somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ সাদা কালো রং

২০ শে মে, ২০১০ রাত ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাদা কালো রং

এক

ভর দুপুরবেলা হাতে কোনো কাজ না থাকলে আমার বড় অস্থির বোধ হয়৷ আগেকার দিনে গ্রামদেশে একটা কথা বেশ প্রচলিত ছিলো- 'ঠিক দুক্কুরবেলা, ভূতে মারে ঢেলা'; আমার অবস্থা হয় ঐ রকম৷ ভূতেরা অবশ্য ঢেলা-টেলা আমাকে মারে না, তবে ফাঁকা দুপুর পেলেই তারা আমার মাথার ভিতরে এসে বসে; বসে বসে পা দোলায়, দুলিয়ে দুলিয়ে অস্থির করে তোলে আমাকে৷ বিশেষ করে যদি হয় গ্রীষ্মের খর দুপুর, প্রখর রোদে পুড়ে যায় চারদিক, ভরদুপুরেও শহরের বুকে নেমে আসে শুনশান নীরবতা, পৃথিবীর দিকে তাকালে টের পাওয়া যায় আশ্চর্য উত্তাপ, তাহলে ভূতগুলো শুধু পা দুলিয়েই ক্ষান্ত হয় না, রীতিমতো নাচা নাচি শুরু করে দেয়৷ আমার বড় অস্থির লাগে৷ অদ্ভুত আশ্চর্য অস্থিরতা আমাকে তাড়া করে৷ ইচ্ছে হয় ছুটে কোথাও বেড়িয়ে যাই৷ কিন্তু আমি কোথায় যাবো? আমার কোথাও যাবার নেই, আমি কোথাও যাই না৷ ঘরের কোনায় চুপচাপ বসে থাকি, শুধু মনটা প্রবল অস্থিরতায় ছটফট করে যায়৷

আজকের দুপুরটাও তেমনই এক ভূতুড়ে দুপুর৷ হাতে কোনো কাজ নেই, মনটা বড় অস্থির হয়ে আছে৷ বিছানায় শুয়ে কিছু একটা কাজের মধ্যে ডুবে গিয়ে নিজেকে ভুলে থাকার কথা ভাবছিলাম৷ নিজেকে ভুলে থাকা, অস্থিরতাকে ভুলে থাকা৷ কাজ, শুধু প্রবল প্রচণ্ড কাজের মধ্যে ডুবে গেলেই অস্থিরতা পেরিয়ে নিজেকে ভুলে থাকা যায়৷ কিন্তু কোনো কাজ খুঁজে পাচ্ছিলাম না৷ কিছুই এই মুহূর্তে করতে ইচ্ছে করছে না৷ অদ্ভুত এক স্থবিরতা আমাকে আঁকড়ে ধরে আছে৷ আমাদের মেসের বুয়া একবার ডেকে গেলো ভাত খাবার জন্য৷ আমি উত্তর না দিয়ে ঘাপটি মেরে পড়ে রইলাম৷ ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু ঘুম আসছিলো না৷ অস্থিরতায় আমি ছটফট করছিলাম৷ এমন সময় আমার মোবাইলটা বিপ বিপ করতে লাগলো৷ কেউ একজন আমার সাথে কথা বলতে চাইছে৷ আমার কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না৷ হাত বাড়িয়ে ফোনটাকে যে বন্ধ করে দিবো সেটাও ইচ্ছে করছে না৷ ভাবলাম যে কথা বলতে চাইছে সে একটু পর এমনিই থেমে যাবে, করুকগে ব্যাটা বিপ বিপ৷

এমনিতে এই ভর দুপুরে আমার সাথে যোগাযোগ করার মানুষের সংখ্যা খুব বেশী নয়৷ তবে কিছুদিন আগে আমার একটা উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে, তারপর থেকে মাঝে মাঝে কেউ কেউ আমার সাথে যোগাযোগ করে৷ যারা যোগাযোগ করে তারা উপন্যাসটার বেশ প্রশংসাই করে, শুনে আমার ভালোই লাগে৷ কখনো কখনো সে ধরণের প্রশংসা শোনার জন্য আমি উদগ্রীব হয়ে থাকি, শুনলে খুশি হই৷ কিন্তু এখন সেরকম কিছুও শোনার আগ্রহ জাগছে না৷ হয়তো আমার পাঠকদেরই কেউ একজন ফোন করেছে, কিন্তু এই ভূতুড়ে দুপুরে তাতেও আমি ভিতর থেকে কোনো সাড়া পাচ্ছি না৷

