত্রিশ। ইয়ান ভ্যান লিডেন নামে জাতে ডাচ এক ভদ্রলোক নেদারল্যান্ড থেকে উড়ে এসে মুন্সটার শহরে জুড়ে বসলো। ইয়ান ছিল পেশায় রুটির কারিগর। বেকারি চালাতো। আরেকটা গুণ ছিল তার। কথাবার্তায় ভীষন চৌকস। লোকে মুগ্ধ হয়ে শুনত তার কথা। ইয়ান একদিন ভাবলো, ‘ধুর্, এত রুটি বেলে কি হবে। লাইন বদলে এবার একটু ধর্ম-কর্ম করে দেখি। বাইবেল তো পড়াই আছে দু’পাতা। ওতেই চলবে’। দুই পাতা বাইবেল-জ্ঞান নিয়ে ইয়ান রীতিমত হুলুস্থুল লাগিয়ে দিল। নিজেকে প্রফেট দাবি করে প্রচার করতে লাগলো কেয়ামত নাকি ঘনিয়ে আসছে। যীশু খ্রীস্টের দুনিয়ায় ফিরে আসার সময় হয়েছে। মুন্সটারকে ঘোষণা করলো নতুন জেরুজালেম হিসেবে। এখান থেকে নাকি বাকি পৃথিবী জয়ের যাত্রা শুরু হবে। গরু-বাছুর চরানো সরল-সহজ মুন্সটারবাসী চতুর ইয়ানের এইসব ভুং চুং জাতীয় কথাবার্তা মচমচে রুটির মতই গোগ্রাসে গিলল।
আর এই সুযোগে ইয়ান ঢালাওভাবে অ্যানাব্যাপ্টিজম-এর প্রচার চালাতে লাগলো। অ্যানাব্যাপ্টিজম খ্রীস্ট ধর্মের একটা কড়া ধাঁচের ধারা। যে ধারা ছিল ক্যাথলিক মতের ঘোর বিরোধী। জনমতের জোরে সে সময়ের ক্যাথলিক বিশপ, ফ্রাঞ্জ ফন ওয়ালডেক-কে টশকে দিয়ে মুন্সটারের রাজা বনে বসলো। তলে তলে চলতে থাকলো লোকের টাকা আর সম্পত্তি ক্রোড় করে নেয়া। বাইবেল বাদে সব বই পুড়িয়ে দেয়া, ক্যাথলিকদের জোর করে ব্যাপ্টাইজ করা নয়তো গর্দান নেয়া- এ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। ওদিকে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকলো পাল্লা দিয়ে। মোট কথা, চারিদিকে তখন ত্রাসের রাজত্ব।
পরিস্থিতি যখন তুঙ্গে, তখন সেই নির্বাসিত বিশপ ফ্রাঞ্জ দলবল নিয়ে আচমকাই মুন্সটার আক্রমন করে বসলো। ইয়ান তার শিষ্য-সাগরেদ সমেত ধরা পড়লো হাতেনাতে। টেনে হিঁচড়ে তাদের আনা হল শহরের সদর বাজারের মাঝখানটায়। সবার সামনে লোহার শিক আগুন গরম করে তাই দিয়ে খুঁচিয়ে মারা হল ভয়ংকরভাবে। এখানেই শেষ না। জিভ কেটে আগুন ধরিয়ে দেয়া হল গায়ে। ইয়ান আর তার দুই সঙ্গী ভূত হয়ে গেলে খাঁচায় পুরে টাঙ্গিয়ে রাখা হল সেন্ট ল্যামবার্ট গির্জার গায়ে। সেখানেই তারা ঝুলে থাকলো পঞ্চাশ বছর। যেন লোকে চাইলেও এই ঘটনা ভুলতে না পারে। পরে এক সময়ে অবশ্য হাড়-গোড় সরিয়ে নেয়া হয়েছে সযত্নে। শুধু শূন্য খাঁচা তিনটা রয়ে গেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। শহরে নতুন আগুন্তকের চোখে প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে।
