মহাকাশ সংস্থা ইসা (ESA) তাদের মঙ্গল মিশন ২০১৬ চূড়ান্ত করেছে । এই জন্য প্যারিসের থ্যালাস এলিনা স্পেসের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে । ইসা এবং রাশিয়ান স্পেস এজেন্সির যৌথ উদ্যোগে এক্সোমার্স প্রজেক্ট ২০১৬ ও ২০১৮ তে দুটি মিশন পরিচালনা করবে । মহাকাশ বিজ্ঞানের বর্তমানে যে প্রশ্নটি আলোচিত; মার্স বা মঙ্গল গ্রহে কি কোন প্রাণের অস্তিত্ব বিদ্যমান আছে কিনা ? এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই এই এক্সোমার্স মিশন ।
ছবিঃ ট্র্যাস গ্যাস অরবিটার (TGO)
মঙ্গল থেকে স্যাম্পল আনার জন্য এক্সোমার্স ল্যান্ডিং , রোবিং , খননকাজ ও ছিদ্র করার ক্ষেত্রে ইউরোপিয়ান প্রযুক্তিগত ক্ষমতার উন্নয়ন করবে ।প্রথম মিশন হবে মঙ্গলে ট্র্যাস গ্যাস অরবিট (TGO) ২০১৬ সালে যেটি মিথেন ও বায়ুমণ্ডলের অন্যান্য গ্যাস অনুসন্ধান করবে যেখানে হয়তো প্রাণের অস্তিত্ব বা ভৌগলিক গঠনের চিহ্ন থাকতে পারে ।
ছবিঃ ২০০৬ এ বার্লিনে এক্সোমার্স প্রোগ্রামের জন্য একটি রোভার মডেল ।
এছাড়াও এটি মঙ্গল পৃষ্টের এন্ট্রি , ডিসেন্ট অ্যান্ড ল্যান্ডিং ডেমোনেস্ট্রেটোর মডিউল (EDM) পাঠানোর মাধ্যমে ২০১৮ বা তার পরবর্তী মিশনের জন্য কি কি মূলপ্রযুক্তি পরিবর্তন আনতে হবে জানা যাবে ।
২০১৮ সালে মঙ্গলে একটি রোভার পাঠানো হবে যেটি প্রথম মঙ্গল পৃষ্ট দুই মিটার গভীর ছিদ্র করার ক্ষমতা থাকবে এবং ধারনা করা হয় দুই মিটার নিচে ঢাল রয়েছে যেটি মঙ্গল পৃষ্টের উত্তপ্ত অবস্থা বা রশ্মি ও অক্সিডেন্টের ক্ষতি থেকে জৈব উপকরণকে রক্ষা করে ।
ছবিঃ ২০০৭ সালে প্যারিস এয়ার শো তে পূর্ব পরীক্ষার জন্য নির্মান করা রোভার ।
২০১৮ মিশনে মঙ্গল পৃষ্টে অনুসন্ধানের জন্য বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি বহন করে নিয়ে যাবে ।
২০১৬ সালের মিশনের জন্য ইতিমধ্যে থ্যালেস এলিনা স্পেস ইতালি একটি মডিউল তৈরি করেছে যা সম্প্রতি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে কোম্পানির তুরিন ল্যাবরেটরিতে । TGO নির্মাণ করছে একি কোম্পানির ক্যানিস , ফ্রান্স-এ । জানুয়ারিতে প্রথম মিশন শুরু করার নয় মাস পর পৌঁছাবে মঙ্গলে এবং দ্বিতীয় মিশন শুরু হবে মে , ২০১৮ তে যা পৌঁছাবে ২০১৯ সালের প্রথম দিকে । এক্সোমার্স প্রজেক্টে রোভার , ইডিএম ল্যান্ডার , TGO কে বহন করতে ব্যাবহার করা হবে রাশিয়ান ভারি রকেট প্রোটোন । রাশিয়ান স্পেস এজেন্সি তিনটি শর্তে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে:
১। রাশিয়ান স্পেস এজেন্সি ( রসকসমস) দুটি প্রোটন বাহন বা রকেট অর্থায়ন করবে অংশীদারের জন্য ।
২। ট্র্যাস গ্যাস অরবিটার (TGO) দুটি রাশিয়ান সরঞ্জামাদি বহন করবে যা মূলত তৈরি করা হয়েছিলো ফোবোস গ্রান্টে (Fobos-Grunt) মিশনের জন্য । উল্লেখ্য রাশিয়ার এই মিশন ২০১১ সালে ব্যর্থ হয় ।
৩। গবেষণার সকল ফলাফল ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA) ও রাশিয়ান স্পেস এজেন্সির ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি বা মেধাসত্ব হিসেবে কপিরাইট থাকবে ।
যদিও ২০১৮ সালের মিশনের অর্থ যোগানের ব্যাপারে নির্দিষ্ট ধারণা নেই তারপরও ২০১৬ সালের মিশনে রাশিয়া তাদের পূর্বের ফোবস গ্রান্টের ক্ষতির জন্য ইনস্যুরেন্স থেকে প্রাপ্ত ৪০.৭ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে ।এছাড়া গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইসার নতুন সদস্য , পোল্যান্ড , রোমানিয়া ৭০ মিলিয়ন ইউরো অনুদান দিবে ঘোষণা দিয়েছে উক্ত এক্সোমার্স প্রোগ্রামের জন্য । এইসব মিশনের জন্য ল্যান্ডিং সাইট হিসেবে ২০০৭ সালে ৫ টি সম্ভাবনাময় স্থান নির্ধারিত হয়েছে:
১। মাওয়ার্থ ভ্যালিস
২।নিলি ফোসাই
৩। মেরিডিয়ানি প্ল্যানুম
৪। হোল্ডেন ক্র্যাটার ।
৫। গেল ক্র্যাটার ।
ছবিঃমাওয়ার্থ ভ্যালিস (Mawrth Vallis) যেখানে লুকিয়ে থাকতে পারে মঙ্গলের পানি প্রবাহের কোন ইতিহাস !
ছবিঃ উইকিপিডিয়া ।