somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৫ মে’র তাণ্ডব এবং গণতান্ত্রিক শক্তির দায়িত্ব

১০ ই মে, ২০১৩ রাত ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আলোচনা সভা
তারিখ ঃ ১১ মে-২০১৩ ইং , সকাল সাড়ে ১০টা
স্থান ঃ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ঢাকা।

গত ৫ মে ২০১৩’র ঘটনাবলী বাংলাদেশের সকল মানুষকে শুধু শংকিতই করেনি, চিন্তিতও করে তুলেছে। এই বছরের সূচনায় শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের ঘটনাবলী যেমন দেশবাসীকে উদ্বেলিত, এবং ভবিষ্যত সম্পর্কে গভীরভাবে আশাবাদী করে তুলতে শুরু করেছিল, তেমনি তার অল্প কিছু দিনের ব্যবধানে সেই দেশে শাহবাগ চত্বরের উদ্যোক্তাদের গায়ে নাস্তিকতার লেবেল সেঁটে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে এবং সমাজপ্রগতির ধারার বিরুদ্ধে সমস্ত মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলে কার্যতঃ তালেবানী ধাঁচের রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশ অচল করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ৫ মে’র উদ্যোক্তা অর্থাৎ হেফাজতে ইসলামের নেতারা। তাঁরা বলতে পারেন, সেদিন ধ্বংসাত্মক ঘটনা সমূহ তাঁরা ঘটাননি। তাঁদের জমায়েতে সামিল হয়ে এসব ঘটনা ঘটিয়েছে জামাত-শিবিরের কর্মীরা। কথাটা অসত্য যদি নাও বা হয়ে থাকে তাহলেও সেদিনের ধ্বংসযজ্ঞের দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারবেন না হেফাজতের নেতারা। জামাত-শিবির হেফাজতের মিছিলে অনুকুল পরিবেশ পাবে বলেই তারা সেখানে ঢুকেছে এবং হেফাজত নেতারা জেনে শুনেই তাদের প্রশ্রয় দিয়েছেন, কারণ তাঁরা একই পথের পথিক। হেফাজত নেতাদের দায় এখানেই। বস্তুতঃ হেফাজতের এই সহিংসতা নতুন নয়। ২০১২ সালের প্রথম দিকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় তাদের সম্পৃক্ততার কথা দেশবাসী জানে।

তাছাড়া তারা ৫ মে হেফাজতের সমাবেশে যে সংঘাতের জন্য তৈরী হয়েই এসেছিলেন তা বোঝা যায় এ থেকে যে তাদের অনেককে বুলেট প্র“ফ জ্যাকেট পরিয়ে আনা হয়েছিল। খবরটা পত্রিকার। তারা যান্ত্রিক করাত দিয়ে গাছ কাটার জন্য তৈরী হয়ে এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ অফিস এবং মতিঝিল এলাকায় কমিউনিস্ট পার্টি অফিসে ও রাস্তার ফুটপাতের চার শতাধিক দোকান, ৫৩টি ব্যাংকের শাখা, শতশত বাসসহ যানবাহন অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসসাধনে গান পাউডার ও গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ধর্মগ্রন্থের দোকান পুড়িয়ে ধর্মরক্ষার চমৎকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তাঁরা।

বস্তুতঃ নিজেদের কার্যক্রম দিয়ে হেফাজতে ইসলাম একটি জঙ্গি সংগঠন হিসেবেই সামনে এসেছে গত কয়েক দিনে বাস্তবে তারা ’৭১ এর সময়কার পাক বাহিনীর সহযোগীদের প্রেতাত্মা-আলবদর-রাজাকারদের অনুসারী এবং শক্তিশালী। আমাদের কথা হলো জন্মের অল্পদিনের মধ্যেই হেফাজতে ইসলাম এত শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারল কি করে ? কেন একথা বলছি তার কারণ হলো, আগামীতে এ জাতীয় ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক তা আমরা চাই না। তা রোধ করাটাই আজ দেশের সামনে মূল কাজ।