শির শির গা কাটা দেয়া গল্প শুনে মনে হল, বাতাসে যেন এখনও পোড়া মাংসের কটু গন্ধ ভাসছে। লিউকে তাড়া দিলাম, ‘এখান থেকে গেলে হয় না?’। লিউ হাসতে হাসতে মাথা নাড়লো, ‘তোমাকে এতো ডিটেইলস বলা ঠিক হয় নি। আর ঘ্রান তো আসছে ঐ বড় রেস্তোরাঁ থেকে। ভুরভুরে ভাজা মাংসের ঘ্রান’। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি এক দল ট্যুরিস্ট স্টেক আর রেড ওয়াইন নিয়ে বসেছে রেস্তোরাঁর শামিয়ানার নিচে। পাশ কাটিয়ে যেতে যেতে শুনলাম, গাইড ছোকরা গলা খাঁকরি দিয়ে বলছে, ‘এখন শোনাবো আমাদের মাথার উপর ঝুলে থাকা খাঁচাগুলোর রহস্য। সালটা পনেরোশ চৌত্রিশ...’। গল্প শুনে এদের স্টেক খাবার ইচ্ছে মরে না গেলে হয়।
জুন মাসের দীর্ঘ সন্ধ্যা ফুরোয় না সহজে। পড়ন্ত রোদের ঘোর লাগা আলোয় উঁচু গথিক দালানীর সারিকে অদ্ভূত দেখাতে থাকে। কোথাও বেমানান স্কাইস্ক্র্যাপার আকাশ ফুঁড়ে বেখাপ্পা গজিয়ে নেই। তাই বোধহয় এ শহরে অতীত আর ইতিহাস খুব আরামে জাঁকিয়ে বসতে পেরেছে বর্তমানের সমান্তরালে।
হঠাৎ লিউয়ের ইশারায় আঙুল বরাবর তাকালাম। দূরে ল্যাম্পপোস্টের থাম্বায় রাস্তার নেম-প্লেট ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়লো না। ‘ঐ যে ওদিকে’, লিউ এবার হাত ধরে টেনে নিয়ে এল ল্যাম্পপোস্টের খুব কাছে। ইতি-উতি চাইতেই খুব ছোট্ট একটা পুতুলের মত দেখলাম যেন। নেম-প্লেটের ওপর খুব সাবধানে দাঁড়িয়ে। বোতলের ছিপি দিয়ে বানানো পলকা শরীর। লিকলিকে হাত-পা। চিত্তির বিত্তির রঙের রাঙিয়ে তাকে বিচিত্র একটা চরিত্র দেয়া হয়েছে।
লিউ পেশাদার গাইডের সুরে এক নিঃশ্বাসে বলে গেল, ‘এই হল স্ট্রিট ইয়োগী। কেউ বলে কর্ক-মেনশ্যেন (Korkmännchen)। শহরের আনাচে কানাচে দেখা মেলে, যদি কেউ খুব করে খোঁজে’। খটমটে জার্মান কর্ক-মেনশ্যেনকে মোলায়েম বাংলায় ‘ছিপি বাবা’ বানিয়ে নিলাম মনে মনে। আজকে ষ্টেশনে বিয়ারের বোতল হাতে যে সব ছিপি বাবাদের ফুটপাথে গড়াতে দেখেছি, এই বাবা তাদের থেকে খানিকটা আলাদা। খুঁটিয়ে দেখতেই চোখে পড়লো বাবার এক হাতে ইউক্রেনের নীল-হলুদ পতাকা আর আর হাতে শান্তির প্রতীক জাতীয় সংকেত উঁচানো। এই ছিপি বাবার কাজ নাকি যোগাসনের নানান ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে নীরবে অহিংসা ঘোষনা করা।
ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরে এক শিল্পীর হাত ধরে বেশ বছর খানেক আগে ছিপি বাবাদের যাত্রা শুরু। তাই দেখে ‘জোসেফ ফুস’ নামের এক যোগব্যায়ামের শিক্ষক বার্লিনে রাতের আঁধারে ল্যামপোস্ট বেয়ে বেয়ে উঠে ছিপি বাবা বসিয়ে রেখে আবার চুপিসারে সরে যেত। লন্ডনের ছিপি বাবারা এভাবেই আস্তে বার্লিন, তারপর বার্লিন ছেড়ে মুন্সটার, এভাবে গোটা জার্মানিতে ছড়িয়ে পড়েছে। আর গজিয়েছে অনেক অনেক জোসেফ ফুস।
