আমাদের জীবনে একটা ভুল ধারনা/কুসংস্কার হল, লোকে কি বলবে? যদি আমি নিজের মতো কিছু করি।
_=============
আমরা জীবনের শুরুতেই একটা শিক্ষা পেয়ে থাকি, আমাদের মুরুব্বীরা দিয়ে থাকে, আমাদের পরিবেশ দেয়, আমরা নিজে থেকেই গ্রহন করে নিই।
#আমি উমুক কাজটা করলে ভালো হবে তো? আচ্ছা লোকে কি বলবে?
জন্মের পর থেকেই একটা শিশুকে শিক্ষা দেয়া হয় এই আজব কুসংস্কারটি।
১) বাবা সন্তানকে বলে বাবু ভালো করে পড়া লেখা করে ডাক্তার হতে হবে। নয়তো মানুষকে কি করে বলবো, আমার খোকা ভালো?
পড়া লেখা কর।
২)স্কুলে ভালো নাম্বার না পেলে /রোল প্রথম না হলে বাবা মা বলে, ছি। এমন রেজাল্ট মানুষকে মুখ দেখানো যাবেনা। লোকে কি বলবে?
৩)এস এস সি তে গোল্ডেন না পেলে সবাই কি বলবে? ভালো কলেজে ভর্তি না হতে পারলে কি বলবে? লোকের সামনে মান সম্মান থাকবেতো?
৪)ভালো কলেজ/ভার্সিটিতে ভর্তি হতে না পারলে, মানুষ কি বলবে?অবশেষে পড়া লেখা শেষ। চাকরি না পেলে মানুষ কি বলবে? সরকারি চাকরি না পেলে মানুষ কি বলবে?আরো নানান কথা।
৫)আরে তুমি ব্যবসা করতে চাও? ছি ছি ছি
।পড়া লেখা করে ব্যবসা করলে লোকে কি বলবে?
লোকে বলবে তুমি ভালো করনি, লেখাপড়া তে তাই ব্যবসা করছ। তোমার চাকরির যোগ্যতা নাই।
#সেই একটা প্রশ্ন কানে লাগে, মনে লাগে লোকে কি বলবে?
#আসলে এই এতো বছর, এতো সময় কাটে লোকে কিছুই বলেনা। তুমি হাসপাতালে রোগ নিয়ে ভর্তি হও।
তুমি অভাবে ভোগে অসহায় হও। তুমি নানান জটিল বিপদের সম্মুখীন হও। কোথায় সেই বিপদের দিনে তো লোকে কিছু বলেনা?সেই লোক গুলো কোথায় যায় তখন? এরা কারা যারা তোমাকে সারাদিন পর্যবেক্ষন করছে বলে তুমি ভাবো।নিজের কাজ রেখে কে তোমাকে দেখে?আসলে তুমি যে ভাবো, লোকে তোমাকে নিয়ে ভাবে। বা তুমি ভুল করছ নাকি সঠিক এটা লোকে দেখে। এই ভাবনাটাই ভুল। যদি সঠিক হতো, তাহলে তোমার বিপদের দিনেও কেউ না কেউ আসতো।কোথায় কেউ তো আসেনা।আসলে এতো যুগ ধরে তুমি একটা ভুল ভাবনাতে বেঁচে আছ।লোকে তোমাকে কি বলবে।এই ধারনাটাই ছিলো ভুল। তুমি একটা কুসংস্কার এতোদিন লালন করেছো নিজের অন্তরে।
লোকে নিজের জীবনের এতো জামেলা নিয়েই
তাল পায়না। তোমাকে পর্যবেক্ষন করার সময় কোথায় তাদের?যদি থাকতোই তাহলে তোমার সব সময়ের সাথে থাকতো। লোকে কি বলবে? লোকে কিছুই বলেনি।কোনদিন বলবেও না।
