somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চৌষট্টি চৌখুপি

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




“আজকাল ওপেনিং অনেক চেঞ্জ হয়ে গ্যাছেরে পাগলা! আর তুই এখনো সেই কিংস গাম্বিট নিয়েই খেলে যাচ্ছিস! যাক তোর ইচ্ছা! কিন্তু তোর নাইটকে আরও কাজে লাগানো উচিৎ।“ বাবার কথা গুলি খুব মনে পড়ে, খেলতে গেলেই। খুব মনে হয় বাবা বুঝি আশেপাশেই আছেন। আমার খেলা দেখছেন।

আট আটা চৌষট্টি চৌখুপির সাদা কালো আমাকে কি যে যাদু করে রেখেছে, সে বলবার নয়! বাবারও ছিল একই নেশা। চেম্বার থেকে ফিরলেন আর নীল বাঁধাই বইটা চোখের সামনে,আর দাবার বোর্ড নিয়ে বসে গেছেন। মক্কেলদের আসতে আসতে সন্ধ্যা। তার আগে আর খুব বেশী নড়াচড়া নেই। একটা চাল দিলেন তো গভীর চিন্তায় ডুবে গেলেন। মা এসে কেজো কথা বার্তা বললে হুঁ হাঁ দিয়ে কথা সারেন। মা রাগ রাগ গলায় দাবার গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে অন্য কাজ কর্মে জড়িয়ে যান আবার। ঠিক নটায় বাবা তাঁর মক্কেল দের বিদায় দিয়ে দেন, তারপর ঘরে এসে মা’র সাথে টিভি দেখেন নয়ত দুজন গল্প টল্প করেন, আমার পড়ার খোঁজ খবর করেন। শুধু ছুটির আগের রাতে দেখি ঠিক মাজহার কাকা হাজির, দুজন ছক পেতে বসে যান। আমরাও মাঝে মাঝে সে খেলা দেখতাম। আর একটু পর পর বৈঠকখানা থেকে চা এর ফরমায়েশ আসতে থাকত। আবার মাঝে মাঝে তাদের বন্ধু কি প্রতিবেশী তারাও এসে খেলা টেলা দেখত। গঞ্জে তাঁদের দাবাড়ু হিসেবে বেশ নাম ডাক ছড়িয়ে পরেছিল সে সময়।

খেলা শেষ হবার আগেই আমি ঘুমিয়ে যেতাম। বাবা জিতলে হাসি হাসি মুখে বলতেন, “বলতো বাবা কালকে কে জিতল?” বাবার এই ছেলে মানুষী আনন্দটা আমার খুব ভালো লাগতো। আর বাবা হারলে চুপচাপ নাশতা করতে থাকতেন। আসলে একটা শিশু মন সবার থাকে কেউ ঘুম পাড়িয়ে রাখে কেউ বা ঐ মনকে নিয়েই জীবন কাটিয়ে দেয়। আমি বুঝতাম আমিও আর খেলা নিয়ে কোন প্রশ্ন করতাম না!

যেদিন মা’র কলেজে পরীক্ষা বা মিটিং থাকতো সেসব দিনগুলির প্রায় দিনেই স্কুল থেকে ফিরে এসে দেখতাম, বাবা খাবার টেবিলে বসে বই নিয়ে, খাবার সব জুড়িয়ে জল হয়ে গেছে। মা কলেজ থেকে ফেরেন নি আর বাবা ডুবে গেছেন তাঁর জগতে। বাসার কাজের লোকেরা খেয়ে দেয়ে মাদুর পেতে ঘুম। আমি আসলে, হাসি মুখে বলতেন আরে তোর জন্যই তো বসে আছি! দুজন সেই ঠান্ডা ভাত তরকারিই খেয়ে নিতাম। তারপর বারান্দার কমলা রোদে মোড়া পেতে ছোট টেবিলটায় ছক বিছিয়ে খেলা শুরু করতাম। লাল বারন্দা মুছতে মুছতে মা চকচকে করে ফেলেছেন মনে হয় যেন মারবেল পাথরে বাঁধাই। কমলা আলো তেড়ছা হয়ে পড়ত বিকেলের বারান্দায়, রাস্তার রেইন্ট্রি গাছটার ছায়া আর তার ফাঁক ফোঁকর গলে মিষ্টি রোদ খুব ভালো লাগতো। দূরে কোথাও কেউ জোড়ে গান বাজাতো রেডিও কি কোন ছবির গান, আর তাঁর সাথে বাবার ফ্লাইং ডাচ ম্যানের গন্ধ।

জটিল সব চাল আর ওপেনিং নিয়ে গল্প। গ্যারি কাস্পারভ, ববি ফিশার, আনাতলি কারপভ আরও কত কত লোকেদের গল্প হত। আমি শুধু একটা রুখ দিয়ে চেক মেইট করতে পারতাম না, বাবা শিখিয়ে ছিলেন, কিভাবে এক সারি এক সারি করে প্রতিপক্ষের রাজাকে নিচে নামিয়ে কোন ঠাসা করে ট্রায়াঙ্গুলার ফর্মেশনে চেক মেইট করতে হয়। বাবা কখন খেলায় যে শব্দ গুলো ব্যবহার হয় ওগুলো বাংলায় বলতেন না। তাই আমিও ছোট বেলাতেই শিখে গেছিলাম, পউন, বিশপ, কুইন, রুখ, নাইট এ শব্দ গুলি। আমিও তেমন বলতাম, বন্ধুরা হাসত!

স্কুলে বা বাইরে সবাই হয় কিংস গাম্বিট নয় কুইন্স গাম্বিট ওপেনিং এ খেলা শুরু করতো, আমাদের স্কুলের গেইম টিচার শাফি স্যারও আমাদের এভাবেই ওপেনিং শিখিয়েছিলেন। আমাদের স্কুলের শুধু জেলা নয়, আঞ্চলিক এবং ন্যাশনালেও খেলাধুলায় নাম আছে। আমাদের স্কুল বাঁধা যে কয়টা খেলায় চ্যাম্পিয়ন হয় তাদের মাঝে দাবা একটা, শাফি স্যার আর সব খেলার মত আমাদের দাবাও কোচিং করাতেন। তিনি নিজেও ভালো দাবাড়ু ছিলেন বলে শুনেছি! কিন্তু আমি বাবার কাছে শিখেছিলাম একটা অন্য রকম ওপেনিং। কুইনের পাশের বিশপের ফাইল খুলে বড়ে দুই ঘর এগিয়ে দিতাম পরের চালে কোনাকুনি কুইন চলে যেত এ ফউর(a4) ঘরে, এমন অচেনা ওপেনিং দেখে প্রথমেই অনেকে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যেত। আমিও বেশ শুরুতেই ভালো অবস্থানে চলে যেতাম।

