প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রসার কুমিল্লায় সেই প্রাচীন কালে। এখানে জম্মেছেন শীলভদ্র। প্রাচীন কাল থেকেই অগ্রসর এলাকা, ত্রিপুরা রাজার রয়েছে ১৫০০ বৎসরের ডাইনেষ্টি। জানামতে এত সময় কোন রাজ বাংশ এতোদিন রাজত্ব করেনি।
শহরে রয়েছে বেশ কয়েকটি পাঠাগার।
বসন্ত স্মৃতি পাঠাগার, অমূল্য স্মৃতি পাঠাগার, তথ্য মজলিস ইত্যাদি।
টাউন হল
১৮৮৫ সালে, বীরচন্দ্র মানিক্য বাহাদুর কান্দিরপাড়, শহরের কেন্দ্রস্থলে ১০ বিঘার উপর জমি দান করেন।
স্থানীয় বিশেষ ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে, মানিক্য বাহাদুরের দানকৃত জমির উপর স্থাপিত হয় 'বীর চন্দ্র মানিক্য বাহাদুর নগর মিলনায়তন ও গণ পাঠাগার'। ত্রিপুরা জেলার ডিষ্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট এফ.এইচ. স্ক্রাইন এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার জন্য সর্বাত্বক ভূমিকা রাখেন।
তারেক ও আমি প্রায়ই বই, পত্রিকা, সাময়িকী পড়ার জন্য টাউন হলে যাই। জহিরুল হক দুলাল ভাই, টাউন লাইব্রেরীর নিয়মিত পাঠক, আরো অনেকের সাথে সেখানে পরিচয় হয়েছে, লেখালিখির সাথে সম্পৃক্ততার কারণে।
আমাদের পুকুরের পশ্চিম পাড়ের তরুনী মামা ছিলেন, লাইব্রেরীর দায়িত্বে, অফিস ছুটির পর নাম মাত্র সম্মানীতে কাজটা করতেন, আমার ছিলো সেখানে অবাধ বিচরণ।
ধন্য যাদের জন্য
উপমহাদেশের সবাই পদার্পণ পড়েছে এই গণ পাঠাগার ও নগর মিলনায়তনে। এতই সমৃদ্ধ সংগ্রহ ছিলো।
ব্রিটিশ আমলে এখানে এসেছেন দেশবরেণ্য ব্যক্তিবর্গ।
মহত্বা গান্ধী, মওলানা আবুল কালাম আজাদ, নেতাজী সুভাস বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, ওস্তাদ আালাউদ্দিন খাঁ, পি.সি. সরকার, লিয়াকত আলী খান, কবি জসিম উদ্দিন, আবদুল গাফ্ফার খান ও তাহার ছেলে ওয়ালী খান, শেরে বাংলা ফজলুল হক, উৎপল দত্ত, কাণাই দে, আশরাফ উদ্দিন চৌধুরীর মতো বহু ব্যক্তিবর্গ এই পাঠাগার ও নগর মিলনায়তনে এসেছেন, দেশভাগের আগেই।
এসেছেন গবেষণার জন্য, দেখার জন্য পড়ার জন্য, সভা সমিতির জন্য।
পূর্ব বাংলায় প্রাচীনতম গাঠাগারের অন্যতম।
ফুলচোর
কবিতা ছাপা হয় নিয়মিত, সবাই একটু অন্যচোখে দেখে। কেউ ভাবে এরা বুঝি উচ্ছন্নে গেলো, মেয়েরা আঁড় চোখে তাকায়, কেউ কেউ ইর্ষা করে। সেইসময় ছাপার অক্ষরে নাম ছাপা হওয়া, একটা ব্যাপার ছিলো।
বাসার উল্টো দিকের বাড়িটা, এডভোকেট মজিবুর রহমানের। নাম করা উকিল, ওভাল সেপের বারান্দা দেওয়া তিনতলা বাড়ি, বোগেনভেলিয়া মানে, বাগান বিলাস গাছে ঘেরা বাড়ি।
এদিকে আসো।
আমি তারেক সহ বিকেলে হাঁটছিলাম, সালাম দিয়ে বললাম
চাচা আমাদের ডাকছেন?