তারা কিছুই বলেনা। তাদের এতো সময় নেই তোমাকে নিয়ে ভাবনার। তারা কাউকে নিয়েই ভাবেনা। তারা শুধু খোঁচা দিতে জানে। জানে গিবত করতে। লোকে কিছুই বলেনা। ভালো কথাতো বলেইনা।তাই লোকের মুখে না তাকিয়ে সেটা কর। যেটা তুমি পারবে। যে কাজ তোমার কাছে ভালো মনে হয়।লোকে কোনদিন তোমাকে বলেনি। তুমি নিজেই ভুল ভাবনাতে ছিলে এতদিন। তাই আজ থেকেই সেই ভুল ভাবনা মন থেকে ফেলে দাও।মন থেকে এই ভাবনা /কুসংস্কার ডিলেট করে দাও।লোকে তোমাকে কি বলবে। আবারো বলছি লোকে কিছুই বলবেনা।
তারা নিজের জামেলা নিজেরাই মিটাতে পারেনা।তোমাকে কি বলবে?লোকে নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকে। তাদের আসলে সময় নেই কাউকে নিয়ে ভাবার বা তারা ভাবতে চায়না।
তারা কারো বিপদ নিজের কাধে নিতে আগ্রহী না।তাহলে তুমি যে মনে কর, লোকে কি বলবে? আসলে তোমার ধারনা একেবারেই ভিত্তিহীন ও অমূলক। লোকে তোমাকে কিছুই বলবেনা। তারা তোমাকে নিয়ে চিন্তাও করেনা।অথচ তুমি সারাজীবন এই দুশ্চিন্তা করেছ, এই ভাবনাতে সময় নষ্ট করেছ, লোকে কি বলবে?আমি চিন্তা করে দেখলাম। বিশেষ করে ঢাকা, সহ বড় শহর গুলোতে এর উপস্থিতি প্রকট। আসলে আমরা এমন একটি বিষয়ে ভয়ের বস্তু বানিয়ে তুলেছি। যার কোন অস্তিত্ব দুনিয়াতে নাই।লোকে কি বলবে? আমিও ভাবতাম।এক সময় ভেবে দেখলাম লোকে কি আসলেই কিছু বলে?উত্তর পেয়ে গেলাম, না, তারা কিছুই বলেনা। কিছু লোক বিয়ে বাড়িতে বেশি খেতে লজ্জা পায়। ভাবে কেউ দেখছে। বিশেষ করে মেয়েরা। একদিন আমিই চিন্তা করলাম দেখিতো সামনের যে আছে কেউ কাউকে দেখে কি না? আসলে এটা বোকামি । কেউ দেখেনা।কারো দেখার সময় কোথায়?সবাই খাওয়ার তালে মশগুল। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।
আমার এলাকায় এক ছেলে মারা গেলো। বাসায় উঠার পথে। কেউ জানেনা কি হয়েছে। অথচ এলাকার মানুষ।
বুঝলাম কেউ দেখেনা।কেউ কিছুই জানেনা, তারা জানতে চায়না। তাহলে তুমি কি করছ, সেটা কি কাজ, না চাকরি, সেটা তাদের কি আসে যায়।
আসলে ভয়টা আমাদের নিজের তৈরি করা, ঠিক যেমন মরিচীকার মতো। নাই তবু ভয়।ভুতের ভয় যেমন হয়। ভুত নাই। তারপরেও অন্ধকার পথে আমার ভয় লাগে।কেন? কারন ভয়টা মনের ভিতরে প্রবেশ করে আছে।লোকে কি বলবে? এই ভয়টাও আমাদের মনে প্রবেশ করেছে ভুতের মতোই,। লোকে আসলে কিছুই ভাববে না আমি কি করলাম, কি করছি , কি খাই।আমি কি লেখা পড়া করে সরকারি চাকরি করলাম নাকি বেসরকারি নাকি কোন দোকানে পণ্য বিক্রেতা। তারা কিছু বলেও না।এসব দেখার সময় তাদের নাই। আমরাই ভয়ে থাকি।অদৃশ্য এক ভয়। ভুতের মতই ভয় এটা। আমাদের সমাজের সব মানুষকে শেষ করে দিলো এই ভয়টি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৯ রাত ১২:০৭