somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহা পৃথিবী [উপন্যাস] - ৪

২৪ শে মার্চ, ২০০৯ সকাল ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব

দুই
----
ক্লাসের একদম পিছনের বেঞ্চটায় বসে বেঞ্চের নীচে গল্পের বই রেখে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়ছে রায়হান৷ এটা তার প্রিয় একটা অভ্যাস, বেঞ্চের নীচে গল্পের বই রেখে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়া৷ সব ক্লাসে সব সময় অবশ্য এটা করার সুযোগ পাওয়া যায় না, তবে সুযোগ পেলেই সে এটা করে৷ এ জায়গাটা জেলা শহর না হলেও, এখানে বেশ বড় একটা পাবলিক লাইব্রেরী আছে৷ সে প্রতিদিন লাইব্রেরী থেকে দু'টা করে বই আনে, পড়া শেষ হতেই সে দু'টো ফেরত দিয়ে আরো দু'টো আনে৷ আর ক্লাসের মধ্যে এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে সে বইগুলা পড়া তার বেশ প্রিয়৷

ইংরেজীর ক্লাস হচ্ছে৷ স্যার একজন একজন করে রিডিং পড়তে দিচ্ছেন৷ একজন করে দাঁড়িয়ে পড়ছে, অন্যরা শুনছে৷ রায়হান যথারীতি বেঞ্চের নীচে গল্পের বই রেখে পড়ার চেষ্টা করছে৷ চেষ্টা করছে কারণ আজকে বইয়ের দিকে তার মন নেই৷ খুব অস্থির লাগছে, মনটা পড়ে আছে অন্যখানে, তার নতুন সাইকেলটার দিকে৷ মনে হচ্ছে কখন এই যন্ত্রণাদায়ক ক্লাসটা শেষ হবে আর সে ছুটে যেতে পারবে তার সাইকেলটার কাছে৷ কল্পনার চোখে সে দেখতে পাচ্ছে তার ঝকঝকে নতুন সাইকেলটা৷ যত মনে পড়ছে ভালোলাগায় মনটা ভরে যাচ্ছে তার৷ মনে হচ্ছে সাইকেলে চেপে উড়ে যাচ্ছে সে৷

দু'দিন হলো নতুন একটা সাইকেল পেয়েছে সে৷ সাইকেলটা পেতে বাবাকে কম জ্বালাতে হয়নি৷ তার ইচ্ছে ছিলো একটা রেসিং সাইকেলের৷ কতদিন হলো তার একটা রেসিং সাইকেলের শখ, কিন্তু সেটা কিনে দেয়ার মত অবস্থাই তার বাবার হচ্ছিলো না৷ রেসিং সাইকেলের দাম সাধারণ সাইকেলের থেকে অনেক বেশি৷ তার বাবা বলেন সাধারণ একটা সাইকেল নিতে, কিন্তু সেই বয়সটা ঠিক বাবার অর্থনৈতিক অবস্থা বোঝার মত বয়স না, তাই সে কিছুতেই সাধারণ সাইকেল নিতে রাজি হয় না৷ সব সময় ঘ্যান ঘ্যান চলতেই থাকে৷ অবশেষে, বহুদিনের ব্যর্থ আবদারের পর, শেষ পর্যন্ত একটা সাধারণ সাইকেলেই রাজি হয়েছে সে৷ সাইকেলটা পাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সে বুঝতে পারেনি৷ কিন্তু সাইকেল পাওয়ার সাথে সাথে সে সেটার প্রেমে পড়ে গেছে৷ কি সুন্দর ঝকঝকে একটা সাইকেল৷ যতবার সে সেটার দিকে তাকায় ততবার তার মনটা আনন্দে ভরে যায়!
ক্লাসটা খুব একঘেয়ে লাগছে৷ স্যার কি পড়াচ্ছেন সেদিকে মন বসছে না৷ বিরক্তিতে বারবার হাই উঠছে৷ বিরস মুখে স্কুলের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে রায়হান৷
ছুটির ঘণ্টা বাজতেই দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লাসরুম থেকে বের হলো সে৷ “ছুটি গরম গরম রুটি, ছুটি গরম গরম রুটি” আওয়াজে তখন মুখরিত স্কুল৷ রায়হানের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই৷ ক্লাসরুম থেকে বের হয়েই স্কুলের সাইকেল স্ট্যাণ্ডটার দিকে দৌড় লাগালো সে৷ এক্ষুণি সাইকেলটা নিয়ে বের হবে, তারপর ছুট ছুট ছুট... হাইওয়ে ধরে যতদূর চোখ যায় চলে যাবে... মাঠের পরের দূরের দেশে, যেখানে দিগন্ত গিয়ে মিশেছে অচেনা রঙিন দেশে... চলে যাবে সেখানে... যেখানে রামধনুটা গিয়ে মিশেছে দিগন্তে... চলে যাবে সেই বিলে, যেখানে খুব ভোর বেলা পদ্মফুলের মাথায় সাপ আর ভ্রমরেরা খেলা করে... চলে যাবে আজ দিগন্তের অপর পাড়ে...

