somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাঠ্যকীর্তির লীলাকীর্তন

২১ শে জানুয়ারি, ২০১০ ভোর ৪:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাল্যবেলায় আর সবার মত আমারও কোনরকম পঠনপ্রীতি ছিল না। থাকার কোন যৌক্তিকতাও নেই। বরং অল্প আচেঁ (শর্টকার্ট ওয়ে) কিভাবে এই বৈতরনী পার করে ফেলা যায় এ নিয়ে থাকত দিনভর নানাবিধ “৩০ দিনে ইংরেজী শেখা” টাইপ পালাবদল পরিকল্পনা। এতে বন্ধুসমীপেষু মুমিতের স্বেচ্ছাচারী সহযোগীতা ছিল ঝেড়ে কৃতজ্ঞতা জানানোর মত সবর্দা প্রত্যাশিত। পড়াশোনার মত বোরিং একটা ব্যাপারকে কিভাবে পাশ কাটিয়ে সহজেই পরীক্ষায় ভাল ফলাফল তুলে ফেলা যায় এ নিয়ে উল্লেখ করার মত আমাদের অনেক সংবেদনশীল ঘটনাও আছে। আর এসব ছলচাতুরির পিছনে মুল ইন্ধন যুগিয়েছিল তখনকার দুরন্তপনা বয়স। বয়সের একটা ঘোর থাকে। কলেজের প্রথম দিনগুলিতে আমাদের যেমন অন্যতম ঘোর ছিল মেয়ে সংক্রান্ত, তেমনি বাল্যবেলায় ছিল “এড়িয়ে চলা” সংক্রান্ত। কিন্তু মাথায় “জিনিস” একটু কম থাকার কারনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের পরিকল্পনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হত।

ছোটবেলা থেকেই পঠনবিষয়ক কোন উপদেশ শুনলে চরম বিরক্তি বোধ করতাম। বাবার বন্ধুগোছের একজন একবার “ড: মো শহীদুল্লাহ” সাহেবের মত ভাব ধরে গম্ভীরভাবে উপদেশ দিচ্ছিলেন, “শোন বাবারা, জ্ঞান অর্জনের কোন শর্টকার্ট পদ্ধতি নাই, কৃষ্ঠ সাধনার মধ্য দিয়েই তা অর্জন করতে হয়, বুঝলা?”। তখন থেকেই এই কথামৃত ভুল প্রমানের জন্য উঠে-পড়ে লেগেছিলাম। “বাবার বন্ধুবরের উপদেশ নিপাত যাক” চিরকুট লিখে কালিমন্দিরের চরনতলায় রেখে দিয়ে এসেছিলাম পরদিন রাতে।

কোন এক রূপকথার গল্পে পড়েছিলাম, চেনাগোবরের মধ্যে বিদ্যাপাতাকে (এক ধরনের বিশেষ পাতা) চুবিয়ে কোন বইয়ের মলাটের ভেতরে রাখলে নাকি সেই বইয়ের সব তথ্য পেইজ নম্বরসহ মুখস্থ হয়ে যায়। প্রমানস্বরূপ একটা ছেলের ছবিসহ বর্ননাও দেয়া ছিল বইটিতে। ছবিসহ বর্নণা দেখে আমাদের বিশ্বাস আরও পাকাপোক্ত হয়ে গেল। আর যায় কোথায়! ঔষুধ ইম্লিমেন্টেশনে নেমে পড়লাম। তার আগে আমরা দুই বন্ধু অনেক স্টাডির পর চিন্তা করে দেখলাম, যেহেতু পশুবর্জ্যের থেকে মনুষ্যবজ্যের মধ্যে সারের মাত্রার পরিমাণ বেশি থাকার কথা, তাই মনুষ্যবর্জ্যই ব্যবহার করাটা বেশি ফলদায়ক হবে। চিন্তার্জিত লজিকে নিজেই নিজেদেরকে বাহবা দিতে লাগলাম। তুমুল উচ্ছাস নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লাম বিদ্যাপত্র সংগ্রহে। পরে মালিপাড়ার তলাবিহীন “প্রাকৃতিক কর্মের গোডাউন” এর নিচে গিয়ে নাক-মুখ চেঁপে ২৮টি বিদ্যাপত্র টাটকা মলে চুবিয়ে বীরদর্পে “যুদ্ধ জয়ের আনন্দ” নিয়ে বেরিয়ে আসলাম খোলা ওয়াশরুম থেকে। পরে সেগুলো সবার অগোচরে তিনদিন চালে শুকিয়ে গুনে দেখলাম কিভাবে জানি ২৮, ২৫-এ কনভার্ট হয়ে গিয়েছে। যা হোক, তারপর ভবদেবতার যাতে চাপ্টার খুজেঁ পেতে অসুবিধে না হয়, সেজন্য বিদ্যাপত্রগুলো মলাটের ভেতর না রেখে জটিল চাপ্টারের ভেতরে ভেতরে ব্ল্যাকটিপ দিয়ে আটকিয়ে রাখলাম। সর্বসাকুল্যে ২৮টি চাপ্টারের জন্য ২৮টি বিদ্যাপত্রের ব্যবস্থা করলেও শুকানোর সময় ৩টি হারিয়ে যাওয়াতে কিছুটা মনক্ষুন্নও হয়েছিলাম সেদিন। পরে সে দু:খ ঝেড়ে ফেলে, সহজ অটোমেটিক ওয়েতে বিদ্যার্জনের অভিপ্রায় নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম কিছুদিন। কিন্তু দু:খের বিষয়, আমাদের ভাবনায়-এই অব্যর্থ পরিকল্পনাটি আমাদের ক্ষেত্রে কেন সেদিন কোন কাজে আসেনি, সেইটা আমরা এখনও কোনভাবেই বুঝে উঠতে পারিনা।

