প্রথমেই বলে নেই, ঢাকায় উবার চালু হবার প্রথম সপ্তাহ থেকেই আমি উবারের নিয়মিত যাত্রী। ফলে গত ৮ মাসে উবার ব্যবহার করে নিজস্ব এক্সপেরিয়েন্স থেকেই এই লেখাটা লিখেছি।
যাই হোক, গত বছরের নভেম্বরে ঢাকায় বেসরকারী পরিবহন সার্ভিস চালু করে আন্তজার্তিক অ্যাপসভিত্তিক প্রতিষ্ঠান "উবার"। পৃথিবীর প্রায় ৫০০ এরও বেশি নগরীতে উবারের মাধ্যমে যাত্রীরা পরিবহন সুবিধা নিয়ে থাকেন। ঢাকাতেও খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সিএনজি চালকদের দৌরাত্ব্য ও পর্যাপ্ত গণপরিবহন না থাকায় ঢাকার অধিকাংশ মানুষের কাছেই এটির জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে যায়। এমনকি বিআরটিসি যখন উবারকে নিষিদ্ধ করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলো, তখনও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে উবারের পক্ষে মতামত আসতে থাকলো এবং উবার চালু থাকলো।
আসুন এবার দেখি ৮ মাসে এসে উবারের বর্তমান হালচাল।
যাত্রা শুরু করার দুই মাসের মাথায় উবার প্রথম তাদের ভাড়া বাড়ায়। বেজ ফেয়ার ৫০ টাকা, প্রতি কিলোমিটার ২১ টাকা ও প্রতি মিনিট ৩ টাকা হিসেবে উবারের ভাড়া হিসাব করা হয় যা এখনও বলবৎ আছে। তবে যেই বিষয়টি পরিবর্তন হয়েছে সেটি হলো উবারের ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি। আর এটি নিয়ে প্রায় সকল উবার যাত্রীরই আপত্তি আছে। প্রথম দিকে উবারে যতটুকু দূরত্ব যতক্ষণে অতিক্রম করা হতো সেটি মিলে মোট ভাড়ার হিসাব হতো। তবে গত কয়েক মাস ধরে গন্তব্য দিয়ে উবারে সার্চ দিলে একটা ফিক্সড ভাড়া শো করে, যেটি পূর্বে একটি রেঞ্জের মধ্যে দেখাতো।
অর্থাৎ, ধরা যাক আগে মিরপুর-১০ নম্বর থেকে গুলশান-১ পর্যন্ত আনুমানিক ভাড়া আগে দেখাতো ২৩০-২৮০ টাকা। এখন হয়তো ফিক্সড হিসেবে দেখাবে ৩৫০ বা অন্য কোন পরিমাণের ভাড়া। ফলে কিলোমিটার ও সময়ের হিসেবে আপনার ভাড়া যদি ২৫০ টাকাও হয়, তবুও আপনাকে ৩৫০ টাকাই দিতে হবে।
অন্য দিকে লোকেশনে যেতে যদি পথে কোন কারণে দেরী হয় ও আপনি উবারে গুগল ম্যাপে নির্দেশিত পথে যান, তবে অ্যাকচুয়াল ভাড়া বেশি হলেও ৩৫০ টাকাই দিতে হবে। তবে এ ব্যাপারটি খুব বেশি হয় না। কারণ অধিকাংশ ড্রাইভার বা যাত্রীই নিজের পছন্দনীয় পথেই গন্তব্যে পৌঁছান। ফলে রুট ভায়োলেট করার কারণে যদি দেখা যায় দূরত্ব ও সময়ের মোট হিসাব প্রথমে দেখানো ফিক্সড রেটের চেয়ে বেশি হয়েছে, তবে আপনাকে অ্যাকচুয়াল রেটে যা আসবে সেটিই ড্রাইভারকে দিতে হবে।
কিন্তু আরেকটি বিষয় হলো, আপনি রুট ভায়োলেট করে গন্তব্যে পৌঁছে দেখলেন দূরত্ব ও সময় দুটোর হিসেবেই আপনার টোটাল রেট কম আসে, তবুও কিন্তু আপনাকে উবারে প্রথম দেখানো ফিক্সড রেটই দিতে হবে।
আরেকটি বিষয় হলো, বর্তমানে ক্ষণে ক্ষণে উবার যে কোন গন্তব্যে যেতেই ভাড়া চেঞ্জ করে। যে কোন গন্তব্যে একাধিকবার সার্চ দিয়ে দেখবেন, একাধিক ভাড়া শো করবে। এই বিষয়টিও যে কোন যাত্রীর জন্যই বিভ্রান্তিকর। এই দেখাচ্ছে ২১৫ টাকা, তো পরের সার্চেই আসছে ২৫৫ টাকা। রাস্তা তো আর নিমিষেই বড় হয়ে যায় না, যে ভাড়া এতো বাড়বে বা কমবে।
অর্থাৎ মোদ্দা কথা হলো, সব দিক থেকে উবারই বেনিফিটেড হবে। আপনি কেবল আরামে নিজের গন্তব্যে পৌঁছাবেন এটা যা।
এর ফলে ইদানিং উবারে অতিরিক্ত ভাড়া নেবার অভিযোগ প্রায় সব যাত্রীর কাছ থেকেই পাওয়া যাচ্ছে। অথচ এই ব্যাপারে উবারের মাধ্যমে কমপ্লিন করেও যে খুব বেশি কেউ লাভবান হয়েছেন এমনটা শুনিনি। এ কারণে ইদানিং উবারে যাত্রী পূর্বের চেয়ে অনেক কমে গেছেন। যারা একজন রাইড করেন, তাদের অনেকে এখন মোটরবাইক পরিবহন সার্ভিস "পাঠাও" এর মাধ্যমে গন্তব্যে যাচ্ছেন। এতে ভাড়া পড়ছে উবারের অর্ধেকেরও কম। উপরন্তু প্রথমদিকে প্রতি সপ্তাহেই উবার তার যাত্রীদের নানা ধরণের প্রমোশনাল ডিসকাউন্ট অফার দিতো। যেটি বর্তমানে খুব কম যাত্রীই পান। এসব কিছুর ফলে ঢাকায় উবারের সার্ভিস থেকে অনেকেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
আরেকটি বিষয় না বললেই নয়, আমাদের পাশের দেশ ভারতে উবার কিন্তু অনেক কম রেটে যাত্রী পরিবহন করে। কিন্তু আমাদের দেশে এই রেট অনেক বেশি। ফলে ভাড়ার ক্ষেত্রে এই লাগামহীনতা চলতে থাকলে ও অন্য কোন ভালো পরিবহন সার্ভিস ঢাকায় চালু হলে উবারকে যে ব্যবসা গুটিয়ে দেশ থেকে চলে যেতে হবে সেটি আর না বললেও চলে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:৪০