somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিজে জানুন, অন্যকে জানান (বেশি দামে বিদেশি ওষুধের ফাঁদ)

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দেশে মানসম্পন্ন একই ওষুধ থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত একটি চক্র রোগীদের বিদেশি ওষুধ ধরিয়ে দিচ্ছে, যেমন খুশি বেশি দাম রেখে আরো অসহায় অবস্থায় ঠেলে দিচ্ছে তাদের। বড় বড় অনেক হাসপাতাল চিকিৎসা 'প্যাকেজের' আওতায় রোগীকে বিদেশি ওষুধ ব্যবহার করতে বাধ্য করে। দেখা গেছে, ওই বিদেশি ওষুধ শুধু হাসপাতালেই সরবরাহ করেছে চক্রটি, দোকানে তা পাওয়া যাচ্ছে না। রোগী বা তার পরিবার জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় খোঁজখবর না নিয়েই দ্বিগুণ বা তারও বেশি দামে ওষুধ কিনে নেয়।
কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে জানা গেছে, চক্রটির মূল টার্গেট থাকে দুরারোগ্য বা কঠিন রোগে আক্রান্ত রোগীরা। চক্রটি স্থানীয় কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের ওষুধের ক্ষেত্রেও ইচ্ছেমতো দাম আদায় করে থাকে। এ ক্ষেত্রে সরকারি কোনো নজরদারি না থাকায় রোগী ও তার পরিবার চিকিৎসার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়।
রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে হল্যান্ডের তৈরি ওমেগা ৩৬৯ নামের একটি ওষুধের দাম রাখা হয় ১৫৬২ টাকা, অথচ একই ওষুধের দাম রাজধানীর কলাবাগানের লাজ ফার্মায় নেওয়া হয় ১১৫০ টাকা। বাংলাদেশে তৈরি একটি প্রতিষ্ঠানের ইটোপসাইট নামের একটি ওষুধের দাম ল্যাবএইড হাসপাতালে রাখা হয় ৫৫০ টাকা, কিন্তু একই ওষুধের দাম ইউনাইটেড হাসপাতালে ধরা হয় মাত্র ৪০০ টাকা।
অধ্যাপক ফারুক বলেন, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পর্যবেক্ষণেও দেখা গেছে, একই প্রতিষ্ঠানের একই ওষুধের দাম একেক দোকানে একেক রকম রাখা হয়। বিদেশি ওষুধের ক্ষেত্রে এই সুযোগ খুব অস্বাভাবিকভাবে কাজে লাগায় বিশেষ চক্র। রোগী বা ওষুধের ভোক্তাদের পক্ষে ওষুধের দাম নির্ণয় বা যাচাই-বাছাই করার সুযোগ থাকে না। আবার মানসিক পরিস্থিতির কারণেও রোগীর পরিবার চিকিৎসাকালে ওষুধের দাম খুঁজতে যায় না।
অধ্যাপক ফারুক বলেন, দেশি ওষুধের বাজারকে সুসংহত করার জন্য আমাদের পদক্ষেপ আছে, তবে এ সুযোগে যাতে ওষুধের মান নিয়ে সমস্যা দেখা না দেয়, সে কারণে ভালো ভালো বিদেশি কিছু কম্পানির ওষুধ আমদানির বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব থাকা ভালো।
ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত বাবার কেমোথেরাপির জন্য আগাম খোঁজ নিতে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে যান রকিবুল আলম। একজন চিকিৎসক কাগজপত্র দেখে খরচের বিষয়ে মোটামুটি একটি ধারণা দেন রকিবকে। কেমোথেরাপির জন্য প্রযোজ্য বিদেশ থেকে আমদানি করা উন্নত ইনজেকশনের দাম সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া হয় তাঁকে। এরপর রকিব তাঁর এক বন্ধুর মাধ্যমে ওই ইনজেকশনের দামের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে অবাক হয়ে যান।

রকিব কালের কণ্ঠকে বলেন, ওই হাসপাতালে কেমোথেরাপির জন্য ব্যবহার করা হবে এমন এক প্যাকেজের ইনজেকশনের দাম দেখানো হয়েছিল ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। কিন্তু আমি অন্য একাধিক হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানলাম, আসলে ওই ওষুধের দাম (আমদানি খরচ ও আনুষঙ্গিকসহ) ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার বেশি নয়।

ওষুধ বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশের মতো এত বেশি ওষুধ তৈরি ও বাজারজাতের প্রবণতা বিশ্বের অন্য কোথাও নেই। ওষুধকে জীবন রক্ষাকারী পণ্য না ভেবে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী অন্য পণ্যের মতোই লাভজনক পণ্য হিসেবে বাণিজ্য করার লক্ষ্যে ওষুধের অনুমোদন নেয়। সরকারের তরফ থেকেও এর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত রোগী-চিকিৎসক ও বিক্রেতারা প্রতিমুহূর্তে বিভ্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা দরকার।
বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, ওষুধের কেবল দামই নয়, নাম নিয়েও চিকিৎসাবিজ্ঞান ও রোগীদের সঙ্গে এমনই প্রতারণা করছেন এ দেশের কিছু চিকিৎসক। ওষুধ কম্পানির পক্ষ হয়ে চিকিৎসকরা কথিত 'ব্র্যান্ড' বা 'ট্রেড' নাম ব্যবহারের আড়ালে চাপা দিচ্ছেন জেনেরিক বা মূল নাম। ওষুধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর প্রভাবে বেড়েছে ওষুধ নিয়ে বিভ্রান্তি। বিভিন্ন ওষুধের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বেড়েছে অপব্যবহার। রোগীরা জেনেরিক নাম জানতে না পারায় কিংবা ওই নামের কোনো প্রচারণা না থাকায় নিজ নিজ পছন্দের কম্পানির ওষুধ সেবন থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি চিকিৎসকের নির্দেশমতো ক্ষেত্রবিশেষে নিম্নমানের ওষুধ সেবনে বাধ্য হচ্ছেন। আর ওই নিজস্ব নামের আড়ালে দামও নির্ধারণ করা হয় নিজেদের মতোই। খ্যাতিমান চিকিৎসকরা এখন চিকিৎসকদের ওষুধ কম্পানির বাণিজ্যের কবল থেকে বেরিয়ে এসে জেনেরিক নাম ব্যবহার ও ওটিসি (ওভার দ্য কাউন্টার) তালিকা করে সাধারণ ওষুধগুলো প্রচারের আওতায় নিয়ে আসার পরামর্শ দিচ্ছেন।

সূত্র: কালের কণ্ঠ
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×