মোবাইলটা দেখছি বিপ বিপ করেই যাচ্ছে৷ নাহ, যে ফোন করেছে তার বেশ ধৈর্য আছে দেখছি৷ আমি বিছানায় পাশ ফিরে শুয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোনটা ধরলাম৷ আমার এত ক্লান্তি লাগছিলো যে চোখ খোলারও ইচ্ছে হচ্ছিলো না, কাৎ হয়ে চোখ বুজে শুয়ে ছিলাম৷ সেই অবস্থাতেই একটা আশ্চর্য সুন্দর রমণীয় কণ্ঠ শুনতে পেলাম, “হ্যালো৷”
বহুদিন আমি এতো সুন্দর কণ্ঠ শুনিনি৷ বহুদিন কানের মধ্যে এতো সুন্দর ধ্বনি বেজে ওঠেনি৷ আমি চোখ খুলে তাকালাম৷ আমার মোবাইলটা কম দামী, এটার হলোগ্রাফিক প্রতিকৃতি তৈরির ক্ষমতা বেশ দুর্বল৷ কিন্তু সেই দুর্বল ক্ষমতাতেও আমার সামনে যে রমণীটির হলোগ্রাম সে তৈরি করেছে, তা দেখে আমার মনটা আশ্চর্য একটা অনুভূতিতে ভরে গেলো৷ ভারি সুন্দর কোমল চেহারার এক রমণী আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে৷ আমি বেশ বিষ্মিত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে দেখি৷ এমন সুন্দর কোমল একটা মুখ দেখলেই মনটা কেমন যেনো ভরে ওঠে৷

হলোগ্রামের মেয়েটি আমার ঠিক মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে৷ আমি তাড়াতাড়ি বিছানায় উঠে বসে তার দিকে চেয়ে প্রত্যুত্তর করলাম, “হ্যালো৷”
“হ্যালো,” একটু হেসে সে আবার বললো, “আমার নাম ইশরাত৷”
“ও আচ্ছা৷” আমি বললাম৷ একটু ভেবে আবার বললাম, “সুন্দর নাম আপনার৷”
“ধন্যবাদ৷ আমি আপনার উপন্যাসটা পড়েছি৷ আমার খুব ভালো লেগেছে৷”
“আহ! ধন্যবাদ৷ অনেক ধন্যবাদ আপনাকে৷”
ইশরাত মুখ টিপে মৃদু হাসলো৷ তারপর হেঁটে আমার ঘরের এক কোনায় রাখা টেবিলটার গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো৷ কিছুক্ষণ মুখটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আমার ঘরটা দেখলো সে৷ তারপর দু'হাত বুকের কাছে ভাজ করে আমার দিকে চেয়ে মন্তব্য করলো, “হুম, আপনি বেশ এলোমেলো৷ এমন নোংরা করে রেখেছেন সবকিছু!”

এমন আচমকা কথায় আমি বড় অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম৷ সত্যিই তো, আমার ঘরটা বড় বেশী নোংরা! চারপাশে জিনিস পত্রের ছড়াছড়ি৷ এখানে সেখানে বইয়ের স্তূপ, কোথাও একগাদা কাপড় দলা পাকিয়ে পড়ে আছে৷ বিছানার মশারীটা পর্যন্ত খোলা হয় নি, গুটিয়ে একপাশে রেখে দেয়া হয়েছে৷ বিছানার উপরেও কয়েকটা বই এলোমেলো পড়ে আছে৷ ঘরের চারিদিকে একবার চেয়ে দেখে আমার বড় লজ্জা বোধ হলো৷ নাহ, জীবনটা আমার একটু গোছানোর চেষ্টা করা উচিত৷
আমি কিছু বললাম না, ইশরাতের দিকে তাকিয়ে অস্বস্তিভরা একটা হাসি দিলাম শুধু৷ সে মুখে মৃদু হাসি নিয়ে কিছুক্ষণ আমার দিকে চেয়ে থেকে হঠাৎ আবার মন্তব্য করলো, “কিন্তু লেখকরা বোধহয় এলোমেলোই হয়, না?”
এবারে আমি বলার মতো কিছু খুঁজে পেলাম৷ তাড়াতাড়ি বললাম, “সব লেখক মনে হয় এলোমেলো হয় না৷ আসলে কোনো নিয়মেই বোধহয় মানুষকে ফেলা যায় না৷ প্রতিটি মানুষই আলাদা৷”
“তাই৷” বলে সে আমার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে রইলো৷ আমার একটু অস্বস্তি বোধ হতে লাগলো৷ এমন সুন্দর কোনো রমণী এভাবে তাকিয়ে থাকলে অস্বস্তি হতে বাধ্য৷ তার মুখের মৃদু হাসি দেখে আমার মনে হচ্ছিলো, আমি একটা বাচ্চা ছেলে, আর আমার ছেলেমানুষী দেখে সে বেশ মজা পাচ্ছে!
“কিন্তু শেষটা আমার ভালো লাগে নি৷” হঠাৎ আমাকে চমকে দিয়ে বলে উঠলো ইশরাত৷
“মানে?” আমি বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করলাম, “কিসের শেষ ভালো লাগে নি?”
“মানে আপনার উপন্যাসের শেষটা৷”
“ওহ!” শুনে কেনো জানি আমার একটু হতাশ বোধ হলো৷ আবার প্রশ্ন করলাম, “শেষটা কেনো ভালো লাগে নি জানতে পারি?”
“শেষটা কেমন যেনো, অস্বাভাবিক, ভৌতিক৷ নায়ককে আপনি মেরে ফেলতে চেয়েছেন ঠিক আছে, কিন্তু ওভাবে মেরে না ফেললেও পারতেন৷ একটু স্বাভাবিকভাবে মারলে পারতেন৷ ওভাবে মেরে ফেলাটা খুব নিষ্ঠুর! ওটা তো ঠিক স্বাভাবিক মৃত্যুও না৷ আপনি নিশ্চয় জানেন ভূত-প্রেত বলে কিছু নেই?”

