রাগের ওপর নোবেল দেয়ার ব্যবস্থ্যা থাকলে, তা বোধ করি তুর্যই পেতো। কথায় কথায় রেগে যাওয়া তুর্যের জন্য পানি-পান্তার চেয়েও সস্তা। তবে এই মুহুর্তে সে রেগে আছে ২ জন মানুষের ওপর। এই ২জনকে সে দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করে। এই ২জন আর কেউ নয়; পদার্থ বিজ্ঞানের ২ কিংবদন্তি আইজ্যাক নিউটন এবং আইনস্টাইন।
এই ২জনের সুত্র মুখস্থ্য করতে করতে তার জীবনটা চিনিছাড়া পায়েস হয়ে গিয়েছে। তুর্যের মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় এদের চুলে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিতে। যেহেতু তা সম্ভব নয়, তাই সে পড়ার টেবিলে ২জনের ফটো রেখেছে। যখন রাগ বেশি বাড়ে, ছবিতে কলম দিয়ে খোঁচা মেড়ে রাগ কিছুটা কমিয়ে নেয়। সব বিজ্ঞানীরা কত মজার জিনিস আবিস্কার করেছে,
আর এই ২টা খালি আজাইরা সুত্র আবিস্কার করে, মাথার নাট-বল্টু আউলাই দিছে। > এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে তুর্য। তার অবচেতন মন সপ্ন দেখে।
যদি আইস্টাইন সুত্র আবিস্কার না করে লজেন্স আবিস্কার করতো,
যদি নিউটনের মাথায় আপেল না পড়ে নারকেল পড়তো,
এক গভীর জঙ্গলের মধ্যে পাথরের ওপর বসে আছে তুর্য। পড়নে মাত্র কিছু লতা পাতা। বেশ লজ্জা বোধ করছে সে। শত শত মানুষ জমা হয়েছে; সবার পড়নেই লতা পাতা। কয়েকজন আগুন জ্বালিয়ে, তার চারপাশে ঘুরে নাচা-নাচি করছে। আবার একধরনের শব্দও করছে.. জুম্বা.. জুম্বা..
মনে হচ্ছে কোনো উৎসব চলছে, এবং সে উৎসব যে তুর্যকে ঘিরে তাও বোঝা যাচ্ছে। তার কিছু সামনে একটি মেয়েকে সাজানো হয়েছে, লতাপাতা দিয়ে। আশ্চর্য্য এই মেয়েতো জুলি। তার ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে।
যার ওপর তুর্য সহ হাজারো ছেলেরা রাতদিন ক্রাশ খায়। তুর্য বুঝতে পারলো তার সাথে জুলির বিয়ে হচ্ছে। তুর্য খুশিতে কুলুকুলু হয়ে গেলো।
এই মেয়ের সাথে সে জঙ্গল কেনো, সাহারা মরুভুমিতেও বাস করতে পারবে।
বিয়ের সময় হয়ে গেলো। তুর্য এগিয়ে গিয়ে জুলির পাশে দাড়ালো।
হঠ্যাৎ তুর্য অনুভব করলো, পেছন থেকে কেউ একজন তাকে টানছে। তুর্য পেছন ফিরে দেখলো, ১টা ছাগল তার পড়নের লতা-পাতা বেশ তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে, আর অবশিষ্ট লতাপাতা টুকু নিয়ে টানাটানি করছে। চারদিকে সব মানুষ হাসতে লাগলো। তুর্য ইজ্জত বাচানোর জন্য প্রানপনে ছাগলের সাথে টানাটানি করতে লাগলো। পরিশেষে ছাগল জয়ী হলো। তুর্য মাটিতে চিৎপটা্ং হয়ে পড়ে যায়।
কি ভয়ংকর দৃশ্য! তুর্য নগ্ন হয়ে মাটিতে পড়ে আছে,
আর জুলিসহ সব মানুষগুলো হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে। তুর্য ভ্যাঁ করে কেদে ফেললো। তার কান্না যতোই বাড়ে হাসির শব্দও ততোই বাড়তে থাকে।
তুর্যের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘামে সমস্ত শরীর ভিজে গিয়েছে।
ঢক্ ঢক্ করে ১ গ্লাস পানি খেয়ে টেবিলে বসে পড়ে সে।
আইনস্টাইন আর নিউটনের ছবি দুটো দেখে হঠ্যাৎ করে প্রবল সম্মান আর মমতা অনুভব করে তুর্য। সে পদার্থ বিজ্ঞান বইটা খুলে পড়তে বসে; সামনেই তো ফাইনাল পরীক্ষা।
আশ্চর্য্য পদার্থ বিজ্ঞান পড়তে তুর্যের মোটেই খারাপ লাগছে না।
সাহেদুল হাসান