ফুস ভাইয়ের মত পাইপ বেয়ে উঠে একটা দেশি ছিপি বাবা দাঁড় করিয়ে রাখতে মন চাইছে খুব। বাবার পরনে থাকবে চেক লুঙ্গী, স্যান্ড গেঞ্জী আর মাথায় লাল গামছা। তার ভেতর বাবা-বাবার বদলে চাষী-মাঝি ভাব বেশি থাকবে। সবাইকে যে অহিংসা ছড়ানোর গুরুভার নিতে হবে, এমন তো কথা নেই। লিউকে পাগলামি আইডিয়াটা বলতেই সে লুফে নিয়ে হেসে ফেলল আর জানালো আর কোন ফুটপাথে নাকি সে এক ছিপি বাবাকে স্কেটবোর্ডে চড়ে ‘কুল-ব্রো’ সেজে থাকতে দেখেছে। আবার আর কোথায় যেন আরেক বাবা ল্যাম্পপোস্টে বসে ছিপ ফেলে মাছ ধরছে। ছিপি বাবারা এ শহরে নির্মল বিনোদনের খোরাক।
লিউ আর আমি গাড়িবিহীন চওড়া রাস্তা ধরে ইচ্ছেমত ঘুরছি। ডাউন টাউনের এদিকটা ফ্যাশন স্ট্রিট। দুই পাশে নামী-দামী দোকানের পশরা। স্বচ্ছ কাঁচের ওপাশে বিচিত্র ছাটের পোশাকে ম্যানিকুইন দাঁড়িয়ে নিশ্চল। প্রাইস ট্যাগ দেখে চোখ কপালে ওঠার যোগাড়। তার চেয়ে বিনে পয়সায় শহর ঘুরে দেখা ভাল। ম্যানিকুইনের ন্যাড়া মাথা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সন্ধ্যা নামা ঘোলাটে দিগন্তে থাকালাম। দিগন্তের দেখা মিলল না। সুউঁচ্চ ধারালো গথিক দেয়াল দিগন্ত আগলে রয়েছে প্রহরীর মত। লিউকে এই দালানের নাম জিজ্ঞেস করতে সে সল্টেড ক্র্যাকার্স কামড় দিল যেন। অন্তত তেমনই শোনালো। এর নাম ক্রামারআমট্হাউস (Krameramtshaus)। আরেকবার বলতে গেলে জিভে কামড় খেয়ে বিচ্ছিরি কান্ড হবে।
এই রাজকীয় টাউন হলের একটা ইতিহাস আছে। এখানে ষোলশ আটচল্লিশের দিকে একটা শান্তিচুক্তি হয়েছিল। চুক্তির মধ্য দিয়ে আশি বছর ধরে চলা যুদ্ধের ইতি টানা হয়। তখন ডাচ মারছে স্প্যানিশদের তো ফ্রেঞ্চরা ধাওয়া করছে রোমান সাম্রাজ্য। ওদিকে যুদ্ধের যাঁতাকলে পড়ে ততদিনে মিলিয়ন মিলিয়ন লোকের জান খতম অলরেডি। শান্তিচুক্তি না হলে অশান্তির যুদ্ধটা চলতেই থাকতো। মানব সভ্যতার ইতিহাস মানেই ঢাল-তলোয়ারের ঝনঝনানি আর ঘোড়ার পিঠ থেকে কাটা মুন্ডু গড়িয়ে পড়া।
সূর্যটাও কাটা মুন্ডুর মতই ক্রামারআমট্হাউসের ওপাশে গড়িয়ে পড়েছে আলগোছে। দূর থেকে সেন্ট পল গির্জার প্রকান্ড ঘন্টা আট বার বেজে জানিয়ে দিল সময়টা। আজকের বিনে পয়সার ট্যুর গাইড, লিউয়ের কাছ থেকে বিদায় নিতে হল। সে খালি হাতে ছাড়ল না। এক বাক্স সুইস চকলেট গছিয়ে দিল। আর জড়িয়ে ধরে শক্ত করে চাপ।
চকলেটের বাক্স বগলে বাস-স্টপ বরাবর পা চালালাম। কিন্তু চোখ থাকলো ল্যাম্পপোস্টের ডগায়। মুন্সটার শহরের ছিপি বাবাদের কাউকে যদি আবার চোখে পড়ে। (সমাপ্ত)
-ডঃ রিম সাবরিনা জাহান সরকার
মিউনিখ, জার্মানি
ছবি কৃতজ্ঞতা, লেখক