গত দুই মাস যাবত যে সহিংসতা দেশে চলে আসছে ৫ মে’র ঘটনাবলী তার সম্প্রসারণই শুধু নয়, এই ঘটনা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার প্রয়াসের পথে সম্পূর্ণ এক নতুন পর্যায়। একমাত্র ১৯৭১ এর সময়কার ঘটনাবলী ছাড়া ৫ মে’র সমতুল্য সহিংসতা ইতোপূর্বে দেখা যায়নি।
যারা আজ সহিংসতা চালাচ্ছে অর্থাৎ বিএনপি’র কাঁধে সওয়ার হয়ে জামাত ও তাদের অন্যান্য সংঙ্গীরা তারা যে আজ সারা দেশের উপর মাত্রাতিরিক্ত ধ্বংস চাপিয়ে দিয়ে সমাজ জীবনকে তছনছ করে দিচ্ছে, তার কারণ প্রথমতঃ তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী কার্যক্রমের অভিযোগে অভিযুক্তদের চলমান বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করার লক্ষ্যে সরকারকে জরুরী অবস্থা জারী করতে বাধ্য করতে চায়, দ্বিতীয়তঃ এবং যে ঘটনা আরো মারাত্মক, সারা দেশে সাম্প্রদায়িক হানাহানি বৃদ্ধি করে এবং শাহবাগ চত্বরের গণজাগরণ মঞ্চসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের উপর নাস্তিকতার অপবাদ দিয়ে আগামী নির্বাচনে নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করতে চায়। এই উদ্দেশ্যে তারা সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বেশী বেশী করে দেশত্যাগে প্ররোচিত করতে চায়।

এই ভাবে জামাত-বিএনপি এবং হেফাজতে ইসলাম এই ত্র্যহস্পর্শ আজ বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে এবং পাকিস্তানের অনুরূপ একটি অস্থিতিশীল, অগণতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। বলা বাহুল্য এই কাজে তারা শুধু দেশের মধ্যেই নয়, দেশের বাইরের মিত্রদের সহায়তার নিয়ত পারস্পারিক হানাহানিতে লিপ্ত একটি অগণতান্ত্রিক সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে চায়।

এই প্রসঙ্গে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের বিবেচনার জন্য যে কথাটি বলতে চাই তা হল বাংলাদেশের উপরোক্ত পরিণতি ব্যর্থ করতে হলে সর্বাগ্রে শুধু হেফাজত নয়, তাদের মত সকল দল ও শক্তির প্রতি নমনীয়তার মনোভাব পরিত্যাগ করতে হবে। দেশের সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাংঘর্ষিক কোন অবস্থানের প্রতি নমনীয়তা দেখাবার কোন অবকাশ নেই। হেফাজতের আচরণ লক্ষ্য করলেই বোঝা যায় যে তারা প্রকৃতিগতভাবেই স্বৈরতন্ত্রের পক্ষে। তাদের কাছ থেকে গণতান্ত্রিক আচার আচারণ আশা করা ভ্রান্ত। আর ইতোমধ্যে তারা যে কার্যক্রম করেছে তাতে তারা প্রমাণ করেছে তারা বাংলাদেশের সংবিধানের মূল চেতনার বিরোধী। সংবিধানের মূল চেতনার পরিপন্থী কোন অবস্থান কোনক্রমেই গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিদার হতে পারেনা।

