somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্প: সময়-অসময়

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইদানীং অদ্ভুত এক মুসিবতে পড়েছে রেহান কবির। সমস্যাটা এতটাই বিদ্ঘুটে যে, সে না পারছে কারো সঙ্গে শেয়ার করতে, না পারছে নিজে নিজে এর সমাধান করতে। আবার কারো সঙ্গে শেয়ার করাটাও যে রিস্ক। পাছে কোন মিডিয়াতে আবার না নিউজ হয়ে যায়। আর নিউজ হবেই না কেন, হাল আমলে রেহান কবির একজন জনপ্রিয় গায়ক। বয়সে তিনি আর তরুণ নেই, সেটা নিজে বুঝতে পারলেও তার শ্রোতাদের বেশিরভাগই হলো তরুণ। সেই হিসেবে বলা যায়, তরুণদের আইকন তিনি।

রেহান কবিরের গানের প্যাটার্ন কিছুটা ব্যান্ড ঘরানার হলেও ক্লাসিক্যালের ওপর অসামান্য দক্ষতা আছে তার। ফলে সে চেষ্টা করে ব্যান্ডের সঙ্গে ক্লাসিক্যালের একটা সংমিশ্রণ ঘটাতে। আর এ ব্যাপারটিই যে ইয়াং জেনারেশনের কাছে এতটা গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে সেটা রেহান নিজেও ভাবতে পারেনি। আর এই জনপ্রিয়তাই এখন তার গলার কাঁটা হয়ে বিঁধেছে। মারাত্মক নাছোরবান্দা এক মেয়ে ভক্তের পাল্লায় পড়ে রেহানের দৈনন্দিন রুটিনই এখন উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে।

নাছোরবান্দা সেই মেয়ে ভক্তের নাম সাদিয়া। বয়স ২০/২২। রেহানের চেয়ে ন্যূনতম ১৫ বছরের ছোট তো হবেই। আবার সাদিয়াও বেশ ভালো করেই জানে যে রেহান বিবাহিত। আর এটাও জানে যে, রেহানের অসম্ভব কিউট একটা মেয়ে আছে। এরপরও সাদিয়ার একটাই চাওয়া, রেহানকে বিয়ে করা। কারণ রেহানকে সে ভালোবাসে। রেহানকে এজন্য সে তিনদিন সময়ও বেঁধে দিয়েছে। এর মধ্যেই সাদিয়াকে নিজের সিদ্ধান্তটি জানাতে হবে। আর সেই সিদ্ধান্তটিও নেগেটিভ হতে পারবে না। তাহলে রীতিমতো সুইসাইড করবে সে। আর সুইসাইডাল নোটে রেহানকেই দায়ী করবে সাদিয়া। এমনিতেই সাংবাদিকরা সেলিব্রেটিদের নিউজ করতে উদগ্রীব থাকে। তার ওপর যদি সত্যি সত্যি সাদিয়া সুইসাইড করে তো রসিয়ে রসিয়ে কী যে লেখা হবে সেটা ভেবেই শিউরে উঠছে রেহান। রেহানের স্ত্রী জলি খুবই ভালো একটি মেয়ে। এরকম স্ত্রী পাওয়াটাও ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু পত্রপত্রিকা আর টিভি চ্যানেলে উল্টাপাল্টা নিউজ দেখে জলিও পাছে না আবার ভুল বুঝে সেটা ভেবেই আরো শঙ্কিত রেহান।

এসবের বাইরেও নিজের মিউজিক ক্যারিয়ার যে চিরতরে শেষ হয়ে যাবে সেটাও ঢের বুঝতে পারছে রেহান। মোদ্দা কথা, রেহান কঠিন এক গ্যাঁড়াকলে আটকে গেছে। এ থেকে মুক্তির পথ আসলেই ওর জানা নেই।

