somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতৃপ্ত প্রতিশোধ (পর্ব-১)

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তাপস বাবু তার রুটিনমাফিক ঝামেলা থেকে আর পরিত্রান পাচ্ছেন না কোনভাবেই। ঘরে এখনও রান্না বসানো হয়নি। কারন কেয়ারটেকার এখনও এসে পৌছায়নি। গতকালও বাজারের একটি হোটেল থেকে খেয়ে আসতে হয়েছে। ডাল-মাংস ভুনা নামের গ্রামের যে ঐতিহ্যবাহী খাদ্যটি তিনি গতকাল গলাধ:করন করেছেন তা এখনও জানান দিচ্ছে। পেটে ক্ষীন ব্যথা নিয়ে টেবিলে বসে আছেন। ফুড-পয়জনিং লক্ষন মনে হচ্ছে। গতানুগতিকতার বাইরে শারীরিক যন্ত্রনা ভুলে থাকবার সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে মস্তিষ্ককে সার্বক্ষনিক ব্যস্ত রাখা। অথবা উত্তেজক কিছু উপভোগ করা। তাপস বাবু প্রথম টনিককেই বেছে নিলেন। নিউরনগুলোকে সজীব করার জন্য এখন একটি নতুন গল্প সাজিয়ে নেওয়া যায়। প্রথম আউটলাইনটা গড়তেই ভাবতে হয় গভীরভাবে। কোন নতুন গল্পের প্রাথমিক প্লাটফরমটা দাড়িয়ে গেলেই বাকিটুকু অবাধ স্রোতপ্রবাহের মত এমনিতেই অগ্রসর হতে থাকে।

তাপস বাবু এই গ্রামে মাত্র কদিন হল বেড়াতে এসেছেন। ঠিক বেড়ানোও না। উদ্দেশ্য নিয়ে আসলে এটাকে সবসময় বেড়ানো বলে চালিয়ে দেওয়া যায় না। নিরিবিলি পরিবেশে কয়েকটি গল্প লেখার উদ্দেশ্যই আসার মুল কারন। গ্রামের এক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নিজেই জনমানবশুন্য এই সুন্দর বাংলোতে থাকার সব বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন। দেখাশোনার জন্য একজন কেয়ারটেকারকে দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু লোকটি কাজে আসছে অনিয়মিতভাবে। কাল রাতেও আসেনি। আজ তো এখনও খবর নেই। আজ না আসলে ঐ হোটেলের ডাল-মাংস ভুনা আবার খেতে হবে কিনা কে জানে! আর তো তেমন ভাল কোন হোটেলও নেই এখানে।

একটি আধো-ভৌতিক গল্পের প্লাটফরম দাড়ঁ করাতে চেষ্টা করছেন তাপস বাবু। জঙ্গলামত এই পুরনো বাংলোয় নিরিবিলি পরিবেশটা মনে হয় এই জেনরির জন্যই উপযুক্ত। তাপস বাবু মুস্তষ্ককে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছেন। গল্পের পরিমন্ডলটি সাজিয়ে নিচ্ছেন একটু একটু করে। এখনও পেটের ক্ষীন ব্যথাটিকে তাড়ানো যাচ্ছে না। বরং তীব্র আকার ধারন করছে ক্রমাগত। পেটে চেপে ধরে থাকলেন কিছুক্ষন। কিছুটা প্রশান্তি লাগছে এখন।

তাপস বাবু পাশের রুমের বুক শেলফের কাছে গেলেন। সবগুলো বইই পুরনো। প্যারা-নরমাল একটিভিটিজ নিয়ে একটি বই পাওয়া গেল - আর্নেস্ট কটমের লিখা। আগেও একবার পড়েছিলেন বইটি। আবারও পড়তে ইচ্ছে করছে। বইটি হাতে নিয়ে টেবিলে আসলেন। জানালা খোলা, হু হু করে বাতাস আসছে জানালা দিয়ে। একটু শীত শীতও করছে। তবু জানালা বন্ধ করতে ইচ্ছে করছে না। জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষন। আকাশে মেঘ জমেছে, বৃষ্টি হবে হয়তো আজ। এক ফালি চাদঁ বাশ-ঝাঁড়ের ফাক দিয়ে দেখা যাচ্ছে। চাদেঁর ম্লান আলোয় চারপামটা কেমন রহস্যময় লাগছে। ঝড়ো রাত্রিতে চারদিকটা কেমন গা ছমছম নিরবতা। বাতাসে গাছের পাতাগুলো হুলি খেলায় মেতে উঠেছে। এখন পেটের ব্যথাটা একটু কমেছে মনে হয়। যাক, বাচাঁ গেল। বাতাসের বেগ আরও বাড়া শুরু করল। বৃষ্টিও পড়তে লাগল অল্প অল্প। ইলেকট্রিসিটি চলে গেল হঠাৎ করে। রাত প্রায় ১২ টায় লোড-শেডিং হবার কথা না। ঝড়ের পুর্বাবাস বলেই বোধ হয় ইলেকট্রিসিটি চলে গেছে।

তাপস বাবু বিরক্তি ভাব নিয়ে মোমবাতি খুজতে লাগলেন। প্রায় এক সপ্তাহ হল এই বাংলোতে এসেছেন, এখনও কোথায় কি আছে মনে রাখতে পারছেন না। কেয়ারটেকার পরিমলই খুজে-টুজে দেয় সবকিছু। আর আজ সে না আসাতেই বোধ হয় এত অনাকাংখিত ঝামেলা তৈরি হচ্ছে। চুলার নিচে হাতড়ে হাতড়ে অবশেষে একটি মোমবাতি আর দেয়াশলাই পাওয়া গেল। তাপস বাবু মোমবাতি জালিয়ে টেবিলে এসে বসলেন। বইটা খুলতে গিয়ে দেখলেন বই প্রায় ভিজে গিয়েছে। শুধু বই না, পুরো টেবিলটাই বৃষ্টির পানিতে ভেজা। বিরক্তিবোধ চরমে গিয়ে উঠল। কাল পরিমল আসলে আচ্ছামত শাসাতে হবে ব্যাটাকে। তাপস বাবু জানালার ডালাটি বন্ধ করার জন্য টেবিল থেকে উঠতে গিয়ে কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইলেন। জানালার দিকে তাকাতে গিয়ে ভয়ের শীতল স্রোত বয়ে গেল শীড়দাড়া দিয়ে। একজোড়া বড় বড় চোখ তার দিকে একদৃষ্টিতে অপলক তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলে এই দুটি চোখ একজন মানুষকে পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

(চলবে)
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুহূর্ত কথাঃ সময়

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



সামুতে সবসময় দেখেছি, কেমন জানি ভালো ব্লগাররা ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়! যারা নিয়মিত লেখে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রচণ্ড নেগেটিভ স্বভাবের মানুষ। অন্যকে ক্রমাগত খোঁচাচ্ছে, গারবেজ গারবেজ বলে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×