সিক্স থেকে সেভেনে যখন উঠলাম সেবার ক্লাস নাইনের তন্ময় রায় কে হারিয়ে আমি সবার চোখে পড়লাম। তন্ময়’দা ছিলেন ক্লাসের ফার্স্ট বয়, এডিসি তারাপদ বাবুর ছেলে, খুব নাম ডাক তাঁর। পর পর দু’বছর ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন। কাগজে ছবিও বের হয়েছিলো, স্কুলের অফিস রুমে সেটি বাঁধাই হয়ে ঝুলছে। শাফি স্যার এর প্রিয় ছাত্র উনি, স্যার সহ সবাই অবাক। কিন্তু স্যার খেলা বাতিল করে আবার খেলতে বললেন, তন্ময়’দা নাকি অভিযোগ করেছেন আমি চাল চুরি করেছি। আমি ভয়ে কিছু বলতে পারলাম না। আবার খেলা হবে, হেড স্যারও এসে গেলেন। উনার স্কুলে চাল চুরি! খেলবো কি স্যার কটমট করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন আমি ভয়ে কাঁপছি রীতিমত।
আমি সব ভুলে বাবার মুখটা মনে করলাম, দুপুরের অলস বারন্দাটা এলো, কমলা রোদ আর সেই রেইন্ট্রির ছায়া। আমি মনে মনে বললাম কেউ নেই এখানে কেউ নেই! আমি নিজের মত খেলতে লাগলাম। বুঝি এই কালো সাদা ঘর গুলি ছাড়া আর কোথাও কিছু নেই। আমি মধ্যযুগের কোন সমর নায়ক, খোলা তরবারি হাতে রাজা কে বাঁচিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। মুভিতে দেখা রোমান সোলজারদের বর্ম পড়া। মাথার শিরস্ত্রাণে লাল পালক গোঁজা।

তন্ময়’দা ওভার কনফিডেন্ট আমাকে পাঁচ চালে চেক মেইট করবেন, বিশপ ও কুইন দিয়ে আক্রমণ চালালেন, আমার কুইন আগেই বের হয়েছিল। আমি কখন যে নাইট দিয়ে রাজার পাশের ঘর কে টার্গেট করেছি উনি খেয়াল করতে পারেন নি। আমি ইচ্ছা করে রুখের সামনের ফাইল ওপেন করে রুখ বাইরে এনে উনাকে মিস লিড করেছিলাম। একেই তো আগের দানে হেরে মাথা গরম, মিথ্যা নলিস করে পাপ বোধ আর অতি আত্মবিশ্বাস সব মিলে চব্বিশ চালে চেক মেইট!
তন্ময়’দা রাগ রাগ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে, আমি ভয় ভয় চোখে হেড স্যার এর দিকে তাকিয়ে হেড স্যার হাসি হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে। এই হল আমাদের অবস্থা। হেড স্যারই প্রথম মুখ খুললেন, “বাহ ভালো খেলা হয়েছে, ওয়েল ডান বয়েজ”। আমাকেই জয়ী ঘোষণা করে চলে গেলেন স্যার।

কিন্তু তারপরও কোন এক অদ্ভুত কারণে স্কুল টিমে আমি জায়গা পেলাম না! পরে শুনেছি শাফি স্যার নাকি বলেছেন আমি ছোট পরের লেভেলে খেলতে গেলে ভয়ে হেরে যেতে পারি, আর তন্ময়‘দা দুবারের চ্যাম্পিয়ন তাঁকে দেখেই অনেকে আদ্ধেক হেরে যাবে।
সে রাত্রে আমি খুব কেঁদেছিলাম মনে আছে, আমি খুব ভালো ছাত্র কখনই না, ক্লাসে ফার্স্ট বা সেকেন্ড হয়ে বাবা,মাকে খুশি করতে পারিনি। আঁকা বা অন্য কিছু তেমন ভালো পারি না। এ খেলাটা নিয়ে ভেবে ছিলাম যদি ডিসট্রিক্ট লেভেল চ্যাম্পিয়নও হতাম তাহলেও বাবা মা অনেক খুশি হতেন। অনেক কষ্ট নিয়ে কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আর ভয়ংকর একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেল। দেখছিলাম আমি একটা বরফের চেস বোর্ড এ আটকে, বাইরে নই, বোর্ডের ভিতরে ঢুকে আছি, ঠান্ডা পানিতে আর উপরে সবাই মানে অনেক গুলি তন্ময়‘দা আর অনেক গুলি শাফি স্যার, মানে প্রত্যেকটা পউন, প্রত্যেকটা বিশপ, প্রত্যেক টা নাইটের মুখ তাদের মত, তারা সবাই বর্শা হাতে আমি যে ঘরে আটকা ঐ ঘরটার বরফের মেঝেটা বর্শা দিয়ে খোঁচাচ্ছে, আর অদ্ভুত হুঁ হাঁ শব্দ করছে। আর আমি বরফের নিচের পানিতে আটকে আছি দম নিতে পারছি না। ঘুম ভেঙে গেল, অন্ধকার ঘরে। আমি বুঝলাম উপুর হয়ে ঘুমাচ্ছিলাম, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো তাই এমন স্বপ্ন দেখলাম বোধ হয়। কিন্তু তখনও ভয়ে আমার বুক কাঁপছে থর থর করে।

আমি বিছানা ছেড়ে পা টিপে টিপে মা বাবার ঘরে চলে এলাম যেন ওঁদের ঘুম না ভাঙ্গে। একটা সবুজ জিরো পাওয়ার এর লাইট জ্বলছে ঘরে, স্বপ্নের মত শুন শান আর ঘরটার একটা মিষ্টি গন্ধ সব সময় আমি পাই, মশারী তুলে আমি ঢুকে যাই ভিতরে, বাবার কোল ঘেঁষে শুয়ে পরি বাবা ঠিক বুঝে যান একহাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার হাতে হাত রেখে ঐ হাতটাই আমার গালের নিচে নিয়ে এলেন, ছোট বেলা থেকেই বাবার সাথে আমি এভাবেই নাকি ঘুমাতাম, বাবা ঘুমের ঘোরেই বড় করে শ্বাস নিলেন, আমার চুলের ঘ্রান নিলেন আমিও নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে গেলাম, কেমন একটা বাবা বাবা গন্ধ আমাকে যেন কাকুনের মত ঘিরে রাখল।

সকালে সব শুনে বাবা হাসলেন খুব হাসলেন। শাফিটা সারাজীবন একই রকম থেকে গেল! মা ধমক দিলেন কি বলছ এসব, উনি ওর শিক্ষক! বাবা ওহ সরি বলে চুপ করতে চাইলেও পারলেন না আবার হো হো করে হেসে উঠলেন, এবার মা ও হেসে ফেললেন, কপট রাগে অভ্যাস মত বললেন “ ওহ তুমি না?!” আর আমার সব মন খারাপ খাবার ঘরের জানালা গলে কোথায় চলে গেল। তবে স্যার এর কিছু একটা আছে যা বাবা মা আর আমাকে বলবেন না বুঝে গেছি।

