somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসার বন্ধুত্ব-০৩

২৪ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব

১০।
বাসায় এসে নীল লাঞ্চের পর শুয়ে বিশ্রাম করতে গেলো। কালকে থেকে আর এভাবে আরাম করা হবে না, তিন মাস। বাবা, মা আবার কই যেনো গেছে। প্রিয়াও গেছে পড়তে।
হঠাত গেটে যেনো কে কলিং বেল দিলো।
গেট খুলতে গিয়ে দেখে অনীতা।
নীলঃ প্রিয়া তো বাসায় নাই।
অনীতাঃ ভাইয়া ওর রুমে কালকে আমার একটা বই ফেলে গেছি। নিতে হবে।
নীলঃ ঠিক আছে, এসো ।
বই নিয়ে বের হবার সময় অনীতা বলে,”ভাইয়া বাসা ছেড়ে থাকতে কষ্ট হয় না?”
নীলঃ হবে না কেনো? হয় তো। কিন্তু কি করবো। যেতে যেহেতু হবেই কষ্ট যতো কম মনে করা যায়, ততই ভালো।
অনীতাঃ ভাইয়া আপনার ঠিকানা টা আমাকে দিবেন? চিঠি লিখবো?
নীলঃ হ্যা লিখে নাও (মনে মনে বলে, আর যাই করো প্রেম পত্র লিখো না, তাহলে একটা এক্সট্রা পেরেন্স ডে কাটাতে হবে প্রিন্সিপাল এর রুম এ) । জানো অনীতা, আমাদের না সব চিঠি আগে স্যার রা পড়ে, তারপর আমাদের দেয়।
অনীতাঃ অদ্ভুত তো। ঠিক আছে আমি আপনার খোজ নিবো কিন্তু। আসি। ভালো থাকবেন।
নীলঃ তুমিও ভালো থেকো।
১১।
ভোর বেলায় রেডি হয়ে বের হতে যাবে দেখে বাবা গাড়ি বের করছে।
নীলঃ তুমি আবার কই যাও?
বাবাঃ তোকে বাসে তুলে দিয়ে আসি।
নীলঃ বাবা, আমি এখন একা যেতে পারি। আর পুরোটা পথই তো একা যাবো।
বাবাঃ সেজন্যই তো অন্তত বাসে তুলে দিয়ে আসি।
নীলঃ ঠিক আছে , চলো। দাড়াও, আমি তমাল কে ফোন করে আসি বাস স্ট্যান্ডে আসার জন্য।
ইস, প্রতি বার এই অনূভুতি টা হয় বের হবার সময়। মনে হয়, ধুর কলেজে না যেতে হলে কতো ভালো হতো। আর ২ টা দিন ছুটি থাকতো। এতো গুলা বই নিয়ে এসেছিলো। একটু পড়া দরকার ছিলো। বেশির ভাগ বই তো যেভাবে নিয়ে এসেছিলো সেভাবেই নিয়ে যাচ্ছে।
ইস, আর কয়েকদিন থাকলে নির্ঘাত অনীতার সাথে কিছু একটা হয়ে যেতো।তিন মাসে ওর কতো ছেলের সাথে পরিচয় হয়ে যাবে। ধুর।
আর এই হাসান টা যে কি? এতোদিন ধরে একটা মেয়েকে পছন্দ করে বলতেই পারতেছে না। আমি হলে তো কবেই বলে দিতাম। নেস্কট ছুটিতে এসেই হাসানের কাহিনিটা শেষ করে দিতে হবে।
ওরা বাস স্ট্যান্ডের প্রায় কাছাকাছি। হঠাত নীল তাকিয়ে দেখে পাশের রিকশায় কালকের সেই মেয়েটি। আজকেও খুব সুন্দর লাগছে। কিন্তু ব্যাপারটা একটু বেশি কাকতালীয় হয়ে গেলো না? কালকে দেখা আবার আজকে যাবার সময়ও দেখা। যদিও আজকে মেয়েটা ওকে খেয়ালই করে নাই। করলেও হয়তো চিন্তো না। কালকে মাত্র কয়েক মুহুর্তের দেখা।
বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখে তমাল হাজির। সবার কাছ থেকে বিদায় নিতে ওরা তাদের জেলখানায় যাত্রা শুরু করলো।
১২।
রাতে যথারীতি কলেজে আড্ডা। কে ছুটিতে কি করেছে, কোথায় ঘুরেছে। একেক জনের একেক রকমের কাহিনি।
এক জায়গায় অবশ্য বেশিরভাগেরই একি কাহিনি। বই খাতা যেভাবে নিয়ে গিয়েছিলো, ঠিক সেভাবেই ফেরত এসেছে।
তমালের কল্যানে সবাই অনীতার কাহিনি শুনলো। রনি তো বলেই বসলো “যেদিন প্রথম চিঠি আসবে ওইদিন কিন্তু ক্যান্টিন ফ্রি দিতে হবে”
নীলঃ হ্যা, আমার তো বিয়ে লাগছে যে তোকে ক্যান্টিন ফ্রি দিবো।দেখা যাবে ।
১৩।
রাতে ঘুমাবার আগে নীল তমাল কে সেই মেয়েটির কথা বললো। তমাল এর সহজ উত্তরঃ এটা আর নতুন কি? তুই যেখানে মেয়েঘটিত কাহিনি সেইখানে।
নীলঃ ঘুমা, তুই তো আবার দুই লাইন বেশি বুঝিস।
এই তিন মাসে পড়ার চাপে ওদের অবস্তা হালুয়া। এর মাঝে বলার মতো কাহিনি হয়েছে, অনীতার চিঠি।
যাক, বুদ্ধিমতী মেয়ে। এমন কিছু লেখে নাই যাতে সেন্সর বোর্ডের হাতে পড়ে। নাহ, মেয়েটা ভালই। মিশলে মনে হয় খারাপ হবে না।
একদিন ধরা পড়ে গেলো তমালের হাতে।
তমালঃ কিরে তুই এক চিঠি কয়বার পড়িস?