আমি একটু চুপ করে থেকে বললাম, “মৃত্যুটা ঠিক ভৌতিক ছিলো না, বলতে পারেন অতিপ্রাকৃতিক, রহস্যময়৷ আর তাছাড়া ভূত বলে কিছু আছে কিনা সে প্রশ্নের মীমাংসা এখনও হয় নি৷ এই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড আমরা যা জানি তার চাইতে অনেক বেশী রহস্যময়!”
“রহস্যময় না কচু!” ইশরাত রাগতস্বরে বললো৷ “আসল কথা হচ্ছে আপনি ছেলেটাকে মেরে ফেলতে চেয়েছেন, আর মেয়েটাকে রাখতে চেয়েছেন অনন্ত কষ্টের ভিতর৷ আপনারা সব পুরুষই এক, আপনারা মেয়েদের কষ্ট পেতে দেখলে আনন্দ পান৷ মেয়েদের কষ্টের ভিতরে রেখে আপনারা মনের ভিতরে তৃপ্তি লাভ করেন৷”

এরকম আক্রমনের বিপরীতে কি বলা যায় আমি ভালো বুঝতে পেলাম না৷ দুর্বলভাবে বললাম, “শুনুন, ব্যাপারটা আসলে ওরকম নয়...”
“ব্যাপারটা ওরকমই৷ আসলে তাই, আপনারা মেয়েদের কষ্ট দিয়ে আনন্দ পান, তাদেরকে কষ্ট পেতে দেখলে তৃপ্তি লাভ করেন, তাদেরকে দুখিনী করে রাখতে চান৷ আপনাদের কল্পনায়, আপনাদের গল্পে, আপনাদের গানে, কবিতায় সব জায়গায় আপনারা তাই মেয়েদের অনন্ত কষ্টের ভিতর রেখে দেন৷ এমনকি বিধাতাও তাই করে৷”
এমন আক্রমনে আমি খুব অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম৷ কেউ আমাকে আক্রমন করে কথা বললে আমি এলোমেলো হয়ে যাই, কথা গোছাতে পারি না৷ ইশরাতের রাগত মুখ থেকে চোখ ফিরিয়ে মনে মনে কথা গোছানোর চেষ্টা করছিলাম, এমন সময় সে আবার বললো, “হ্যাঁ, বিধাতাও মানুষকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পায়৷ বিশেষ করে মেয়েদের৷ বিধাতাও চায় মেয়েরা কষ্ট পাক৷ না হলে আমার জীবনটা এমন হলো কেনো বলতে পারেন? কেনো আমাদের বিয়ের পর পরই সে মারা গেলো? কেনো আমাকে রেখে গেলো অনন্ত কষ্টের ভিতর?”

ইশরাতের মুখটা শক্ত৷ শক্ত মুখে রাগত চোখ নিয়ে সে আমার দিকে চেয়ে আছে, যেনো সে সত্যিই আমার কাছ থেকে তার প্রশ্নের উত্তর প্রত্যাশা করে; যেনো তার জীবনের বেদনাময় ঘটনাটার জন্য আমিই দায়ি৷ আমি বিস্মিত হয়ে তার দিকে চেয়ে থাকি৷ আমি এমনটা ভাবিনি৷ আমি ভাবিনি এমন বেদনাময় কোনো ঘটনা তার জীবনে আছে৷ বড় মায়া হলো তার জন্য৷ আমার কি তাকে সান্ত্বনা দেয়া উচিত? কিন্তু কি বলে আমি সান্ত্বনা দিতে পারি তাকে? প্রিয়জনের বিচ্ছেদের শোকে আকুল একজনকে কি বলে সান্ত্বনা দেয়া যায়? একবার মনে হলো বলি, এ পৃথিবীতে আমরা কেউই থাকবো না৷ আমাদের সবাইকে সেখানে যেতে হবে, যেখানে অন্য অনেকে চলে গেছে আমাদের আগেই৷ তাই কেউ চলে গেছে বলে তার জন্য শোক করার আসলে কোনো অর্থই হয় না৷ একদিন আমাদের সবাইকে যেতে হবে, কেউ থাকবে না৷ আমাদের সবারই আবার দেখা হবে সেখানে৷

কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কথাগুলো কেমন যেনো খুব ছেঁদো বলে মনে হলো, খুব হাস্যকর লাগলো নিজের কাছেই৷ আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম৷ একটুপর শান্ত কণ্ঠে ইশরাত বললো, “আপনার বইটা পড়তে শুরু করে আমার খুব ভালো লাগছিলো৷ কিন্তু আমি যদি জানতাম আপনি এভাবে শেষ করবেন, তাহলে কখনো বইটা পড়তাম না৷ বিধাতা আমাদের জীবনে সান্ত্বনা দিতে পারে না৷ আপনারা আপনাদের কল্পনায় আমাদের সান্ত্বনা দিবেন, সেটাও পারেন না৷ আপনারা অক্ষম! কালকে রাতে আপনার বইটা শেষ করার পর থেকে আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে৷”

আমার, কি বলবো, নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছিলো৷ হয়তো, তার কথাই ঠিক৷ আমি হয়তো অন্যকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পাই৷ কিন্তু তাই কি? না, তা কি করে হয়? আমি কি আসলে চেয়েছি কাউকে কষ্ট দিতে? না, চাই নি৷ আমি কাউকে কষ্ট দিতে চাইনি, চাইনি কারো অনুভূতিতে আঘাত করতে৷ কিন্তু কি করার ছিলো আমার? আমাকে তো তাই লিখতে হয় যা ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর পথে পথে৷ আমি তো তাই লিখি যা বিধাতা আগে থেকেই লিখে রেখেছে৷ বিধাতার সৃষ্টির বাইরে যাবার সাধ্য আমার কোথায়? স্রষ্টা তো আমাকে সে ক্ষমতা দেয় নি!

আমি খুব মৃদু, নীচু স্বরে বললাম, “আমি খুব দুঃখিত, লজ্জিত আপনাকে কষ্ট দেয়ার জন্য৷ আমি সত্যিই লজ্জিত৷ কিন্তু বিশ্বাস করুন, উপন্যাসটায় আমার আসলে আর কিছু করার ছিলো না৷”
ইশরাত অধোমুখে চুপ করে রইলো কিছুক্ষণ৷ তারপর বললো, “জানি৷ জানি আপনার কিছু করার ছিলো না৷ আমি লজ্জিত আপনাকে এভাবে বলার জন্য৷ প্লিজ কিছু মনে করবেন না৷ আমি আসলে খুব কষ্ট পেয়েছি গল্পের পরিণতিতে, আমার নিজের কষ্ট দিয়ে আমি মেয়েটির কষ্টটা বুঝতে পারি৷ কিন্তু আপনি সত্যিই খুব ভালো লিখেছেন৷ আপনাকে ধন্যবাদ সে জন্য৷ ভালো থাকবেন৷ পারলে আমাদের জন্য আনন্দদায়ক কিছু লিখবেন, যাতে অন্তত কল্পনায় যেনো আমরা ভালো থাকি৷”
আমি মাথা নাড়লাম, “আমি চেষ্টা করবো৷”
একটু থেমে আবার বললাম, “আসলে জীবনের অন্য নামই বোধহয় দুঃখ৷ তবু চেষ্টা করবেন সেই দুঃখের মধ্যেও ভালো থাকতে৷”
ইশরাত একটু হাসলো৷ বললো, “ধন্যবাদ, আমি চেষ্টা করবো৷ আসি তাহলে৷”
“খোদা হাফেজ৷” আমি বললাম৷