বাবা নাস্তা সেরে চায়ের মাগ নিয়ে আমার ঘরে এলেন আমি চেয়ারে বসে রুটিন দেখে বই গুছাচ্ছিলাম। বাবা এসে আমার বিছানার কোন বসেলন, টান টান আকাশী নীল চাদরে বাবা সাদা পাঞ্জাবী পড়ে এসে বসেছেন, কি সুন্দরই না লাগছে দেখতে। বাবা সকালে উঠেই গোসল করে নিন, শীত গ্রীষ্ম বারো মাস, আর রোজ শেইভ করেন। তাই সকাল সকাল বাবা আসে পাশে থাকলে একটা ফ্রেস গন্ধ ঘিরে থাকে, আফটার শেইভ, অডিকোলন, শ্যাম্পু আর তাঁর সাথে ফ্লাইং ডাচ ম্যানের গন্ধ।

“শোন খোকা” বাবা খুব নাটকীয় ভাবে শুরু করলেন, আমার একটু যে হাসি পাচ্ছে না তা না, চেপে থাকলাম। “জীবন এমনই, তোমাকে কেউ ইজি একসেস দিবে না। এগুলো লাইফের হার্ডল, স্পোর্টস এর সময় দেখেছো না, বাঁধা বিঘ্ন দৌড়, লাফিয়ে পেরুতে হয়, তোমাকেও একজাক্টলি তাই করতে হবে”। তুড়ি মেরে বললেন। “ খেলা মানে তো শুধুই খেলা তাই নয়, জীবনের মিনিয়েচার ভার্সন, কেউ এগিয়ে গেলে, কেউ বাঁধা দিবে, নিজেকে এগিয়ে নেবার জন্য, এখানে ভেঙে পড়লে চলবে না। মন খারাপ হচ্ছে বুঝলাম, কিন্তু চিন্তা কর না, তোমার আরমান ভাইয়ের সাথে কথা বলবো, তুমি ওঁদের ক্লাব থেকে খেলবে। এখনো অনেক সময় আছে”।

বাবা যখন বললেন আমি অবাক হলাম না, কারণ গত বছরই আরমান ভাই ওঁদের ক্লাবের হয়ে আমাকে খেলতে বলেছিল, কিন্ত শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। মা’ একটু ভয় পেয়েছিলেন, ক্লাবে খেলার ব্যাপারে বিশেষ ধারণা না থাকায় ভেবেছিলেন, কি না কি হয়! এবার মনে হয় আর এমন হবে না, গত বছরের চেয়ে এবার আমি কম না হলও ইঞ্চি ছয়েক লম্বা হয়েছি, অত বাচ্চাটি আর নেই। বাবার এই আইডিয়া শুনে সাথে সাথে বাবাকে একটা বিগ হাগ দিতে ইচ্ছা করছিলো, আবার একটু লজ্জা লজ্জাও লাগে আজকাল। কিন্তু বাবাই এসে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, আর আমার চুলে নাক ডুবিয়ে শ্বাস নিলেন। বাবার এই অদ্ভুত আদরটা আমার খুব প্রিয়।

স্কুলে আমার বন্ধুরা একটু বেশ প্রতিবাদ করতে চাইলো শাফি স্যার এর সিদ্ধান্ত নিয়ে, কিন্তু হেড স্যার এক ধমকে সবাইকে ক্লাসে পাঠিয়ে দিলেন! তাঁদের কথা স্কুলের স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত হয়েছে, আর আমি তো পরের বছরও খেলতে পারবো। এ নিয়ে আর কথা নয়, গুটি গুটি পায়ে সবাই ক্লাসে চলে এলাম!

টিফিনের সময় ক্লাস নাইনের ছেলেরা আমায় ডাকল। বেশ ভাবে বলে দিল বেশী করলে আর চেস খেলতে হবে না, আমাকেই কিস্তি মাৎ করে ছাড়বে! তন্ময়’দা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন, এগুলো যে তারই চাল আমার বুঝতে অসুবিধে হল না!
সে রাত্রেও আমি একই স্বপ্ন দেখলাম। আমি বরফের বোর্ডে আটকা বেরুতে পারছি না, বুকে বিশাল একটা ভার লাগছে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ঘুম ভেঙে গেল। দেখি “কিম্বা” আমাদের সাদা বিড়ালটা বুকের উপর উঠে ঘুমাচ্ছে, আর বিড়ালের যা ওজন! আমি আস্তে করে ওকে আমার বুক থেকে নামিয়ে পাশে শুইয়ে হাত দিয়ে জড়িয়ে রাখলাম আলতো করে। হঠাৎ মনে হল কাল ঠিক এভাবেই বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন!

দিন দুয়েকের মাঝেই বাবা আরমান ভাইদের ক্লাবে আমাকে ভর্তি করিয়ে দিলেন, ব্যাপারটা কিছুই না! সামান্য চাঁদা দিয়ে নামটা একটা মোটা খাতায় লিখিয়ে নিতে হল, আমার সিরিয়াল সাতচল্লিশ! অমন সিরিয়াস কিছু ব্যাপার নয়। আরমান ভাইদের পাড়ার কিছু ছেলেরা মিলে ক্লাবটা করেছে, “ফ্রেন্ড’স ক্লাব”। কিছু স্পোর্টস এক্টিভিটি করে, একুশে ফেব্রুয়ারীতে প্রভাত ফেরীতে যায়, বিশেষ বিশেষ দিন গুলিতে কিছু প্রোগ্রাম করে। আরমান ভাইদের বাড়ীর বাইরের দিকের ঘরটাই ক্লাব ঘর। কিছু শিল্ড ট্রফি সাজানো র‍্যাকে আর রবীন্দ্র, নজরুল, বিবেকানন্দ, পেলে এমন কিছু বিখ্যাত মানুষের বাঁধাই ছবি। একটা ক্যারম বোর্ড, আর দুটো ফুটবল, এই সাকুল্যে ক্লাবের সম্পদ!

আমি আর বাবা ক্লাবের কাজ শেষ করে শহরের মার্কেটে গেলাম, ছবির স্টুডিওতে ফিল্ম ডেভেলপ করতে দিবেন আমাদের পিকনিকের ছবি ছিল। সেখানে গিয়ে দেখা গেলো এখন নাকি বেশ কয়েকটি স্ন্যাপ বাকি আছে। তাই বাবা আমার একটা ছবি তুললেন, আমিও বাবার একটা ছবি তুলে দিলাম, নীল ছাপা শার্ট পড়া বাবার এই ছবিটা এক অমুল্য সম্পদ হয়ে যাবে একদিন, সেই হাসি খুশি বিকেলে ভাবিনি এমন!

