সংবিধিব্ধ সতর্কীকরণঃ এই লেখা শুধুমাত্র কম সিজিপি এ প্রাপ্ত ব্যাবেঞ্চারদের জন্য প্রযোজ্য
যাহারা পর্ব এক পড় নাই তাহাদের কে আগেই বলিয়া রাখা ভাল যে, তোমার নিজের লাইফে মেয়ে মানুষ পটাইতেও যত না কষ্ট হইয়াছে তাহার চেয়েও অধিক কষ্ট স্বীকার করিতে হইবে একজন প্রফেসর কে কনভিন্স করতে গেলে। অবশ্য যারা সিজি এর সাগরে হাবুডুবু খাইতেছ তাহাদের অবশ্য ভিন্ন অবস্থা। যুবক বয়সে যেমন মানিব্যাগ মোটাতাজা থাকিলে মেয়েরা যেমন সুনজরে তাকায় ঠিক তেমনি যাহারা তাহাদের একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট গুলান হৃষ্ট-পুষ্ট গ্রেড পয়েন্ট দ্বারা পরিপূর্ণ করিতে সক্ষম হইয়াছ তাহাদেরও সুনজর এর অভাব হইবে না। তাহাদের আমার নমঃ+কার উরফে সালাম, তাহারা আমার লেখাখানি না পড়িলেও পার।
আমার এক বন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ থেকে পাশ করা, একদা তাহাকে আমি শুধাইলাম কিরে তোর বাহিরে যাবার কতদূর? সে আমাকে কহিল, দোস্ত দু’দু (twice) বার পেনিসাল্ভেনিয়া থেকে ছ্যাকা খাইয়াছি, আর বেলতলায় যাওয়ার শখ নাই। আমি এই শুনিয়া তাহাকে বলিলাম ওহে ওইখানে কি বিশ্ববিদ্যালয় এর অভাব আছে নাকি রে! প্রত্যুত্তরে আমারে কহিলঃ বেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র হইয়া আমি কি আমেরিকার হাবীবুল্লাহ বাহারে পড়িতে পারি!!! তাহারা এই বাক্য আমাকে রীতিমত অবাক করিয়া দিয়াছিল। যাহারা এখনও এইরূপ চিন্তাভাবনা পোষণ কর তাহাদের জন্য আমার সহানুভূতি ছাড়া আর কিছুই নাই। কারণ তোমরা আমৃত্যু ওই একই কথা বলিবেঃ দোস্ত এডমিশন হইয়াছিল কিন্তু ফান্ড পাই নাই।
তোমাদের যাহাদের সি জি কম তাহাদের জন্য জি আর ই আর টোফেল/আই এল টি এস এ ভাল করা হল ফরযে আইন। ফরয নামায বর্বাদ করিয়া খালি জিকির করিলে যেমন কাজ হয়না ঠিক তেমনি জি আর ই আর টোফেল/আই এল টি এস এ ভাল স্কোর না আসিলে, প্রফেসর নাম ধরিয়া দৈনিক একশত এক বার জিকির করিলেও ফান্ড নামক ফায়দা কস্মিনকালেও হাসিল হইবে না।
এইবার আস কাহাদের মেইল করিবা? অনেক স্বদেশী আছেন যাহারা দেশের মাটিতে একই আলো বাতাস খাইবার পরেও বি এন সি সি গোষ্ঠীদের যেমন এড়াইয়া চলে, ঠিক তেমনি প্রফেসর দের মেইল করার বেলায় তোমরা চিনকো গোষ্ঠীর (চাইনীজ+কোরিয়ান) প্রফেসর দের এড়াইয়া চলিবা। তবে মেইল পাঠানোর ক্ষেত্রে টাইমিং অনেক ইমপোর্টেন্ট, অবশ্যই ওদের প্রাইম টাইমে মেইল করিবা। অন্যথায় তোমার মেইল গুলা আজীবন ইনবক্সের তলানীতেই পড়িয়া থাকিবে। ওয়েব মেইল অবশ্যই যাতে gmail হয়, yahoo দিয়া ভূলেও মেইল পাঠাইবে না। অনেক মেইল সার্ভার কিন্তু yahoo থেকে আগত mail কে স্পাম বক্সে পাঠাইয়া দেয়।