সরকার পতনের লক্ষ্যে এবং মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী, নারী অধিকার, শিক্ষানীতি বিরোধী সোচ্চার অবস্থান গ্রহণকারী হেফাজতের সাথে সরকারের আলোচনা অব্যাহত রাখা, মতিঝিলে সমাবেশের অনুমতিদান যে আত্মঘাতি হয়েছে তা বলাই বাহুল্য। হেফাজতে ইসলাম এবং তার কর্মকাণ্ডকে যারা সমর্থন যুগিয়ে আসছেন তাঁদের সবার সম্পর্কেই উপরোক্ত কথা প্রযোজ্য। আর তার সাথে এবারের শিক্ষাটি হিসেবে রাখতে অনুরোধ করবো বর্তমান ক্ষমতাসীনদের। কারণ আগামীতে হেফাজত অথবা জামাত এবং জামাতবান্ধব বিএনপি যে অনুরূপ অবস্থা সৃষ্টি করবে না তা কে বলবে ? বস্তুতঃ ৫ মে’র তাণ্ডবের পর পরই জামাত-বিএনপি জোট রবীন্দ্র জন্ম বার্ষিকীকে উপেক্ষা করে যে হরতাল ডাকলো তা থেকে তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। হরতাল ডাকা থেকে হেফাজতও পিছিয়ে থাকবে কেন ? তারাও আগামী ১২ মে হরতাল ডেকেছে।

আর এই পটভূমিতে এ দেশের মুক্তিকামী মানুষের কাছে আমাদের আহ্বান, যারা আজ ধর্মের নামে দেশে সহিংসতা সৃষ্টি করে দেশের উপর প্রতিক্রিয়াশীল মধ্যযুগীয় বর্বর শাসন চাপিয়ে দিতে চায় তাদের বিরুদ্ধে সকল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক শক্তির সক্রিয় ঐক্য বিশেষভাবে প্রয়োজন। আমরা সক্রিয় শব্দটির উপর বিশেষ জোর দিতে চাই।
ইতোমধ্যে এই লক্ষ্যে যে সকল উদ্যোগ সমূহ গৃহীত হয়েছে তাদের সবার সক্রিয়তা আজ সময়ের দাবি। আজ বসে থাকার অবকাশ নেই।

সরকারের কাছে আমাদের দাবি -
১. বিগত ৫ মে ঢাকার সহিংসতার জন্য যারা উস্কানী দিয়েছে তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনতে হবে;
২. রাস্তার পাশের ছোট ছোট দোকানদার সহ যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য উদ্যোগ নিতে হবে;
৩. অবিলম্বে জামাত-শিবির এবং হেফাজতে ইসলামের সকল কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করা বন্ধ করতে হবে;
৪. মসজিদের মাইক ব্যবহার করে সংঘাত প্ররোচিত করা বন্ধ করতে হবে;

তাছাড়া গত ৬ তারিখ ভোর রাতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ ভেঙে দেয়ার ঘটনায় আমরা যে ক্ষুব্ধ সেটাও এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করে জানাতে চাই যে ভবিষ্যতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় জাতিকে অগ্রসর করার জন্য গণজাগরণ মঞ্চের কার্যক্রমে অতীতের মত ভবিষ্যতেও সকল গণতান্ত্রিক শক্তি তথা সরকারের সমর্থন আশা ও দাবি করবো একই সাথে।

পরিশেষে, দেশে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার রদবদলের ধারা অব্যাহত রেখে গণতান্ত্রিক রীতি-পদ্ধতি দৃঢ়মূল করার প্রয়োজনে ক্ষমতাসীন ও প্রধান বিরোধী দলকে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনী সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে সহমতে পৌঁছানোর আহ্বান জানাচ্ছি। এ জন্য উভয় পক্ষকে যে নমনীয় হতে হবে এবং বিরোধী দলকে মানুষের ধর্মপ্রাণতা ব্যবহার করে ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দেয়া বন্ধ করতে হবে।

একই সাথে আমরা স্পষ্টভাবে এটাও উচ্চারণ করছি - হরতালের আহ্বানের মহোৎসব বন্ধ করতে হবে। হরতাল করা যদি গণতান্ত্রিক অধিকার হয় তাহলে হরতাল না করাও গণতান্ত্রিক অধিকার। সম্মিলিত ভাবে হরতালকে না বলার আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।

মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে পাকিস্তান শাসকদের প্রেতাত্মাদের হেফাজতে আমরা ছেড়ে দিতে পারি না।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫০



একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×