আমি কোমর কষে লেগে গেলাম, বাবার সাথে প্র্যাকটিস করি, বই এর খেলা গুলো পড়ে পড়ে বাবার মত গম্ভীর মুখে চালদেই। ঐদিন বারান্দায় বসে আমি বাবার মত বই বাম হাতে আর ডান হাতে একটা ঘুটি নিয়ে ভাবছি স্থির হয়ে, আর এমন সময় মায়ের সে কি হাসি আমাকে দেখে, আমি চমকে তাকিয়ে থাকি, মা দৌড়ে বাবাকে ডেকে আনে, তারপর আমাকে সড়িয়ে মোড়ায় বসে আমি কি করছিলাম দেখাতে লাগল। বাবাও নাকি ঠিক এমনই করেন তাই মা খুব মজা পেয়েছে। হাসতে হাসতে বলতে লাগল,”দেখেন উকিল সাহেব, একদম আপনার মত হয়েছে, ছোট উকিল সাহেব”! বাবাও হাসতে লাগলো। সময় যেন নরম তুলোর বল, সুখের হাওয়ায় এমনই উড়ে!
হাওয়া আবার ঝড় হয়, কখন কখন, সব উড়িয়ে নেয়। হাওয়াই মিঠাই সময় গুলো কই কই হারিয়ে যায়! কোন দিকশূন্যপুর, কোন উধাউ মাঠের ধারে ঘুরে ঘুরে বেড়ায় আমাদের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে! তেমনই হঠাৎ করেই স্কুলের দপ্তরি আশরাফ ভাই তাঁর ভাঙ্গা গলা নিয়ে আমাকে ডেকে হেড স্যার এর কাছে নিয়ে গেলেন। স্যার গম্ভীর মুখে আমাকে খবরটা জানালেন। কোর্টে বাবার হঠাৎ শরীর খারাপ করেছে, এখন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে, আমাকে এখুনি সেখানে যেতে হবে, আশরাফ ভাই সাথে নিয়ে যাবেন। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না! বোবামত যে যা বলছে আমি তাই করছি। সকাল বেলাও স্কুলে যাবার আগে বাবার সাথে কত মজা করলাম, বাবা চুম খেতে চাইলো, আমি দৌড়ে পালালাম, বললাম বাবা আমি এখন অনেক বড়। বাবা হাসতে হাসতে বললেন তোর ছেলে পুলে হলে ওদের সামনেও তোকে আমি চুমুচু খাবো, বাবা আদর করে এমন বলতেন। আমার চোখ ফেটে কান্না আসতে চাইছে, বাবার কি অসুখ করেছে? কত কষ্ট হচ্ছে? মা কোথায়? আমি কিছু ভাবতে পারছি না। মনে মনে লটারি করি প্রথম খালি রিকশাটা হাসপাতালে যেতে রাজি হলে বাবার কিচ্ছু হবে না। যেমন ভাবলাম তাই হল, প্রথম রিকশাটাতেই আমরা উঠতে পারলাম। পথ যেন ফুরায় না! কাচারি বাজার, ডিসির বাংলো, স্টেডিয়াম, রাস্তা যেন রাবার এর মত লম্বা হচ্ছেই হচ্ছে।

এর মাঝে বাবার এক বন্ধু বাইকে করে উলটা দিক দিয়ে এসে আমাদের রিকশা থামাল। আশরাফ ভাইকে বলল, হাসপাতালে যেতে হবে না, সবাই বাসায় চলে যাচ্ছে, আমাকে উনার বাইকে নিয়ে উনিই আমাকে বাসায় নামিয়ে দিবেন। আশরাফ ভাই কি বুঝলও গম্ভীর মুখে রিকশা ঘুরিয়ে চলে গেল। অন্যদিন মোটর বাইকে বসতে পারলে কি খুশি হতাম। আজ কে যেন কিছুই বুঝতে পারছি না। শুধু ভাবছি কখন পথটা শেষ হবে?!

মা চুপ করে বসে আছেন, কিছু চেনা অচেনা মুখ! স্ট্রেচারটা মাটিতে রাখা আপাদমস্তক সাদা চাদরে ঢাকা বাবা! আমাকে শেষ চুমুটা আর খেতে পারলো না, চুলের ঘ্রান আর কে অমন বুক ভরে নিবে! মা আমকে দেখে উঠে এলেন তারপর জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লেন! এমন হুট কেউ নাই হয়ে যায়?! কত কথা বলা হয়নি, কত কি করার ছিল বাকি! আমাদের না বগা লেক দেখতে যাবার কথা ছিল? কথা ছিল বড় কোন মামলায় অনেক টাকা পেলে আমরা আফ্রিকা যাবো, চাদের পাহাড়ের মত কোন খোলা প্রান্তরে লগ কেবিনে আমরা দিন দুয়েক থাকবো। বাইরে ঘাসের দোলায় সিংহের কেশর খুঁজব। আমাকে না তোমার ক্যাটলান ওপেনিং শেখানোর কথা ছিল! আমার খেলা কিছুদিন পর বাবা! এমন হুট চলে যেতে হয়!

ঘর থেকে উঠান দেখা যায়, ঝকঝকে রোদ্দুরে তারে মেলা তোমার ঘরে পড়বার শার্ট তোমার সাদা তোয়াল! সোফার পাশে তোমার ডার্বি শু। সাইড টেবিলে অর্ধেক পড়া বই, পাতা মুড়ানো সযত্নে। ক্রিস্টাল অ্যাশট্রেতে ছাই, কিছু পোড়া সিগারেট। আর ঘরময় তোমার ওডিকলোন, তোমার ফ্লাইং ডাচ ম্যানের গন্ধ! আমি বুঁদ হয়ে থাকি! কোথাও যেন কিছু নেই, কিছু ঘটবার নেই, কোন ঘটনা নেই, কোন ঘটমান বর্তমান নেই, এক জমাট শূন্য সময় যেন আটকে। এমন হুট চলে যাওয়া, কি ভয়ংকর!

কয়েকটা দিন যে কি গেল, কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি। শুধু যা বুঝলাম বাবা আর নেই, এজলাসে সাওয়াল জবাবের সময় হঠাৎ মাথা ঘুরে পরে যান, আর হাসপাতালে নিয়ে গেলেও কিছু করার ছিল না, সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে স্ট্রোকের ফলে যে হেমাটোমা টা জমেছে তা একদম ব্রেইনের মিডলে এত বর সার্জারি, গঞ্জের হাসপাতালে করবার সুযোগ নেই, এসব কথা বার্তা চলতে চলতেই বাবা সবাইকে ঝামেলা মুক্ত করে দিলেন নিজেই! খুব সহসাই চলে যাওয়া! কোথাও নেই গভীর কোন দিন যাপনের চিহ্ন, বড় কোন কীর্তি বা সৃষ্টি, একজন খুব সাধারণ মানুষ কিন্তু অসামন্য এক বাবা! বাবা যেন চলে যাননি বরং যেন আরও বেশী করে রয়ে গেছেন, বুকে, মনে, মস্তিস্কে নিউরনে, দৃষ্টিতে, খেয়ালে, আঙ্গুলে, স্পর্শে । আমি মাকে জড়িয়ে সারা রাত জেগে কাটাই!