প্রফেসর দের মেইল করার ক্ষেত্রে প্রফেসর সিলেকশন কিন্তু অনেক ইম্পোর্টেন্ট। সবার আগে দেখিয়া লইবা প্রফেসর এর রিসার্চ ইন্টারেস্ট কী, প্রফেসর অতীতে কিসের ওপর কাজ করিয়াছেন। সবচেয়ে ভাল হয় তুমি আন্ডারগ্র্যাড এ যে বিষয়ের ওপর কাজ করিয়াছ কিংবা তোমার যেইসব বিষয়ে গ্রেড খুব ভাল সেই বিষয় সম্পর্কিত কোন কাজ যদি প্রফেসর করিয়া থাকেন। তাহা হইলে প্রফেসর কে মেইলে তুমি বিয়াপুক হারে চাপাবাজি করিতে পারিবা। আর ভাল গ্রেড এর কথা এই জন্য বলিলাম কারণ তুমি যেই বিষয়ের ওপর কাজ করিতে আগ্রহ দেখাইয়াছ, তুমি আবেদন করিলে প্রফেসর অবশ্যই তোমার ওইসব সাবজেক্টে গ্রেড কেমন তাহা দেখিবেন। ধরলাম, তুমি মেকানিকাল এর ছাত্র, মেটারিয়ালস এ কাজ করে এমন কোন এক প্রফেসর কে মেইল করিলা যে আমি আপনার সাথে কাজ করিতে চাই। এখন ওয়েব এ ফ্যাকাল্টী লিস্ট এ হঠাৎ করিয়া খেয়াল করিলা যে ফ্লুইড এ কাজ করে এমন এক প্রফেসর এর অস্থির রকম ফান্ড রহিয়াছে। মৌমাছি যেমন ফুল দেখিলে মধু সংগ্রহের জন্য ছুটিয়া যায়, ঠিক তেমনি তুমি যদি ওই ফান্ডের আশায় দ্বিতীয় প্রফেসর এর দরজায় কড়া নাড় তাহলে ধরিয়া রাখ যে তুমি দুই প্রফেসর এর কাছ থেকে ফ্রী-কিক খাইয়া মাঠের বাইরে আছড়াইয়া পড়িবা। প্রফেসর রা পটেনশিয়াল স্টুডেন্ট দের নিয়ে রীতিমত আলোচনা করে, যে অমুক দেশের অমুক ছাত্র এই লিখিয়াছে, সে তমুক বিষয়ের ওপর কাজ করিতে চায়। কেউ কেউ আবার তোমার মেইল অন্য প্রফেসর এর কাছে ফরওয়ার্ড করিবে যদি অন্য কোন প্রফেসর একই ফীল্ড এ কাজ করিয়া থাকেন। এখন তাহারা যদি ধরিতে পারে তুমি দুইটি ভিন্ন ভিন্ন ফীল্ড এ সমপরিমাণ উৎসাহে বিয়াপুক পরিমাণ চাপাবাজি করিয়া কাজ করিতে চাহিয়াছ তাহা হইলে তোমার নামখানা কেবলই চাপাবাজ দের লিস্ট এ দাখিল হইবে, ফান্ডিং এর জন্য সুপারিশ এর লিস্ট এ নয়। একজন প্রফেসর কে মেইল করিয়া কমপক্ষে তিন থেকে চার দিন ওয়েট করবা। রিপ্লাই না পেলে এরপর একই ডিপার্টমেন্ট এর অন্য প্রফেসর (কিন্ত একই ফীল্ডে কাজ করে) কে মেইল দিবা। মেইল দেয়ার সময় রিপ্লাই পাবা না এই আশা নিয়া মেইল দিবা, তাহা হইলে হতাশ হইতে হইবে না। অন্যথায় তোমার পাশের বাড়ীর কমলা সুন্দরী তোমার সাথে জীবনের প্রথম ডেটিং এ যাইতে রাজি না হওয়ায় যতখানি হতাশ হইয়াছিলা তাহার চেয়েও অনেক বেশি হতাশ হইয়া পড়িবা।
সব প্রফেসর যে তোমারে রিপ্লাই দিবে এমন আশা করা রীতিমত বোকামী। আর রিপ্লাই দিলেও যে তোমারে ফান্ডিং এর ব্যাপারে ১০০ ভাগ নিশ্চিত করিবে সেইটা কল্পনা করা হইল গাধা+তুমি = গাধামী। ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে দেখা যায়, যদি ব্যাট এ বলে মিলে তাহলে প্রফেসর তোমাকে ভদ্রভাবে বলিবে I encourage you to apply or I will review your application. কারও কাছে যদি RA এর ওপেনিং থাকে আর প্রফেসর যদি মনে করে তোমারে নিবে তাহা হইলে সে তোমাকে এক রকম বলিয়া দিবে ওনার কাছে RA এর ওপেনিং আছে apply as soon as possible. তবে যেহেতু তোমাদের সিজি কম শুরুতে RA পাওয়ার চান্স নাই বললেই চলে। অবশ্য যাহাদের ভাল পাবলিকেশন আছে অথবা যারা খুবই স্পেসিফিক ভাবে