ইশরাতের হলোগ্রামটা বাতাসে মিলিয়ে গেলো৷ আমি বিছানা থেকে নেমে কিছুক্ষণ ঘরের একপাশে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম৷ সত্যি কথা, আমার গল্পের এরকম প্রতিক্রিয়া আমি একবারও আশংকা করি নি৷
বিছানায় ফিরে এসে আবার শুয়ে পড়লাম৷ চেষ্টা করলাম একটু ঘুমানোর৷ কিন্তু বুঝতে পারছিলাম, এখন আমার পক্ষে ঘুমানো সম্ভব হবে না৷ ইশরাতের মুখটা মনে পড়ছিলো৷ বার বার চোখে ভাসছিলো তার বেদনার্ত কোমল মুখটা৷ আমি বিছানায় উঠে বসলাম৷ তারপর বিছানা থেকে নেমে বাইরে বের হয়ে পড়লাম৷
গ্রীষ্মের খা খা দুপুর৷ প্রখর রোদে পুড়ে যাচ্ছে চারদিক৷ বাতাসে আগুনের হলকা৷ বোধহয় সে কারণেই রাস্তায় মানুষজন কম৷ একবার মুখ তুলে আকাশের দিকে দেখি৷ আকাশটাও প্রায় ফাঁকা, তার বুক চিড়ে উড়ে যাওয়া গাড়ির সংখ্যাও আজ বড় কম৷ সেখান থেকে চোখ নামিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মোড়ের চায়ের দোকানটার সামনে গিয়ে দাঁড়াই৷ দোকানের ছেলেটা, আফজাল, আমাকে দেখে একটা সিগারেট বাড়িয়ে দেয়৷ আমি সিগারেট ধরিয়ে দোকানের সামনের বেঞ্চে বসে তাকে একটা চা দিতে বলি৷
গল্পটা লিখতে আমার নিজেরও বেশ কষ্ট হয়েছিলো; কষ্ট হয়েছিলো গল্পের করুণ পরিণতিতে৷ কিন্তু তারপর পাঠকের প্রতিক্রিয়ায় সে কষ্ট আমি অনেকটাই ভুলে গিয়েছিলাম৷ পাঠক যখন প্রশংসা করতো, আমার বেশ ভালো লাগতো৷ কিন্তু আজকে এ কেমন হলো?

চা শেষ করে উঠে পড়লাম৷ মেসে ফিরে আসতে বুয়া আবার বললো, “ভাইয়া ভাত খাবেন না?”
আমি একটু চিন্তা করলাম৷ তারপর মাথা নেড়ে বললাম, “নাহ, খেতে ইচ্ছে করছে না৷ ঢাকা দিয়ে রেখে দাও, পরে ইচ্ছে করলে খেয়ে নিবো৷”
ঘরে ঢুকে বিছানায় শুয়ে ছটফট করতে থাকি আমি৷ ইদানীং আমি বড় ক্লান্ত হয়ে পড়েছি৷ অনেকদিন আমি ভালো করে ঘুমাই না৷ জীবনের নানা অনিশ্চয়তা বড় বেশী বাজে আজকাল৷ বড় অস্থির লাগে৷ কিন্তু আমার একটা ভালো ঘুম হওয়া দরকার৷ আমার ক্লান্তিবোধ দূর করার জন্যই দরকার৷ আমি শুয়ে শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করি৷ নিজের অজান্তেই ইশরাতের মুখটা কল্পনায় দেখতে থাকি৷ কেনো জানি বড় মায়া হয়৷ ইচ্ছে হয় তাকে বলি, “হয়তো কষ্ট আছে বলেই জীবন সুন্দর৷ কষ্ট না থাকলে জীবনটা পানসে হয়ে যেতো৷” কিন্তু আসলেই কি তাই? কি জানি! আমার নিজেরই কেমন যেনো খটকা লাগে৷ আজকাল কোনোকিছুই ভালো করে বুঝতে পারি না৷ সবকিছু বড় বেশী এলোমেলো লাগে আজকাল৷ ওমর খৈয়ামের একটা রুবাই মনে পড়ে যায় হঠাৎ-

একদা মোর ছিলো যখন যৌবনেরই অহংকার
ভেবেছিলাম গিঁট খুলেছি জীবনের সব সমস্যার,
আজকে হয়ে বৃদ্ধ জ্ঞানী বুঝেছি ঢের বিলম্বে
শূন্য হাতরে শূন্য পেলাম, যে আঁধারকে সে আঁধার৷

আমার যৌবন শেষ হয় নি৷ শেষ হতে ঢের বাকি৷ তবু কেনো এলোমেলো লাগে? কেনো এতো বেশী ক্লান্ত হয়ে পড়ি আমি?