সময়ের সাথে আমাদের তাল মিলাতেই হয়। মা’র কলেজ শুরু করতে হয়, আমার স্কুল। স্কুলের প্রথম দিন স্যাররা খুব আদর করলেন! কড়া যে ভুঁইয়া স্যার, তিনিও কাছে ডেকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, যে কোন দরকারে উনার কাছে যেতে বললেন! কিন্তু পৃথিবীটা যে ঠিক এমন নয়, টিফিনের সময়ই বুঝে গেলাম। আমি বসে ছিলাম বড়ই গাছটার ছায়ায়, তখন তন্ময়’দা এলেন, সাথে তাঁর এক বখা বন্ধু, মুখ ভর্তি বর্ণ আর খামছির দাগ। কালচে ঠোঁট দেখলেই বোঝা যায় বিড়ি টানে। এসেই বলে,”তোর বুইড়হা বাপ নাকি মইড়হা গিলছে?” কে জানে এ কেমন ভাষা আমার সাথে ফাজলামো করতে এসেছে আমি বুঝেছি। তন্ময়’দা তার হেরে যাওয়া কিছুতেই ভুলতে পারছে না! ঠাস করে মাথায় একটা চাটি মেরে বলল, “তুই তো এতিম এখন, এখানেই পড়বি নাকি এতিম খানায়?!” বলে দুজনেই খিক খিক করে হাসে। শোন এই স্কুলে পড়তে চাইলে একটা ফুলফ্রি স্টুডেন্টশিপের দরখাস্ত দিস, আমার বাবা বলে দিবে, তুই পেয়ে যাবি। তবে শোন আবার দাবা খেলতে যাসনে!” আমাকে দূর থেকে এ অবস্থায় বুঝি দেখতে পায় আদর আর আপন আমাদের ক্লাসের যমজ দুই ভাই, দৌড়ে আমার কাছে আসে, আর ঐ পাজী দুইটা ভাগে! রাগে দুঃখে অপমানে আমি ফোঁস ফোঁস করতে থাকি!

এখন স্কুল থেকে ফিরলে বাসাটা খুব ফাঁকা লাগে। ডাইনিং টেবিলে বসে একা যখন খাই, খুব কান্না আসে। বাবা কি সুন্দর আমাকে কবিতা পড়ে শুনাতেন প্রায়ই রবি ঠাকুরের “ছোট-বড়” কবিতাটা বলতেন শুনতে শুনতে আমারও মুখস্ত হয়ে গেছে। বুকের ভিতরটা কেমন যে করে,
“রথের দিনে খুব যদি ভিড় হয়
একলা যাব, করব না তো ভয়—
মামা যদি বলেন ছুটে এসে
‘ হারিয়ে যাবে, আমার কোলে চড়ো’
বলব আমি, ‘দেখছ না কি মামা,
হয়েছি যে বাবার মতো বড়ো।’
দেখে দেখে মামা বলবে, ‘তাই তো,
খোকা আমার সে খোকা আর নাই তো।“
ছোট থেকেই “বাবার মত বড়” হতে চাইতাম। বাবা যেভাবে বিছানায় শুয়ে একটা হাত মুড়িয়ে মাথার পিছে দিয়ে বই পড়তেন আমিও নাকি ছোট বেলায় তাই করতাম, এভাবে শুয়ে বই উল্টো করে পড়বার ভান করতাম। সব শিশুই বুঝি বাবার মত বর হতে চায়! আসলে সবার বাবাই বড় অনেক, সে যেই হউক, যেমনই হউক। এখন কেমন যেন আমার চিন্তাগুলো অন্য রকম হয়ে যাচ্ছে, বুঝি বাবার মত ভাবতে শিখছি, বাবার মত বড় হচ্ছি।

দিনগুলি যেন কেমন শূন্য, মা আর আগের মত হাসে না! সাদা শাড়ী পড়েনা ঠিকই কিন্তু সব কেমন যেন রংহীন শাড়ী গুলো পড়ে! আগে হাতের বালা কিংবা চুড়ি গুলো রিন টিন টিন করে বাজত, সে সুর আর পাই না। সব কেমন রংহীন, সুরহীন হয়ে গেছে। একটা জমাট শূন্যতা আমাদের ঘরে! আলনায় বাবার প্যান্ট কোট অসহায় ঝুলে থাকে। মোটা মোটা আইনের বই গুলো পরে থাকে শেলফে নীরব। যা কিছু যেভাবে ছিল মা ঠিক সেভাবেই রেখে দিয়েছেন শুধু মানুষটাই নেই। সেই লাল মেঝে চওড়া বারান্দায় ছায়ারা এসে পড়ে তেমন, কমলা রোদ বিছিয়ে থাকে আশ্বিনের, মেঘেদের নকশায় কত গল্প হারায় অলখে, আমি বসে থাকি বিষণ্ণ!

দিন কি আর থেমে থাকে। গঞ্জে সাঁজ সাঁজ রব পরে গেছে, ন্যাশনাল কম্পিটিশনের সময় এসে গেছে। গান, নাচ, আবৃত্তি, খেলা ধূলা সব নিয়ে জমজমাট একটা সময়। আমার আর এসবে জড়াতে ইচ্ছা করে না! কার জন্য খেলবো?

তন্ময়’দার বখা বন্ধু গুলো আবার আমাকে শাসায় একদিন রাস্তায়, সেদিনো আমি প্রথমে চুপ করে ছিলাম, পাত্তা দিচ্ছিলাম না। কিন্তু যখন বাবাকে নিয়ে বাজে কথা বলল আর চুপ থাকতে পারলাম না। খুব বাজে ভাবে ওরা ব্লছিল,”বটতলার উকিলের পুত, আবার চ্যাম্পিয়ন মারাও!” তন্ময়’দার বাবা এডিসি, এরা তার বন্ধু তাই খুব দাপট! কিন্তু আমার খুব রাগ হয়, ওরা কিছু বুঝে উঠার আগেই একজনের গালে আমি কষে চড় দিয়ে বসি, ওরা ভাবতেই পারেনি, একদম ঘাড় ঘুরিয়ে পরে যায়, এটা দেখে পাশের জন রাগে একটা বাজে গাল দিয়ে হাত পাকিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসে। আমি তখন “ইস্পাত” এর পাভেল করচাগিন, বাম পা সোজা রেখে ডান পা পিছে আড়াআড়ি নব্বই ডিগ্রিতে রেখে শরীরটা পিছিয়ে ওর ঘুষিটা এড়াই। আর থুঁতনি টা এসে যায় আমার চোখের সামনে, একটা আপার কাট, “মোক্ষম একটা আপার কাট”; দাঁতে দাঁত বাড়ি খাবার শব্দ পাই। ওহ বাবা গো বলে পড়ে যায়! ওরা দুজন ঘোঁট পাকিয়ে আসতে চাইলে আমি নিচু হয়ে একটা থান ইট হাতে তুলে নেই। চোখে চোখ রেখে বলি “একদম মেরে ফেলব”, ওরা এবার ভয় পায়! কাজটা ভালো করলি না, স্কুলে দেখে নেব, এসব বলতে বলতে নিজেদের টাল হওয়া চোয়াল ঘষতে ঘষতে নেড়ি কুকুরের মত পালায়। আমার হাসি পায়। আর কি অদ্ভুত তখন একটা খুব চেনা গন্ধ আমি পাই, ধোঁয়ায় মিশে হালকা একটা মিস্তি গন্ধ, ফ্লাইং ডাচ ম্যানের, আমি এদিক ওদিক তাকাই কেউ নেই, শূন্য ফাঁকা রাস্তায় রোদ্দুর বিছিয়ে সোনা! এক গভীর শূন্যতা, এক বোধের অতীত। গন্ধও বুঝি স্মৃতি হয়ে থাকে। জীবন যে কি অদ্ভুত! এ ক’দিনেই যেন কত বর হয়ে গেছি! বাবা থাকলে কেউ এভাবে আমাকে একা রাস্তায় জ্বালাতন করবার কথা ভাবতই না! কিন্তু গন্ধটা যেন এখন আমাকে জড়িয়ে আছে!