মেইল এ লিখিয়াছ আমি অমুক বিষয়ের ওপর কাজ করিতে চাই তাহাদের অবস্থা ভিন্ন। তবে একটা জিনিস মাথায় রাখ কোন প্রফেসর কিন্তু মেইল এ ফান্ডিং এর ব্যাপার এনশিউর করিবে না, আর কোনটা পজিটিভ রিপ্লাই এর কোনটা গতানুগতিক রিপ্লাই সেইটা তোমাদের নিজ দায়িত্বে বুঝিয়া নিতে হইবে। অনেক সময় প্রফেসর রা ইন্টারভিউ নিয়ে থাকেন, এর জন্য প্রস্তুত থাকা ভাল। তবে উহা নিয়া টেনসিত হওয়ার কিছু নাই।
তোমাদের যেহেতু সিজিপিএ কম তাই অহেতুক ভাল ভাল স্কুল গুলোতে মেইল দিয়ে সময় নষ্ট করার কোন মানে নাই। অবশ্য কারও এক বা একাধিক ভাল পাবলিকেশন থাকে সেটা অবশ্য ভিন্ন কথা, তবে ওইসব স্কুলে এডমিশন পাইতে হইলে তোমার মিনিমাম রিকোয়ারমেন্টস অবশ্যই থাকিতে হইবে। যদিও সব ইউনিভার্সিটি এর মিনিমাম সিজি এর রিকোয়ারমেন্টস 3.0 দেয়া থাকলেও, টপ র্যাঙ্কড ইউনিভার্সিটিগুলোতে দেখা যায় এডমিশন পাওয়া স্টুডেন্টস দের এভারেজ সিজিপিএ 3.25 থেকে শুরু হয়।
মেইলের শুরুতেই সুন্দরভাবে সম্ভাষণ করিয়া জানাইয়া দিবা, তুমি কোন দেশের কোন বিশ্ব্যবিদ্যালয় এর কোন ডিপার্টমেন্ট থেকে কত সালে পাশ করিয়াছ। এরপরের অনুচ্ছেদে রীতিমত অস্থির রকম জ্ঞানগর্ভ মূলক চাপাবাজি করিতে হইবে – তুমি ওই প্রফেসর এর অমুক অমুক পেপার পড়িয়াছ, প্রফেসর এর অমুক অমুক গবেষণার কথা জানতে পারিয়াছ, তুমি মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হইয়াই শয়নে স্বপনে কেবলই অমুক বিষয়ের ওপর গবেষণার স্বপ্ন দেখিতা এই আর কী। আর যাহাদের পেপার আছে তাহারা রীতিমত আজান দিয়া প্রফেসর রে তোমার পাবলিকেশন এর কথা জানাইবা। যাহাদের নাই তাহারা আন্ডারগ্র্যাড এ কি কি কাজ করিয়াছ তাহা লইয়া চাপাবাজী করিবা।
এরপরের প্যারায় তোমার সি জি পি এ, জি আর ই , টোফেল/আই ই এল টি এস স্কোর জানাইয়া বলিবা আমি আপনার সাথে কাজ করিতে পারিলে নিজেরে ধন্য মনে করিব ইত্যাদি ইত্যাদি। তারপর আল্লাহর নামে মেইল পাঠাইয়া শুধুই অপেক্ষার প্রহর গণনা করা ছাড়া আর কোন কাজ নাই। তবে আমার একটা ব্যাক্তিগত সাজেশন হইল একটা ভাল একাডেমিক সি ভি বানাইয়া মেইল এর সাথে এটাচ করিয়া দিবা, যদিও অনেকে ভিন্ন মত পোষণ করিয়া থাকেন।
কখনই হতাশ হইবা না। আমি নিজেও হাজার এর ওপরে মেইল পাঠাইয়া হাতে গোনা অল্প কয়েকজনের কাছ থেকে ভাল রিপ্লাই পাইয়াছিলাম। আর তাদের পিছনেই তোমাকে সুপার গ্লু এর মত লাগিয়া থাকিতে হইবে। আমি পুরা এক বছর এক প্রফেসর রে তেলাইছি।
মেইল করার অনেক কমন ফরম্যাট গুগল মামুরে জিগাইলে জানতে পারবা, কিন্তু প্রথম মেইলে ভূলেও বলবানা যে তুমি হইলা সর্দারে ফকীর, ফান্ড ছাড়া তুমি পড়তে পারবা না। খালি বলবা তুমি তার সাথে কাজ করতে চাও এবং অবশ্যই সিস্টেমের সাথে বলিবা।
So, happy mailing and keep mailing. You never know when you will be able to hit the six.
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৯