গুলশান ট্রাজেডীর দগদগে ক্ষত এখনো শুকায়নি।শোকার্ত স্তম্ভিত জাতি এর মাঝেই গতকাল আরেকটি ভয়াল রাত পার করল।এবার হযতো বিদেশীদের জিম্মি করা হয়নি ; মিডিয়ার তোড়জোড় ও অনেকটা কম ছিল কিন্তু, এলাকাটা ছিল ব্যাপক জনবহুল আবাসিক এলাকা।ঘটনার নিয়ন্ত্রনের পর সরকার,আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী,আওয়ামী লীগ কর্মীরা সবাই সফলতার অংশের ভাগ নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে!! খোদ প্রধানমন্ত্রীর সুরেও সফলতার ফুলঝুরি!! দেশের তথ্য উপদেষ্টা তো আর্ন্তজাতিক ভাবে টেলিকাষ্ট করে বসলেন কল্যাণপুরের অপারেশন স্টর্ম-২৬ এর সাফল্য গাথা !!!
বাংলাদেশের ইতিহাসের ইস্যুর নিচে ইস্যু চাপা পড়ার ঘটনা অতি পুরনো। গুলশানের হলি আর্টিজানের ঘটনাও এবার কল্যাণপুরের অপারেশন স্টর্ম-২৬ নিচে চাপা পড়ল, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে শংকার বিষয় আই এসের সংশ্লিষ্টতার গন্ধ পেয়ে। সরকার শুরু থেকেই বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব অস্বীকার করে আসছে। এমনকি নারকীয় গুরশান ট্রাজেডীতে আইএস মুখপাত্র আমাক,রয়টার্স,ফক্স নিউজ সহ সারা বিশ্বের সবাই স্বীকার করলেও আমাদের সরকার তার জেএমবি বা সরকারী ভাষ্যমতে তাদের দোসর বিএনপি-জামাত ঠ্যাঙ্গানো বক্তব্যে ব্যতিব্যাস্ত ছিল। সবার কাছেই গুলশানের তান্ডবের পর আইএস বিষয়ে দেশের সবাই অনেক সচেতন।
আজকের আইএস নিয়ে সবার মনে মূল খটকার উদয় হলো যখন অপারেশন স্টর্ম-২৬ নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) একেএম শহীদুল হক বলে বসেন গুলশান হামলাকারীদের সঙ্গে এখানে নিহত জঙ্গিদের মিল রয়েছে!!!! এরা গুলশানের হামলাকারীদের একই গ্রুপের সদস্য হতে পারে!! ধরন একই !! জঙ্গিরা গুলশানের মতো কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটানোর লক্ষ্যে জড়ো হয়েছিল।
সন্দেহ আরো ঘনীভূত হয় যখন লাশের ছবি প্রকাশ করা হয়, দেখা যায় সবাই আইএসের স্বীকৃত ইউনির্ফম পরিহিত!! সকালেই খবর বের হয় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন ১৫ এর অধিক!! অভিযান শেষে উদ্ধার করা হয় আইএস স্বীকৃত ইউনির্ফম কালো পাঞ্জাবী ও পাগড়ী !!! ঘটনা স্থল থেকে উদ্ধার করা হয় ১৩টি তাজা গ্রেনেড, জেল বিস্ফোরক ৫ কেজি, ডেটোনেটর ১৯টি, ৭.৬২ পিস্তল চারটি, গেরিলা চাকু ১২টি, তলোয়ার একটি, কমান্ডো চাকু তিনটি, ৭.৬২ পিস্তলের ম্যাগজিন সাতটি, ৭.৬২ পিস্তলের গুলি ২২ রাউন্ড এবং আরবিতে ‘আল্লাহু আকবর ও কালেমা’ লেখা দুটি কালো পতাকা যেগুলো আইএসের পতাকা রূপে ব্যবহৃত হয়!!