দুই

ইশরাতের মুখটা কল্পনায় দেখতে দেখতে কখন যেনো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম৷ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখলাম, একটা দৈত্য আমাকে জাপটে ধরেছে৷ নাহ, আসলে স্বপ্নটা আরেকটু আগে থেকে শুরু হয়েছিলো৷ প্রথমে দেখলাম, আমি এক সমুদ্রের পাড়ে একলা দাঁড়িয়ে আছি৷ সামনে আদিগন্ত বিস্তৃত এক বিশাল সমুদ্র, আর তিনদিকে ধূ ধূ বালির চর৷ যতদূর চোখ যায় কোথাও কোনো মানুষ নেই৷ এমনকি কোনো গাছপালা, কোনো বাড়িঘর, কিছু নেই কোথাও৷ মাথার উপরে প্রখর সূর্যটা যেনো অনেক নীচে নেমে এসেছে, মনে হচ্ছে প্রচণ্ড ক্রোধে সে আমাকে পুড়িয়ে মারতে চাইছে৷ সামনের সমুদ্রটাও কেমন যেনো, তার পানি আগুনের লাভার মতো ঘন আর টকটকে লাল৷ সে যেনো তার জ্ব্লন্ত লাভার বিশাল ঢেউ দিয়ে আমাকে ডুবিয়ে পুড়িয়ে মারতে চাইছে৷ মনে হচ্ছে সমস্ত প্রকৃতি, সমস্ত বিশ্বচরাচর আমার প্রতি বিক্ষুব্ধ৷ আমি কাঁপতে লাগলাম, আমার গলা শুকিয়ে এলো৷ সমস্ত বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড কেনো আমার প্রতি বিক্ষুব্ধ বুঝতে পারছিলাম না৷ আমি সমস্ত শক্তি দিয়ে প্রাণপণে চীৎকার করলাম, “আমি কি করেছি? তোমরা আমার প্রতি বিক্ষুব্ধ কেনো?”

ক্ষুদ্ধ বাতাস হা হা শব্দ তুলে বয়ে গেলো, যেনো আমার প্রতি বিদ্রূপ করলো সে৷ আমি অসহায়ভাবে এদিক সেদিক দেখলাম৷ নিঃসীম আতঙ্ক নিয়ে আমি দৌড়ে পালাতে চাইলাম, কিন্তু দেখলাম আমি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রাণপণে হাত-পা ছুড়ছি, সামনে এগোতে পারছি না৷ আমার ভিতরটা আতঙ্কে ভরে গেলো৷ প্রচণ্ড আতঙ্কে আমি দিশেহারা হয়ে পড়লাম৷ হঠাৎ দেখি, আমার সামনে একটা কলস পড়ে আছে৷ আমার হঠাৎ খুব রাগ হয়ে গেলো৷ প্রচণ্ড ক্রোধ নিয়ে কলসে ধুম করে একটা লাথি মেরে বসলাম৷ লাথিটা খুব জোরে মেরেছিলাম, নিজেই পায়ে ব্যথা পেয়ে মুখ বিকৃত করে পা চেপে ধরলাম৷ তখন দেখি, কলসের মুখ দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে৷ অবাক হয়ে পায়ের ব্যথা ভুলে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ালাম৷
আমার চোখের সামনে আস্তে আস্তে ধোঁয়াটা জমাট বাঁধতে শুরু করলো৷ তারপর সেটা ইয়া বড় একটা দৈত্যের রূপ নিলো৷ দৈত্যটা আমার দিকে চেয়ে বিচ্ছিরিভাবে হা হা করে হেসে বললো, “হুকুম করুন মালিক, কি চাই আমার কাছে?”
ওহ! এই তাহলে ব্যাপার? আমি ভাবলাম মনে মনে৷ হুম, আরব্য রজনীর কাহিনীতে এরকম ঘটনা পড়েছি বটে৷ এ ব্যাটা সেরকমই এক দৈত্য দেখছি! আচ্ছা ঠিক আছে, দেখা যাক, কি ঘটে৷

আমি দৈত্যকে বললাম, “এরকম বিচ্ছিরি করে হাসার দরকার কি? একটু সুন্দর করে হাসতে পারো না?”
দৈত্যটা থতমত খেয়ে বললো, “মালিক, আমি যে এভাবেই হাসি!”
“আচ্ছা ঠিক আছে, কি দিতে পারো তুমি আমাকে?”
“হুকুম করুন মালিক,” দৈত্য তার বাজখাই গলায় চেঁচিয়ে বললো, “আপনি যা চান তাই আপনাকে দিতে পারবো৷ সাত রাজার ধন, হিরে মানিক মুক্তো জহরত যত খুশি, রাশি রাশি৷ অর্ধেক রাজত্ব, না, পুরো রাজত্ব আর পরমা সুন্দরী রাজকন্যা, যা আপনি চান, যত চান! রাশি রাশি, যত খুশি!”
আমি চিন্তা করতে লাগলাম৷ দৈত্যের দিকে তাকিয়ে শব্দ করলাম, “হুম৷”