বাবা একটা কথা প্রায়ই বলতেন, “Somewhere, something incredible is waiting to be known!”
কোন এক এস্ট্রনমার বলেছিলেন কথাটা, আসলেই কত কি জানার আমাদের বাকী, একদিন হয়ত জানবো। মারা গেলে দূর আকাশের তারা হয় তাঁরা নাকি থাকে আমাদের আশপাশ খুব কাছের শূন্যতায়।

খেলবো না ভেবেছিলাম, কিন্তু এই কাণ্ডের পর আর না খেলে থাকা যায় না, যাই হউক হারি বা জিতি, ভয় যে ওদের পাই না, এটা ওদের বুঝাতে হবে, না হলে আমি হেরে যাবো! বাবা বলতেন “এক্কেবারে হেরে যাবার আগে কখনো হেরো না, অপন্যান্ট একটা চাল ভুল করতে পারে শেষ সময়ে এসেও, তাই শেষ পর্যন্ত লড়বে”! তারপর চার্চিলের ভাষণ থেকে বলতেন, “উই শুড ফাইট ইন দ্য ল্যান্ড, উই শুড ফাইট ইন দ্য এয়ার, উই শুড ফাইট ইন দ্য এয়ার, উই শুড নেভার সারেন্ডার”! আমিও হাতের চেটোতে আমার মুঠো হাতের ঘুষি ছুঁড়ে বলি, ”উই শুড নেভার সারেন্ডার”!

খেলা হয় রাউন্ড রবিন লিগে, বিভিন্ন স্কুল বা ক্লাব থেকে অনেকেই এসেছে চার টা গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে, প্রত্যেক গ্রুপের সবাই সবার সংগে খেলবে, যাদের পয়েন্ট সব চেয়ে বেশী, সেই আটজনে হবে কোয়ার্টার ফাইনাল নক আউট তখন থেকে, তারপর সেমি ফাইনাল চার জনে। যে চ্যাম্পিয়ন হবে সে যাবে নেক্সট রাউন্ডে, আঞ্চলিকে খেলতে তারপর ঢাকায় হবে ন্যাশনাল, এবার শুনছি ন্যাশনাল উইন করলে, ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন অলিম্পিয়াডে নাকি নিয়ে যাবে, নিয়াজ মোরশেদ এই টিম নিয়ে যাবেন। তাই সবার নজর চেসে। আর কিভাবে কিভাবে যেন, আমার আর তন্ময়‘দার এই দ্বৈরথের কথা ছড়িয়ে গেছে। ছোট শহর কিছু চাপা থাকে না!

খেলা চলছে, তন্ময়‘দা একটা ম্যাচ ও হারেনি এখন পর্যন্ত পয়েন্ট টেবিলে সবার উপরে ওর গ্রুপে। আমি একটা ড্র করেছি, পয়েন্টে যৌথ ভাবে টপে আছি! আমার আর একটা খেলা আছে, ওইটা জিততে হবে, আর আমার সাথে যে আছে টপে সে ড্র করলে আমি নেক্সট রাউন্ডে উঠবো। নেক্সট ম্যাচ সহজেই জিতলাম, গ্রাম থেকে একটা ছেলে এসেছিলো, ওকে হারিয়ে আমার খুব কষ্ট হল, ওর বাবা মন খারাপ করে বসে ছিলেন। আমি ছেলেটাকে আদর করে দিয়ে ওর বাবাকে বললাম “মন খারাপ কেন আঙ্কেল? ও খুব ভালো খেলেছে। সামনে আরও ভালো খেলবে।“ উনি খুব খুশি হলেন আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে দু’আ করে গেলেন। আমার খুব বাবার কথা মনে পড়ছিল, খুব কষ্টে চোখের পানি আটকে রাখালাম

কোয়ার্টার ফাইনালে পাড় হতে ঝামেলা হল না, এক তরফা জিতে গেলাম, আমার স্কুলের বন্ধু রিয়াদ ছিল বিপক্ষে। ও খুশিই হল বরং আমার জয়ে! ভালোবাসা আসলে চেপে রাখা যায় না, কোন না কোন ফাঁক ফোঁকর গলে বেড়িয়ে আসে। সেমি ফাইনালে একটা কানা ঘুষা শুনলাম, তন্ময়‘দা নাকি ওয়াক ওভার পাবেন, যার সাথে খেলা সে আমাদের স্কুলের কিন্তু অন্য ক্লাব থেকে খেলছে, শাফি স্যার নাকি শাসিয়েছেন খেলা না ছাড়লে ক্লাস নাইনেই নাকি বছরের পর বছর থাকতে হবে। ছোট গঞ্জ কথা চাপা থাকে না, শেষ মেষ তাই হল, তন্ময়‘দা ওয়াক ওভারই পেল। শাফি স্যার কোন রিস্ক নিতে চাননি। এখন তন্ময়’দা সবার আগে ফাইনালে উঠে গেল। আমার খেলা ছিল পরদিন!

