In loving memories of Rai Bahadur Anando Chadro Roy, who founded Comilla Victoria College, in the year 1899.
সাদা মার্বেল পাথরের মুর্তিটা একজন সুপুরুষের।
এরা ছিলো পশ্চিম দেশীয় লোক, সিংহ পদবীধারী, রাজপুতনার অধিবাসী।
রাজপুতনা থেকে কুমিল্লা
বাংলা ছিলো উপমহাদেশের সবচাইতে সমৃদ্ধ জনপদ, তাই যুগে যুগে ছুটে এসেছে দেশ বিদেশের সবাই। রাজপুতনা থেকে তিলক চন্দ্র সিংহ হোমনাবাদ(পশ্চিম গাঁও) জমিদারীর স্টেটে, ফয়জুনন্নেসার পিতা আহম্মদ আলী চৌধুরীর এখানে চাকরী নেন। নিষ্ঠা ও সততার জন্য তিনি সেই জমিদারীর তালুক লাভ করেন এববং নিজ গ্রাম গোবিন্দপুরে জমিদার বাড়ি স্থাপন করেন।
রায় বাহাদুর আনন্দ চন্দ্র রায়, তিলক চন্দ্র সিংহের বড় ছেলে রাম দুলাল রায়ের সন্তান। সেই সময় সিংহ পদবী ত্যাগ করে রায় পদবী ধারণ করেন। কেউ কেউ চৌধুরী পদবী ধারণ করেন। কুমিল্লা তালপুকুর পাড়ে আনন্দ চন্দ্রের বাড়ি।
চাকুরী ও ব্যবসার সুবাদে পূর্ব পুরুষের কুমিল্লায় আগমণ। ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠার পর, ব্রিটিশ সরকার আনন্দ চন্দ্র রায়কে, রায় বাহাদুর উপাধীতে ভূষিত করেন। অবিভক্ত বাংলায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ উচ্চশিক্ষার পাদপীঠ, ত্রিপুরা রাজ্যে প্রথম কলেজ।
৬১ বৎসর
সত্যেন্দ্র নাথ বসু প্রথম প্রিন্সিপ্যাল, ১৯৪৭ সাল অবধি এই পদে বহাল ছিলেন। স্কুল ও কলেজ মিলিয়ে টানা ৬১ বৎসর একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, কোন শিক্ষক শিক্ষকতা করেছেন বলে আমার জানা নেই। ত্রিপুরা এবং আশে পাশের জেলার মানুষ গড়ার দক্ষ করিগর, অধ্যক্ষ সত্যেন্দ্র নাথ বসু।
'রায় বাহদুর এন্ট্রাস স্কুল' প্রতিষ্ঠাকালে সত্যেন্দ্র নাথ বসু ও ডক্টর দিনেশ চ্ন্দ্র সেন ছিলেন অন্যতম সহযোগী। সত্যেন্দ্র নাথ বসু সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন, ১৮৯৯ সালে কলেজ প্রতিষ্ঠিত হবার পর তিঁনি অধ্যক্ষের পদ আলংকৃত করেন।
১৮৮৬ সালের 'রায় এন্ট্রাস স্কুল' ১৮৮৮ তে 'ভিক্টোরিয়া স্কুল', ১৮৯৯ সালে হয়ে গেলো 'কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ'। একই সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন লাভ করে।
সূচনা ও প্রসার
১৮৯৯ সালে একটি টালির ঘরে প্রথম ক্লাশ শুরু হয়েছিল, অধ্যক্ষ ছিলেন সত্যেন্দ্র নাথ বসু। ধীরে ধীরে কলেজ বিকশিত হয়, কলেজ প্রতিষ্ঠাতার কালে নওয়াব ফয়জুন্নেসা, ব্যারিস্টার এ. রসুল, নবাব হোসসাম হায়দার সার্বিক সহযোগিতা করেন।
১৯০৪ সালে, কলেজ পরিচালনা ও উন্নয়নের স্বার্থে একটি ট্রাষ্ট ডিডের মাধ্যমে স্কুল থেকে কলেজকে আলাদা করা হয়। সেই ডিডে রায় বাহাদুর আনন্দ চন্দ্র রায়কে, আজীবন গভার্নিং বডির সম্পাদক রাখার প্রস্তাব গৃহীত হয়।
১৯১৮ সালে ডিগ্রি কোর্স চালু হয় এবং ১৯২৪ সালে বিজ্ঞান কোর্স প্রথম চালু হয়।
১৯২৫ থেকে ১৯৪৭ সাল মানে দেশভাগের পূর্বে ভিক্টেরিয়া কলেজে, গনিত, অর্থনীতি, বাংলা, ইংরাজি, আরবী, সংস্কৃত, পলিটিকাল সায়েনস্ বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু ছিলো।
১৯৪২ সালে বিএসসি, ১৯৪৭/৪৮ সালে বানিজ্য অনুষদে আই কম, ১৯৫৫/৫৬ সালে, বি কম কোর্সের প্রচলন হয়। ঢাকার বাইরে পূর্ব বাংলায়, সেইসময় ভিক্টোরিয়া কলেজ, সেরা কলেজ। সিলেট, নোয়াখালি, চট্টগ্রাম এলাকার উচ্চ শিক্ষার আদর্শ কলেজ। আবাসিক ছাত্রদের জন্য হোস্টেলের ব্যবস্থা ছিলো এবং শহরে অনেক গুলো মেসের অস্তিত্ব ছিলো।
সামর্থবানরা মেধাবী ছাত্রদের জায়গীর রেখে নিজেদের সন্তানদের শিক্ষিত করেছেন। আমার পিতা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ার সময়, অশোকতলায় জায়গীর থেকেই বিএসসি পাশ করেন।
রসায়ন বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পূর্ব বাংলা ঢাকায় ১৯২১ সালে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। অত্র এলাকার শিক্ষার্থীদের প্রযোজনে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের রসায়ন বিভাগ ছিলো সমৃদ্ধ। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ কতৃপক্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগটা সাজিয়ে দিয়েছিলেন। সেচ্ছায়। বর্তমানে ঢাকা হাইকোট ভবনটি ছিলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ।
সামরিক ছাউনি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময় দক্ষিণ পূর্ব রনাঙ্গন এই কলেজ থেকেই পরিচালিত হয়েছিলো। লর্ড ওয়ালডেড, ১৪০০ ব্যাটেলিয়নের অধিনায়ক ছিলেন। কলেজটি তখন সামরিক ছাউনি। কলেজের ক্লাশ বন্ধ হয়নি, বিভিন্ন বিভাগ গুলো স্থানান্তরিত হয়, মুরাদ নগর, কালিয়াজুরি, চাঁদপুরে কলেজের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিলো।
চলবে....
শওকত
#যে_স্মৃতি_ধূসর_হয়নি
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৯ সকাল ১০:১৭