দৈত্য আমার দিকে চেয়ে রইলো৷ আমি ভাবতে লাগলাম৷ রাজত্ব দিয়ে আমি কি করবো? রাজত্ব চালানোর হ্যাপা অনেক, অতো হ্যাপা দিয়ে আমার পোষায় না৷ সে কাজের মানুষ আলাদা, আমি ওরকম নই৷ আমি নিজের মতো করে একটু নিরিবিলিতে থাকতে চাই৷ রাজত্ব ফাজত্ব চালানো আমার কাজ নয়৷ আর রাজত্বই যদি না থাকে তাহলে রাজকন্যা নিয়ে রাখবো কোথায়? রাজকন্যাদেরও হ্যাপা অনেক৷ তাদের এই দাও রে, সেই দাও রে, নানা বায়নাক্কা! আড়ম্বরবিহীন ছিমছাম তারা হতে পারে না৷ তাদের সাজগোজের বহর, গা ভর্তি গহনা, তাকানোর ভঙ্গি দেখলেই বিরক্তি লাগে৷ অতো ন্যাকামী অসহ্য! নাহ, রাজকন্যা, রাজত্ব এইসব দিয়ে আমার পোষাবে না৷
বললাম, “শোনো, তোমাকে বলছি আমি কি চাই৷ আমি জীবনে সুখী হতে চাই৷ সবাইকে সুখী দেখতে চাই৷ আর... আর...”
“আর কি মালিক?”
“আর...” আমি একটু ইতস্তত করে বললাম, “আর আমি ইশরাতকে সুখী দেখতে চাই৷”
দৈত্যটা কিছুক্ষণ চোখ কুঁচকে আমার দিকে চেয়ে রইলো৷ হঠাৎ আমার মুখের উপর ঝুঁকে পড়ে বললো, “ইশরাতটা কে মালিক?”
দৈত্যটার মুখের দুর্গন্ধ ধ্বক করে আমাকে একটা ধাক্কা মারলো৷ আমি একটু পিছিয়ে এসে বললাম, “ইশরাত... আছে একজন, তুমি চিনবে না৷”

“হুম৷” বলে দৈত্যটা সোজা হয়ে মুখের কাছে ডান হাত নিয়ে তর্জনী নাড়িয়ে নাড়িয়ে চিন্তা করতে লাগলো৷ একটুপর বললো, “মালিক, ইশরাতকে আমি সুখী করতে পারবো কিনা জানি না৷ কিন্তু আপনাকে সুখী করে দিচ্ছি এখনই...”
বলে সে আমার পেটে কাতুকুতু দিতে শুরু করলো৷ আমার কাতুকুতু খুব বেশী, আমি হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়লাম৷ গড়াতে গড়াতে তার হাতটা সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে করতে চীৎকার করলাম, “এটা কি... হা হা হা... এটা কি... হো হো হো হো... এটা কি করছো? হা হা হা আ আ... এটা তো... হি হি... এটা তো সুখ না! এটা সাময়িক আনন্দ, সাময়িক সুখ, হি হি হি... আমি তো এটা চাই নি...”

দৈত্য কাতুকুতুর পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে বললো, “জীবনটা এরকমই মালিক৷ জীবন তো আসলে দুঃখ৷ এখানে সুখ, আনন্দ শুধুই সাময়িক৷ নিরবিচ্ছিন্ন সুখ এখানে পাওয়া যায় না৷ দুঃখের মধ্যেই মাঝে মাঝে যেটুকু সুখ পাওয়া তাই জীবন মালিক৷”
“বন্ধ করো৷” আমি আবার চীৎকার করলাম, “বন্ধ করো তোমার এই কাতুকুতু৷ আর বন্ধ করো তোমার এই প্যানপ্যানানী৷ হি হি হি হি হি... আমি তোমার কাছে দার্শনিক তত্ত্বকথা শুনতে চাইনি৷ জাহান্নামে যাও তুমি! হো হো হো... সোলায়মান বাদশাহ তোমাকে সাতশ' বছর, না, সাত হাজার বছর, ধুত্তারি কতো বছর ভুলে গেছি, কলসের মধ্যে বন্দি করে রেখেছিলো... হা হা হা... তোমাকে আরো সাত কোটি বছর কলসে বন্দি করে রাখা উচিত... হি হি হি হি হি... জাহান্নামে যাও...”
দৈত্যটা তখন রেগে গেলো৷ ভীষণ রেগে সে তার ডান হাতের আঙুল দিয়ে আমার পেটে জোরে জোরে খোঁচা দিতে লাগলো৷ আমি ব্যথা পেয়ে চোখ খুলে তাকালাম৷

দেখলাম, আমার সামনে হুমায়ূন বসে আছে৷ তার ডান হাতের আঙুল আমার পেটে খোঁচা দেয়ার জন্য তৈরি৷ আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসছে সে৷ রেগে বললাম, “হারামি, তুই এতোক্ষণ খোঁচা দিচ্ছিলি আমাকে?”
হুমায়ূন আমার মুখের উপর ঝুঁকে পড়ে বললো, “ইশরাতটা কে রে?”
“জাহান্নামে যা তুই!”
“যাবো৷ তার আগে বল ইশরাত কে৷”
আমি পিছিয়ে এসে দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসলাম৷ হুমায়ূনের মুখের দিকে খর চোখে চেয়ে রইলাম কিছুক্ষণ৷ বললাম, “আমি কি এতোক্ষণ জোরে জোরে কথা বলছিলাম নাকি?”
“না বললে আমি ইশরাতের নাম জানলাম কি করে?”