নীলঃ না এমনি দেখছিলাম। মেয়েটার হাতের লেখা বেশ সুন্দর। আর তুই যা ভাবতেছিস, তা না। আমরা তো জাস্ট ফ্রেন্ড।
তমালঃ হ্যা। আমার এক কাজিন আছে। এন এস ইউ তে পড়ে। সেও তার যেকোনো গার্ল ফ্রেন্ড এর সম্পর্কেই বলে :just: ফ্রেন্ড।
নীলঃ দেখা যাবে নে, পরে কি হয়। দেতো প্র্যাকটিকাল খাতাটা…
এর কয়েকদিন পর পেলো হাসানের এক করুন চিঠি। ওর কাহিনি বেশ খারাপ। ও নাকি সেই মেয়েকে চিঠি দিয়ে প্রস্তাব করেছিলি। মেয়ে চিঠি না পড়েই ছিড়ে ফেলে দিয়েছে। নাহ, হাসানের কাহিনি তো বেশ সিরিয়াস হয়ে উঠছে, এই বার গিয়েই একটা কিছু করতে হবে।
১৪।
“আচ্ছা, আমি আপনাকে সাতটা চিঠি লিখলাম, আর আপনি লিখলেন মাত্র তিনটা। এটা তো ঠিক না”
“না আসলে এইবার পড়ার বেশ চাপ ছিলো তো, তাই।”
তিন মাস পর ছুটিতে এসেই অণীতার প্রশ্নের মুখে পড়লো নীল।
অনীতাঃ আসলে আপনাদের ওই লাইফ টা আমার খুব ভালো লাগে। কিন্তু আম্মার যেতে দিল না। যাই, প্রিয়ার সাথে কিছু কাজ আছে। পরে কথা হবে।
নীল চিন্তা করে অনীতা কি আমাকে পছন্দ করা শুরু করলো?
১৫।
সন্ধার পর গেলো হাসান এর বাসায়। গিয়ে দেখে যা ভেবেছিলো তাই। মন খারাপ করে বসে আছে।
নীলঃ কিরে তোর এই অবস্তা কেন? টেনশন নিস না। এইবার তোর কাহিনি এর একটা কিছু করেই যাবো, দেখিস।
হাসানঃ দেখা যাক।
নীলঃ ওকে , এখনি চল তো। তোর ওই রাজকন্যা এর বাসা টা চিনে আসি। তারপর আমি খোজ লাগাবো কাল্কেই।
এই সময় সোহেল এসে হাজির। “কিরে নীল, তুই কবে আসলি?”
নীলঃ আজকেই।
সোহেলঃ কই যাস?
নীলঃ যাই ,আমাদের ভাবীর বাসা টা চিনে আসি।
সোহেলঃ চল যাই।
বাসার কাছাকাছি এসেই হাসান বলে, ওইযে দেখ বারান্দায় হাটাহাটি করছে।
নীলঃ শালা, এত দূর থেকে তুই দেখতেছিস মনে চোখে। দাড়া আমাকে চিনে না। আমি আরেকটু কাছে থেকে দেখে আসি।
কিন্তু নীলের ভাগ্যটাই খারাপ। যেই কাছাকাছি গেলো ওমনি গেলো কারেন্ট। মেজাজ খারাপ করে ফিরে এলো।
ধুর, চেহারাটাই দেখতে পারলাম না।চিন্তা করিস না । দেখি এক্টা পথ বের হয়ে যাবে। চল, কতোদিন চাচার দোকানে চা খাই না।
১৬।
পরদিন সকাল এ নীল বাসা থেকে বের হলো তমাল এর বাসায় যাবে বলে। ওর ব্যাগে জায়গা ছিলো না। তাই কিছু বই খাতা তমালের ব্যাগে দিয়েছিলো।
কিন্তু কিছুদুর যেতেই অবাক কান্ড। সেই মেয়েটিকে আবার দেখলো। গতো দুই মাসে নীল প্রায় ভুলেই গিয়েছিলো এই মেয়েটির কথা। কিন্তু তিনবারের দেখা নিশ্চয় কাকতালীয় হতে পারে না। কি ব্যাপার, ওর সাথে এই মেয়ের বার বার দেখা হচ্ছে কেনো? নাহ, মেয়েটাকে খুজে বের করা দরকার।
(চলবে…)
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×