দূর থেকেই সাইকেল স্ট্যাণ্ডের দিকে তাকালো সে৷ সাইকেলটা যেখানে রেখেছিলো চোখ গেলো সেদিকে৷ ধ্বক করে কেঁপে উঠলো বুকটা৷ সাইকেলটা সেখানে নেই! কেঁপে উঠলো সে৷ এক দৌড়ে পৌঁছে গেলো স্ট্যাণ্ডে৷ কিন্তু নেই, সাইকেলটা কোথাও নেই! সে পাগলের মত এদিক ওদিক তাকালো, কোথাও তার সাইকেল নেই৷ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো রায়হান৷
তার সাইকেল হারিয়ে গেছে? চুরি হয়ে গেছে তার সাইকেল? রায়হান ঘেমে গেলো৷ তার হাত পা অবশ হয়ে আসতে লাগলো৷ কোনো কিছু বিশ্বাস হতে চাইছে না! দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে থর থর করে কাঁপতে লাগলো সে৷ নিঃশ্বাসটা কেমন যেন আটকে আসতে লাগলো, আতঙ্কে বুকটা হাঁপরের মত ওঠা নামা করতে লাগলো... চুরি হয়ে গেছে তার সাইকেল... নেই... সেটা কোথাও নেই... তার সাইকেল... নেই.... তার সাইকেল...
ধড়মড় করে চোখ খুলে উঠে বসলো রায়হান৷
তার বুঝতে কিছুক্ষণ সময় লাগলো যে সে কোথায় আছে৷ বুকটা তখনও ভয়ানক ওঠা নামা করছে৷ অবাক হয়ে সে অনুভব করলো তার গাল বেয়ে পানি পড়ছে৷ আস্তে আস্তে সে বুঝতে পারলো যে সে বসে আছে তার বিছানায়৷ এটা ঢাকা৷ স্কুলের সেই সময়টা সে অনেকদিন আগে পার করে এসেছে৷ পার করে এসেছে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ও৷ এখন সে একটা পত্রিকায় সাহিত্য সম্পাদনা করে৷ টিভিতে নাটক পরিচালনা করে৷ স্কুলের সেই দিনগুলো কবে হারিয়ে গেছে, সেই সাইকেলটা কবেই নেই হয়ে গেছে জীবন থেকে! সাইকেলটার জন্য এখন আর মন কাঁদে না৷ সেটা হারিয়ে যাবার ভয় এখন আর মনকে কুরে কুরে খায় না৷ সেই সময় সাইকেল হারিয়ে যাবার ভয়টা বেশ ভালোই গেঁথে গিয়েছিলো মনের মধ্যে, এরকম স্বপ্ন সে তখন মাঝে মাঝেই দেখতো৷ আজ, এতদিন পর এরকম একটা স্বপ্ন কেন দেখলো সে?
দুপুর বেলা বিছানায় শুয়ে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিলো সে৷ তিন দিন ধরে জ্বরের ঘোরে পরে আছে রায়হান৷ জ্বরে বেশ কাহিল হয়ে গেলেও ব্যাপারটা একেবারে খারাপও লাগছে না৷ প্রচণ্ড গরম পরেছে, অথচ জ্বরের কারণে গরমটা টের পাওয়া যাচ্ছে না৷ বরং এই গরমেও বেশ একটা শীত শীত আমেজ পাওয়া যাচ্ছে৷ আর তাছাড়া এই অসুখকে উপলক্ষ্য করেই কয়েকদিন বাসায় শুয়ে বসে বিশ্রাম নেয়া হয়ে যাচ্ছে৷

কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বিছানায় বসে রইলো সে৷ স্বপ্নের ঘোরটা তখনও কাঁটেনি৷ অনেক অনেকদিন পর স্বপ্ন দেখলো সে৷ ইদানীং স্বপ্ন দেখা হয় না৷ ঘুমাতে যায় অনেক রাতে, তাই ঘুম হয় গাঢ়৷ গাঢ় ঘুমে নাকি স্বপ্নেরা আসে না৷

হাত বাড়িয়ে বিছানার পাশ থেকে সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে একটা সিগারেট বের করে ধরালো রায়হান৷ মুখটা বিস্বাদ৷ জ্বর মুখে সিগারেটের চেয়ে বিস্বাদ জিনিস আর হয় না৷ সিগারেটের গন্ধে নিজেরই মাথার মধ্যে সব জট পাকিয়ে গেলো, গা গুলিয়ে উঠলো, বমি বমি লাগতে লাগলো৷ জানালার কাছে সরে এসে সিগারেট ফেলে দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো সে৷

(চলবে)
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×