আমার কান গরম হয়ে উঠলো৷ লজ্জায় কান মাথা ঝাঁ ঝাঁ করতে লাগলো৷ হুমায়ূন হা হা করে হেসে বললো, “আরে লজ্জা পাওয়ার কিছু হয় নি৷ না হয় তুই একটা মেয়ের প্রেমে পড়েছিস৷ প্রেম জীবনের একটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার৷ প্রেমে না পড়াটাই বরং অস্বাভাবিক৷ যে বেটারা প্রেমে পড়ে নি তারা মানুষই না৷ এতে লজ্জা পাওয়াটাই অন্যায়৷”
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, “কিসে তোর ধারণা হলো আমি ইশরাতের প্রেমে পড়েছি? তুই সব কিছুর মধ্যেই প্রেম খুঁজে বেড়াস৷”
“প্রেমে পড়িস নি? আচ্ছা ঠিক আছে বুঝলাম প্রেমে পড়িস নি৷ কিন্তু বল ইশরাত কে?”
“আছে একজন৷ তুই চিনবি না৷”
“না চিনলাম, তো বলতে দোষ কি?”
“আরে বাবা বলছি তো বলার মতো তেমন কিছু না৷ আমার বইয়ের একজন পাঠিকা বলতে পারিস৷”
“ও আচ্ছা, তোর বইয়ের পাঠিকা৷ দেখতে কেমন?”
আমি খর চোখে হুমায়ূনের দিকে চেয়ে রইলাম৷ আমি জানি সে এখন কি ভাবছে৷ বললাম, “ভালো৷ সুন্দর দেখতে৷ মুখটার মধ্যে কোমলতা আছে৷ আর মনে হয় বেশ বুদ্ধিমতী৷”
“হুম৷” বলে হুমায়ূন শান্তভাবে হাসলো৷ আমি ঠিক বুঝলাম না সে কেনো তার স্বভাবমতো হা হা করে হেসে উঠলো না৷ একটু চুপ থেকে সে আবার শান্ত কণ্ঠে বললো, “ভালো৷ তার মানে পাঠিকাটিকে তোর বেশ পছন্দ হয়েছে বল?”
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, “আরে বাবা তুই যা ভাবছিস তা না৷ সে বিবাহিতা৷ মানে বিবাহিতা ছিলো৷”
“বিবাহিতা ছিলো আবার কেমন কথা? এখন তাহলে কি? ডিভোর্সড?”
“না, বিধবা৷”
“ওহ! আই এ্যাম স্যরি৷ আমি দুঃখিত৷”
আমি কিছু বললাম না৷ হুমায়ূন আবার বললো, “এতে অবশ্য তেমন কিছু আসে যায় না৷ তুই চাইলে, আর অবশ্যই, ইশরাত চাইলে আমরা বিয়ের বাদ্য বাজানো শুরু করতে পারি৷”
“হ্যাঁ তোরা তো বিয়ের বাদ্য নিয়ে সব সময় তৈরিই আছিস, ফাঁক পেলেই বাজানো শুরু করিস৷ সবকিছু নিয়েই মশকরা করা তোর একটা স্বভাব৷”
“আমি মশকরা করছি না, সিরিয়াসলিই বলছি৷ যাকগে, তুই যখন চাস না, বাদ দে এসব৷ আমি একটা নতুন বাইক কিনেছি, দেখবি চল৷”
দু'দিন পরপর বাইক বদলানো হুমায়ূনের একটা স্বভাব৷ বাইক তার খুব শখের একটা জিনিস, কিছুদিন পর পরই সে বাইকের মডেল পরিবর্তন করে৷ কিন্তু শেষ বাইকটা সে কিনেছে বোধহয় মাস তিনেকও হয়নি৷ এর মধ্যে আবার নতুন একটা?
বিস্মিত হয়ে বললাম, “আবার নতুন বাইক?”
“হুঁ, এবার একটা খাসা বাইক কিনছি, দেখে ট্যারা হয়ে যাবি৷”
আমি হাসলাম৷ বললাম, “চল তোর বাইক দেখি৷”


(পরের পর্ব )
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১০ রাত ১১:২০
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×