বেশ রাতের দিকে বাসায় শাফি স্যার এলেন, মা’র সাথে একথা সে কথা বলার পর, আসল কথায় আসলেন, ফাইনালে যেন আমি হেরে যাই। এখন আমার বাবা নেই, তন্ময়‘দার বাবা বড় অফিসার মানুষ, কি ঠিক আছে, যদি কোন ক্ষতি করে বসে আমাদের, দেখা গেল হঠাৎ টিসি দিয়ে বসলেন, বা অন্য কিছু। উনি বাবার কলেজের বন্ধু, আমার ভালো চান তাই নিজ থেকে এসেছেন।

মা পাথরের মত বললেন”এত সোজা! দেশে কি আইন কানুন নেই, চাইলেই টিসি দিয়ে দিবে, আপনি ভুলে যাচ্ছেন আমি একজন শিক্ষিকা, একটা কলেজে পড়াই, আমাকে হুমকি দিবেন না! আর আপনাকে তো আজ থেকে চিনি না সেই তখন থেকেই চিনি, যখন লোক দিয়ে ওর বাবাকে আটকে রেখে কলেজে দাবা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন শেষ রক্ষা তো হয়নি, কলেজ থেকে রাস্ট্রিকেটেড হয়ে পরে ফিজিক্যাল স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন, ভুলে গেছি ভেবেছেন। আমিও তো এ শহরেরই মেয়ে, উড়ে তো আসিনি!”

যেন জোঁকের মুখে নুন পড়লো, মিন মিন করতে করতে কি যেন বলতে বলতে বেরিয়ে গেলেন। আর এত দিনে আমার সেই রহস্যর সমাধান হল! আমি খুশিতে মাকে জড়িয়ে ধরলাম, কিন্তু শধু মা মা গন্ধই পেলাম না, সেই চেনা গন্ধটা আবার পেলাম, মনে হল বাবাও যেন আমাদের জড়িয়ে ধরলেন! কেমন অচেনা লাগে, এই ঘর, এই সময় সব কিছু!

দেখতে দেখতে দিনটা চলে এলো, মা সেদিন কলেজ থেকে ছুটি নিয়েছেন। খেলা হবে স্টেডিয়ামের মাল্টি পারপাস হলে। আমরা পৌঁছে দেখি লোকে লোকারণ্য, গঞ্জের সব মানুষ বুঝি এসে গেছে। আমার একটু যেন ভয় ভয় করে উঠলো বুকটা! মা কিভাবে যেন বুঝে গেলেন, আমার হাত টা শক্ত করে ধরে বললেন একটুকুও ভয় পাস নে বাচ্চা! আমি তো আছি তোর পাশেই, আর জানিস তোর বাবাও সব দেখছেন, তোর পাশেই আছে। মার হাতের রুমালে সব সময় লবঙ্গ থাকে সেখান থেকে একটা লবঙ্গ আমার মুখে দিয়ে বললেন যাহ্‌, জিতে আসিস ফিরে! ফিয়ামানিল্লাহ!

এমন করেই বুঝি যুদ্ধের সময় মায়েরা তাঁদের ছেলেদের এগিয়ে দিত, সাহস দিত। নিজেকে আমার সাহসে শক্তিতে খুব ভরপুর মনে হচ্ছে। নিজেকে কিশোর এক গেরিলা যোদ্ধা মনে হয়। মনে হয় মহাভারতে পড়া অভিমন্যু, কিশোর সে যোদ্ধা আমি। আমি অভিমন্যুর মত শুধু চক্রবুহ্য ভেঙে ঢুকতেই জানি না বের হয়েও আসতে জানি। প্রতিটি চাল আমার নখ দর্পণে! নিউরোনে এমন ভাবে গেঁথে আছে আমি চোখ বুজেও শুরুর চাল গুলো খেলতে পারবো। তন্ময়‘দার খেলা আমার জানা হয়ে গেছে কিন্তু আমার খেলা সে জানে না। কারপভ এর খেলা গুলি বাবার সাথে খেলতে খেলতে অনেক আট ঘাঁট আমার জানা হয়ে গেছে! আমি জানি আমার বাবার মত কোচ আর দ্বিতীয়টি নেই! ’৭৫ এ ববি ফিশার আর কারপভের ক্লাসিক ম্যাচ গুলি সব আমরা খেলেছি, একটা একটা চাল ধরে ধরে।

চেস শুধু খেলাই ছিল না বাবার কাছে, এটি ছিল একটা জীবন বোধ, তখন এই শক্ত কথা গুলি বুঝতাম না , এখন যেন কত সহজ হয়ে গেছে আমার জন্য। বাবা বলতেন “চেস শুধু খেলাই নয় এটা একটা লাইস্টাইল, একটা ফিলসোফি”, আমি তখন বুঝতাম না এখন যেন সহজেই সব বুঝে যাই মনে হয় আমি যেন এখন “বাবার মত বড়”। আমার একটা ভালো লাগা ভালো লাগা দুঃখ বুকে জমে থাকে।
অন্যদিন খেলায় স্কুলের টিচাররা জাজ হলেও আজ কে ঢাকা থেকে জাজ এসেছেন, উনি ফিদে মাষ্টার। খুব বেশী বয়স না! জিন্সের প্যান্ট আর কালো একটা টি শার্ট পড়া এত সাধারণ, দেখলেই আপন মনে হয়। আমাদের সাথে আলাপ হবার পর আমরা টেবিলে যেয়ে বসলাম, আর আজকে আমাদের স্টপ ওয়াচ ও দেয়া হয়েছে, আবার স্কোর শিটও লিখতে হবে, পুরো ইন্টার ন্যাশনাল ষ্ট্যাণ্ডার্ড, এগুলো দেখ শাফি স্যার একটু ঘবড়ে গেলেন, জাজ কে বললেন বাচ্চাদের খেলায় এসব কি দরকার, আমার দিকে আঙ্গুল তুলে বললেন ওরা পারবে নাকি এসব। জাজ আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন আমি হাসি মুখে বললাম জি আমি স্কোর শিট লিখতে পারি, আমার বাবা শিখিয়েছেন। তন্ময়দা একটু নার্ভাস খুব ভালো করে লিখতে পারেন না মনে হয়। স্যার এক অদ্ভুত প্রস্তাব দিয়ে বসলেন উনি তন্ময়’দার স্কোরশিট লিখতে চাইলেন, আসলে তো কাছাকাছি থেকে আমাকে মান্সীক একটা চাপ দেবার চেষ্টা। জাজ হাসি মুখে বললেন “ নো স্যার! আপনি আমার সাথে এখানে বসে থাকবেন।“ বলে স্যার এর হাত চেপে তার খালি চেয়ারে বসিয়ে দিলেন। স্যার ফ্যাকাসে মুখে অ্যাঁয় অ্যাঁয় করতে লাগলেন।