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তারা নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবর শব্দ শুনতে পান। বাসার ছাদ দিয়ে জিন্সের প্যান্ট ও টি-শার্ট পরা সহ আরো ১০-১২ জনকে পালিয়ে যেতে দেখেন। এক সিকিউরিটি গার্ড জানান, সে বড় ব্যাগ সহ এক যুবককে দ্রুত সরে পড়তে দেখেন!! যাকে পরে পুলিশও আশপাশে খুজে পায়নি!!
প্রেস ব্রিফিং এ জানানো হয় যে ঘটনাস্থলে প্রাপ্ত নয় জন জঙ্গী সবাই কালো পাঞ্জাবী এবং বিশেষধরনের পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় কারো কারো শরীরের সাথে ব্যাকপ্যাক ছিল। অধিকাংশ জনের পায়ে পায়ে কেডস ছিল।অনেকটাই গুলশানের জঙ্গিদের আলামত বহন করে!!
এমনকি ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে সরাসরি বলেন, গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার ধরন, পোশাকসহ অন্যান্য সবকিছু কল্যাণপুরের নিহত জঙ্গিদের সঙ্গে মিল রয়েছে। প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণে জানতে পেরেছি গুলশানে যারা হামলা করেছিল তারা একই গ্রুপের!
অভিযান শুরুর পরও মৃত্যুর ভয়ে ভীত ছিল না জঙ্গিরা। বরং পুলিশকে বারবার তারা বলেছে, মরতে প্রস্তুত তারা। ‘মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজী’- এমন স্লোগানও তারা বারবার দিয়েছে। গুলশানেও এমনটিই ঘটেছিল !!
মালয়েশিয়ার প্রসঙ্গে আসা যাক, সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় একটি ক্যাফেতে হামলার পর আইএসের পক্ষে স্বীকারোক্তি দিলেও, পাচদিন পর ১৫ জঙ্গিকে মালয়েশিয়ান পুলিশ গ্রেফতার করল, সেটার কোন সংবাদ আইএস এর মুখপাত্ররা প্রকাশ করেনি!! এমনকি তাদের বড় কোন লিডার নিহত হলেও তার কোন স্বীকারোক্তী প্রদান করে না!! এক কথায় তাদের সফলতা ছাড়া কোন কিছুই তারা বা তাদের এজেন্টরা স্বীকার করে না !!! রীতা কাটজ এর সাইট ইন্টেলিজেন্স ও নীরব থাকে!!!
অাজকেই প্রকাশ পেয়েছে যে নারকীয় গুলশান ট্রাজেডীর জঙ্গিরা পূর্ব প্রস্তুত হয়ে ছিল এবং সাবেক নর্থ সাউথ শিক্ষক হাসনাতের গ্রীন সিগন্যাল পেয়ে হত্যাযজ্ঞ চালায় তারই উপস্থিতিতে। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে কল্যাণপুরের জঙ্গিরাও হয়তো কারো নির্দেশের অপেক্ষায় ছিল প্রস্তুত হয়ে ছিল !!!
প্রধানমন্ত্রী সহ দায়িত্বশীল সকলেই স্বীকার করেছেন দেশ এক বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। অবশ্যই । আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সকলকের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।
দেশের দায়িত্বশীলদের উচিত রাজনীতির রঙ্গে জঙ্গি ইস্যুকে রঙ্গিন না করে এবং সফলতার স্রোতে গা না ভাসিয়ে,জঙ্গি দমনের প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করা। আমাদের সকলের উচিত আইএস সহ সকল জঙ্গিদের ব্যাপারে চোখ খোলা রেখে সচেতন থেকে,অপরকে সচেতন করে নিরাপদ থাকা।আমাদের কোন ভয়ংকর খটকাই পটকা হয়ে না ফাটুক, স্বাধীন সার্বভৌম সোনার বাংলাদেশ নিরাপদ থাকুক।
আইএস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন.......
১.(Click This Link)
২.(Click This Link)
৩.(Click This Link)
৪.(Click This Link)
৫.(Click This Link)
৬.(Click This Link)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:৫০