ক’মাস পর খরব পেলাম বড়বাজারের হাটে প্রতি শুক্রবার খুব বড়মাপের এক জোতিষী বসে। তিনি পানি পড়া দিয়ে সকল “গতি নাই” সমস্যারও শতভাগ কার্যকরী সমাধান করে দিতে পারেন। আমরা আর কালক্ষেপন না করে “এতদিনে স্বর্নকাঠি বাড়ির উঠোনে…” মনে করে উনার দর্শন লাভের জন্য ঘোষ দিয়ে আগাম এপয়েন্টমেন্ট দিয়ে রাখলাম। তো উনার আশ্রমে যাওয়ার পর এক আলো-আধাঁরী পরিবেশে গুরুজী আমাদের দিকে একনজর তাকিয়ে গুরু-গম্ভীর মুখে বলে উঠলেন, “তোরা কি চাস, সমস্যার বৃত্তান্ত কি, যথাশীঘ্র বলে ফেল??” ভয়ে ভয়ে বললাম. সামান্য কেমিস্ট্রি, সামান্য ভুগোল, বেশি বেশি ফিজিক্স, আর কিঞ্চিত এলজেব্রা সমস্যা, তবে এলজেব্রার ১০ম প্রশ্নমালার ২২ আর ২৩ নম্বরটায় সবচেয়ে বেশি সমস্যা। কথাটা শুনেই গুরুজী দাতঁ-মুখ খিচিয়ে, রক্তবর্ন চোখে, থু-থু ছিটিয়ে সেইযে মর্ত্যকাপানোঁ একখান জটিল ধমক দিলেন, আমরা আর পিছন না ফিরে লম্বা এক দৌড় দিলাম, পরে আবিষ্কার করি এক দৌড়ে আমরা দুজনেই বইসমেত বাড়ির পড়ার ঘরে, আর দুই হাতে দুইটা করে বই।

পরে আর উপায়ন্তর না দেখে ভবদেবতার সরাসরি আশীর্বাদ লাভের উপায় খুজতে লাগলাম। মা কোন একদিন বলেছিলেন স্বরস্বতী পুজোর দিন সুর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পড়াশোনা করলে সারাবছর নাকি খুব ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। কথাটা শুনে চোখ-মুখ আনন্দে ঝলসে উঠল। এত সহজ একটা ওয়ে, আর এতদিন আমরা ঝানতামি না!! ওইদিন থেকেই মাতৃশ্রদ্ধা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেল। তুমুল আগ্রহ নিয়ে পুজোর দিনের অপেক্ষা করতে লাগলাম। পুজোর দিন আসামাত্রই দরজা বন্ধ করে কাচাঁ ভোর থেকেই শেলফে সিরিয়াল করে সাজিয়ে রাখা গল্পের বই একে একে পড়তে শুরু করে দিলাম। আর একটু পর পর স্বরস্বতীর ফটো ছুয়ে মন উজার করে প্রার্থনা করতে লাগলাম। সূর্য ডোবার কাছাকাছি সময়ে তিন গোয়েন্দা সিরিজের ১২তম খন্ডটি শেষ করে ফেলতেছি প্রায়, এমন সময় পুজো থেকে মা ঘরে এসে ঢুকে আমার আয়োজন দেখে জিজ্ঞেস করলেন, “কিরে এত গল্পের বই?” আমি আমতা আমতা করে বললাম, “তুমি না বলেছিলে….”। মা মুচকি হেসে বললেন, “সে তো আমি বলেছিলাম পাঠ্যবইয়ের কথা। তোর পরীক্ষায় কি তিন গোয়েন্দা থেকে প্রশ্ন আসবে, নাকি??” আমি তখন টের পেলাম আমার ভ্রম্মতালু দিয়ে অদৃশ্য ধোঁয়ার মত কিছু নির্গত হচ্ছে। চান্দির উত্তাপে মাথার চুল পর্যন্ত পুড়ে পাওয়ার গন্ধও স্পস্ট টের পেতে লাগলাম, আমি।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১০ সকাল ১০:৫৩
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×