এসব কিছু ভাবতে ভাবতেই কখন যে রেহান ঘুমিয়ে পড়েছিল সেটা খেয়াল নেই। হঠাৎ ঘুম ভাঙতেই খেয়াল হলো যে, ড্রয়িং রুমের সোফার উপর সে ঘুমিয়ে আছে। রেহান মাঝে মধ্যেই রাতে টিভি দেখতে দেখতে সোফায় ঘুমিয়ে যায়। তাই রেহানের এই অভ্যাসে জলি অভ্যস্ত। সেজন্য রেহান সোফায় ঘুমিয়ে গেলেও ওকে আর ডাকে না। তবে আজ রেহান কেন যেন বিছানাটাকে খুব ফিল করছে। ভীষণ ইচ্ছে করছে জলি আর মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে। আড়মোরা ভেঙে ওঠে ডাইনিং রুমের আলো জ্বেলে চেয়ার টেনে বসে রেহান। টেবিলে রাখা জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢালে। পানি খেয়ে আলো নিভিয়ে বেডরুমে ঢোকে।

হালকা নীলচে আলোয় দেখতে পায় মেয়েকে জড়িয়ে ধরে জলি ঘুমাচ্ছে। মেয়ের পাশে আস্তে করে শুয়ে পড়ে রেহান। মা-মেয়ে দুজনকেই কী সুন্দর লাগছে। পাশে রাখা মোবাইল ফোনে আলো জ্বলছে, আবার নিভছে। মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে না তাকিয়েও পরিষ্কার বুঝতে পারছে সাদিয়াই ওকে ফোন করছে। অন্য সময় হলে ফোন রিসিভ করত রেহান। কিন্তু এখন কেন যেন ফোন ধরতে ইচ্ছে করছে না। সাদিয়ার কথা মনে হতেই একরাশ দুশ্চিন্তা আবার রেহানকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। তবে দুইবার ফোনে ট্রাই করে রিসিভ না করাতে সাদিয়া আর ফোন দিচ্ছে না দেখে রেহান কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। আনমনেই মোবাইল হাতে নিলো। চোখ বন্ধ করে রেহান। মনের পর্দায় সাদিয়ার ছবি। খুব অল্প দূরেই যেন জলি আর ওর মেয়ের ছবি। ঘুম ছুটে যায় রেহানের।

হঠাৎ করে রেহানের মনে পড়ে, ছোটবেলায় কোন সমস্যা হলে রেহানের একমাত্র সমাধান ছিল সুমন স্যারের কাছে। স্যার ওকে সবসময়ই বলতেন ধৈর্য ধরতে। স্যার বলতেন, সময় মানুষকে সমস্যা দেয়, আবার সময়ই সব সমস্যা ঠিক করে দেয়। সময়ের চেয়ে বড় সমাধান আর নেই। এতকাল পড়ে এসেও স্যারের কথাগুলোই কেন যেন রেহানের বারবার মনে পড়তে লাগল।

রেহান কিছুটা ভেবে সাদিয়াকে মেসেজ লিখতে শুরু করে- ‘ সাদিয়া, তোমার সব শর্ত/ আবদার মানতে আমি রাজি। কিন্তু আমার ছোট্ট একটা শর্তই কেবল তোমাকে মানতে হবে। সেটি হলো আমাকে জাস্ট ৫ বছর সময় দিতে হবে। ১৫ দিনের পরিচয়ে তোমাকে ঘরে তুলতে হলে আমার ১৫ বছরের দাম্পত্য সম্পর্ককে তো আগে গোছাতে হবে। এ জন্য ৫টা বছর সময় চাওয়াটা আশা করি অন্যায় হবে না। তোমার উত্তর প্রতীক্ষায় রইলাম।’

মেসেজটি সাদিয়াকে সেন্ড করল রেহান। রেহান জানে সাদিয়া এটা এখনই পড়বে। তবে রেহান এটাও জানে যে, আদৌ কোনোদিন হয়তো আর রিপ্লাই নাও আসতে পারে। কবুও রিপ্লাই মেসেজের অপেক্ষায় কখন যে তার দুচোখে ঘুম জড়িয়ে এসেছে সেটা রেহানও জানে না। তবুও এটা ভেবে রেহান নিশ্চিন্তে ঘুমাল যে, সময়ই সব ঠিক করে দেবে। সেটা যত অসময়েই হোক না কেন।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×