দুনিয়ার সর্বাপেক্ষা অবহেলিত জনসমাজ হলো ব্যাচেলর সমাজ!
ধরুন কোনো এক ব্যাচেলর যুবকের প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, তারপরও ভদ্রতা করে সেই প্রেমিকা তাকে বিয়েতে নিমন্ত্রন করে না। কারন প্রেমিকার পিতার বারন। ভাবছেন যুবক প্রেমিকার বিয়েতে গন্ডগোল তৈরি করে বিয়ে ভেঙ্গে দিতে পারে এজন্য। নাহ, ব্যাচেলররা এমনিতেই নিরীহ প্রজাতীর প্রানী। বিশেষ করে যারা পরিবার ছেড়ে বহুদুরে মেস নামক স্থানে বাস করে। আসল কারনটা হলো, প্রেমিকার পিতা খুব ভালো করেই জানে যে উক্ত ব্যাচেলর প্রেমিক যদি তার সাথে আরও দশ-বারোটা ব্যাচেলর বন্ধুকে নিয়ে বিয়ে খেতে আসে তবে যতো বড় বাজেটের বিয়ে-শাদি ই হোক না ক্যানো, খাওয়ার টেবিলে ১০০% খাদ্য ঘাটতি দেখা দেবে!!
বছর তিনেক আগে আমি যে মেসে থাকতাম সেই মেস মালিকের বড় কন্যার বিয়ে ঠিক হলো। মেস মালিক বেশ বুদ্ধিমান ছিলেন, কায়দা করে ঈদের ৪র্থ দিন বিয়ের তারিখ ঠিক করলেন। আমাদেরকে মেসে অবস্থিত ব্যাচেলর সমাজকে সৌজন্যতা স্বরুপ দাওয়াত করলেন। সৌজন্যতা স্বরুপ বলছি কারন তিনি জানেন ঈদের ছুটিতে অধিকাংশ ছেলেরা বাড়িতিই থাকবে। আমার ধারনা মেস মালিক তার ব্যাচেলর লাইফে কখোনো মেসে ছিলেন না। তাই মেসে থাকা ব্যাচেলরদের সাইকোলজি বোঝেন নি।
ঈদের ৩য় দিন অর্থ্যাৎ বিয়ের একদিন আগেই আমরা ৫-৭ জন মেসে এসে হাজির! যেহেতু বুয়ার ছুটি শেষ হয়নি, সেহেতু আমরা স্ব দল-বলে মালিকের মেয়ের বিয়েকে নিচের মেয়ের বিয়ে মনে করে মহা আনন্দে খানা পিনা করতে লাগলাম। আমরা ৫-৭ জন আগের দিন রাতে তাদের সাথে খেলাম! পরদিন সকালে আরও ৪-৫ জন ব্যাচেলর আমাদের সাথে যোগ দিলো। আমরা সকালেও তাদের সাথে খেলাম! তারপর এলো দুপুরে আসল দাওয়াতি খানাপিনা। অনেক সময় দেখা এরকম বিয়ে বাড়ীতে খাবার পরিবেশন কারীরা মেহমানদের বলে, "খাওয়ার সময় লজ্জা করবেন না, যা লাগে তুলে নেবেন"। আমরা এমনভাবে খাওয়া-দাওয়া করেছি যে, আমাদের খাওয়ার সময় কাউকে এরকম কোনো কথা বলার সুজগ ই দেইনি! মেস মালিক আমাদের খাওয়া দাওয়া খুব মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষন করলেন। তারপর কি যে হলো, সন্ধ্যাবেলা থেকে আর খেতে ডাকলেন না। হয়তো আমাদের দুপুরের খাওয়া দেখে আশংকা করেছিলেন যে, এই ব্যাচেলর সমাজকে রাতে আরেকবেলা খাওয়াতে গেলে তার ভিটা-বাড়ী বন্ধক রাখতে হতে পারে!
এজন্যই ব্যাচেলর সমাজ হলো সর্বাপেক্ষা অবহেলিত জনসমাজ।
আমরা বেশি বেশি বিয়ে চাই, দাওয়াত চাই, বাঁচার মতো বাঁচতে চাই!
সুতরাং গোটা জনসমাজের প্রতি আমরা ব্যাচেলর সমাজের আকুল আবেদন এই যে, এখন থেকে প্রতিটি প্রেমিকার বিয়েতে তার প্রেমিক এবং
প্রেমিকের ব্যাচেলর বন্ধুদের নিমন্ত্রন করা বাধ্যতামুলক করা হোক!