খেলা হবে বেস্ট অফ থ্রি। আমরা চেয়ারে বসলাম, টস করলেন জাজ আমি হারলাম, তন্ময়’দা সাদা নিল। ঠিক সাড়ে দশটায় খেলা শুরু হল! সব শুন শান, শুধু ঘড়ির টিক টক, টিক টক চলছে। কিংস গাম্বিট ওপেনিং এ খেলা শুরু করলো, ও যা ভেবে ছিলও আমি ই ফউর খেলবো, তা না খেলা আমিও ওর মতই খেলা শুরু করলাম, ঠিক ’৭৫ এর ফিশার আর কারপভ এর মত! ও একটু অবাক! ফিস ফিস করে বলে, “কিরে বট তলার উকিলের বাচ্চা, লাইনে চলে এসে গেছিস, দেখি।“ আমি রাগ হলাম না , জানি আমাকে রাগাবার চেষ্টা করছে, জাজ আর দর্শকরা এত দূর বসেছেন এর কিছুই শুনবে না। হাত দিয়ে মুখটা আড়াল করে বলছে সে, যেন কেউ না বুঝে! আমিও চুপে চুপে বললাম “ঐদিন যে দুটো কে সাইজ করেছিলাম, ভুলে গেছিস!” আমার মুখে “তুই” শুনে রাগে লাল হয়ে উঠলো, ঘি মাখন খাওয়া গোল মুখটায় গোল গোল বড় দুইটা চোখ ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না, আমার হঠাৎ কুমড়ো পটাশ এর কথা মনে এলো। আমি আরও রাগাবার জন্য বলি “খেল কুমড়ো পটাশ, তোর টাইম চলে যাচ্ছে”। নিজের ফাঁদে নিজেই পড়লো আমাকে রাগাতে গিয়ে নিজেই রেগে গেছে। আর কি রাগ বড় সর্বনাশা বেশিক্ষণ টিকলো না। হেরে গেল!

“দাঁড়া খেলা শেষ হউক” বলে শাসাতে শাসাতে পানি টানি খেতে গেল! নেক্সট ম্যাচে কিছু ঝামেলা করলো না, বিরক্তিকর দিফেন্সিভ খেলে ড্র করলো। সে কি হাসি তার! বুঝে গেছি, নেগেটিভ খেলে আমাকে বিরক্ত করবার প্ল্যান্টা শাফি স্যার ওকে দিয়েছেন। এবার আমি উঠে একটু মায়ের কাছে থেকে ঘুরে আসি! মা হাসি মুখ করে বললেন, “খুব ভালো খেলছিস, শোন ভোঁদড় টার সাথে কোন কথা বলবি না”! আমার হাসি পেল আসলেই যেন ভোঁদড় আবার গোঁফও আছে। আমি হাসি মুখ নিয়ে খেলা শুরু করলাম, ও চাল শুরু করবার আগেই আমি বললাম, “খেল না ভোঁদড়!” ও আকাশ থেকে পড়লো, আমি এমন বলতে পারি! ওর তখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা! চোয়াল শক্ত করে খেলা শুরু করলো।

হ্যাঁ এই বার হচ্ছে খেলা। ছত্রিশ চাল চলে গেছে, কেউই সেন্ট্রাল বোর্ডের দখল নিতে পারিনি। বরং আমার একটা বিশপ ও এক্সট্রা খেয়ে নিয়েছে। তারপরও বাজে কথা বলেনি কিন্তু যে একটা পিত্তি জ্বালানো হাসি দিলো, এর চেয়ে দু’কথা শুনানও ভালো। একটু একটু ভয় যে হচ্ছে না তা না। কিন্তু ভয় পেলে চলবে না! আমি খুব সাবধানে চাল দিতে থাকলাম। ওর কুইন ও নাইট আমাকে সমানে জ্বালাচ্ছে। আমার বাবার কথাটা খুব মনে পড়ছে, আমার নাইট টাকে আরও একটিভ করতে হবে। আমি আমার নাইট কে আমি এইচ ফউর এ নিয়ে বসিয়ে রাখলাম। আমার সাদা বিশপ নেই তাই ওর রাজার সামনের ঘর নিরাপদ আছে। আমি খালি ওর আক্রমণ ঠ্যাকাচ্ছি, নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। কুইন কে বাঁচাতে বাঁচাতে দ্বিতীয় ভিতরে একদম রুখের ঘর এ এইটে নিয়ে এসেছি। পুরো মিডল বোর্ড ওর দখলে। হঠাৎ কি যেন হয় আমার মনে হয় আমি যেন আর আমি নেই। চারিদিক শূন্য, সাদা এক বিশাল ঘর যার কোন শেষ নেই এমন এক ঘর আমি একা বসে সামনে শুধু চৌক দাবার ছক, চৌষট্টি চৌখুপি সাদা আর কালো, যেন ভালো আর মন্দর দ্বন্দ্ব। আর কিছুই বুঝি নেই চারিদিকে, এর মাঝে একটা চেনা গন্ধ আমাকে ঘিরে ধরে, পোলো গ্রিন অডিকোলনের কষ্টে গন্ধ, আর তার সাথে ফ্লাইং ডাচ ম্যানের চেনা গন্ধ। যন্ত্রের মত আমার হাত সেন্ট্রাল বোর্ডে থাকা আমার নাইট টাকে তুলে ওর একটা পউন খেয়ে নিল, আমার এমন বোকা চালে তন্ময়’দা হাসি হাসি মুখে আমার নাইট টাকে তার বিশপ দিয়ে খেয়ে নিল, হলের মাঝে একটা গুন গুন শব্দ আমার কানে আসতে লাগলো, ও দুটি পাওয়ার উইন করে এগিয়ে আছে, শাফি স্যার সাবাস বলে লাফিয়ে উঠেছেন। আমি স্তব্ধ হয়ে বসে আছি, ঘড়িরা শব্দ করছে টিক টক, টিক টক।

আমি না, যেন আমার হাত আমার কুইনকে আলতো ভাবে তুলে নিল। আড়াআড়ি এগিয়ে নিতে থাকল। রাজার ঘরের সামনের ঘর আর কুইনের মাঝে আমার খোয়া যাওয়া নাইটটাই ছিল বাঁধা। নাইট টাকে দিয়ে টোপ দেয়ায় লোভ আর সমলাতে পারেনি তন্ময়’দা। আমি যখন ওর রাজার সামনের পউনকে সরিয়ে আমার কুইনকে বসিয়ে দিলাম জি টু ঘরে, ওর চোয়াল ঝুলে গেছে তখন। আল জিহবটা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে বিকট হা করা মুখের ভিতর। পুরো হল জুড়ে পিন পতন নিস্তব্ধতা, আমি চাল দিয়েই ঘড়ি বন্ধ করে দেই। কিছুক্ষন নাকি অনেকক্ষণ, আমি জানি না, ক্ষণ, পল মুহূর্ত আমার সব এলোমেলো হয়ে গেছে! হঠাৎ এক বিশাল উল্লাস আর আনন্দের শব্দে চারিদিক কেঁপে উঠে, আমি সময়ে ফিরে আসি। আমি যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম কোথাও, প্রিয় চেনা এক গন্ধ আমাকে ঘিরে রেখেছিল কিছুখন। আমি অবাক হয়ে বসে থাকি! ধীরে ধীরে গন্ধটা ফিকে হতে থাকে। আমি বসে থাকি চোখ বুজে, বুঝিনা কতক্ষণ!

“Somewhere, something incredible is waiting to be known!” ...
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ দুপুর ১২:২১
১২টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×