যুথী গান গাওয়ার চেষ্টা করছে। গান গাইলে নকি রাগ নিয়ন্ত্রন করা যায়। তার রাগ নিয়ন্ত্রন করা প্রয়োজন, কারন সে পর্যাপ্ত রেগে আছে। যুথীর গলা যথেষ্ট সুরেলা হলেও তার গান শুনতে এই মুহূর্তে বিদঘুটে লাগছে, অনেকটা এশিয়া মহাদেশের কুক্ষ্যাত শিল্পী ইভা রহমানের মতো!
রাগের প্রধান কারন ঈশান। আজ তাদের ১ম বিবাহ বাষিকী এবং আজও তিনি মহানন্দে অফিস নামক একটি স্থানে পড়ে আছেন। হয়তো আজকের দিনটাও ভুলে গেছে। আজ তাকে ১০ টন ওজনের ১টা উচিৎ শিক্ষা দেয়া হবে। এইসব চিন্তা করতে করতে যুথী মসুর ডালের মধ্যে পাত্রের সবটুকু মরিচের গুড়া ঢেলে দেয়। এই ডাল ইশান মহাআনন্দে খাওয়ার পর চিৎকার করে দমকল ডাকতে থাকবে। ইশান.. তুমি এইবার বুঝবে "কত ধানে, কত চাল.. আর কত মরিচে কত ঝাল"...!!
রাত ১০টায় ইশান ঘরে ফিরলো। যুথী তার স্বভাব মতো বিছানায় উল্টো মুখ হয়ে শুয়ে পড়লো। যুথী জানে এই মুহূর্তে ইশান যেটা করবে তা হলো অতি সস্তা কোনো গিফট্ দিয়ে রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা। ইশান আদুরে গলায় ডাকলো,
ওলে আমার ময়না, ঘুঘু, টিয়া, কইতর, কাউয়া.. রাগ করেছো বুঝি?
এই অংশটা যুথীর অনেক প্রিয় হলেও সে কিছু বলছে না।
ইশান পকেট থেকে দু টুকরো কাগজ যুথীর সামনে ধরলো আর তৎক্ষনাত
যুথী লাফ দিয়ে উঠলো..
"কুয়াকাটা"...??? আমরা কবে যাচ্ছি..??
আনন্দে তার চোখ ছলছল করে ওঠে। বিয়ের পর হানিমুন হচ্ছে তাও আবার ১বছর পর...!! ইশান জামা কাপড় ছাড়তে ছাড়তে বললো,
-৭দিন ছুটির জন্য আবেদন করেছিলাম। তাই কাজগুলো গুছিয়ে নিতে একটু দেরী হয়ে গেলো। কাল সকাল ১০টায় গাড়ী। সব কিছু গুছিয়ে ফেলো। ইটস্ আ উইকেন্ড...
যুথী ইশানের ডান বাহু ধরে যথেষ্ট ন্যাকা ন্যাকা গলায় বললো,
-ওলে, আমার গুল্টু মুল্টু.. ট্যাং ট্যাং.. গোছাগুছি পরে হবে আগে খাবে চলো। আজ তোমার প্রিয় করলা ভাজি, বাদাম ভর্তা, বেগুন ভাজি সব রেধেছি। মসুর ডাল টাও রেধেছিলাম তবে বিড়াল খেয়ে ফেলেছে।
১ জোড়া প্রানী মহা আনন্দে খেতে বসেছে।
একটু পর পর ই যুথীর খিল্ খিল্ করে হাসির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।
আজ রাতে তাদের ঘুম হবে না; হলেও সপ্নে দেখবে,
দুজন একি চাঁদরের নিচে জড়াজড়ি করে বালুকাবেলায় দাড়িয়ে আছে।
তাদের একদিকে সূর্য উদয় হচ্ছে, আরেকদিকে অস্ত যাচ্ছে...