তোমাদেরই বলছি।
বুকটা একটু কেঁপে উঠলো, দুদিন আগে ভোর রাতে আমি আর খোকন, চাচার শখের বাগান থেকে হলুদ ডালিয়া ফুল বেশ কয়েকটা চুরি করেছি, কুমিল্লায় ডালিয়া ফুল সেই বাগানেই প্রথম দেখি। বোগেনভেলিয়া গাছটাও ছিলো দেখার মতো, ফুলচুরির কথা তারেক জানেনা।
অন্যচোখে
চেম্বারে নিয়ে গেলেন, বসতে দিলেন, কাজের ছেলেকে ডেকে নাস্তা দিতে বলে এসে বসলেন।
তোমাদের কবিতা পড়েছি ভালো লিখো। কয়েকটা লেখাই পড়েছি বলে, টেবিল থেকে বের করলেন লিটল ম্যাগাজিন গুলো দেখালো, আমি তোমাদের লেখাগুলি পড়েছি। আমার সংগ্রহ দেখবে বলে ভেতরে নিয়ে দেখালেন, বিশালাকার সংগ্রহ, এ্যনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটেনিকা সহ সবই আছে। তোমাদের যখন যেই বইয়ের প্রয়োজন হবে এখান থেকে নিয়ে পড়বে, তোমরা কবিতা লিখো, আমার অনেক আনন্দ, চিত্রালী পড়ো?
পড়ি।
আহম্মাদ জামান চৌধুরী আমার পরম আত্মীয়, তোমাদের চাচীর ভাই আমার শালা।
সেদিনের ফুলচুরির জন্য মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
কলেজ লাইব্রেরী
পড়াশুনায় আগ্রহী দেখে বাবা একদিন নিয়ে গেলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ লাইব্রেরীতে। লাইব্রেরিয়ান মঞ্জুরুল আমিন মঞ্জু ভাই, বাবাকে মামা ডাকে। আমাকে আগে থেকেই চিনে প্রায়ই বাসায় আসেন, বাবার সাথে আন্তরিক সম্পর্ক, কলেজে পড়ার সময় থেকেই।
লাইব্রেরীতে ঢুকে আমি অবাক, এতো সংগ্রহ, সোঁদা গন্ধ, আর হবে না কেন?
সেই ব্রিটিশ সময়ে ৯/১০ টা বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু ছিলো, ভিক্টোরিয়া কলেজে। পাঠ্যবইয়ের বাইরে, শিল্প, সাহিত্য, কবিতা, প্রবন্ধ বইয়ে ঠাসা।
মঞ্জু, শওকত যখন যে বই চায়, আমার নামে এন্ট্রি করে দিয়ে দিও। হাতে চাঁদ পাবার মতো আনন্দ পেলাম, বিশ্ব ভারতীর' হলুদ মলাটের, পছন্দের বইগুলি কলেজ লাইব্রেরী থেকে নিয়েই পড়েছি।
রেয়ার কালেকশন
রবিবার বিকেলে ঠিক চারটায় আসবে, তোমাদের নিয়ে যাবো মহেশাঙ্গন, রামমালা' গ্রন্থাগারে। উপমহাদেশের সব প্রাচীন সংগ্রহ সেখানে আছে, এমন অনেক সংগ্রহ আছে আর কোথাও নেই।
আমি তারেক, সময় মতো চলে আসি, মজিবুর রহমান চাচা তৈরি হয়ে আছেন। গ্যারেজ থেকে ফিয়েট গাড়িটা বের করে বললেন, উঠো। সব সময় নিজেই ড্রাইভ করেন।
পৌঁছলাম লাকসাম রোডে মহেশাঙ্গনে। সেখানে অনেকবার গিয়েছি পূজা দেখতে, নাট মন্দিরে নাটক, গণসংগীতের অনুষ্ঠান দেখেছি।
পন্ডিত রাসমোহন চক্রবর্তী, ছিলেন তখন গ্রন্থাকারের দায়িত্বে। আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন, এরা কবি, কবিতা লিখে। কুমিল্লার ঐতিহ্য রামমালা' লাইব্রেরী দেখাতে নিয়ে এলাম।
ফুটনোটঃ কুড়ানো ও টোকানো
শওকত
#যে_স্মৃতি_ধূসর_হয়নি
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৯ সকাল ৯:১৪