somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছ্যাকাবার্ষিকী

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যুথিকে এ সাজে যে এ সময় দেখবো তা কল্পনা করিনি। এ কি! যুথি এখানে কেন? যুথির গায়ে কনের সাজ। তাহলে আমি বর সেজে নিই?
দুই চোখ যেন ঝাপসা হয়ে আসছিল আমার। শরীরের রক্ত চলাচল যেন বন্ধ হয়ে আসছিল।

যেভাবে এ অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিলাম তার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বলছি।



ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হওয়ার সময় তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। প্রথমেই বুঝেছিলাম, সে খুব উচ্ছল স্বভাবের মিশুক মেয়ে। প্রথম ক্লাসেই তার এই স্বভাবের পরিচয় পেয়েছিলাম।

ওই দিনই ফোন নাম্বার নেয়ার কথা বলে যুথি আমার মোবাইল ফোনটি চেয়ে নেয়। এমন সময় যুথি আমার মোবাইলটি নিয়ে দেখতে থাকে।

তারপর যখন মোবাইল ফোন চাইলাম তখন সে বললো, আগে একটি পার্টির আয়োজন করো, তারপর মোবাইল ফোন নাম্বার পাবে।

কি দুষ্ট মেয়ে!

যাক, তার শর্ত মেনে নিযে মোবাইল ফোন নাম্বারটি নিলাম।

এভাবেই শুরু।

আস্তে আস্তে আমাদের বন্ধুত্ব গভীর হতে লাগলো।

সৌভাগ্য কি দুর্ভাগ্যক্রমে তার এবং আমার বাসা ছিল মোটামুটি একই এলাকায়। আবার আমাদের গ্রামের বাড়িও ছিল একই জেলার একই উপজেলায়। ফলে দুজন এক সঙ্গেই কলেজে আসা-যাওয়া করতাম।

একদিন যুথি আমাকে প্রশ্ন করলো, কখনো প্রেম করেছ? কাউকে ভালো লাগে কি?

বললাম, আসলে কখনো সেভাবে চিন্তা করিনি। কিছুক্ষণ পর দুষ্টিমি করে বললাম, তোমাকে নিয়ে ভাবলে কেমন হয়?

সে তখন কিছু না বলে চুপ থাকলো।



একদিন আমরা ফয়ে’স লেকে বেড়াতে গেলাম। ওই দিন যুথি আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, আমি যদি তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি তাহলে তোমার কি আপত্তি থাকবে?

বললাম, বুঝলাম না। বুঝিয়ে বলো।

সে সরাসরি বললো, আমি যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি! তোমাকে আমার করে পেতে চাই। বলো তুমি কি বলবে।



তাকেও যে আমার ভালো লাগতো। তাই না করতে পারলাম না।

ক্রমেই যুথির কাছে খুবই প্রিয় হয়ে উঠলাম।

সে প্রায়ই বলতো, তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমাকে হারাতে চাই না।

আমিও তাকে স্বপ্ন দেখাতাম, আমরা বিয়ে করবো, ছোট একটি সংসার হবে। সেটি ভালোবাসায় পরিপূর্ণ থাকবে ইত্যাদি।



সব কিছু ভালোভাবেই এগোচ্ছিল। এর মধ্যে তার আচরণের পরিবর্তন হতে লাগলো। প্রায় সময় ফোন রিসিভ করে না। আবার রিসিভ করলেও কাজ আছে, কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে ইত্যাদি বলে ফোন রেখে দেয় বা আমার ফোন কারার সময়গুলোতে ফোন বন্ধ রাখে।

তারপরও সামনে মেজ বোনের বিয়ের জন্য ব্যস্ত থাকায় তেমন গুরুত্ব দিলাম না।

১৩, ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি বোনের বিয়ের দিন ঠিক হলো। ১৩ তারিখ হলুদ অনুষ্ঠান। ১৪ তারিখ বরভাত ও ১৫ তারিখ বৌভাত অনুষ্ঠান।

যুথিকে বিয়েতে নিমন্ত্রণ করলে সে বলে, আমি খুব দুঃখিত যে, ওই দিনগুলোতে আমার কাজিনের বিয়ে।

তার সমবয়সী এক কাজিন ছিল এবং তারও বিয়ের কথা চলছে জানতাম। তাই শুধু বললাম, তবুও একটু চেষ্টা করো। কে জানতো এই কাজিন যে, সে নিজেই?



অবশেষে এলো সেই ১৪ ফেব্রুয়ারি। আমার আপুকে সাজানোর জন্য বিউটি পার্লারে নিয়ে গেলাম।

পার্লারের ভেতরে পুরুষ প্রবেশ নিষেধ। তাই বাইরেই দাড়িয়ে থাকলাম।

আপুকে যখন সাজরুম থেকে বের করে আনা হচ্ছিল তখন দেখলাম, সঙ্গে আরো একটি মেয়েকে সাজিয়ে আনা হয়েছে। দেখতে পরিচিত লাগছিল। ভালোভাবে যখন দেখলাম তখন মনে হচ্ছিল, সারা পৃথিবীর সব দেশের প্রস'ত করা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো দিয়ে যেন আমার বুকে আঘাত করছে। মনে হচ্ছিল, চারপাশ যেন কালো গুহাতে পরিণত হয়েছে। আমি যেন অন্ধ হয়ে যাচ্ছি, হারিয়ে যাচ্ছি অন্ধকার কোনো গ্রহে। কারণ সেই মেয়েটি ছিল আমার ভারোবাসার মানুষ যুথি।

তারপরও শত কষ্ট বুকের ভেতর পাথরে চেপে একটু আড়াল হয়ে গেলাম।

পরে আপুকে নিয়ে চলে এলাম। আসার সময় সব পরিষ্কার হচ্ছিল কেন সে আমার নিমন্ত্রণ গ্রহণ করলো না, কেনই বা গত এক সপ্তাহ ধরে তার ফোন বন্ধ ছিল, কেন সে আমার কাছ থেকে অনেকটা দূরে সরে গিয়েছিল।



এ ভালোবাসা দিবসে আমি ছ্যাকা খেলাম।

এখন প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি হয়ে আসে আমার বোন এবং যুথির বিয়েবার্ষিকী আর আমার জীবনের ছ্যাকা খাওয়ার বার্ষিকী।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×